বৃক্কে পাথর হওয়ার কারণ-
(i) অতিরিক্ত শারীরিক ওজন
(ii) কম পানি পান করা
(iii) অতিরিক্ত প্রাণীজ আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা

Created: 2 years ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

বৃক্কের তাৎক্ষণিক বিকলঃ
বয়স বাড়ার সাথে সাথে বৃক্কের কাজকর্মেও (বিশেষ করে পরিস্রাবণ প্রক্রিয়ায়) পরিবর্তন ঘটে, সক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসে। বলা হয়ে থাকে, ৭০ বছর বয়স্ক মানুষের বৃক্ক মাত্র ৫০% কাজে সক্ষম থাকে। রোগ-ব্যাধির কারণে বৃক্কের সক্ষমতা কমে যাওয়াকে বৃক্ক বিকল (kidney failure) বলে। বৃক্কের বৈকল্য (kidney failure) দু’ভাবে দেখা দিতে পারে, একটি হচ্ছে দীর্ঘক্ষণিক (chronic), অন্যটি তাৎক্ষণিক (acute)।

বৃক্কের বৈকল্য ঘটতে যদি কয়েক বছর লেগে যায় (অর্থাৎ ধীরে ধীরে বিকল হতে থাকে) তখন তা দীর্ঘক্ষণিক বিকল। অন্যদিকে, মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যখন বৃক্ক দেহের বর্জ্যপদার্থ অপসারণে, পানি ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে অক্ষম হয়ে পড়ে তখন বৃক্কের এ অবস্থাকে বৃক্কের তাৎক্ষণিক বিকল বলে।

বৃক্কের তাৎক্ষণিক বিকলের কারণ (Causes of Acute Kidney Failure)
*ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা)
*বড় কোনো ক্ষত থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে বৃক্কে রক্ত প্রবাহ কমে গেলে
*অতিমাত্রায় ডায়ারিয়া ও বমির কারণে
শক (টিস্যুতে কম রক্ত সরবরাহ), হার্ট অ্যাটাক, অ্যাকিউট পানক্রিয়াটাইটিস (অগ্ন্যাশয়য়ের প্রদাহ), ভুল রক্ত দেয়ার জন্য, মারাত্মক অগ্নিদগ্ধ হওয়ায়, রক্ত প্রবাহ কমে গেলে
*বৃক্কে পাথর, মূত্রনালিতে টিউমার বা জন্মগত ত্রুটি থাকলে, পুরুষে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে
*অতি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন- জেন্টামাইসিন, স্ট্রেপ্টোমাইসিন), ব্যাথানাশক ঔষধ (যেমন- অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন), উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ (যেমন- এসিই ইনহিবিটর) সেবনে
*বিষাক্ত পদার্থ, যেমন- কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, আর্সেনিক, লেড, মার্কারি ইত্যাদি গ্রহণে
বৃক্কের টিস্যু ও পরিস্রাবক এককগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে
বৃক্কের বিকলের লক্ষণ (Symptoms of Acute Kidney Failure)
*অতি অল্প, ঘন ও গাঢ় মূত্র ত্যাগ বা মূত্র একেবারেই না হওয়া
*রক্তে নাইট্রোজেনজাত বর্জ্যপদার্থ সঞ্চিত হওয়া
শরীর ফুলে যাওয়া (অতিরিক্ত পানি দেহে জমে যাওয়ায়)
*পাঁজর ও কোমরের মাঝামাঝি দুপাশে ব্যথা (flank pain)
*ক্ষুধামন্দা, বমি-বমি ভাব ও বমি করা
উচ্চ রক্তচাপ
রক্ত পায়খানা
*হাত-পায়ে সংবেদ কমে যাওয়া
*অর্নেকক্ষণ ধরে/হেঁচকি তোলা
ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া


প্রতিকার (Measures)
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
যে পরিমাণ প্রস্রাব হয় সে পরিমাণ পানির সাথে অতিরিক্ত ৫০০ মি.লি. পানি তাকে খেতে দিতে হবে।
প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি দেয়া যাবে না।
দেহে দেহরস ও ইলেকট্রোলাইট এর ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
পঞ্চাশোর্ধ বয়সে নিজের বা পরিবারের অন্য কারো ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তাদের বৃক্ক নিয়মিত  পরীক্ষা করতে হবে।
ডায়ালাইসিস (Dialysis)
একটি বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লির ভিতর দিয়ে নির্বাচনমূলক ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোনো দ্রবণের কলা দ্রবীভূত পদার্থের পৃথকীকরণকে ডায়ালাইসিস (Dialysis) বলে। ডায়ালাইসিস দুধরনের-

হিমোডায়ালাইসিস (Haemodialysis)
পেরিটোনিয়াল (Peritoneal dialysis)


ক. হিমোডায়ালাইসিস (Haemodialysis) : এ প্রক্রিয়ার শুরুতে কিছু যন্ত্রপাতি, দ্রবণ ও টিউবের সমন্বয়ে একটি কৃত্রিম বৃক্ক ডায়ালাইজারে, নির্মাণ করা হয়। কৃত্রিম বৃক্ক আসল রক্ত পরিশোধিত বৃক্কের মতো একই নীতি অনুসরণ করে কাজ করে। সংক্ষেপে বলতে গেলে রক্তকে পাম্প করে শরীর থেকে ডায়ালাইসিস বের করে বর্জ্যপদার্থ অপসারণের উদ্দেশে পরিস্রুত করে যেভাবে আবার দেহে ফেরত পাঠানো হয় তাকে হিমোডায়ালাইসিস বলে ।

হিমোডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ার শুরুতে রোগীর দেহে একটি ধমনির ভিতর ফাঁপা নলাকার সূচ ঢোকানো হয়। এর নাম ক্যাথেটার (catheter)। এটি পিছন দিকে একটি নমনীয় টিউবের সাথে লাগানো থাকে। টিউবটি প্রথমে কিডনি মেশিনের সঙ্গে যুক্ত হয়, পরে একটি শিরায় এসে মিলিত হয়। বাহুর নিমপ্রান্ত বা পায়ে ক্যাথেটার লাগানো হয়। যাদের ঘন ঘন ডায়ালাইসিস হয় তাদের ক্ষেত্রে একটি ছোট টিউবসহ ক্যাথেটারটি স্থায়ীভাবে লাগিয়ে রাখা হয়। পাম্পের সাহায্যে সযত্নে ধমনি থেকে রক্ত বের করে শিরার দিকে চালনা করা হয়। রক্তে হেপারিন (heparin) মেশানো হয় যাতে জমাট না বাঁধে। রক্ত ধীরে ধীরে কিডনি মেশিনের ডায়ালাইসিস দ্রবণ বা ডায়ালাইসেট (dialysate)-এ শায়িত টিউবের ভিতর দিয়ে সংবহিত হয়। টিউবগুলো কৃত্রিম আংশিক ভেদ্য (partially permeable) ঝিল্লি-নির্মিত যা ব্যাপন প্রক্রিয়ায় অতিক্ষুদ্র অণু ও পানিকে ব্যাপিত হওয়ার সুযোগ দেয়। রক্তকণিকা ও প্রোটিন অণু বড় হওয়ায় ব্যাপিত হতে পারে না। রক্ত ও ডায়ালাইসেট (ডায়ালাইসিস দ্রবণ)-এর মধ্যে সমতা না আসা পর্যন্ত বিনিময় অব্যাহত থাকে। রক্তের অবাঞ্ছিত বস্তু, বিশেষ করে ইউরিয়া ও অতিরিক্ত সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি অপসারিত হয়, প্রয়োজনীয় বস্তু থেকে যায়। প্রতি সপ্তাহে রোগীকে দুবার হিমোডায়ালাইসিসের সম্মুখীন হতে হয়। প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ৪-৫ ঘন্টা সময় লাগে। প্রতিবার সদ্য বানানো ডায়ালাইসেট ব্যবহার করতে হয়।

ডায়ালাইসেটের উপাদান : হিমোডায়ালাইসিসের উদ্দেশ্যে ডায়ালাইসিস টিউবগুলোকে ডায়ালাইসেট বলে। এর উপাদনগুলো হচ্ছে- সঠিক তাপমাত্রা (স্থির দেহ তাপমাত্রা); সঠিক আয়নিক ভারসাম্য, বিশেষ করে Na+, K+, Cl–, Mg2+, Ca2+ ও HCO3– (এসিটেট রূপে); অতিরিক্ত পুষ্টি, যেমন গ্লুকোজ; সঠিক pH ও বাফারিং ক্ষমতা (buffering capacity) ইত্যাদি।

খ. পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (Peritoneal dialysis) : কৃত্রিম ঝিল্লির পরিবর্তে দেহে অবস্থিত পেরিটোনিয়াল ঝিল্লি (পেরিটোনিয়াম)-কে ডায়ালাইসিং ঝিল্লি হিসেবে ব্যবহার করে বৃক্কের ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়াকে পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস বলে। এ প্রক্রিয়ার শুরুতে রোগীর উদর প্রাচীরে একটি ছোট চেরাছিদ্র করে তার ভিতর দিয়ে

পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়া শুরুতে প্লাস্টিক টিউব উদরীয় গহ্বরে প্রবেশ করানো ও স্থায়ীভাবে রেখে দেওয়া হয়। উদরীয় গহ্বরের প্রাচীরটি পেরিটোনিয়াম যা আংশিক ভেদ্য এবং ডায়ালাইসিং ঝিল্লি হিসেবে কাজ করে। প্লাস্টিক টিউবের ভিতর দিয়ে ডায়ালাইসেট উদরীয় গহ্বরে প্রবেশ করিয়ে কয়েক ঘন্টা রেখে দেয়া হয়। ডায়ালাইসেট ও উদরের বাকি অংশের টিস্যু-তরলের মধ্যে উপাদানের বিনিময় ঘটে। দিনে ৩-৪ বার ডায়ালাইসেট প্রতিস্থাপন করা যায়।

বৃক্ক প্রতিস্থাপন (Kidney Transplant):
বৃক্ক বিকলের দীর্ঘকালীন সমাধানে রোগীর দেহে ভিন্ন ব্যক্তির সুস্থ ও সঠিক বৃক্ক অস্থাপনকে বৃক্ক স্থাপনকে বৃক্ক প্রতিস্থাপন বলে। বৃক্ক বিকলের চিকিৎসায় ডায়ালাইসিস পদ্ধতি সাময়িক সমাধান হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যয় সাপেক্ষ মনে হলেও দীর্ঘকালীন হিসেবে বৃক্ক প্রতিস্থাপনই ভালো পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে। স্থায়ীভাবে নষ্ট বৃক্কের বিকল্প হিসেবে একটি সুস্থ বৃক্ক প্রতিস্থাপনই স্থায়ী সমাধান হতে পারে।

বৃক্ক প্রতিস্থাপনে অবশ্য স্মরণীয় বিষয় হচ্ছে –
বৃক্কদাতা (অনাত্মীয় বা আত্মীয়) যেই হোক না কেন তার দেহ থেকে সংগ্রহের ঠিক ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রোগীর দেহে স্থাপন করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে যতখানি সময় বৃক্কটি বাইরে থাকে ততক্ষণ বৃকের উপর দিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে স্যালাইন দ্রবণ প্রবাহিত করা হয়। দাতা মৃত হলে সদ্যমৃত দাতার দেহ থেকে বৃক্ক সগ্রহ করতে হবে।
সংগৃহীত বন্ধুটি সুস্থ হতে হবে (HIV বা অন্যান্য সংক্রমণমুক্ত হতে হবে)।
বৃক্কদাতা ও গ্রহীতার ব্লাড গ্রুপ এবং টিস্যুর ধরণ এক হতে হবে।
বৃক্ক প্রতিস্থাপনের সময় প্রথমে গ্রহীতার শ্রোণিদেশে অপারেশনের মাধ্যমে দাতাবৃক্কটিকে স্থাপন করা হয়। দাতাবৃক্কের ধমনি ও শিরাকে গ্রহীতার ধমনি ও শিরার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়। নতুন বৃক্কের ইউরেটারকে পৃথকভাবে মূত্রথলির সাথে জুড়ে দেয়া হয়। এভাবে বৃক্কের প্রতিস্থাপন ঘটে।

Content added By
Promotion