WI MAX- এর পূর্ণরূপ কি?

Created: 6 years ago | Updated: 6 months ago
Updated: 6 months ago

তারহীন মাধ্যম (Wireless Communication) হলো এমন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা, যেখানে তথ্য বা সংকেত স্থানান্তরের জন্য কোনো ফিজিক্যাল কেবল বা তার ব্যবহার করা হয় না। এটি রেডিও তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, ইনফ্রারেড, এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ করে। তারহীন যোগাযোগ বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এটি মোবাইল ফোন, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ সহজ করে তোলে।

তারহীন যোগাযোগের প্রধান উপাদান:

১. ট্রান্সমিটার (Transmitter):

  • ট্রান্সমিটার ডেটা সংকেত তৈরি করে এবং তা রেডিও তরঙ্গ বা অন্য মাধ্যমের মাধ্যমে প্রেরণ করে। এটি সংকেতকে মডুলেট করে এবং প্রেরণের জন্য একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে রূপান্তর করে।

২. রিসিভার (Receiver):

  • রিসিভার সংকেত গ্রহণ করে এবং তা ডিমডুলেট করে, অর্থাৎ সংকেতকে পুনরায় ডেটাতে রূপান্তর করে। এটি ট্রান্সমিটার থেকে আসা সংকেতের ফ্রিকোয়েন্সি শনাক্ত করে এবং সেটিকে ডেটা আকারে প্রক্রিয়াজাত করে।

৩. অ্যান্টেনা (Antenna):

  • অ্যান্টেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা রেডিও তরঙ্গ পাঠানো এবং গ্রহণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সংকেতকে প্রেরণের জন্য রেডিও তরঙ্গ তৈরি করে এবং রিসিভারের ক্ষেত্রে রেডিও তরঙ্গ গ্রহণ করে।

৪. মাধ্যম (Medium):

  • তারহীন যোগাযোগে রেডিও তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, ইনফ্রারেড, এবং স্যাটেলাইট মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। এই মাধ্যমগুলি সংকেত প্রেরণ এবং গ্রহণের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

তারহীন যোগাযোগের প্রকারভেদ:

১. রেডিও কমিউনিকেশন (Radio Communication):

  • রেডিও কমিউনিকেশন হলো রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদানের একটি পদ্ধতি। এটি মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, এবং রেডিও ব্রডকাস্টিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • উদাহরণ: এফএম রেডিও, এএম রেডিও, এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক।

২. মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশন (Microwave Communication):

  • মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশন রেডিও তরঙ্গের চেয়ে উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে, যা সাধারণত দীর্ঘ দূরত্বে এবং সরাসরি (লাইন-অফ-সাইট) যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়।
  • উদাহরণ: টেলিযোগাযোগ টাওয়ার, স্যাটেলাইট লিঙ্ক।

৩. ইনফ্রারেড কমিউনিকেশন (Infrared Communication):

  • ইনফ্রারেড কমিউনিকেশন ইনফ্রারেড রশ্মির মাধ্যমে কাজ করে এবং সাধারণত স্বল্প দূরত্বে ডিভাইসের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহৃত হয়।
  • উদাহরণ: রিমোট কন্ট্রোল, ইনফ্রারেড সেন্সর।

৪. স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন (Satellite Communication):

  • স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত স্যাটেলাইট ব্যবহার করে দীর্ঘ দূরত্বে যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালনা করে। এটি টেলিভিশন ব্রডকাস্ট, ইন্টারনেট, এবং গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS) এ ব্যবহৃত হয়।

৫. ওয়াই-ফাই (Wi-Fi):

  • ওয়াই-ফাই হলো তারহীন ইন্টারনেট প্রযুক্তি, যা রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে ডিভাইসগুলির সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। এটি সাধারণত বাড়ি, অফিস, এবং পাবলিক স্পেসে ব্যবহৃত হয়।
  • উদাহরণ: হোম রাউটার, পাবলিক হটস্পট।

৬. ব্লুটুথ (Bluetooth):

  • ব্লুটুথ হলো স্বল্প দূরত্বে ডিভাইস সংযোগের জন্য ব্যবহৃত একটি তারহীন প্রযুক্তি। এটি সাধারণত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, হেডফোন, এবং অন্যান্য ডিভাইসের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানে ব্যবহৃত হয়।

তারহীন যোগাযোগের সুবিধা:

১. সহজ এবং পোর্টেবল:

  • তারহীন যোগাযোগের ডিভাইস পোর্টেবল এবং সহজে বহনযোগ্য, যা ব্যবহারকারীদের মোবাইল এবং দূরবর্তী স্থানে সংযুক্ত থাকতে সহায়ক।

২. দ্রুত সংযোগ স্থাপন:

  • তারহীন যোগাযোগ দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম, যা তথ্য স্থানান্তরের সময় কমায় এবং কার্যকারিতা বাড়ায়।

৩. স্বল্প খরচে দীর্ঘ দূরত্বে যোগাযোগ:

  • স্যাটেলাইট এবং রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে দীর্ঘ দূরত্বে ডেটা প্রেরণ করা সম্ভব, যা অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় খরচ কমায়।

৪. নেটওয়ার্ক বিস্তার:

  • তারহীন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক দ্রুত এবং সহজে বিস্তৃত করা যায়। এর মাধ্যমে নতুন ডিভাইস সংযুক্ত করা এবং বিদ্যমান নেটওয়ার্ক বাড়ানো যায়।

তারহীন যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা:

১. সিগন্যাল বিঘ্ন (Signal Interference):

  • তারহীন যোগাযোগে রেডিও এবং মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ ব্যবহৃত হয়, যা অন্যান্য ডিভাইস এবং আবহাওয়া জনিত কারণে বিঘ্নিত হতে পারে।

২. নিরাপত্তা ঝুঁকি:

  • তারহীন নেটওয়ার্কে ডেটা নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে, যেমন হ্যাকিং বা ডেটা চুরি। এনক্রিপশন এবং সিকিউরিটি প্রোটোকল ব্যবহার না করলে সংযোগ দুর্বল হতে পারে।

৩. ব্যান্ডউইথ সীমাবদ্ধতা:

  • তারহীন যোগাযোগের জন্য নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি এবং ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন হয়, যা সীমাবদ্ধ হতে পারে। এতে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বৃদ্ধি পেলে ডেটা ট্রান্সফার স্লো হতে পারে।

৪. দূরত্বের সীমাবদ্ধতা:

  • স্বল্প দূরত্বে তারহীন প্রযুক্তি যেমন ব্লুটুথ বা ইনফ্রারেডের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায়, তবে দীর্ঘ দূরত্বের জন্য স্যাটেলাইট বা মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি প্রয়োজন।

তারহীন যোগাযোগের ব্যবহার:

১. মোবাইল কমিউনিকেশন:

  • মোবাইল নেটওয়ার্ক তারহীন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মানুষের মধ্যে দ্রুত সংযোগ স্থাপন করে।

২. ইন্টারনেট:

  • ওয়াই-ফাই এবং স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করে দ্রুত এবং সহজে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়।

৩. রেডিও এবং টেলিভিশন:

  • রেডিও এবং টেলিভিশন ব্রডকাস্ট তারহীন মাধ্যম ব্যবহার করে দূরবর্তী স্থানে অডিও এবং ভিডিও সংকেত প্রেরণ করে।

৪. গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS):

  • GPS স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নির্ধারণ এবং নেভিগেশন তথ্য প্রদান করে।

সারসংক্ষেপ:

তারহীন যোগাযোগ হলো এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে তথ্য বা সংকেত তারবিহীন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রেরণ করা হয়। এটি রেডিও তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, ইনফ্রারেড, এবং স্যাটেলাইট ব্যবহার করে কার্যকর হয় এবং মোবাইল কমিউনিকেশন, ইন্টারনেট, এবং টেলিভিশন ব্রডকাস্টিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও এটি অনেক সুবিধা প্রদান করে, তবে সিগন্যাল বিঘ্ন এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিও বিদ্যমান, যা ব্যবহারের সময় বিবেচনা করা প্রয়োজন।

Content added By
Content updated By
Promotion