Skill

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মৌলিক ধারণা

Latest Technologies - কোয়ান্টাম কম্পিউটটিং (Quantum Computing)
91
91

কোয়ান্টাম মেকানিক্স হল পদার্থবিদ্যার একটি শাখা যা ক্ষুদ্রতম কণা (যেমন, ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, ফোটন) এবং তাদের আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। এটি মূলত এমন ঘটনা নিয়ে কাজ করে যা ক্লাসিক্যাল পদার্থবিদ্যার নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায় না। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কিছু মৌলিক ধারণা নিচে দেওয়া হল:

১. কোয়ান্টাইজেশন (Quantization):

কোয়ান্টাম মেকানিক্সে শক্তি, ভর, স্পিন ইত্যাদি নির্দিষ্ট কণাগুলির নির্দিষ্ট মানে সীমাবদ্ধ। এটি "কোয়ান্টাম" নামে পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ, একটি ইলেকট্রন একটি নির্দিষ্ট শক্তি স্তরে থাকতে পারে, যা নির্দিষ্ট মানে কোয়ান্টাইজ করা হয়। এর মানে, ইলেকট্রন একটি শক্তি স্তর থেকে অন্য স্তরে যাওয়ার সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি গ্রহণ বা নির্গমন করতে পারে।

২. ওয়েভ-পার্টিকল দ্বৈততা (Wave-Particle Duality):

কোয়ান্টাম মেকানিক্সে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল কণা যেমন ইলেকট্রন বা ফোটন, একসাথে তরঙ্গ এবং কণার মতো আচরণ করে। আলোর ক্ষেত্রে, এটি কখনও কখনও তরঙ্গের মতো আচরণ করে (যেমন তরঙ্গদৈর্ঘ্য, বেগ, তরঙ্গের হস্তক্ষেপ) এবং কখনও কখনও কণার মতো আচরণ করে (যেমন ফোটন)।

৩. হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি (Heisenberg's Uncertainty Principle):

এই নীতি অনুসারে, একটি কণার অবস্থান এবং গতি (ভরবেগ) একসাথে নির্ভুলভাবে মাপা সম্ভব নয়। অর্থাৎ, আমরা যদি কোনো কণার অবস্থান খুব স্পষ্টভাবে জানি, তাহলে তার গতি সম্পর্কে অনিশ্চয়তা বাড়ে, এবং বিপরীত। এটি কোয়ান্টাম সিস্টেমের আচরণের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য।

৪. সুপারপজিশন (Superposition):

কোয়ান্টাম সিস্টেমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল সুপারপজিশন। একটি কণা একাধিক অবস্থা বা অবস্থানে একসঙ্গে থাকতে পারে যতক্ষণ না সেটি পরিমাপ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ইলেকট্রন একাধিক শক্তি স্তরে থাকতে পারে বা একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে না থেকে বিভিন্ন বিন্দুর মধ্যে সুপারপজিশনে থাকতে পারে।

৫. এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট (Entanglement):

কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট হল এমন একটি অবস্থা যেখানে দুটি বা ততোধিক কণা একে অপরের সাথে জড়িত থাকে, এবং একটি কণার অবস্থা নির্ধারণ করা হলে অন্য কণাটির অবস্থাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়, যদিও তারা দূরে অবস্থান করুক। এই ঘটনা যোগাযোগের গতি থেকেও দ্রুত, যা "স্পুকি অ্যাকশন অ্যাট এ ডিসট্যান্স" নামে পরিচিত।

৬. শ্রোডিঙ্গারের তরঙ্গ সমীকরণ (Schrödinger's Wave Equation):

এটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি কেন্দ্রীয় সমীকরণ যা কণার তরঙ্গ ফাংশন নির্ধারণ করে। এই তরঙ্গ ফাংশন দ্বারা কণার সম্ভাব্য অবস্থান এবং গতিবেগ নির্ধারণ করা হয়। এটি কোয়ান্টাম সিস্টেমের আচরণ বিশ্লেষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই ধারণাগুলি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভিত্তি এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সহ অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তির পেছনের তত্ত্ব।

Content added By

কোয়ান্টাম মেকানিক্স কী এবং এর প্রাথমিক নিয়ম

776
776

কোয়ান্টাম মেকানিক্স পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা, যা প্রাথমিকভাবে পরমাণু এবং পরমাণুর ক্ষুদ্রতম কণার আচরণ এবং বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে। এটি প্রচলিত শাস্ত্রীয় পদার্থবিজ্ঞানের বিপরীতে কাজ করে যেখানে বৃহত্তর এবং দৃশ্যমান বস্তুর গতিবিধি এবং শক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মাধ্যমে ক্ষুদ্র কণা, যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন, এবং ফোটন, কিভাবে আচরণ করে তা ব্যাখ্যা করা হয়।

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রাথমিক নিয়ম:

১. কোয়ান্টাম অবস্থা (Quantum State): প্রতিটি কণা কোয়ান্টাম অবস্থায় থাকে, যা একটি গণনাযোগ্য এবং নির্দিষ্ট সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটি শ্রোডিঙ্গার সমীকরণের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।

২. অসংক্ষেপণশীলতা নীতি (Uncertainty Principle): ওয়ার্নার হেইজেনবার্গ প্রদত্ত এই নীতি বলে, কোনো কণার অবস্থান (Position) এবং গতি (Momentum) একই সাথে নির্ভুলভাবে মাপা যায় না। একটি কণার অবস্থান যত নির্ভুলভাবে জানা যাবে, তার গতি তত বেশি অনিশ্চিত হবে এবং তার বিপরীতও সঠিক।

৩. সুপারপজিশন নীতি (Superposition Principle): একটি কোয়ান্টাম সিস্টেম একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে একই সাথে, যতক্ষণ না কোনো মাপজোক করা হয়। এটি বোঝায় যে, কণাটি সম্ভাব্য সব অবস্থায় উপস্থিত থাকতে পারে, তবে পর্যবেক্ষণ করলে এটি একটি নির্দিষ্ট অবস্থায় পাওয়া যায়।

৪. কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট (Quantum Entanglement): দুটি বা ততোধিক কণা এমনভাবে যুক্ত হতে পারে যে, তাদের মধ্যে একটি পরিবর্তন করলে অপরটির অবস্থাও পরিবর্তিত হবে, এমনকি তারা কত দূরে অবস্থান করুক না কেন। এটিকে ‘স্পুকি অ্যাকশন অ্যাট এ ডিস্টেন্স’ বলা হয়।

৫. কোয়ান্টাম টানেলিং (Quantum Tunneling): কোয়ান্টাম কণা এমন বাধার মধ্য দিয়ে যেতে পারে যা শাস্ত্রীয় পদার্থবিজ্ঞানে অসম্ভব বলে মনে হয়। এটি ইলেকট্রনের মতো কণাদের ক্ষেত্রে ঘটে এবং এটি আধুনিক ইলেকট্রনিক্সের ভিত্তি।

৬. কোয়ান্টাইজেশন (Quantization): কোয়ান্টাম মেকানিক্সে শক্তি ও অন্যান্য মানসমূহ নির্দিষ্ট এবং পৃথক প্যাকেট বা কণায় (quanta) বিভক্ত হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ইলেকট্রন নির্দিষ্ট শক্তি মাত্রায় ঘূর্ণায়মান থাকে এবং এটি একটি মাত্রা থেকে অন্য মাত্রায় যেতে শক্তির নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্রহণ বা মুক্ত করে।

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই নিয়মগুলো আধুনিক পদার্থবিদ্যার অনেক প্রাথমিক নীতি ব্যাখ্যা করে এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সহ আরও বিভিন্ন প্রয়োগে ব্যবহৃত হয়।

Content added By

Superposition এবং Entanglement এর ধারণা

93
93

সুপারপজিশন (Superposition) এবং এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট (Entanglement) কোয়ান্টাম মেকানিক্সের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।

সুপারপজিশন (Superposition)

কোয়ান্টাম মেকানিক্সে সুপারপজিশনের ধারণা অনুসারে, একটি কণা (যেমন ইলেকট্রন বা ফোটন) একাধিক অবস্থায় বা অবস্থা একসঙ্গে থাকতে পারে যতক্ষণ না সেটি পরিমাপ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি কোয়ান্টাম বিট বা কুবিট একটি সুপারপজিশন অবস্থায় থাকতে পারে, যেখানে এটি একসঙ্গে "০" এবং "১" অবস্থায় থাকে, যতক্ষণ না সেটি পরিমাপ করা হয়।

সুপারপজিশন সম্পর্কে একটি সহজ উদাহরণ হল শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল। কল্পনা করুন একটি বাক্সে একটি বিড়াল আছে, এবং বাক্সে একটি যন্ত্র রয়েছে যা সমান সম্ভাবনায় বিড়ালটিকে জীবিত বা মৃত রাখতে পারে। যতক্ষণ না বাক্সটি খোলা হচ্ছে, বিড়ালটি একই সাথে জীবিত এবং মৃত—এটি একটি সুপারপজিশন। বাক্স খোলার পরেই আমরা একটি নির্দিষ্ট অবস্থায় বিড়ালটিকে দেখতে পাই।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে, সুপারপজিশন ব্যবহার করে একটি কুবিট একাধিক গাণিতিক গণনা একসাথে সম্পন্ন করতে পারে, যা ক্লাসিক্যাল বিটে সম্ভব নয়। এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের শক্তিশালীতার একটি প্রধান উৎস।

এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট (Entanglement)

এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট হল এমন একটি কোয়ান্টাম ঘটনা যেখানে দুটি বা ততোধিক কণা একে অপরের সাথে এতটাই জড়িত থাকে যে, তাদের মধ্যে যে কোনও একটির অবস্থা নির্ধারণ করা হলে অন্য কণাটির অবস্থাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়ে যায়, এমনকি তারা একে অপর থেকে আলোক বছরের দূরত্বেও থাকুক না কেন। এই ঘটনাটি ক্লাসিক্যাল পদার্থবিদ্যার নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায় না।

এন্ট্যাঙ্গেলমেন্টের একটি উদাহরণ হল দুটি ফোটন কণাকে একটি কোয়ান্টাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জড়িয়ে দেওয়া। এই কণাগুলি একে অপরের সাথে জড়িত হয়ে গেলে, তাদের মধ্যে যে কোনও একটি ফোটনের অবস্থা নির্ধারণ করা হলে, সঙ্গে সঙ্গে অন্য ফোটনের অবস্থা (উদাহরণস্বরূপ, স্পিন বা পোলারাইজেশন) নির্ধারিত হয়ে যায়। এটাকে বলা হয় "স্পুকি অ্যাকশন অ্যাট এ ডিসট্যান্স" (spooky action at a distance)।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফিতে এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট ব্যবহার করে দ্রুত ডেটা প্রসেসিং এবং নিরাপদ যোগাযোগ সম্ভব হয়। কোয়ান্টাম কুবিটগুলিকে এন্ট্যাঙ্গেল করা হলে, তাদের মধ্যে দ্রুত এবং নিরাপদ তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব হয়, যা ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারে সম্ভব নয়।

সংক্ষেপে:

  • সুপারপজিশন: একটি কণা একাধিক অবস্থা বা অবস্থায় একসাথে থাকতে পারে যতক্ষণ না এটি পরিমাপ করা হয়।
  • এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট: দুটি বা ততোধিক কণা একে অপরের সাথে এমনভাবে জড়িত থাকে যে, একটির অবস্থা নির্ধারণ করা হলে অন্যটির অবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়ে যায়।

এগুলোই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের দুটি অন্যতম মৌলিক ধারণা, যা কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষমতা এবং সম্ভাবনার মূলে রয়েছে।

Content added By

Qubit কী এবং এর কাজ

162
162

Qubit বা কোয়ান্টাম বিট হলো কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল ডাটা ইউনিট। এটি ক্লাসিকাল কম্পিউটারের বিটের একটি কোয়ান্টাম সংস্করণ। ক্লাসিকাল কম্পিউটারে বিট দুটি স্থিতির (০ বা ১) মধ্যে একটি ধারণ করে। কিন্তু কিউবিট ক্লাসিকাল বিটের মতো নয়; এটি একসাথে ০ এবং ১ উভয় অবস্থায় থাকতে পারে, যেটিকে সুপারপজিশন বলে।

কিউবিটের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য ও কাজ

১. সুপারপজিশন (Superposition): কিউবিট একটি সময়ে একসাথে ০ এবং ১ উভয় অবস্থায় থাকতে পারে। এটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সুপারপজিশন নিয়মের কারণে সম্ভব হয়। সুপারপজিশনের কারণে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার একই সাথে অসংখ্য গণনা করতে পারে, যা তাকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে তোলে।

২. এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট (Entanglement): কিউবিটদের মধ্যে এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট হতে পারে। যখন দুটি বা ততোধিক কিউবিট এন্ট্যাঙ্গেলড হয়, তখন তাদের একটি কিউবিটের অবস্থার পরিবর্তন সঙ্গে সঙ্গে অন্য কিউবিটের অবস্থাও পরিবর্তিত হয়, এমনকি তারা যত দূরেই থাকুক না কেন। এন্ট্যাঙ্গেলমেন্টের সাহায্যে কিউবিটরা একসাথে অনেক তথ্য আদান-প্রদান এবং প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে, যা কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের অন্যতম শক্তিশালী দিক।

৩. কোয়ান্টাম টানেলিং (Quantum Tunneling): কিউবিটগুলো কোয়ান্টাম টানেলিং ব্যবহার করে বাধা অতিক্রম করতে পারে, যা ক্লাসিকাল কম্পিউটারে অসম্ভব। এটি কিউবিটকে আরও দ্রুত এবং দক্ষভাবে গণনা করতে সহায়তা করে।

কিউবিট কীভাবে কাজ করে?

ক্লাসিকাল কম্পিউটারে একটি বিট হয় ০ বা ১ অবস্থায় থাকে। কিন্তু কিউবিট, কোয়ান্টাম কম্পিউটারে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে ০ এবং ১ উভয় অবস্থায় থাকতে পারে (সুপারপজিশনে থাকে)। এটি কোয়ান্টাম গেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেগুলো কিউবিটের অবস্থা পরিবর্তন করে এবং গণনার প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়।

কিউবিটকে বিভিন্ন ভাবে তৈরি করা যেতে পারে, যেমন:

  • সুপারকন্ডাক্টিং লুপস (যা বৈদ্যুতিক কারেন্ট ব্যবহার করে)।
  • আয়ন ট্র্যাপস (যা আয়নকে চুম্বকীয় বা বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে আটকে রাখে)।
  • ফোটন (আলো কণা)।

কিউবিটের এই ক্ষমতা সুপারপজিশন এবং এন্ট্যাঙ্গেলমেন্টের মাধ্যমে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গণনা ক্ষমতা এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে, এটি বড় এবং জটিল সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে পারে, যা ক্লাসিকাল কম্পিউটারের পক্ষে অসম্ভব।

সংক্ষেপে

কিউবিট হলো কোয়ান্টাম কম্পিউটারের একটি মৌলিক উপাদান যা ক্লাসিকাল বিটের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন, কারণ এটি সুপারপজিশন ও এন্ট্যাঙ্গেলমেন্টের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা, গতি, এবং জটিল সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা কিউবিটের এই বৈশিষ্ট্যগুলোর উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।

Content added By

উদাহরণসহ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বেসিক কনসেপ্ট

76
76

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বেসিক কনসেপ্টগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো আমাদের মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রতম কণাগুলির আচরণ এবং বৈশিষ্ট্য বুঝতে সাহায্য করে। নিচে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কিছু প্রধান ধারণা এবং সেগুলির উদাহরণ আলোচনা করা হলো:

১. কোয়ান্টাইজেশন (Quantization)

ধারণা: কোয়ান্টাম মেকানিক্সে কণা (যেমন ইলেকট্রন) নির্দিষ্ট শক্তি স্তরে থাকতে পারে। এগুলো ধারাবাহিকভাবে পরিবর্তন করতে পারে না, বরং "কোয়ান্টাম" নামে নির্দিষ্ট স্তরে পরিবর্তিত হয়।

উদাহরণ: ইলেকট্রন যখন একটি পরমাণুর কেন্দ্রীয় নিউক্লিয়াসকে প্রদক্ষিণ করে, এটি নির্দিষ্ট শক্তি স্তরে থাকতে পারে। যখন এটি এক স্তর থেকে অন্য স্তরে যায়, তখন এটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি (ফোটন) শোষণ বা নির্গমন করে।

২. ওয়েভ-পার্টিকল দ্বৈততা (Wave-Particle Duality)

ধারণা: কণা যেমন ইলেকট্রন বা ফোটন, একই সাথে কণার মতো এবং তরঙ্গের মতো আচরণ করে। এটি আলো এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র কণার বৈশিষ্ট্যকে ব্যাখ্যা করে।

উদাহরণ: "ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্ট" এ দেখা যায়, যখন আলো একটি পর্দার দিকে দুটি ফাঁকা স্লিটের মধ্য দিয়ে যায়, এটি একটি তরঙ্গের মতো হস্তক্ষেপ প্যাটার্ন তৈরি করে। কিন্তু যখন একই কণাগুলি একটি সময়ে একটি করে পরিমাপ করা হয়, তখন তারা একটি কণার মতো আচরণ করে।

৩. হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি (Heisenberg's Uncertainty Principle)

ধারণা: কোনও কণার অবস্থান এবং গতিবেগ একই সাথে নির্ভুলভাবে মাপা সম্ভব নয়। যদি একটির পরিমাপ খুব সঠিক হয়, অন্যটির অনিশ্চয়তা বেড়ে যায়।

উদাহরণ: যদি একটি ইলেকট্রনের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়, তাহলে তার গতিবেগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়, এবং বিপরীতক্রমে।

৪. সুপারপজিশন (Superposition)

ধারণা: কোয়ান্টাম মেকানিক্সে, একটি কণা একাধিক অবস্থা বা অবস্থানে থাকতে পারে যতক্ষণ না এটি পরিমাপ করা হয়।

উদাহরণ: একটি কুবিট (কোয়ান্টাম বিট) একসঙ্গে "০" এবং "১" অবস্থায় থাকতে পারে, এটি সুপারপজিশনের একটি উদাহরণ। পরিমাপ করার আগ পর্যন্ত এটি উভয় অবস্থার মিশ্রণে থাকে।

৫. এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট (Entanglement)

ধারণা: দুটি বা ততোধিক কণা এমনভাবে জড়িত থাকে যে, একটির অবস্থা নির্ধারণ করলে অন্যটির অবস্থাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়ে যায়, যদিও তারা দূরে অবস্থান করুক।

উদাহরণ: যদি দুটি ইলেকট্রন একে অপরের সাথে এন্ট্যাঙ্গেল থাকে এবং একটির স্পিন আপ করা হয়, তাহলে অন্যটির স্পিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাউন হয়ে যায়, যদিও তারা হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করুক।

৬. শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল (Schrödinger's Cat)

ধারণা: এই ধারণাটি সুপারপজিশন এবং পরিমাপের বিষয়টি বোঝাতে শ্রোডিঙ্গার নামে একজন বিজ্ঞানী একটি চিন্তন-প্রক্রিয়া তৈরি করেছিলেন।

উদাহরণ: ধরা যাক, একটি বাক্সের মধ্যে একটি বিড়াল আছে এবং সেখানে একটি রেডিওঅ্যাকটিভ পদার্থ আছে যা সমান সম্ভাবনায় বিড়ালটিকে জীবিত বা মৃত রাখতে পারে। বাক্সটি যতক্ষণ না খোলা হচ্ছে, বিড়ালটি জীবিত এবং মৃত উভয় অবস্থায় থাকে—এটি সুপারপজিশনের একটি উদাহরণ।

৭. শ্রোডিঙ্গারের তরঙ্গ সমীকরণ (Schrödinger's Wave Equation)

ধারণা: কোনও কোয়ান্টাম সিস্টেমের জন্য একটি তরঙ্গ ফাংশন নির্ধারণ করে। এটি তরঙ্গ ফাংশনের মাধ্যমে কণার অবস্থান এবং সম্ভাব্য শক্তি পরিসীমা গণনা করতে সাহায্য করে।

উদাহরণ: ইলেকট্রনের একটি নির্দিষ্ট শক্তি স্তরে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা নির্ধারণ করতে এই সমীকরণ ব্যবহার করা হয়। তরঙ্গ ফাংশন থেকে আমরা ইলেকট্রনের সম্ভাব্য অবস্থান নির্ধারণ করতে পারি।

এই ধারণাগুলো কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মূল ভিত্তি এবং এই ধারণাগুলো আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশেষ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি, এবং কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশনের মতো ক্ষেত্রগুলিতে প্রয়োগ হয়।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion