SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

নারীর ক্ষমতায়নে শিক্ষা ও পরিবার (প্রবন্ধ রচনা করুন)

Created: 11 months ago | Updated: 11 months ago

নারীর ক্ষমতায়নে শিক্ষা ও পরিবার 

ভূমিকাঃ আমাদের জাতীয় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল বলেন, “বিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যানকরঅর্ধেক তার করিয়ারে নারী অর্ধেক তার নর”

নারীকে পিছনে ফেলে পুরুষের পথচলা হবে মন্থর। রুদ্ধ হবে যত মহা কল্পনা ও পরিকল্পনার পথ। নারীকে ছাড়া সভ্যতার উন্নতি হবে না। মানব জাতির উন্নয়নে নারীর রয়েছে আকাশ ছোঁয়া অবদান। আজ সভ্যতার যে অগ্রগতি ও বিকাশ আমর দেখতে পাচ্ছি তা নারীকে ছাড়া সম্ভব ছিল না। তবে তাদের এই অবদান পুরুষ শাসিত সমাজে মূল্যায়ন পায় নি। ফলে যুগে যুগে নারীরা হয়েছে অবহেলিত, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত ও বঞ্চিত। তারা পায় নি তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহনের স্বাধীনতা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ইচ্ছে হলে নিজের বস্তুগত ও বুদ্ধিগত কোনো অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তাছাড়া নারীর ক্ষমতায়নে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজের ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার। আবার কখনও সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীর ক্ষমতায়নে নারীগণ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। পরিবার থেকে নারীদের পুরুষের কাছে নমনীয় হয়ে জীবন যাপনের শিক্ষা দেয়া হয়।

নারীর ক্ষমতায়ন বলতে কি বোঝায়ঃ প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতায়ন আসে মন থেকে। নারীর ক্ষমতায়ন বলতে নারীর স্বকীয়তা, নিরাপত্তা, নিজস্বতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা ইত্যাদি বস্তুগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশকে বোঝায়। নারী যদি তার জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীন হয় এবং নিজের চলার ক্ষেত্রে বা কর্মক্ষেত্রে নিরাপদে যেতে পারে, তবে এমন পরিবেশকে নারীর ক্ষমতায়ন বলা হয়। একে অন্যকে নিজের প্রতিপক্ষ না ভেবে সমাজের নারী পুরুষ সবাই যদি উদার হয় তবে নারীর ক্ষমতায়নে আর কোনো বাঁধা থাকবেনা ।

সংবিধানে নারীর অধিকারঃ সংবিধানের ১৯ (৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহনের অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। অনুচ্ছেদ ২৭ এ নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য থাকবে আইনের সমতা এবং আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার। অর্থাৎ আইনের দৃষ্টিতে নারী পুরুষের সমান অধিকার থাকবে। অনুচ্ছেদ ২৮ এর ১,২,৩,৪ এ সকলের সমান অধিকারের কথা আছে। আবার রাজনীতির ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ ৬৫ (৩) এ জাতীয় সংসদে নারীর জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে যদিও নারীর যথেষ্ট অধিকারের কথা বলা হয়েছে কিন্তু বাস্তব জীবনে এখনো তারা তাদের পূর্ণ অধিকার পায়নি।

নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্ববাসীর প্রচেষ্টাঃ নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এনেছে জাতিসংঘ । সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর সম্মান, নারীর শ্রমের মূল্যায়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালকে নারী বর্ষ এবং ১৯৭৫-৮৫ কে নারী দশক ঘোষণা করেছে। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিশ্ব নেতাদের একত্র করে বিশ্ব নারী সম্মেলনের আয়োজন করেছে। নারীদেরকে জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনগুলোতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যুক্ত করা হচ্ছে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, লেখা পড়া ও গবেষণামূলক কাজ ইত্যাদি বিষয়ে নারীর অবদানস্বরুপ, তাদেরকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। তাছাড়া আমরা দেখতে পাচ্ছি, নারীগণ পশ্চিমা ও উন্নত দেশগুলোতে পুরুষের সাথে সমানভাবে দেশ ও জাতির উন্নয়নে জোরাল ভূমিকা রাখছে। যেমন আমেরিকা, ফ্রান্স, বৃটেন, জাপান, চীন ও রাশিয়া ইত্যাদি দেশের নারীরা পুরুষের চেয়ে কর্মে দক্ষ কম নয়। তারাও বিজ্ঞান প্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণার মত বড় বড় অভাবনীয় কর্মক্ষেত্রে অবদান রেখে যাচ্ছে।

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপঃ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী এবং জাতীয় সংসদের স্পিকারও নারী। নারীর ক্ষমতায়নে দেশের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থা তথা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে। সরকার উল্লেখযোগ্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নরূপ:

  • নারীদের লেখা পড়ায় এগিয়ে নিতে তাদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের উপবৃত্তির ব্যবস্থা ।
  • বিভিন্ন সময় নারীদের জন্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩০ লাখ নারী গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।
  • নারীদের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য নারী উদ্যোক্তাদের নাম মাত্র সুদে ঋনের ব্যবস্থা চাকুরির ক্ষেত্রে নারী কোঠার ব্যবস্থা।
  • প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬০ নারী কোটার ব্যবস্থা।
  • তথ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন ভিত্তিক লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের সাথে একজন নারী নিয়োগের কথা বলা হয়েছে ।
  • সংসদে নারীর জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে।

নারীর ক্ষমতায়নে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাঃ শিক্ষার অভাবের কারণে নারীর ক্ষমতায়ন অনেক বেশি বাঁধা প্রাপ্ত হয়। নারীরা পর্যাপ্ত শিক্ষা গ্রহণ না করার ফলে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে অজ্ঞ থেকে যায়। নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার কারণে পরনির্ভর হয়ে জীবন যাপন করে। নারী অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে সামাজিকীকরণের যে কুশিক্ষা নারীরা লাভ করেছে তা অন্য নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে মনে করে। যখন পাশের ঘরের নারী পড়া শোনা করে বড় হতে চায় তখন তারা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। নারীর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ নারীরাই প্রথমে মানতে পারেনা। শিক্ষার দ্বারাই নারীর ক্ষমতায়নের বাস্ত বতা সম্ভব। কারণ শিক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমেই নারীরা তাদের ক্ষমতার ব্যাপারে সচেতন হতে পারবেন।

নারীর ক্ষমতায়নে পরিবারে ভূমিকাঃ পরিবার থেকে নারী ক্ষমতায়নের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবারই হলো শিক্ষার প্রথম স্কুল। সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামিপূর্ণ নীতির কারণে নারীরা তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছেনা; পরিবার থেকে এসকল কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে হবে। ইসলাম নারীকে নিরাপত্তার সাথে তার পরিপূর্ণ বিকাশ স্বাধনে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অধিকার দিয়েছে; পরিবারের উচিত এক্ষেত্রে সকলকে ধর্মীয় জ্ঞান লাভে উদ্বুদ্ধ করা, যার ফলে সকলেই নারীর অধিকার সম্পর্কে জানতে পারবে। পরিবার থেকেই নারীর পারিবারিক কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। ঘরের কাজ যেমন, রান্না বান্না, সন্তান পালন পালন ইত্যাদি, এসব কাজকে কোনো কাজ মনে করা হয় না। এটি নারীর প্রতি একটি বৈষম্যপূর্ণ চিত্তার প্রকাশ। পরিবার থেকে নারীকে তাদের কাজের মর্যাদা না দিলে নারীর ক্ষমতায়ন সর্বক্ষেত্রে বাঁধা প্রাপ্ত হবে।

নারীর ক্ষমতায়নে করণীয়ঃ নারীদেরকে কখনো পুরুষের প্রতিবন্ধক মনে করা যাবেনা। নারীদেরকে অধিকার বুঝিয়ে দিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে। ধর্মীয় গ্রন্থে নারীদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানে উল্লেখিত নারীর সব অধিকার নারীকে বাস্তবে দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আইনি সহায়তা দ্রুত দিতে হবে। এছাড়া সামাজিকতার কুসংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে নারীকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে। বাহিরে বের হতে সমস্যা হলে ঘরে বসে জাতীয় জীবনের উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নারীদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে। মিডিয়াকে নারীদের ভোগের পণ্য হিসেবে উপস্থান করা থেকে বিরত রাখতে হবে। নারীর সম্মান বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও নাটক সিনেমায় বজায় রাখতে হবে। সবার আগে নারীকে তাদের ক্ষমতায়নে এগিয়ে আসতে হবে এবং পারিবারিক পর্যায় থেকে পুরুষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এসব নীতি রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনে প্রয়োগ করলে, আশা করা যায় নারীর ক্ষমতায়নে আর কোনো অন্তরায় থাকবেনা।

উপসংহারঃ নারীর ক্ষমতায়ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নারীকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। নারীর প্রতি পুরুষের ইতিবাচক ধারণা আনতে হবে; এজন্য পরিবার থেকে নারীর অবদানের কথার স্বীকৃতি দিতে হবে। তাদের অধিকারগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের সচেষ্ট হতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন হলে পুরুষের ক্ষতি হবে, এমন মনোভাব মন থেকে দূর করতে হবে। নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার মাধ্যমে এবং নারীর উচ্চশিক্ষা লাভের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে।

11 months ago

বাংলা

Please, contribute to add content.
Content

Related Question

View More

একজন লেখক তিনিই যিনি লেখেন। তবে সব লেখা লিখেই লেখক হওয়া যায় না। লেখক সব ধরনের হতে পারে। তবে সৃজনশীল লেখকই হচ্ছে আমাদের মূল কেন্দ্রবিন্দু। লেখক হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম একটি স্বাধীন সত্ত্বা।

একজন লেখক পুরোপুরি তার নিজের সত্ত্বার ওপরে বেঁচে থাকে। অনেকেই লেখক হবার সহজ উপায় খোঁজ করে। কিন্তু পড়তে পড়তে আর লিখতে লিখতেই শুধুমাত্র লেখক হওয়া যায়। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। লেখক অনেক ধরনের হতে পারে।

একজন সাংবাদিকও একজন লেখক। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, ছড়া, সাহিত্য, প্রবন্ধ, রম্য, ব্লগ সব ধরনের লেখা যারা লেখে তারাই লেখক। অনেকেই মস্তিষ্কের মধ্যে ওকটা লেখার শক্তি পেয়ে যায় আর অনেকে হয়ত শিখে শিখে লেখক হয়।

সমাজ সভ্যতা কখনোই পুরোপুরি একজন লেখকের পক্ষে থাকে না। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিপক্ষে চলে যায়। স্বাভাবিকভাবেই একজন লেখক তার কলমের আঘাতে জর্জরিত করতে চায় সকল অন্যায়, অপবাদ। তাই হয়ত বেঁধে যেতে পারে সংঘাত। কলমই হচ্ছে একজন লেখকের দাঁড়ানোর জায়গা। কলম ছাড়া লেখকের অস্তিত্ব বিলীন। তবে সবাইকে যে প্রতিবাদ লিখতে হবে এমন কোনো কথা। কেউ কেউ মনোরঞ্জনের জন্যও লেখে। অনেকে আবার চাটুকারিতা করতে লেখে। কেউ আবার কীভাবে পুরষ্কার তুলে নেওয়া যায় সেই ধান্দা করার জন্য লেখে।

একজন লেখক হয়ে উঠতে পারে ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্যকারী। সে কলমের ছোঁয়ায় প্রতিবাদ করতে অন্যায়ের আর ফুটিয়ে তুলবে ন্যায়ের কথা। লেখকের কলমের কালি প্রেরণার সুর হয়ে গান গাইবে। আর অশ্রুসিক্ত নয়নে হাসির ঝলক আনবে লেখকের কলম। একজন লেখকের প্রাণ তার লেখা, তার লেখার ভঙ্গি। সে তার লেখা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে পারবে অসুস্থ কোনো সভ্যতাকে। লেখক তার কলম দিয়ে জাগ্রত করতে পারবে মানুষের ভীতরে লুকিয়ে থাকা অদম্য সাহস।

একজন লেখক কল্পনাকে নিয়ে আসতে পারে বাস্তবে। আমাদের নিয়ে যেতে পারে কল্পনার গহীন বনে। লেখক আমাদের সবাক যুগ থেকে অবাক যুগে নিয়ে যেতে পারে মুহূর্তের মাঝেই। লেখক জাগাতে পারে প্রেম, লেখক জাগাতে পারে নতুন কাজের স্পৃহা।

অনেকেই মনে করে লেখকের সকল বিষয়ে দ্বায় আছে। কিন্তু লেখকের মূলত কারো কাছেই কোনো দ্বায় নেই। তার দ্বায় থাকে শুধু নিজের মনের কাছে, নিজের বিবেকের কাছে, নিজের সুপ্ত চেতনার কাছে। সমাজ কি ভাববে তা নিয়ে লেখক মাথা ঘামাবে না। লেখক ভয়ে নাথা নোয়াবে না। লেখক যতদিন বাঁচবে বীরের মতোই বাঁচবে।

সারা বিশ্বেই লেখকরা নির্যাতনের শিকার হয়। অনেকেই বলে থাকে লিখে কিছুই হয় না। তাই যদি হতো তাহলে লেখার জন্য লেখকের শাস্তি হতো না। লেখকের ফাঁসি হতো না।

লেখকের কলমে অনেক জোর। সেই জোর ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিতে পারে যেকোনো কিছু। বিশেষ করে সাংবাদিকরা বিশ্বজুড়ে নির্যাতিত হয় অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে। শাস্তি, সাজা বহু কিছু তাদের সহ্য করতে হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখলে হুমকি আসে, হামলা মামলা বহু ঘটনাই ঘটে। কারণ শাসক, শোষক আর অন্যায়কারীদের অনেক ক্ষমতা। লেখকের সমাজের দায়মুক্তির জন্য জীবনও দিতে হয়। তাইতো একজন লেখক সমাজের শক্তি, সমাজের সম্পদ।

1 year ago

সাহিত্য হচ্ছে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি তথা মানব-অভিজ্ঞতার কথা বা শব্দের বাঁধনে নির্মিত নান্দনিক বহিঃপ্রকাশ। এই অর্থে গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি উচ্চতর গুণাবলি সমন্বিত বিশেষ ধরনের সৃজনশীল মহত্তম শিল্পকর্ম। সাহিত্য-শিল্পীগণ যখন ‘অন্তর হতে বচন আহরণ’ করে আত্মপ্রকাশ কলায় ‘গীতরস ধারা’য় সিঞ্চন করে ‘আনন্দলোকে’ নিজের কথা- পরের কথা- বাইরের জগতের কথা আত্মগত উপলব্ধির রসে প্রকাশ করেন- তখনই তা হয়ে ওঠে সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের কথায় “বহিঃপ্রকৃতি এবং মানব-চরিত্র মানুষের মধ্যে অনুক্ষণ যে আকার ধারণ করিতেছে, যে-সঙ্গীত ধ্বনিত করিয়া তুলিতেছে, ভাষা-রচিত সেই চিত্র এবং সেই গানই সাহিত্য।…সাধারণের জিনিসকে বিশেষভাবে নিজের করিয়া – সেই উপায়ে তাহাকে পুনরায় বিশেষভাবে সাধারণের করিয়া তোলাই হচ্ছে সাহিত্যের কাজ।” [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাহিত্য] সাহিত্য সত্য-সুন্দরের প্রকাশ হিসেবে প্রবহমাণ সময়ে যা ঘটে – সে-সবের মধ্য থেকে যা মহৎ, যা বস্তুসীমাকে ছাড়িয়ে বাস্তবাতীত প্রকাশ করে, যা জীবনের জন্য কল্যাণময় এবং মহৎ আদর্শের দ্যোতক তাকেই প্রকাশ করে। আসলে মহৎ সাহিত্য তাই- যা একাধারে সমসাময়িক-শাশ্বত-যুগধর্মী-যুগোপযোগী-যুগোত্তীর্ণ। সাহিত্য কেবল পাঠককে আনন্দ দেয় না- সমানভাবে প্রভাবিত করে পাঠক এবং সমাজকে।

আভিধানিকভাবে ‘সহিতের ভাব’ বা ‘মিলন’ অর্থে ‘সাহিত্য’ হলো কাব্য, নাটক, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি সৃজনশিল্পের মাধ্যমে এক হৃদয়ের সঙ্গে অন্য হৃদয়ের সংযোগ স্থাপন; সাহিত্য¯্রষ্টা-সাহিত্যের সাথে পাঠকের এক সানুরাগ বিনিময়। কিন্তু আভিধানিক অর্থের নির্দিষ্ট সীমায় সাহিত্যের স্বরূপ-গতি-প্রকৃতি-বৈচিত্র্য ও বিস্তৃতির সম্যক ধারণা দেওয়া যেমন অসম্ভব, কোনো বিশেষ সংজ্ঞায় তাকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়াও তেমন দুঃসাধ্য। বাচ্যার্থ ও ব্যঞ্জনার্থর সীমাকে অতিক্রম করে নানা রূপে, রসে, প্রকরণ ও শৈলীতে সাহিত্যের নিরন্তর যাত্রা সীমা থেকে অসীমে। প্রত্যক্ষ সমাজপরিবেশ তথা সমকালীন বাস্তব পারিপার্শ্বিক, নিসর্গপ্রীতি ও মহাবিশ্বলোকের বৃহৎ-উদার পরিসরে ব্যক্তিচৈতন্য ও কল্পনার অন্বেষণ ও মুক্তি- আর এইভাবেই শ্রেণিবিভাজন, নামকরণ ও স্বরূপমীমাংসার প্রচেষ্টাকে ছাপিয়ে উঠে সাহিত্যের যাত্রা সীমাহীনতায়। প্রকৃত সাহিত্য তাই যেমন তার সমসময় যা যুগমুহূর্তের, তেমনই তা সর্বকালের সর্বজনের। মার্কসবাদী সাহিত্যতত্ত্বে বাস্তব সমাজজীবনকে ‘ভিত্তি’ আর শিল্প-সাহিত্যকে সমাজের উপরিকাঠামোর [ঝঁঢ়বৎংঃৎঁপঃঁৎব] অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। সাহিত্যের মৌল উপকরণসামগ্রী আহৃত হয় জীবনের ভা-ার থেকে- সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বৈরিতার বিচিত্র-অনিঃশেষ ভা-ার থেকে। সাহিত্যসৃষ্টির মূলে সক্রিয় যে সৃজনী-ব্যক্তিত্ব তা নিছক বিমূর্ত কোনো সত্তা নয়; আত্মপ্রকাশ ও মানবিক সংযোগ ও বিনিময়ের বাসনায় অনুপ্রাণিত সে সত্তা তার ভাব-ভাবনা, বোধ ও বিশ্বাসকে এক আশ্চর্য কৌশলে প্রকাশ করে জনসমক্ষে কোনো একটি বিশেষ রূপ-রীতি-নীতির আশ্রয়ে। ব্যক্তিক অনুুভূতি-যাপিতজীবন-মিশ্রকল্পনার জগৎ থেকেই সৃষ্টি হয় সাহিত্যের; যুগান্তরের আলোকবর্তিকা হিসেবে সাহিত্য সত্যের পথে সবসময় মাথা উঁচু করে থেকেছে- সত্যকে সন্ধান করেছে। আসলে সাহিত্য এমনি এক দর্পণ- যাতে প্রতিবিম্বিত হয় মানবজীবন, জীবনের চলচ্ছবি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, সমাজজীবনে ঘটমান ইতিহাস- ইতিহাসের চোরাস্রােত নানাবিধ কৌণিক সূক্ষ্মতায়।

সাধারণত আত্মপ্রকাশের বাসনা, সমাজ-সত্তার সঙ্গে সংযোগ কামনা, অভিজ্ঞতার আলোয় কল্পলোক নির্মাণ এবং রূপপ্রিয়তা- এই চতুর্মাত্রিক প্রবণতাই মানুষের সাহিত্য-সাধনার মৌল-উৎস। চতুর্মাত্রিক প্রবণতার [আত্মপ্রকাশের কামনা, পারিপার্শ্বিকের সাথে যোগাযোগ বা মিলনের কামনা, কল্প-জগতের প্রয়োজনীয়তা এবং সৌন্দর্য-সৃষ্টির আকাক্সক্ষা বা রূপমুগ্ধতা] মধ্যে সমাজসত্তার সঙ্গে সংযোগ-কামনা এবং অভিজ্ঞতার আলোয় কল্পলোক নির্মাণ- এই উৎসদ্বয়ের মধ্যে নিহিত রয়েছে সাহিত্য ও সমাজের মধ্যে আন্তর-সম্পর্কের প্রাণ-বীজ। সমাজ শিল্পীকে সাহিত্য-সাধনায় প্রণোদিত করে। ‘সহৃদয়-হৃদয় সংবাদ’এর মাধ্যমে সাহিত্যিকগণ লেখক-পাঠকের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেন- উভয়ের হৃদয়বীণার তারগুলোকে একই সুতায় গেঁথে দেন। এর কারণে সাহিত্য দেশ-কাল-সমাজের সীমা অতিক্রম করে সর্বসাধারণের হৃদয়কে আকর্ষণ করে। এর ফলে সাহিত্য হয়ে ওঠে সার্বজনীন-সর্বকালের মানুষের হৃদয়ের সামগ্রী এবং সাহিত্য¯্রষ্টাও হয়ে ওঠেন অনেক বড়। কিন্তু বর্তমান বাংলা সাহিত্যচর্চার গতি-প্রকৃতি, সমস্যা-সংকট-সমাধান কোন দিকে? এসব বিষয়ের সন্ধান- এ প্রবন্ধের অন্বিষ্ট।

1 year ago

আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধটি আমাদের লোককৃষ্টি গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে। লেখক এ প্রবন্ধে বাংলাদেশের লোকশিল্প ও লোক-ঐতিহ্যের বর্ণনা দিয়েছেন । এ বর্ণনায় লোকশিল্পের প্রতি তার গভীর মমত্ববোধের পরিচয় রয়েছে।
আমাদের নিত্যব্যবহার্য অধিকাংশ জিনিসই এ কুটিরশিল্পের ওপর নির্ভরশীল ।

শিল্পগুণ বিচারে এ ধরনের শিল্পকে লোকশিল্পের মধ্যে গণ্য করা যেতে পারে । পূর্বে আমাদের দেশে যে সমস্ত লোকশিল্পের দ্রব্য তৈরি হতো তার অনেকগুলোই অত্যন্ত উচ্চমানের ছিল। ঢাকাই মসলিন তার অন্যতম। ঢাকাই মসলিন অধুনা বিলুপ্ত হলেও ঢাকাই জামদানি শাড়ি অনেকাংশে সে স্থান অধিকার করেছে।

বর্তমানে জামদানি শাড়ি দেশে-বিদেশে পরিচিত এবং আমাদের গর্বের বস্তু। নকশি কাথা আমাদের একটি গ্রামীণ লোকশিল্প। এ শিল্প আজ বিলুপ্তপ্রায় হলেও এর কিছু কিছু নমুনা পাওয়া যায়। আপন পরিবেশ থেকেই মেয়েরা তাদের মনের মতো করে কীথা সেলাইয়ের অনুপ্রেরণা পেতেন । কাঁথার প্রতিটি সুচের ফোঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক-একটি পরিবারের কাহিনী, তাদের পরিবেশ, তাদের জীবনগাঁথা ।

আমাদের দেশের কুমোরপাড়ার শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ছাড়াও পোড়ামাটি দিয়ে নানা প্রকার শৌখিন দ্রব্য তৈরি করে থাকে। নানা প্রকার পুতুল, মূর্তি ও আধুনিক রুচির ফুলদানি, ছাইদানি, চায়ের সেট ইত্যাদি তারা গড়ে থাকে।
খুলনার মাদুর ও সিলেটের শীতলপাটি সকলের কাছে পরিচিত। আমাদের দেশের এই যে লোকশিল্প তা সংরক্ষণের দায়িত আমাদের সকলের । লোকশিল্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারি।

1 year ago

আমাদের অর্থনৈতিক সম্পদ

 

বাংলাদেশ, একটি দ্রুত উন্নতি লক্ষ্য নির্ধারণ করা দেশ, যা প্রচুর অর্থনৈতিক সম্পদের বেশিরভাগ সম্পদ নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ মৌলিকভাবে চারটি প্রধান উৎস থেকে আসে: জমি, কাজ, উদ্যোগ, এবং মানুষের কাজের দক্ষতা। এই সম্পদের বিকাশে বিভিন্ন রাজনৈতিক, আর্থিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের ভূমিকা রয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদের মূল স্তম্ভ হল কৃষি। দেশটি একটি প্রধানত কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির মূল হিসেবে প্রধানত শস্য ও ফসল চাষ প্রসঙ্গে বিকাশ হয়েছে। বাংলাদেশে প্রধানত ধান, পাট, মশুর ডাল, আখ, পটল, পেঁপে, তেল সহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। অত্যন্ত উচ্চ মানের খাদ্য সামগ্রী উৎপাদনের ফলে এই খাদ্য পণ্য রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক সম্পদের গড়াতে সাহায্য করে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উৎস হল প্রবৃদ্ধি ও শিক্ষাগত উন্নতি। বাংলাদেশে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব কমে আসছে এবং মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি করছে। বিশেষত, প্রযুক্তির আগমন এবং বিনিয়োগে বৃদ্ধি নেওয়া হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক সম্পদের উন্নতির পথে সাহায্য করছে।

অন্যান্য উৎস হিসেবে প্রযুক্তিবিদ্যা এবং সেবা অংশ গুলির অগ্রগতি আছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সম্পদ হল তার মানুষের চাকরিভার্থী শ্রমিকেরা। তাদের দক্ষতা, উদ্যোগ, ও সামর্থ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

যদিও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদ উন্নতির পথে অনেক উত্সাহজনক প্রগতি হয়েছে, তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ র

য়েছে। প্রধানতঃ গরিব মানুষের জন্য আর্থিক সম্পদের অগ্রগতি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনও বেশিরভাগ লোকের মধ্যে বৃদ্ধির অভাব আছে। তাছাড়া, পরিবেশের সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সঠিক প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা প্রয়োজন।

পুনর্নির্মাণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পদের বিস্তার ও উন্নতি নিশ্চিত করতে পারে। সঠিক নীতি নির্ধারণ, উদ্যোগের বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত প্রবর্তন এবং শিক্ষাগত উন্নতি এমন পরিবর্তন নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে।

শেষ কথায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা দেশটির সমৃদ্ধি ও উন্নতির সাথে অবিভাজ্যভাবে সংযোগিত। একটি দ্রুত বৃদ্ধির উপায় হল সঠিক পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা এবং উদ্যোগের বৃদ্ধি করা। এই প্রস্তুতি নেওয়ার মাধ্যমে, বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক সম্পদ উন্নতির পথে আরও এগিয়ে যেতে পারে এবং তার মানুষের জন্য আরো উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে।

3 months ago
Promotion