যে যাবে না সে থাকুক, চলো, আমরা এগিয়ে যাই।
যে-সত্য জেনেছি পুড়ে, রক্ত দিয়ে যে-মন্ত্র শিখেছি,
আজ সেই মন্ত্রের সপক্ষে নেবো দীপ্র হাতিয়ার।
শ্লোগানে কাঁপুক বিশ্ব, চলো, আমরা এগিয়ে যাই।
প্রথমে পোড়াই চলো অন্তর্গত ভীরুতার পাপ,
বাড়তি মেদের মতো বিশ্বাসের দ্বিধা ও জড়তা।
সহস্র বর্ষের গ্লানি, পরাধীন স্নায়ুতন্ত্রীগুলো,
যুক্তির আঘাতে চলো মুক্ত করি চেতনার জট ।
আমরা এগিয়ে যাবো শ্রেণিহীন পৃথিবীর দিকে,
আমাদের সাথে যাবে সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস,
অনার্যের উষ্ণ লহু, সংঘশক্তি, শিল্পে সুনিপুণ
কর্মঠ, উদ্যমশীল, বীর্যবান শ্যামল শরীর।
আমাদের সাথে যাবে ক্ষেত্রভূমি, খিলক্ষেত্র, নদী,
কৃষি সভ্যতার স্মৃতি, সুপ্রাচীন মহান গৌরব।
কার্পাশের দুকূল, পত্রোর্ন আর মিহি মসলিন,
আমাদের সাথে যাবে তন্তু-দক্ষ শিল্পীর আঙুল ।
চলো, আমরা এগিয়ে যাই। আমাদের সাথে যাবে
বায়ান্নর শহিদ মিনার, যাবে গণ-অভ্যুত্থান,
একাত্তর অস্ত্র হাতে সুনিপুণ গেরিলার মতো ।
আমাদের সাথে যাবে ত্রিশ লক্ষ রক্তাক্ত হৃদয় । (সংক্ষেপিত) )
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ১৬ই অক্টোবর ১৯৫৬ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বাগেরহাটের মোংলায়। ১৯৭৪ সালে তিনি ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে সম্মানসহ স্নাতক ও ১৯৮৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট’ ও ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ' গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। মূলত স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা কবিতায় উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদী কবি হিসেবে তাঁর আবির্ভাব। এছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন ও অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধের অসাধারণ এক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্য: উপদ্রুত উপকূল, ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম, মানুষের মানচিত্র, ছোবল ইত্যাদি। গীতিকার হিসেবেও তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন । ২১শে জুন ১৯৯১ সালে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর অকালপ্রয়াণ ঘটে।
পরাধীন- অন্যের অধীন। শ্রেণিহীন পৃথিবী- এমন এক পৃথিবী যেখানে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ থাকবে না। কর্মঠ- কাজে পারদর্শী, পরিশ্রমী।
উদ্যমশীল- আগ্রহ রয়েছে এমন। কৃষিসভ্যতার স্মৃতি- আমাদের এই বাংলা অঞ্চল কৃষি ক্ষেত্রে খুব উন্নত ছিলো। সেই উন্নত কৃষি সভ্যতার স্মৃতিকে মাথায় রাখার কথা বলা হয়েছে ।
‘মিছিল' কবিতাটি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ছোবল কাব্য থেকে সংকলন করা হয়েছে। এ কবিতায় কবি অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মিছিলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তিনি অনুধাবন করেছেন দেশকে এগিয়ে নেওয়ার মন্ত্রে পথ চলায় আমাদের ভয়হীন ও দৃঢ় হতে হবে। একটি শ্রেণিহীন সমাজ বিনির্মাণের সংগ্রাম ও মিছিলে এ দেশের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস । আমাদের রয়েছে গৌরবজনক কৃষিসভ্যতা, মসলিন কাপড়, কারুশিল্পের ঐতিহ্য। রয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তাক্ত স্মৃতি। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার মিছিলে এসব আমাদের প্রেরণার উৎস।
আরও দেখুন...