রক্ত (Blood)
রক্ত এক ধরণের তরল যোজক কলা। রক্তের উপাদান দুইটি। যথা- রক্তরস (৫৫%) এবং রক্তকণিকা (৪৫%)। রক্তের হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশকে রক্তরস বা প্লাজমা বলে। রক্তে ৩ ধরণের কণিকা রয়েছে। যথা- লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকা এবং অনুচক্রিকা। মানুষের শরীরের ওজনের ৭% রক্ত থাকে। পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে রক্তের পরিমাণ ৫-৬ লিটার। রক্ত সামান্য ক্ষারীয়। এর pH ৭.৩৫-৭.৪৫।
রক্তের কাজ
রক্তকণিকার কাজ + রক্তরসের কাজ = রক্তের কাজ
ক) রক্তকণিকার কাজ
লোহিত রক্ত কণিকা (Erythrocyte or Red Blood Cell) : লোহিত রক্তকণিকা অস্থিমজ্জায় তৈরি হয় এবং বয়ঃপ্রাপ্ত হলে প্লীহায় সঞ্চিত হয় ও এক পর্যায়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। লোহিত কণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না। লোহিত কণিকার গড় আয়ু ১২০ দিন (৪ মাস)। হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্ঝক পদার্থের উপস্থিতির জন্য রক্তের রঙ লাল হয়। মানুষের রক্তের লোহিত কণিকায় হিমোগ্লোবিন থাকে। কেঁচোর রক্তরসে হিমোগ্লোবিন থাকে। আরশোলার রক্ত সাদা বা বর্ণহীন। হিমোগ্লোবিন এর কাজ-
ক) প্রধানত অক্সিজেন এবং সামান্য পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে। খ) বাফার হিসাবে কাজ করে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হ্রাস পাওয়াকে রক্তশূন্যতা (Anaemia) বলে। ভিটামিন বি১২ এবং ফোলিক এসিড লোহিত কণিকার পূর্ণতা প্রাপ্তিতে সহায়তা করে। হিমোগ্লোবিন তৈরিতে প্রয়োজন হয় আমিষ এবং লৌহ। ভিটামিন বি১২ ফোলিক এসিড, আমিষ এবং লৌহ স্বল্পতা হলে রক্তশূন্যতা হয়।
শ্বেত কণিকা (White Blood Cell): শ্বেত কণিকা দুই প্রকার। যথা- দানাদার (নিউট্রোফিল, ইওসিনোফিল, বেসোফিল) এবং অদানাদার (লিস্ফোসাইট, মনোসাইট)। শ্বেত কণিকার গড় আয়ুষ্কাল কয়েক ঘন্ট থেকে কয়েক দিন। মানুষের শরীরে শ্বেতকণিকা এবং লোহিত কণিকার অনুপাত ১:৭০০। নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংস করে। ব্লাড ক্যান্সারে (Leukemia) রক্তের শ্বেত কণিকা অস্বভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এইডস রোগে রক্তের শ্বেত কণিকা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
অনুচক্রিকা (Platelets): দেহের কোনো অংশ কেটে গেলে অনুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। রক্ত জমাট বাঁধার ফ্যাক্টর: (Easy Tec: ফুল পড়ে টুপ করে)
ক) ফিব্রিনোজেন - ফুল
খ) প্রোথ্রোম্বিন - পড়ে
গ) টিস্যু থ্রোম্বোপ্লাস্টিন - টুপ
ঘ) ক্যালসিয়াম আয়ন - করে
রক্তে হেপারিন থাকায় দেহের অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধে না। ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধার ফ্যাক্টর তৈরিতে সাহায্য করে।
খ) রক্তরসের কাজ
ক. ক্ষুদ্রান্ত হতে খাদ্যসার (গ্লুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড) রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কলায় পৌছে।
খ. কলা হতে উৎপন্ন CO2 রক্তরসের মাধ্যমে ফুসফুসে পৌছায়।
গ. কলা হতে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ (ইউরিয়া, ইউরিক এসিড) রেচনের জন্য বৃক্কে নিয়ে যায়।
ঘ. রক্তরসের বাইকার্বনেট, ফসফটে বাফার অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।
ঙ. অন্তক্ষরা গ্রন্থি হতে উৎপন্ন হরমোন রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গে পৌছায়।