জোয়ার – ভাটা (High Tide and Low Tide)
সমুদ্র এবং উপকূলবর্তী নদীর জলরাশি প্রতিদিনই কোনো একটি সময়ে ঐ জলরাশি ধীরে ধীরে ফুলে উঠছে এবং কিছুক্ষণ পরে আবার তা ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে। জলরাশির এরকম নিয়মিত স্ফীতি বা ফুলে ওঠাকে জোয়ার বা নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে। সমুদ্রের একই জায়গায় প্রতিদিন দুইবার জোয়ার ও দু’বার ভাটা হয়। উপকূলে কোন একটি স্থানে পর পর দুটি জোয়ার বা পর পর দুটি ভাটার মধ্যে ব্যবধান হলো ১২ ঘন্টা। প্রধানত দুটি কারণে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়। ১) চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব ২) পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দাতিগ শক্তি।
(১) চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব: মহাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী মহাকাশে বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র প্রভৃতি প্রতিটি জ্যোতিষ্ক পরস্পরকে আকর্ষণ করে। তাই এর প্রভাবে সূর্য চন্দ্র অপেক্ষা ২ কোটি ৬০ লক্ষ গুণ বড় হলেও পৃথিবী সূর্য হতে গড়ে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কিন্তু পৃথিবী থেকে চন্দ্রের গড় দূরত্ব মাত্র ৩৮.৪ লক্ষ কিলোমিটার। এ কারণেই পৃথিবীর ওপর সূর্যের আকর্ষণ শক্তি চন্দ্র অপেক্ষা অনেক কম। ফলে জোয়ার-ভাটার ব্যাপারে সূর্য অপেক্ষা চন্দ্রের প্রভাব বেশি। হিসাব করে দেখা গেছে যে, জোয়ার উৎপাদনে সূর্যের ক্ষমতা চন্দ্রের ৪৯ ভাগ। চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থিত হলে চাঁদ ও সূর্য উভয়ের আকর্ষণে জোয়ার অত্যন্ত প্রবল হয়।
(২) পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্রতিগ শক্তি: পৃথিবী নিজ মেরুরেখার চারদিকে অনবরত আবর্তন করে বলে কেন্দ্রিাতিগ শক্তি বা বিকর্ষণ শক্তির সৃষ্টি হয়। এই কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে পৃথিবীর প্রতিটি অণুই মহাকর্ষ শক্তির বিপরীত দিকে বিকর্ষিত হয় বা ছিটকে যায়। তাই পৃথিবীর কেন্দাতিগ শক্তির প্রভাবে যেখানে মহাশক্তির প্রভাবে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তার বিপরীত দিকে সমুদ্রের জল বিক্ষিপ্ত হয়েও জোয়ারের সৃষ্টি করে।