এক খন্ড ‘প্লাটিনাম ও ইরিডিয়ামের তৈরি রড’ এর দৈর্ঘ্য এক মিটার হিসেবে স্বীকৃত। এটি কোন মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে?

Created: 2 years ago | Updated: 7 months ago
Updated: 7 months ago

পদার্থের অবস্থা ও পরিবর্তন

পদার্থ

ইংরেজী : matter, substance।

সমার্থক শব্দাবলি : পদার্থ, বস্তু।

আমাদের চারপাশের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যে সকল সত্তা আছে, সাধারণভাবে এগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এই ভাগ দু’টি হলো- পদার্থ ও বিকীর্ণ শক্তি (radient energy)। এর ভিতরে পদার্থ হলো– ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যে কোন বস্তু, যার ভর আছে, যেটি কোন স্থান দখল এবং যার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে, তাকে পদার্থ বলে। যেমন-বই, পাথর, কাগজ, কলম, ইত্যাদি।

তাপ ও চাপের উপর নির্ভর করে পদার্থ সাধারণত তিনটি ভৌত দশায় থাকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সহনীয় কক্ষ-তাপমাত্রা এবং চাপকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। পদার্থের আকার আয়তনের উপর ভিত্তি করে পদার্থকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এই ভাগগুলো হলো—

১. কঠিন পদার্থ। যেমন : লোহা, কাঠ, কাঁচ ইত্যাদি। দেখুন : কঠিন পদার্থ।

২. তরল পদার্থ। যেমন : পানি, তেল ইত্যাদি। দেখুন : তরল পদার্থ।

৩. বায়বীয় পদার্থ। যেমন : বাতাস, অক্সিজেন, হহিড্রোজেন ইত্যাদি। দেখুন : বায়বীয় পদার্থ।

এ ছাড়া পদার্থ আরও দুটি বিশেষ দশায় থাকতে পারে। বিচারে পদার্থকে অতিরিক্ত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন—

১. তরল-স্ফটিকার পদার্থ

২. প্লাজমা পদার্থ।

সাধারণ বিচারে পদার্থ তিন অবস্থায় (কঠিন,তরল,ও বায়বীয়) থাকলেও একই পদার্থ সাধারণ তাপমাত্রায় একটি মাত্র অবস্থায় থাকতে পারে। সাধারণ তাপীয় অবস্থা হতে কোন পদার্থকে নিম্ন বা উচ্চ তাপীয় অবস্থায় আনলে, পদার্থ তার দশা পরিবর্তন করে। এই পরিবর্তিতনশীল দশার নিম্ন তাপীয় অবস্থায় কঠিন এবং উচ্চ তাপীয় অস্থায় বায়বীয় ধর্ম লাভ করে। পদার্থের এই রূপান্তরকে পদার্থের অবস্থান্তর বলে। যেমন– সাধারণ তাপমাত্রায় পানি একটি তরল পদার্থ। একে শীতল করলে এটি ০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বরফে পরিণত হয়। আবার এই বরফকে তাপ দিলে, এটি পানিতে এবং আরো তাপ দিলে একই পানি ১০০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিণত হয়। অন্যদিকে, বাষ্পকে শীতল করলে, পানিতে এবং পানিকে আরো শীতল করলে বরফে পরিণত হয়। অর্থাৎ পানি, বরফ ও জলীয়বাষ্প একই পদার্থ, যেটি সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। পানির এইরূপ পরিবর্তনকে পানির তাপীয় অবস্থা বলে।

পদার্থের ভৌত পরিবর্তন (Physical Change Of Matter)

যে সকল পরিবর্তনের ফলে পদার্থের ভৌত অবস্থা, গঠন-প্রকৃতি, স্থিতিস্থাপকতা, বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক ধর্ম প্রভৃতির পরিবর্তন হয়, কিন্তু উপাদানগত কোন পরিবর্তন হয় না অর্থাৎ কোন নূতন পদার্থের সৃষ্টি হয় না, সেই সকল পরিবর্তনকে ভৌত পরিবর্তন বলা হয়। যেমন– বরফকে তাপ দিলে তা প্রথমে পানিতে পরিণত হয় এবং তরল পানিকে আরও তাপ দিলে তা জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়। এই জলীয়বাষ্পকে আবার শীতল করা হলে তরলে পরিণত হয় এই তরলকে আরও শীতল করলে তা পুনরায় বরফে পরিণত হয় । কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় পানির ধর্ম ভিন্ন । কিন্তু তিন অবস্থাতেই পানি H2O অণুর সমন্বয়ে গঠিত ।সুতরাং পানির এইরূপ পরিবর্তন হল ভৌত পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্যেসমজূহকে পদার্থের ভৌত পরিবর্তনের ধর্মাবলি (Physical Properties Of Matter) বলা হয়। যেমন– বর্ণ, গন্ধ, ঘনত্ব, গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক দ্রাব্যতা, ভঙ্গুরতা ইত্যাদি ভৌত ধর্ম ।পদার্থের রাসায়নিক পরিবর্তন (Chemical Change Of Matter)

এক বা একাধিক পদার্থের উপাদানগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ওই পদার্থের নিজস্ব সত্তা হ্রাস পায় এবং নূতন এক বা একাধিক পদার্থ সৃষ্টি হয়, এরূপ পরিবর্তনকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। যেমন– লঘু সালফিউরিক এসিডের সাথে জিংক যুক্ত করলে হাইড্রোজেন গ্যাস ও জিংক সালফেট সৃষ্টি হয়। এই পরিবর্তনের সময় জিংক ও সালফিউরিক এসিডের সত্তা হ্রাস পায় এবং নূতন ধর্ম বিশিষ্ট হাইড্রোজেন ও জিংক সাকফেট সৃষ্টি হয় ।

Zn + (লঘু) H2SO4 = ZnSO4 + H2

এটি একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।

অনুরূপ ক্যালসিয়াম কার্বনেটকে তাপ দিলে তা ক্যালসিয়াম অক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইডে পরিণত হয় । এখানে ক্যালসেয়াম কার্বনেট ভেঙ্গে সম্পূর্ন নূতন ধর্ম বিশিষ্ট দুটি পদার্থ তৈরি হয়।

CaCO3 = CaO + CO2

সুতরাং এটিও একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।

মৌলিক, যৌগিক ও মিশ্র পদার্থ

প্রতিটি পদার্থ গঠিত হয় অতি ক্ষুদ্র কণার দ্বারা। পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কণাকে অণু বলা হয়। এই অণুগুলো গঠিত হয় এক বা একাধিক পরমাণুর দ্বারা। পদার্থের অণুগুলোর গঠন বিন্যাসের বিচারে পদার্থ হতে পারে তিন প্রকার। এই প্রকার তিনটি হলো– মৌলিক, যৌগিক ও মিশ্র।

মৌলিক পদার্থ (element)

যে পদার্থকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে বিভাজিত করে দুই বা ততোধিক ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থে বিশ্লিষ্ট করা যায় না, অর্থাৎ যে পদার্থ হতে সাধারণভাবে সেই পদার্থ ব্যতীত অন্য কোন নূতন পদার্থ পাওয়া যায় না, তাকে মৌল বা মৌলিক পদার্থ বলে। যেমন– কার্বন, হাইড্রোজেন, লৌহ ইত্যাদি । বিস্তারিত দেখুন : মৌলিক পদার্থ

যৌগিক পদার্থ (compound matter)

যে পদার্থ থেকে দুই বা ততোধিক সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়, সেই পদার্থকে যৌগ বা যৌগিক পদার্থ বলে। যেমন– পানি একটি যৌগিক পদার্থ। এটি দুইটি ভিন্ন মৌলিক পদার্থ হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দ্বারা গঠিত । আবার পানিকে বিশ্লেষণ করা হলে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পাওয়া যায় । মৌলিক পদার্থের সংখ্যা সীমিত হলেও যৌগিক পদার্থের অসীম সংখ্যক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

মিশ্র পদার্থ (compound matter)

বিভিন্ন মৌলিক বা যৌগিক অণুর মিশ্রণে যে পদার্থ তৈরি হয়, তাকে মিশ্র পদার্থ বলা হয়। যেমন— বাতাস।

Content added By
Promotion