ব্লকচেইন (Blockchain)

মাইনিং কী এবং কেন প্রয়োজন

Latest Technologies - ব্লকচেইন (Blockchain) - Blockchain এবং মাইনিং | NCTB BOOK

মাইনিং কী?

মাইনিং হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে লেনদেন যাচাই (ভ্যালিডেশন) করা হয় এবং নতুন ব্লক তৈরি করে চেইনে যুক্ত করা হয়। এটি মূলত ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে মাইনাররা একটি জটিল গাণিতিক পাজল সমাধান করে এবং সেই সমাধানটি নেটওয়ার্কের অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের দ্বারা যাচাই করা হয়। মাইনিং প্রক্রিয়া ব্লকচেইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং নেটওয়ার্কে নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি বা টোকেন তৈরি করতে সাহায্য করে।

মাইনিং প্রক্রিয়া ব্লকচেইনের কনসেনসাস মেকানিজমের (যেমন প্রুফ অব ওয়ার্ক - PoW) ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। এখানে মাইনাররা প্রতিযোগিতা করে একটি নতুন ব্লক তৈরির জন্য এবং সফলভাবে ব্লক তৈরি করলে তারা পুরস্কার হিসেবে নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি পায়।

মাইনিংয়ের প্রয়োজনীয়তা

১. লেনদেনের যাচাই (Transaction Verification):

  • ব্লকচেইনে প্রতিটি লেনদেন মাইনিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাচাই করা হয়। মাইনাররা নিশ্চিত করে যে লেনদেনগুলো বৈধ এবং সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
  • প্রতিটি লেনদেন যাচাইয়ের পর ব্লক হিসেবে ব্লকচেইনে যুক্ত হয়, যা ব্লকচেইনের সুরক্ষা এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করে।

২. নতুন ব্লক তৈরি এবং ব্লকচেইন বজায় রাখা:

  • মাইনিংয়ের মাধ্যমে নতুন ব্লক তৈরি হয় এবং তা ব্লকচেইনে যোগ করা হয়। প্রতিটি ব্লক আগের ব্লকের সাথে যুক্ত থাকে, যা ব্লকচেইনকে একটি ধারাবাহিক এবং নিরাপদ চেইন হিসেবে তৈরি করে।
  • ব্লকচেইনের প্রতিটি নোড একই তথ্য সংরক্ষণ করে, যা ব্লকচেইনের বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখে।

৩. নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ:

  • মাইনিং ব্লকচেইন নেটওয়ার্ককে সুরক্ষিত রাখে। মাইনারদেরকে একটি জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে হয়, যা নেটওয়ার্কে ম্যালিসিয়াস বা অসদুদ্দেশ্য প্রয়াস প্রতিরোধ করে।
  • এই সমস্যার সমাধান করা খুবই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ, কিন্তু একবার সমাধান হয়ে গেলে এটি সহজেই যাচাই করা যায়। এর ফলে, ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের সুরক্ষা বেড়ে যায়।

৪. ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি (Cryptocurrency Generation):

  • মাইনিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি বা টোকেন তৈরি হয়। যখন মাইনাররা একটি ব্লক সফলভাবে মাইন করে, তারা পুরস্কার হিসেবে নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি পায়, যা ব্লকচেইনের আর্থিক সিস্টেমকে চালিত করে।
  • উদাহরণস্বরূপ, বিটকয়েন মাইনিংয়ের মাধ্যমে নতুন বিটকয়েন তৈরি হয় এবং এটি মাইনারদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

৫. বিকেন্দ্রীকরণ বজায় রাখা:

  • মাইনিং প্রক্রিয়া ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করে, কারণ এটি নেটওয়ার্কের সমস্ত নোডের (মাইনারদের) মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কোনো একক প্রতিষ্ঠান বা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ ব্লকচেইন নিয়ন্ত্রণ করে না।
  • মাইনাররা একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ব্লক তৈরি করতে এবং নেটওয়ার্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়, যা ব্লকচেইনের বিকেন্দ্রীকৃত নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

মাইনিংয়ের চ্যালেঞ্জ এবং অসুবিধা

১. উচ্চ বিদ্যুৎ খরচ:

  • মাইনিং একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা প্রচুর কম্পিউটেশনাল শক্তি এবং বিদ্যুৎ খরচ করে। বিশেষ করে প্রুফ অব ওয়ার্ক (PoW) ভিত্তিক ব্লকচেইনগুলোতে মাইনিংয়ের জন্য শক্তিশালী কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়, যা অনেক বিদ্যুৎ খরচ করতে পারে।

২. পরিবেশগত প্রভাব:

  • উচ্চ বিদ্যুৎ খরচের কারণে মাইনিং পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি কার্বন ফুটপ্রিন্ট বাড়ায় এবং পরিবেশগত সমস্যার কারণ হতে পারে।

৩. স্কেলেবিলিটি সমস্যা:

  • মাইনিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং শক্তি ব্লকচেইনের স্কেলেবিলিটিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। লেনদেনের সংখ্যা বাড়লে মাইনিং প্রক্রিয়ায় সময় বেশি লাগে, যা লেনদেন সম্পন্ন করার গতি কমিয়ে দেয়।
Content added By
Promotion