কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যেখানে একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার একটি নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান করতে পারে যা ক্লাসিক্যাল (পারম্পরিক) কম্পিউটার দ্বারা কার্যকরভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়, বা যেখানে ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার তা সমাধান করতে অসীম সময় নেবে।
গুগলের ঘোষণা:
২০১৯ সালের অক্টোবরে গুগল ঘোষণা করে যে তাদের সিকামোর কোয়ান্টাম প্রসেসর কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করেছে। গুগল বলেছিল যে সিকামোর ৫৩-কিউবিট প্রসেসর একটি নির্দিষ্ট এলগরিদম সম্পন্ন করতে ২০০ সেকেন্ড সময় নেয়, যা তারা দাবি করে সুপারকম্পিউটারকে ১০,০০০ বছর সময় লাগবে। এই কাজটি ছিল একটি 'দৈহিক এলগরিদম', যা একটি এলগরিদমের মাধ্যমে কোয়ান্টাম প্রক্রিয়া সিমুলেট করে।
গুগলের এই ঘোষণার পরে, আইবিএম তাদের সুপারকম্পিউটার স্যুমিটের (Summit) শক্তি তুলে ধরে দাবি করে যে, একই কাজটি স্যুমিট মাত্র ২.৫ দিনে করতে পারে। আইবিএমের দাবি ছিল যে গুগলের গবেষণাপত্রে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটি অতিরঞ্জিত এবং বাস্তবসম্মত নয়।
বর্তমানে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং দ্রুত বিকাশের পথে রয়েছে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে কাজ করছে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের উন্নয়নে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল, তবে এটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী হওয়ার জন্য আরও গবেষণা ও উন্নয়ন প্রয়োজন। কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জনের মাধ্যমে, ভবিষ্যতে আমরা নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে পারি, যা আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমস্যাগুলো সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি বলতে বোঝায় এমন একটি অবস্থা যেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয় যা প্রচলিত সুপারকম্পিউটারগুলো করতে পারে না, বা করতে অনেক বেশি সময় নেয়। গুগল এবং আইবিএম এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।
গুগলের প্রচেষ্টা:
গুগল ২০১৯ সালে তাদের সিকামোর (Sycamore) কোয়ান্টাম প্রসেসর ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার দাবি করে, যা তাদের মতে, বর্তমানের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারকেও ১০,০০০ বছর সময় নেবে। তাদের গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয় যে, সিকামোর ৫৩-কিউবিট কোয়ান্টাম প্রসেসর ২০০ সেকেন্ডে এই কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম।
আইবিএমের প্রতিক্রিয়া:
গুগলের এই দাবির পর, আইবিএম তাদের সুপারকম্পিউটার স্যুমিটের (Summit) সক্ষমতা উল্লেখ করে দাবি করে যে, একই কাজটি স্যুমিট মাত্র ২.৫ দিনে সম্পন্ন করতে পারে। তাদের মতে, গুগলের দাবি অতিরঞ্জিত এবং বাস্তবসম্মত নয়।
বর্তমান অবস্থা:
বর্তমানে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গবেষণা ও উন্নয়নে কাজ করছে। গুগল, আইবিএম, মাইক্রোসফট, এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। তবে, কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জনের জন্য আরও গবেষণা ও উন্নয়ন প্রয়োজন, এবং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
বর্তমান কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও উন্নয়নের ফলস্বরূপ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। নিচে কিছু প্রধান কোয়ান্টাম কম্পিউটার এবং তাদের ক্ষমতা তুলে ধরা হলো:
গুগলের সিকামোর (Sycamore):
গুগল ২০১৯ সালে তাদের ৫৩-কিউবিট কোয়ান্টাম প্রসেসর সিকামোরের মাধ্যমে কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জনের দাবি করে। তাদের মতে, সিকামোর একটি নির্দিষ্ট এলগরিদম ২০০ সেকেন্ডে সম্পন্ন করতে সক্ষম, যা সুপারকম্পিউটারকে ১০,০০০ বছর সময় নেবে।
আইবিএমের কুয়ান্টাম হার্ডওয়্যার:
আইবিএম তাদের কুয়ান্টাম কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন কিউবিট-সংখ্যক প্রসেসর তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, আইবিএমের কুয়ান্টাম হার্ডওয়্যার ৪৯-কিউবিট পর্যন্ত প্রসেসর তৈরি করেছে, যা বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চীনের জিয়ানজু বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ান্টাম কম্পিউটার:
চীনের জিয়ানজু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ২০২০ সালে একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করেন যা ৬৬-কিউবিট পর্যন্ত প্রসেসর সমর্থন করে। তাদের গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয় যে, এই কম্পিউটারটি জটিল কোয়ান্টাম সিমুলেশন করতে সক্ষম।
কানাডার ডি-ওয়েভ সিস্টেমস:
কানাডার ডি-ওয়েভ সিস্টেমস ৫,০০০-কিউবিট পর্যন্ত কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করেছে, যা বিভিন্ন শিল্প ও গবেষণায় ব্যবহৃত হচ্ছে। তাদের কম্পিউটারগুলি বিশেষ করে অপ্টিমাইজেশন ও মেশিন লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে কার্যকর।
মাইক্রোসফটের কুয়ান্টাম কম্পিউটার:
মাইক্রোসফট তাদের কুয়ান্টাম কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে টপোলজিক্যাল কিউবিট ব্যবহার করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করছে, যা উচ্চমাত্রার স্থায়িত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা প্রদান করে।
উল্লেখ্য, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষমতা কেবল কিউবিটের সংখ্যা দ্বারা নির্ধারিত হয় না; কিউবিটগুলির স্থায়িত্ব, ত্রুটি হার এবং কোয়ান্টাম গেটের কার্যকারিতা ইত্যাদি বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলি গবেষণা ও উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে, এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত ও কার্যকরী কোয়ান্টাম কম্পিউটার বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি (Quantum Supremacy) একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের প্রভাব এবং ক্ষমতা নির্দেশ করে। নিচে কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি এবং এর বিশ্লেষণ উদাহরণসহ প্রদান করা হল।
গুগলের সিকামোর প্রসেসর:
২০১৯ সালে গুগল তাদের সিকামোর (Sycamore) কোয়ান্টাম প্রসেসর ব্যবহার করে কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জনের দাবি করে। তারা একটি নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানে সিকামোরের সক্ষমতা প্রদর্শন করে:
কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য, যা প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, গবেষণা এবং শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে। গুগলের সিকামোর উদাহরণ এটির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করে এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ভবিষ্যতের দিকে একটি উন্মুক্ত দিগন্তের সূচনা করে।
কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি (Quantum Supremacy) হল এমন একটি অবস্থান যেখানে একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার একটি নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হয় যা প্রচলিত (ক্লাসিক্যাল) কম্পিউটার দ্বারা করা সম্ভব নয়, বা করতে অনেক বেশি সময় নেয়। অর্থাৎ, কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্দিষ্ট জটিল গাণিতিক কাজগুলো সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের চেয়ে অনেক দ্রুত।
২০১৯ সালে গুগল তাদের সিকামোর (Sycamore) কোয়ান্টাম প্রসেসরের মাধ্যমে কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জনের দাবি করে। গুগল জানিয়েছিল যে সিকামোর ৫৩-কিউবিট কোয়ান্টাম প্রসেসর একটি নির্দিষ্ট এলগরিদম সমাধান করতে ২০০ সেকেন্ড সময় নেয়, যা তাদের মতে সুপারকম্পিউটারকে ১০,০০০ বছর সময় লাগবে।
কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ক্ষেত্র এবং এটি প্রযুক্তির ভবিষ্যতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি শুধুমাত্র একাডেমিক গবেষণা নয়, বরং শিল্প, অর্থনীতি এবং সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন উদ্ভাবন ও উন্নয়ন সম্ভাবনা রয়েছে, যা আমাদের জীবনযাত্রায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
Read more