'আশা' কবিতার আলোকে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করো এবং পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিজের উত্তর সংশোধন করো।
১। 'আশা' কবিতায় কবি কী বলতে চেয়েছেন?
২। কবি মনে করেন, বিত্তসুখের দুর্ভাবনায় আয়ু কমে। তোমার মতে, অর্থবিত্তের সঙ্গে মানুষের আয়ু কমার কোনো সম্পর্ক আছে কি না?
৩। তোমার চারপাশের মানুষের মধ্যে কী কী ধরনের দুঃখ-কষ্ট তুমি দেখতে পাও। এগুলো দূর করার জন্য কী কী করা যেতে পারে, তার একটি তালিকা তৈরি করো।
১। 'আশা' কবিতার মূল ভাব মানুষের মহৎ গুণকে তুলে ধরা। যেসব মানুষ দুশ্চিন্তা করে না, অতিরিক্ত সঞ্চয় করে না, পরিশ্রম করতে দ্বিধা করে না, এবং যারা স্বার্থপর নয়, কবি তাদের ভালোবাসেন।
২। কবিতাটির চরণগুলোর শেষে বিশেষ ধরনের মিল রয়েছে। যেমন: প্রথম স্তবকে ১ম ও ৪র্থ লাইনে মিল আছে; দ্বিতীয় স্তবকে ১ম ও ৩য় এবং ২য় ও ৪র্থ লাইনে মিল আছে; আবার তৃতীয় স্তবকে ৩য় ও ৬ষ্ঠ লাইনে মিল দেখা যায়।
৩। কবিতাটি তাল দিয়ে পড়া যায়। তালগুলোর ব্যবধান কম। যেমন:
/আমি/সেই জগতে /হারিয়ে যেতে চাই,
/যেথায় গভীর-/নিশুত রাতে
/জীর্ণ বেড়ার /ঘরে
/নির্ভাবনায় মানুষেরা /ঘুমিয়ে থাকে/ভাই।
/যেথায় লোকে/সোনা-রুপায়
/পাহাড় জমায়/না,
/বিত্ত-সুখের/দুর্ভাবনায়
/আয়ু কমায়/না;
/যেথায় লোকে / তুচ্ছ নিয়ে
/তুষ্ট থাকে/ভাই।
৪। এই কবিতার লয় বা গতি দ্রুত। এটি একটি ছড়া জাতীয় কবিতা।
৫। কবিতাটিতে কিছু শব্দরূপের পরিবর্তন আছে। যেমন: যেখানে যেথায়, নিশীথ-নিশুত, মানুষকে মানুষেরে, জ্বালাতে-জ্বালতে ইত্যাদি।
সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৯২৬-১৯৪৭) বাংলা ভাষার জনপ্রিয় কবি। মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর কবিতায় বঞ্চিত, শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের প্রতি গভীর মমতা প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর রচিত বইগুলোর মধ্যে 'ছাড়পত্র', 'ঘুম নেই', 'পূর্বাভাস', 'অভিযান' ও 'হরতাল' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। 'ছাড়পত্র' কবিতাটি সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'ছাড়পত্র' কবিতার বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো। পড়ার সময়ে অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। এরপর সরবে আবৃত্তি করো।
যে শিশু ভূমিষ্ঠ হলো আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুম:
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
সে ভাষা বোঝে না কেউ,
কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।
আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা।
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের-
পরিচয়পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব—তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস।।
অঙ্গীকার: প্রতিজ্ঞা।
খর্বদেহ: ছোটো শরীর।
ছাড়পত্র: অনুমতিপত্র।
জঞ্জাল: আবর্জনা।
তিরস্কার: ভর্ৎসনা।
দুর্বোধ্য: যা সহজে বোঝা যায় না।
প্রতিজ্ঞা: অঙ্গীকার।
ভূমিষ্ঠ হওয়া: জন্মগ্রহণ করা।
মৃদু: অনুচ্চ।
আরও দেখুন...