জেনেছি সত্য বহু দিন মনে
মনে মুক্তির পথ মিশে গেছে জনগণে,
যেখানে লক্ষ লোকের রুক্ষ হাত
সৃষ্টির মাঝে নিয়োজিত দিনরাত,
যেখানে মানুষ দৈনন্দিন কাজে
প্রাণপাত করে দুঃস্বপ্নের মাঝে,
মাটিতে শিকড় গেড়ে যারা বেঁচে আছে,
আধমরা হয়ে পাষাণের রসে বাঁচে,
সেই জনতার দীপ্ত মিছিল ধরে
নবযুগ আসে রক্ত দিনের ভোরে।
আবুল হোসেন ১৫ই আগস্ট ১৯২২ সালে খুলনা জেলার ফকিরহাট থানার আডুডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এস.এম. ইসমাইল হোসেন। আবুল হোসেন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে বি.এ. সম্মান ও এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের তাঁর যুগ্ম সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করে ঢাকায় বসবাস করতেন। তাঁর কবিতায় দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধের স্বচ্ছন্দ প্রকাশ ঘটেছে । চিত্রময়তা ও শব্দের প্রয়োগকুশলতা তাঁর কবিতাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। উল্লেখযোগ্য কাব্য হচ্ছে : নববসন্ত, বিরস সংলাপ, হাওয়া তোমার কী দুঃসাহস, দুঃস্বপ্ন থেকে দুঃস্বপ্ন ইত্যাদি। ইকবালের কবিতা, বিভিন্ন ভাষার কবিতা, অন্য ক্ষেতের ফসল ইত্যাদি তাঁর অনুবাদ কাব্য। আবুল হোসেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, পদাবলী পুরস্কারসহ প্রচুর পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ২৯ জুন তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
জেনেছি সত্য ..... গেছে জনগণে – ‘জেনেছি সত্য' হলো এক ধরনের বিশ্বাস যা বহুদিন ধরে - মনের মাঝে কবি বহন করে চলেছেন। আর সে বিশ্বাসটি হলো মানুষের মুক্তির পথ জনগণের মাঝেই মিশে আছে। ‘জনগণ' বলতে সাধারণ খেটে-খাওয়া, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষকে বোঝানো হয়েছে। সেই জনগণের ভেতর থেকেই মুক্তির সোপান বেরিয়ে আসবে।
আধমরা হয়ে পাষাণের রসে বাঁচে - সমাজের খেটে-খাওয়া মানুষ, যাদের কর্মযজ্ঞেই এই পৃথিবী এত সুন্দর
সেই মানুষেরা সমাজে দু'বেলা খেতে পায় না, তাদের জীবনে কোনো রস নেই, বৈচিত্র্য নেই, যেন পাষাণের
মতো বা পাথরের মতো নীরস তাদের জীবন।
সেই জনতার দীপ্ত ... রক্ত দিনের ডোরে – খেটে খাওয়া মানুষ, জনতা নিজেদের ভাগ্যকে নিজেদের হাতে বদলানোর জন্য একদিন সোচ্চার হয়ে ওঠে, বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, রাজপথে নেমে আসে, মিছিল করে- এভাবে এক বৈপ্লবিক অবস্থার সৃষ্টি যখন করে তখনই নতুন যুগের সৃষ্টি হয়; সকল অত্যাচার নির্যাতন দূর হয়।
এই সভ্যতা গড়ে উঠেছে শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের পরিশ্রমের কারণে । যেখানে লক্ষ হাত একত্রিত হয় সেখানেই শক্তি দৃঢ়তর হয়; সেখানেই সৃষ্টির নতুন পথ হয় রচিত।যে মানুষ দুঃস্বপ্নের মধ্যেও দিনরাত কাজ করে, যারা শত বাধাকে উপেক্ষা করে মা ও মাটির টানে দেশের হিতার্থে নিয়োজিত, যারা অর্ধাহার-অনাহারেও দেশত্যাগ করে অন্যত্র চিরদিনের মতো চলে যায় না তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমী। সেই শ্রমজীবী, মেহনতি সাধারণ মানুষের কাতারে মিশে গেলেই জীবনের প্রকৃত আনন্দ পাওয়া সম্ভব। কবি মনে করেন, এটাই মুক্তির মৌল সত্য। কবিতাটিতে মানবমুক্তি ও প্রগতির চিরন্তন সে সত্যরূপ প্রকাশিত হয়েছে।
আরও দেখুন...