মাদকাসক্তির কুফল: প্রতিরোধে করণীয়
(প্রবন্ধ রচনা)মাদকাসক্তির কুফল: প্রতিরোধে করণীয়
বর্তমান বিশ্ব সভ্যতা যে কয়টি মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন তার মধ্যে মাদকাসক্তি অন্যতম। বিশ্ব জুড়ে আজ মাদকাসক্তি একটি জটিল সামাজিক ব্যাধিরূপে বিস্তার লাভ করেছে। আমাদের সমাজে এই দূরারোগ্য ব্যাধির তীব্রতা আরো বেশি প্রবল। এর শিকার হয়ে প্রতিটি দেশের যুব সমাজ তাদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। দিন যত যাচ্ছে এর ভয়াবহতা আরো বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এখনই উচিত মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে দৃঢ় অঙ্গিকারবদ্ধ হওয়া।
মাদকদ্রব্য হচ্ছে সেসব দ্রব্য বা বস্তু যা গ্রহণের ফলে মানুষের স্বাভাবিক আচরণের পরিবর্তন ঘটে। শুধু তাই নয় এসব দ্রব্যের প্রতি তাদের এক ধরণের নেশার সৃষ্টি হয়। এই সকল মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে নেশা সৃষ্টি করাকে মাদকাসক্তি বলে। মাদকদ্রব্যের এই নেশা সম্পর্কে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন 'নেশা জাতীয় যে কোনো দ্রব্যই মদ, আর যাবতীয় মদই হারাম।' সকল প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম হওয়া সত্ত্বেও এসব দ্রব্যসামগ্রীর প্রতি মানুষের আকর্ষণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে 'মাদকাসক্তি হচ্ছে চিকিৎসা গ্রহণযোগ্য নয় এমন দ্রব্য অতিরিক্ত পরিমাণে ক্রমাগত বিক্ষিপ্তভাবে গ্রহণ করা এবং এসব দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া।
আধুনিক বিশ্বে বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য লক্ষ্য করা যায়। সভ্যতার বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মাদকদ্রব্যেরও যথেষ্ট পরিমাণে উন্নতি হয়েছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রকারের মাদকদ্রব্য দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে যেসব মাদকদ্রব্যের সেবন সর্বাধিক বেশি সেগুলো হলোঃ গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা, রেকটিফাইড স্পিরিট, মদ, বিয়ার, তাড়ি, পড়ুই, কোকেন, আফিম, মারিজুয়ানা, ভাং, ক্যানাবিস, হাসিস, ঘুমের ওষুধ, প্যাথেড্রিন ইনজেকশন ইত্যাদি।
আধুনিক বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কম-বেশি মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়। কোনো দেশে কম আবার কোনো দেশে অনেক বেশি। যেমন, গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল (লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড), গোল্ডেন ক্রিসেন্ট (গানিস্তান, ान ) ওয়েজ-এ তিন স্থানে পপি উৎপাদিত হয়। এই পপি ফুলের নির্যাস থেকে এ সর্বনাশা হেরোইন তৈরি হয়। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, জ্যামাইকা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, খানা, ইয়া কেনিয়া, ক্ষ আফ্রিকা ও থাইল্যান্ডসহ ১১টি দেশে মারিজুয়ানা উৎপন্ন হচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকার পেরু, কলা, দেশ কোকেন উৎপাদনে বিখ্যাত। তাছাড়া এশিয়া মহাদেশের প্রায় অনেক দেশেই আফিম, হেরোইন ও হাসিস উৎপন্ন হয়। মাদকাসক্তির বহুবিধ কারণ রয়েছে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন কারণে মাদকাসক্তির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এ পর্যন্ত বিজ্ঞানী, গবেষক ও চিকিৎসকরা মাদকাসক্তির অন্তরালে বিভিন্ন কারণের কথা বলেছেন। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো-
মাদকাসক্তির অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো হতাশা। এই হতাশার করণেই ব্যক্তি তার নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। যার ফলে সাময়িকভাবে আত্মমুক্তির জন্য সর্বনাশা মাদকাসক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে।
মাদকাসক্তির জন্য সঙ্গদোষ আরেকটি মারাত্মক কারণ । নেশাগ্রস্থ বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে এটি বিস্তার লাভ করে। কৌতূহল মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ। অনেকেই মাদকাসক্তির ভয়াবহতা জেনেও কৌতূহলবশত মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে। অনেক সময় মানুষ মাদককে আনন্দ লাভের সহজ উপায় হিসাবে মাদকগ্রহণ করে এবং ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
তরুণদের মধ্যে মাদক গ্রহণের জন্য এটি অন্যতম কারণ। পরীক্ষায় ফেল, পারিবারিক কলহ, প্রেমে ব্যর্থতা, বেকারত্ব ইত্যাদি কারণে তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
ধর্মীয় মূল্যবোধ মানুষকে সচেতন করে তোলে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিচ্যুতি হওয়ার ফলে মাদকাসক্তির বিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় পরিবারে পিতা-মাতার নেশার অভ্যাস থাকে। ফলে তাদের সন্তান সহজেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
সুতরাং, সামগ্রিকভাবে হতাশা, আদর্শহীনতা, বিভ্রান্তি, বেকারত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয় ইত্যাদি কারণে মাদকাসক্তির সংখ্যা দিন দিন বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকাসক্তি এক ধরণের মরণ নেশা। মৃত্যুই তার একমাত্র গন্তব্যস্থল। মাদক গ্রহণ ধীরে ধীরে স্নায়ুকে দুর্বল করে তোলে। শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা আস্তে আস্তে নিঃশেষ করে দেয়। তাছাড়া ক্ষুধা ও যৌন অনুভূতি হ্রাস ঘটায়। মাদক গ্রহণে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসে। হৃদস্পন্দন দ্রুত হয় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। রাগান্বিতভাব, নিদ্রাহীনতা, উগ্রমেজাজ, ওজন হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ফলে স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতায় ক্ষতিকর প্রভাবসহ মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করলে এইচআইভি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এক কথায় মাদকাসক্ত মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। সারাবিশ্বে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও চোরাচালানের মাধ্যমে এর ব্যাপক প্রসার ঘটায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি এক মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। মাদকের নিষ্ঠুর ছোবলে অকালে ঝরে পড়ছে লক্ষ লক্ষ প্রাণ। অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে বহু তরুণের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। আমাদের দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাদকাসক্তির ধ্বংসাত্মক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হলো- মাদকদ্রব্যের অবৈধ পাচার আমাদের দেশের যুব সমাজের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করছে। যার ফলে যুব সমাজের বিরাট একটা অংশ অবচেতন ও অকর্মণ্য হয়ে পরছে।
মাদকাসক্তরা মাঝে মাঝে মাদকগ্রহণের জন্য চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ইত্যাদি বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে। যার ফলে মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে তারা মারাত্মকভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিবার ও সমাজে তারা বিভিন্ন সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়।
মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তির প্রভাবে আমাদের সমাজে পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ এবং এ সম্পর্কিত হতাশা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। পরিবারিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নষ্ট হয়। অস্বাভাবিক আচরণ করে।
মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বাহ্যিক আচরণ প্রকাশ পায়। যেকোনো ব্যাপারে তখন ব্যক্তির মধ্যে চরম নৈতিক অধপতন লক্ষ্য করা যায়। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ জীবনকে নষ্ট করছে। তাই দেখা যায় মাদকাসক্তি সমস্যা আমাদের দেশের শিক্ষার ওপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করছে।
মাদকদ্রব্যের এই সর্বনাশা ব্যবহার বর্তমান বিশ্বে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এ জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অপরিহার হয়ে পড়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা বাঞ্চনীয়-
→ মাদকদ্রব্য উৎপাদন ও আমদানি রোধ করার জন্য প্রতিরোধ কর্মসূচি আরো জোরদার করা।
→ মাদক চোরাচালান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা। সমাজের প্রত্যেক মানুষকেই এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করা।
→ বেকারত্ব হ্রাস করা এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা।
→ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য বইয়ে মাদকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা।
→ আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকরী ভূমিকা পালন করা।
→ সরকারি উদ্যোগ বন্ধি করা।
→ সভা, সমিতি, সেমিনার ও আলোচনার মাধ্যমে মাদক প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা।
→ মানক প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন করা।
মাদকাসক্তির প্রতিকার আন্দোলনে বাংলাদেশের ভূমিকা দিন দিন তরান্বিত হচ্ছে। আধুনিক (আমরা ধূমপান নিবারণ করি) সংস্থাটি মাদক নিরাময় আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদি গণমাধ্যমগুলোও সব সময় মাদক নিরাময়ে কাজ করছে। তারা সব সময় মাদকাসক্তির ভয়ানক পরিণাম নিয়ে বিভিন্ন নাটক প্রচার করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করছে। এছাড়া বাংলাদেশে বর্তমানে Narcotics Control Act ১৯৯০ চালু আছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ ও প্রতিবছর ২৬ জুন মাদকদ্রব্যের পাচার, অপব্যবহার বিরোধী দিবস পালন করে আসছে।
সভ্যতার এই আধুনিক যুগে মাদকাসক্তি হিংস্র রূপ ধারণ করেছে। এর ছোবলে হারিয়ে যাচ্ছে অজস্র তরুণ-তরুণীর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। এর প্রভাব বাংলাদেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করলে মাদকের অতল গর্ভে হারিয়ে যাবে আমাদের দেশের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। তাই মাদক প্রতিরোধের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ, সামাজিক প্রতিরোধ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা উচিত।
একজন লেখক তিনিই যিনি লেখেন। তবে সব লেখা লিখেই লেখক হওয়া যায় না। লেখক সব ধরনের হতে পারে। তবে সৃজনশীল লেখকই হচ্ছে আমাদের মূল কেন্দ্রবিন্দু। লেখক হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম একটি স্বাধীন সত্ত্বা।
একজন লেখক পুরোপুরি তার নিজের সত্ত্বার ওপরে বেঁচে থাকে। অনেকেই লেখক হবার সহজ উপায় খোঁজ করে। কিন্তু পড়তে পড়তে আর লিখতে লিখতেই শুধুমাত্র লেখক হওয়া যায়। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। লেখক অনেক ধরনের হতে পারে।
একজন সাংবাদিকও একজন লেখক। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, ছড়া, সাহিত্য, প্রবন্ধ, রম্য, ব্লগ সব ধরনের লেখা যারা লেখে তারাই লেখক। অনেকেই মস্তিষ্কের মধ্যে ওকটা লেখার শক্তি পেয়ে যায় আর অনেকে হয়ত শিখে শিখে লেখক হয়।
সমাজ সভ্যতা কখনোই পুরোপুরি একজন লেখকের পক্ষে থাকে না। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিপক্ষে চলে যায়। স্বাভাবিকভাবেই একজন লেখক তার কলমের আঘাতে জর্জরিত করতে চায় সকল অন্যায়, অপবাদ। তাই হয়ত বেঁধে যেতে পারে সংঘাত। কলমই হচ্ছে একজন লেখকের দাঁড়ানোর জায়গা। কলম ছাড়া লেখকের অস্তিত্ব বিলীন। তবে সবাইকে যে প্রতিবাদ লিখতে হবে এমন কোনো কথা। কেউ কেউ মনোরঞ্জনের জন্যও লেখে। অনেকে আবার চাটুকারিতা করতে লেখে। কেউ আবার কীভাবে পুরষ্কার তুলে নেওয়া যায় সেই ধান্দা করার জন্য লেখে।
একজন লেখক হয়ে উঠতে পারে ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্যকারী। সে কলমের ছোঁয়ায় প্রতিবাদ করতে অন্যায়ের আর ফুটিয়ে তুলবে ন্যায়ের কথা। লেখকের কলমের কালি প্রেরণার সুর হয়ে গান গাইবে। আর অশ্রুসিক্ত নয়নে হাসির ঝলক আনবে লেখকের কলম। একজন লেখকের প্রাণ তার লেখা, তার লেখার ভঙ্গি। সে তার লেখা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে পারবে অসুস্থ কোনো সভ্যতাকে। লেখক তার কলম দিয়ে জাগ্রত করতে পারবে মানুষের ভীতরে লুকিয়ে থাকা অদম্য সাহস।
একজন লেখক কল্পনাকে নিয়ে আসতে পারে বাস্তবে। আমাদের নিয়ে যেতে পারে কল্পনার গহীন বনে। লেখক আমাদের সবাক যুগ থেকে অবাক যুগে নিয়ে যেতে পারে মুহূর্তের মাঝেই। লেখক জাগাতে পারে প্রেম, লেখক জাগাতে পারে নতুন কাজের স্পৃহা।
অনেকেই মনে করে লেখকের সকল বিষয়ে দ্বায় আছে। কিন্তু লেখকের মূলত কারো কাছেই কোনো দ্বায় নেই। তার দ্বায় থাকে শুধু নিজের মনের কাছে, নিজের বিবেকের কাছে, নিজের সুপ্ত চেতনার কাছে। সমাজ কি ভাববে তা নিয়ে লেখক মাথা ঘামাবে না। লেখক ভয়ে নাথা নোয়াবে না। লেখক যতদিন বাঁচবে বীরের মতোই বাঁচবে।
সারা বিশ্বেই লেখকরা নির্যাতনের শিকার হয়। অনেকেই বলে থাকে লিখে কিছুই হয় না। তাই যদি হতো তাহলে লেখার জন্য লেখকের শাস্তি হতো না। লেখকের ফাঁসি হতো না।
লেখকের কলমে অনেক জোর। সেই জোর ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিতে পারে যেকোনো কিছু। বিশেষ করে সাংবাদিকরা বিশ্বজুড়ে নির্যাতিত হয় অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে। শাস্তি, সাজা বহু কিছু তাদের সহ্য করতে হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখলে হুমকি আসে, হামলা মামলা বহু ঘটনাই ঘটে। কারণ শাসক, শোষক আর অন্যায়কারীদের অনেক ক্ষমতা। লেখকের সমাজের দায়মুক্তির জন্য জীবনও দিতে হয়। তাইতো একজন লেখক সমাজের শক্তি, সমাজের সম্পদ।
সাহিত্য হচ্ছে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি তথা মানব-অভিজ্ঞতার কথা বা শব্দের বাঁধনে নির্মিত নান্দনিক বহিঃপ্রকাশ। এই অর্থে গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি উচ্চতর গুণাবলি সমন্বিত বিশেষ ধরনের সৃজনশীল মহত্তম শিল্পকর্ম। সাহিত্য-শিল্পীগণ যখন ‘অন্তর হতে বচন আহরণ’ করে আত্মপ্রকাশ কলায় ‘গীতরস ধারা’য় সিঞ্চন করে ‘আনন্দলোকে’ নিজের কথা- পরের কথা- বাইরের জগতের কথা আত্মগত উপলব্ধির রসে প্রকাশ করেন- তখনই তা হয়ে ওঠে সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের কথায় “বহিঃপ্রকৃতি এবং মানব-চরিত্র মানুষের মধ্যে অনুক্ষণ যে আকার ধারণ করিতেছে, যে-সঙ্গীত ধ্বনিত করিয়া তুলিতেছে, ভাষা-রচিত সেই চিত্র এবং সেই গানই সাহিত্য।…সাধারণের জিনিসকে বিশেষভাবে নিজের করিয়া – সেই উপায়ে তাহাকে পুনরায় বিশেষভাবে সাধারণের করিয়া তোলাই হচ্ছে সাহিত্যের কাজ।” [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাহিত্য] সাহিত্য সত্য-সুন্দরের প্রকাশ হিসেবে প্রবহমাণ সময়ে যা ঘটে – সে-সবের মধ্য থেকে যা মহৎ, যা বস্তুসীমাকে ছাড়িয়ে বাস্তবাতীত প্রকাশ করে, যা জীবনের জন্য কল্যাণময় এবং মহৎ আদর্শের দ্যোতক তাকেই প্রকাশ করে। আসলে মহৎ সাহিত্য তাই- যা একাধারে সমসাময়িক-শাশ্বত-যুগধর্মী-যুগোপযোগী-যুগোত্তীর্ণ। সাহিত্য কেবল পাঠককে আনন্দ দেয় না- সমানভাবে প্রভাবিত করে পাঠক এবং সমাজকে।
আভিধানিকভাবে ‘সহিতের ভাব’ বা ‘মিলন’ অর্থে ‘সাহিত্য’ হলো কাব্য, নাটক, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি সৃজনশিল্পের মাধ্যমে এক হৃদয়ের সঙ্গে অন্য হৃদয়ের সংযোগ স্থাপন; সাহিত্য¯্রষ্টা-সাহিত্যের সাথে পাঠকের এক সানুরাগ বিনিময়। কিন্তু আভিধানিক অর্থের নির্দিষ্ট সীমায় সাহিত্যের স্বরূপ-গতি-প্রকৃতি-বৈচিত্র্য ও বিস্তৃতির সম্যক ধারণা দেওয়া যেমন অসম্ভব, কোনো বিশেষ সংজ্ঞায় তাকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়াও তেমন দুঃসাধ্য। বাচ্যার্থ ও ব্যঞ্জনার্থর সীমাকে অতিক্রম করে নানা রূপে, রসে, প্রকরণ ও শৈলীতে সাহিত্যের নিরন্তর যাত্রা সীমা থেকে অসীমে। প্রত্যক্ষ সমাজপরিবেশ তথা সমকালীন বাস্তব পারিপার্শ্বিক, নিসর্গপ্রীতি ও মহাবিশ্বলোকের বৃহৎ-উদার পরিসরে ব্যক্তিচৈতন্য ও কল্পনার অন্বেষণ ও মুক্তি- আর এইভাবেই শ্রেণিবিভাজন, নামকরণ ও স্বরূপমীমাংসার প্রচেষ্টাকে ছাপিয়ে উঠে সাহিত্যের যাত্রা সীমাহীনতায়। প্রকৃত সাহিত্য তাই যেমন তার সমসময় যা যুগমুহূর্তের, তেমনই তা সর্বকালের সর্বজনের। মার্কসবাদী সাহিত্যতত্ত্বে বাস্তব সমাজজীবনকে ‘ভিত্তি’ আর শিল্প-সাহিত্যকে সমাজের উপরিকাঠামোর [ঝঁঢ়বৎংঃৎঁপঃঁৎব] অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। সাহিত্যের মৌল উপকরণসামগ্রী আহৃত হয় জীবনের ভা-ার থেকে- সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বৈরিতার বিচিত্র-অনিঃশেষ ভা-ার থেকে। সাহিত্যসৃষ্টির মূলে সক্রিয় যে সৃজনী-ব্যক্তিত্ব তা নিছক বিমূর্ত কোনো সত্তা নয়; আত্মপ্রকাশ ও মানবিক সংযোগ ও বিনিময়ের বাসনায় অনুপ্রাণিত সে সত্তা তার ভাব-ভাবনা, বোধ ও বিশ্বাসকে এক আশ্চর্য কৌশলে প্রকাশ করে জনসমক্ষে কোনো একটি বিশেষ রূপ-রীতি-নীতির আশ্রয়ে। ব্যক্তিক অনুুভূতি-যাপিতজীবন-মিশ্রকল্পনার জগৎ থেকেই সৃষ্টি হয় সাহিত্যের; যুগান্তরের আলোকবর্তিকা হিসেবে সাহিত্য সত্যের পথে সবসময় মাথা উঁচু করে থেকেছে- সত্যকে সন্ধান করেছে। আসলে সাহিত্য এমনি এক দর্পণ- যাতে প্রতিবিম্বিত হয় মানবজীবন, জীবনের চলচ্ছবি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, সমাজজীবনে ঘটমান ইতিহাস- ইতিহাসের চোরাস্রােত নানাবিধ কৌণিক সূক্ষ্মতায়।
সাধারণত আত্মপ্রকাশের বাসনা, সমাজ-সত্তার সঙ্গে সংযোগ কামনা, অভিজ্ঞতার আলোয় কল্পলোক নির্মাণ এবং রূপপ্রিয়তা- এই চতুর্মাত্রিক প্রবণতাই মানুষের সাহিত্য-সাধনার মৌল-উৎস। চতুর্মাত্রিক প্রবণতার [আত্মপ্রকাশের কামনা, পারিপার্শ্বিকের সাথে যোগাযোগ বা মিলনের কামনা, কল্প-জগতের প্রয়োজনীয়তা এবং সৌন্দর্য-সৃষ্টির আকাক্সক্ষা বা রূপমুগ্ধতা] মধ্যে সমাজসত্তার সঙ্গে সংযোগ-কামনা এবং অভিজ্ঞতার আলোয় কল্পলোক নির্মাণ- এই উৎসদ্বয়ের মধ্যে নিহিত রয়েছে সাহিত্য ও সমাজের মধ্যে আন্তর-সম্পর্কের প্রাণ-বীজ। সমাজ শিল্পীকে সাহিত্য-সাধনায় প্রণোদিত করে। ‘সহৃদয়-হৃদয় সংবাদ’এর মাধ্যমে সাহিত্যিকগণ লেখক-পাঠকের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেন- উভয়ের হৃদয়বীণার তারগুলোকে একই সুতায় গেঁথে দেন। এর কারণে সাহিত্য দেশ-কাল-সমাজের সীমা অতিক্রম করে সর্বসাধারণের হৃদয়কে আকর্ষণ করে। এর ফলে সাহিত্য হয়ে ওঠে সার্বজনীন-সর্বকালের মানুষের হৃদয়ের সামগ্রী এবং সাহিত্য¯্রষ্টাও হয়ে ওঠেন অনেক বড়। কিন্তু বর্তমান বাংলা সাহিত্যচর্চার গতি-প্রকৃতি, সমস্যা-সংকট-সমাধান কোন দিকে? এসব বিষয়ের সন্ধান- এ প্রবন্ধের অন্বিষ্ট।
লোকশিল্প
লোক শিল্প প্রতি টা মানুষের
(প্রবন্ধ লিখুন)আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধটি আমাদের লোককৃষ্টি গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে। লেখক এ প্রবন্ধে বাংলাদেশের লোকশিল্প ও লোক-ঐতিহ্যের বর্ণনা দিয়েছেন । এ বর্ণনায় লোকশিল্পের প্রতি তার গভীর মমত্ববোধের পরিচয় রয়েছে।
আমাদের নিত্যব্যবহার্য অধিকাংশ জিনিসই এ কুটিরশিল্পের ওপর নির্ভরশীল ।
শিল্পগুণ বিচারে এ ধরনের শিল্পকে লোকশিল্পের মধ্যে গণ্য করা যেতে পারে । পূর্বে আমাদের দেশে যে সমস্ত লোকশিল্পের দ্রব্য তৈরি হতো তার অনেকগুলোই অত্যন্ত উচ্চমানের ছিল। ঢাকাই মসলিন তার অন্যতম। ঢাকাই মসলিন অধুনা বিলুপ্ত হলেও ঢাকাই জামদানি শাড়ি অনেকাংশে সে স্থান অধিকার করেছে।
বর্তমানে জামদানি শাড়ি দেশে-বিদেশে পরিচিত এবং আমাদের গর্বের বস্তু। নকশি কাথা আমাদের একটি গ্রামীণ লোকশিল্প। এ শিল্প আজ বিলুপ্তপ্রায় হলেও এর কিছু কিছু নমুনা পাওয়া যায়। আপন পরিবেশ থেকেই মেয়েরা তাদের মনের মতো করে কীথা সেলাইয়ের অনুপ্রেরণা পেতেন । কাঁথার প্রতিটি সুচের ফোঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক-একটি পরিবারের কাহিনী, তাদের পরিবেশ, তাদের জীবনগাঁথা ।
আমাদের দেশের কুমোরপাড়ার শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ছাড়াও পোড়ামাটি দিয়ে নানা প্রকার শৌখিন দ্রব্য তৈরি করে থাকে। নানা প্রকার পুতুল, মূর্তি ও আধুনিক রুচির ফুলদানি, ছাইদানি, চায়ের সেট ইত্যাদি তারা গড়ে থাকে।
খুলনার মাদুর ও সিলেটের শীতলপাটি সকলের কাছে পরিচিত। আমাদের দেশের এই যে লোকশিল্প তা সংরক্ষণের দায়িত আমাদের সকলের । লোকশিল্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারি।
বাংলাদেশ, একটি দ্রুত উন্নতি লক্ষ্য নির্ধারণ করা দেশ, যা প্রচুর অর্থনৈতিক সম্পদের বেশিরভাগ সম্পদ নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ মৌলিকভাবে চারটি প্রধান উৎস থেকে আসে: জমি, কাজ, উদ্যোগ, এবং মানুষের কাজের দক্ষতা। এই সম্পদের বিকাশে বিভিন্ন রাজনৈতিক, আর্থিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের ভূমিকা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদের মূল স্তম্ভ হল কৃষি। দেশটি একটি প্রধানত কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির মূল হিসেবে প্রধানত শস্য ও ফসল চাষ প্রসঙ্গে বিকাশ হয়েছে। বাংলাদেশে প্রধানত ধান, পাট, মশুর ডাল, আখ, পটল, পেঁপে, তেল সহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। অত্যন্ত উচ্চ মানের খাদ্য সামগ্রী উৎপাদনের ফলে এই খাদ্য পণ্য রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক সম্পদের গড়াতে সাহায্য করে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উৎস হল প্রবৃদ্ধি ও শিক্ষাগত উন্নতি। বাংলাদেশে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব কমে আসছে এবং মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি করছে। বিশেষত, প্রযুক্তির আগমন এবং বিনিয়োগে বৃদ্ধি নেওয়া হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক সম্পদের উন্নতির পথে সাহায্য করছে।
অন্যান্য উৎস হিসেবে প্রযুক্তিবিদ্যা এবং সেবা অংশ গুলির অগ্রগতি আছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সম্পদ হল তার মানুষের চাকরিভার্থী শ্রমিকেরা। তাদের দক্ষতা, উদ্যোগ, ও সামর্থ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যদিও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদ উন্নতির পথে অনেক উত্সাহজনক প্রগতি হয়েছে, তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ র
য়েছে। প্রধানতঃ গরিব মানুষের জন্য আর্থিক সম্পদের অগ্রগতি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনও বেশিরভাগ লোকের মধ্যে বৃদ্ধির অভাব আছে। তাছাড়া, পরিবেশের সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সঠিক প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা প্রয়োজন।
পুনর্নির্মাণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পদের বিস্তার ও উন্নতি নিশ্চিত করতে পারে। সঠিক নীতি নির্ধারণ, উদ্যোগের বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত প্রবর্তন এবং শিক্ষাগত উন্নতি এমন পরিবর্তন নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে।
শেষ কথায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা দেশটির সমৃদ্ধি ও উন্নতির সাথে অবিভাজ্যভাবে সংযোগিত। একটি দ্রুত বৃদ্ধির উপায় হল সঠিক পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা এবং উদ্যোগের বৃদ্ধি করা। এই প্রস্তুতি নেওয়ার মাধ্যমে, বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক সম্পদ উন্নতির পথে আরও এগিয়ে যেতে পারে এবং তার মানুষের জন্য আরো উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে।