রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দেশটির নাম হচ্ছে রাশিয়ান ফেডারেশন যা আয়তনের বিশ্বের সব থেকে বড় দেশ। তবে ১৯২২-১৯৯১ সালে এ দেশটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। মূলত এটি ছিল বিভিন্ন দেশ এবং অঞ্চল মিলে একটি ইউনিয়ন। যার অফিশিয়াল নাম ছিল ইউনিয়ন অব দ্য সোভিয়েত সোশালিস্ট রিপাবলিকস বা ইউএসএসআর। এটি ছিল ফেডারেল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। বর্তমানে এটি থেকে ১৫ টি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে, যার বৃহত্তম অংশের নাম হচ্ছে বর্তমান রাশিয়া। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম নেতা ছিলেন সোভিয়েত রাশিয়ান বিপ্লবী রাজনীতিবিদ এবং সরকারপ্রধান ভ্লাদিমির লেনিন। যিনি আদর্শগতভাবে একজন কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন, তার মতবাদ কে বলা হয় লেলিনবাদ মতবাদ। এর পরবর্তী কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন জোসেফ স্ট্যালিন। সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা এবং রাষ্ট্রপতি ছিলেন মিখাইল গর্বাচেভ।
ভৌগোলিকভাবে রাশিয়া হচ্ছে ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের অংশ, তবে বৃহত্তম অংশটি এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত।
দেশটির উত্তরে রয়েছে আর্কটিক মহাসাগর, পূর্বে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর। এছাড়াও রয়েছে বাল্টিক সাগর, কৃষ্ণ সাগর এবং ককেশাস অঞ্চল।
সাইবেরিয়া হচ্ছে দেশটির মধ্যভাগের দক্ষিণ থেকে উত্তর অঞ্চলের মধ্যে ভৌগলিক এলাকা যেখানে রয়েছে উরাল পর্বতমালা। তীব্র শীতের কারণে এখান থেকে বহু অতিথি পাখি বাংলাদেশ এসে থাকে।
আয়তনে বৃহত্তম হওয়ার কারণে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত এই দেশটির সাথে রয়েছে ষোলটি সার্বভৌম দেশের সাথে সীমান্ত যা বিশ্বে প্রথম, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন যা ১৪ টি দেশের সাথে আন্তর্জাতিক সীমান্ত।
রাশিয়ার রয়েছে ১১ টি টাইম জোন। যা বিশ্বে দ্বিতীয়, প্রথম স্থানে রয়েছে ফ্রান্স।
দেশটির একমাত্র দাপ্তরিক এবং জাতীয় ভাষা হচ্ছে রাশিয়ান। তবে অঞ্চলভেদে ভাষাটির কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়।
জাতিসত্তার ৮১% মানুষ হচ্ছে রাশিয়ান, ৪% তাতার।
তবে এখানকার ৭১% মানুষ রাশিয়ান অর্থোডক্স খ্রিস্টান, ১৫% ধর্মহীন এবং ১০% মুসলিম।
রাজধানী এবং সবথেকে জনবহুল নগরী হচ্ছে মস্কো। এটি ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত। মস্কোভা নদীর তীরে অবস্থিত এই নগরীতে রয়েছে মস্কো ক্রেমলিন (কেন্দ্রীয় সুরক্ষিত কমপ্লেক্স বর্তমানে যা রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন), রেড স্কয়ার (অন্যদিকে লাল কেল্লা পুরান দিল্লিতে), সেন্ট বাসিলস ক্যাথিড্রাল।
মস্কোর ক্রেমলিন এর রাজনীতিকে বলা হত ক্রেমলিনোলজি।
এখানে সরকার ব্যবস্থা হচ্ছে ফেডারেল প্রভাবশালী দলীয় আধা রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। প্রভাবশালী দলীয় বলতে একদলীয় ব্যবস্থা বুঝায় যারা বরাবর একই দল নির্বাচিত হয়ে থাকে।
দেশটির রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রপ্রধান এবং আইনত সরকারপ্রধান। যিনি দেশটির সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তি এবং সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি অতীতে কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। অতীতে তিনি কেজিবি, ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস ও রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। উল্লেখ্য কেজিবি হচ্ছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান সুরক্ষা সংস্থা।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন সরকারের চেয়ারম্যান এবং দেশের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এর অফিশিয়াল কর্মক্ষেত্রের নাম রাশিয়ান হোয়াইট হাউস।
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার উচ্চকক্ষের নাম ফেডারেশন কাউন্সিল এবং নিম্নকক্ষের নাম স্টেট দুমা।
বেরিং প্রণালী মাধ্যমে রাশিয়া তথা এশিয়া মহাদেশে এর সাথে উত্তর আমেরিকা তথা যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা স্টেট আলাদা হয়েছে।
একই সাথে এটির মাধ্যমে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর এবং আর্কটিক মহাসাগর সংযুক্ত হয়েছে।
কুড়িল দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে রাশিয়া এবং জাপানের বিরোধ রয়েছে। তবে শাখালিন দ্বীপ নিয়ে অতীতে জাপানের সাথে বিরোধ থাকলেও বর্তমানে এটি রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
রাশিয়ার সম্রাটদের ডাকা হতো জার নামে। প্রথম সম্রাট পিটার দি গ্রেট, যিনি দাড়ির উপর কর বসিয়েছিলেন। রাশিয়ার শেষ সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাস জার। জারতন্ত্রের পতন হয় রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে ১৯১৭ সালে।
রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয় ১৯১৭ সালে। রুশ বিপ্লবের মহান নায়ক ভাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন।
সাড়া জাগানো রুশ বিপ্লবের মেয়াদকাল ছিল ১০ দিন।
লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক দল ক্ষমতা দখল করে ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর।
USSR নামটি গৃহীত হয় ৩০ ডিসেম্বর ১৯২২। সোভিয়েত ইউনিয়নকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় ২১ ডিসেম্বর ১৯৯১। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে দেয়া হয় এবং প্রেসিডেন্ট গর্বাচেভ পদত্যাগ করেন ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর। USSR বিলুপ্ত হয় ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯১। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে রাষ্ট্র গঠিত হয় ১৫টি।
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে মস্কো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৫৩ সালের ৫ মার্চ।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা ‘ড্যাড অব অল বোম্বস’ এর আবিষ্কারক রাশিয়া।
অখণ্ড ইউরোপের প্রবক্তা মিখাইল গর্বাচেভ।
বিশ্বের প্রথম ভাসমান পারমাণবিক প্রকল্প নির্মাণ করেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশ ১৪টি ।
সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া) প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় ২৯ আগস্ট ১৯৪৯।