Job

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা শীর্ষক একটি রচনা লিখুন।

Created: 2 years ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago
Answer :

বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতিকে তথ্যপ্রযুক্তির অর্থনীতি বললে খুব একটা বাড়িয়ে বলা হয় না। এখানে রাষ্ট্র, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা একই তথ্য-সূত্রে গ্রথিত। একই হার্ডওয়ার ও সফটওয়ারে ধারণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে অর্থনীতির মূল উপাদানগুলোকে। বিশ্বের প্রধান প্রধান অর্থনীতির দিকে তাকালে তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশও ধীরে ধীরে তথ্যপ্রযুক্তির অনেক পথ পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্রিয়া-কর্মকে ধারণ করা হচ্ছে সফটওয়ারের সূক্ষ্মতন্ত্রে। এ ব্যাপারে অগ্রগতিও আশাপ্রদ। তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের কৃতী সন্তানরা দেশে-বিদেশে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন। 

সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। রূপকল্প বা ভিশন ২০২১ গ্রহণ করা হয়েছে, যার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ও কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বা প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচনে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে প্রযুক্তি ব্যবহারের আধুনিক দর্শন উপস্থাপন রূপকল্পের একটি বিশেষ দিক। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যন্ত ডিজিটাল রূপান্তর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক যোগাযোগ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। 

তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) মূল চালিকা শক্তি হল ইন্টারনেট, যা বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ামক। অন্য কথায় বর্তমান বিশ্ব অর্থ- ব্যবস্থাকে ইন্টারনেট অর্থনীতিও বলা হয়ে থাকে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বাভাবিক গতিশীলতার চেয়ে বহুগুণে বেশি ও ব্যাপক ক্রিয়াকর্মের সমাধান দেয়া সম্ভব হচ্ছে। বিপুল তথ্য-পরিসংখ্যানকে সমবেত করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব করে তুলছে। ইন্টারনেট অর্থনীতি বা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিতে প্রাইভেট ও পাবলিক সেক্টরের মধ্যে অসামঞ্জস্যগুলোর হ্রাস করা সহজ হয়েছে। পৃথিবীর বড় বড় প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি তাদের কর্পোরেট উৎপাদনশীলতা, উপার্জন বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে অধিক কর প্রদানেরও নিশ্চয়তা দিতে পারছে। এ ধরনের অর্থনীতির দক্ষ মানব সম্পদ উৎপানশীলতা বাড়ানোর সহায়ক হয়েছে। সরকারের আয় বাড়াতে তা ভূমিকা রাখছে। আর আয় বৃদ্ধি হলে তা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা এবং সমাজের বৈষম্য দূর করা সম্ভব হয়। এভাবে আইটি অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে পাবলিক ও প্রাইভেট উভয় সেক্টরের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস পাচ্ছে এবং উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। তবে এটা কেবলমাত্র উদার, সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত 'ডিজিটাল অর্থনীতির' মাধ্যমেই সম্ভব। 

ডিজিটাল অর্থনীতিই জাতীয় পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার সম্ভব করে তোলে। বিশ্বব্যাপী অবাধ তথ্য প্রবাহ ভোক্তা, সরবরাহকারী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে তথ্য-সূত্রে গ্রথিত করে। সবাই উপকৃত হয়। বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে যা বিশেষ ভূমিকা রাখে। ই-কমার্স বা ইলেক্ট্রোনিক বাণিজ্যের কারণে অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়। স্বল্প খরচে অধিক সেবাকর্ম পাওয়া যায় বলে সেবাকর্মের চাহিদা বেড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সিস্টেমেরও আয়তন বেড়ে ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে। ইলেক্ট্রোনিক বাণিজ্য বা ই-চ্যানেলে বিক্রয় থেকে যে আয় হয়, তা সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি ব্যয় মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকে। এ লক্ষ্যেই বিছবি, বিংসি, জিংজি, এ২ আই ইত্যাদি ডিজিটাল বা প্রযুক্তিগত ধারণা ও ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র ও দেশ-বিদেশের মধ্যে বহুমুখী সংযোগ স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। 

এ ডিজিটাল অর্থনীতিতে তথ্যপ্রযুক্তি বা ইন্টারনেট ব্যবহারের অনেক কাজ একসঙ্গে সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের হিসাব, লাইসেন্স ফি সংগ্রহ ও মনিটর, অপরাধ চিত্র সংগ্রহ, ভোট গণনা ফলাফল তৈরি, তথ্য প্রেরণ ইত্যাদি অসংখ্য কাজ অতি সহজে করা যাচ্ছে। 

ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সর্বত্রই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ঘরেও এখন ঢুকে পড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি। ইন্টানেটের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়ে পড়ছে। ই-কর্পোরেশন, ই-কমার্স, ই-মেইল ইত্যাদি এখন আমাদের  যোগাযোগ ও কর্মকাণ্ডকে সহজ করেছে। উন্নত বিশ্বে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে তাদের ব্যবসা রাতারাতি বেড়ে গিয়েছে। এমন ব্যাপক প্রবৃদ্ধি কোনো সময়ই হয়নি বা ছিল না। তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তারা তোতা, ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ গড়ে তুলছে। বিল গেটসের মাইক্রো সফট কোম্পানির বিশ্বজোড়া নাম। বারবার তার সম্পদের পরিমাণ পূর্বের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এভাবে বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যেও চ এসেছে তথ্যপ্রযুক্তির অবদান। সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবসা হচ্ছে। এ প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছার পেছনে তারা একথা ভালোভাবেই জানে যে, মধ্যবিত্ত আর সাধারণ ব্যবহারকারীরাই ব্যবসা- বাণিজ্যের পেছনের আসল শক্তি। তাই কম্পিউটার তথ্যপ্রযুক্তিকে উন্নত বিশ্বে আরও সহজলভ্য করার চেষ্টা চলছে। দাম কমানো হচ্ছে; ব্যবহার ব্যয়ও কমিয়ে একেবারে নাগালের মধ্যে আনা হয়েছে। আর মানুষও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কেননা, সবকিছুই এতে টাটকা পাওয়া যায়। ইন্টারনেটভিত্তিক বাণিজ্যে জনা-বিক্রয়, বিনোদন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদির খবরাখবর জোগান অতীব সহজসাধ্য ও সুবিধাজনক। কাগুজে সংবাদপত্রের চেয়ে এখন অনলাইন খবর সপ্তাহে বেশি বিনোদন, বেশি খবর ও পড়ার সুবিধা বেশি পাওয়া যায়। 

দেশে দেশে আন্তঃযোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে এখন তথ্যপ্রযুক্তিকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। পারস্পারিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয় এখন বলা যায় পুরোপুরিই তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর। ই-কর্পোরেশনের বিজ্ঞাপন চরিত্রও পাল্টিয়ে গিয়েছে। এখন গ্লামারের পরিবর্তে তথ্যকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, দৈনন্দিন জীবনযাপন সব ক্ষেত্রেই আইটি বা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যাপক পরিবর্তন আনছে। এর ক্রমবর্ধমান ইতিবাচক ভূমিকা লক্ষণীয়। বলা হচ্ছে, সম্পদের নয়, তথ্যের ব্যবস্থাপনাই হবে একুশ শতকের সৃজনশীল অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ওয়েব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। বোতাম টিপলেই গ্রাহক সব পণ্যের বিশদ বিবরণ জানতে পারছে। আর এ পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে অনেকে। নতুন শতকের অর্থনৈতিক বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করছেন। 

নীতি-নির্ধারক এবং নির্বাহীদের জন্যও নতুন শতক এক সত্যিকার চ্যালেঞ্জ বয়ে নিয়ে আসছে। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি বা ওয়েব ব্যবস্থাপনার কথাই সর্বাগ্রে প্রাধান্য পাচ্ছে। একজন অভিজ্ঞ ম্যানেজার বা নির্বাহীর পূর্বের সব অভিজ্ঞতাই অচল প্রমাণিত হয়েছে। নতুন করে নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল তাকে আয়ত্ত করতে হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার এটাই একমাত্র উপায়। উন্নত বিশ্ব অনেক আগেই তা বুঝতে শিখেছিল। কিন্তু আমরা অনেক বিলম্বে বুঝতে শুরু করেছি। এখানে আরও একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, তথ্যনির্ভর অর্থনীতিতে সঠিক তথ্য পরিবেশন করা একান্ত জরুরি। যারা যত বেশি সঠিক তথ্যনির্ভর, তাদের তত বেশি অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। একটা তথ্যনির্ভর নেটওয়ার্কের আওতায় ভোক্তা, ক্রেতা, সরবরাহকারী, ডিজাইনার, নির্বাহী, নকশাবিদ, উৎপাদক বা বাজারজাতকারী মোটকথা সবাই একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। কাজ হবে অতি দ্রুত এবং তাৎক্ষণিকভাবে। ফলশ্রুতিতে, অর্থনীতি গতি পাবে, প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ইনটেল কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান এন্ড্রু এস গ্রোভের ভাষায়, কাজের গতি ত্বরান্বিত হয়েছে, তথ্যের গতিপ্রবাহমানতা বেড়েছে। ভবিষ্যতেও এটা বাড়তে থাকবে।' ইন্টারনেটে পরিশেষে, আমাদের অর্থনীতিও ক্রমান্বয়ে তথ্যপ্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে, সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে এবং অপচয় রোধ করতে পারলে আমাদের প্রযুক্তিও সামর্থ্য অর্জন করবে। আমাদের অর্থনীতিও তথ্যপ্রযুক্তির সুফল । পেয়ে সত্যিকার তথ্য প্রযুক্তির অর্থনীতিতে উন্নীত হবে- সে প্রত্যাশা অমূলক নয়।

1 year ago

বাংলা

**'Provide valuable content and get rewarded! 🏆✨**
Contribute high-quality content, help learners grow, and earn for your efforts! 💡💰'
Content
Promotion