জাতকের বৈশিষ্ট্যগুলো লেখো
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
কোশলরাজের অন্নে প্রতিপালিত শীলমীমাংসক নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি ত্রিশরণাগত ছিলেন, সব সময় পঞ্চশীল পালন করতেন। তিনি বেদসহ বিভিন্ন শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। কোশলরাজ তাঁকে শীলবান হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করতেন। একদিন শীলমীমাংসক ভাবলেন, 'রাজা কী কারণে আমাকে সম্মান করেন, আমার বংশ গৌরবের জন্য নাকি আমার চরিত্রগুণের জন্য, তা জানা দরকার।' এরকম চিন্তা করে একদিন তিনি রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় রাজার ধনরক্ষকের ধনভান্ডার থেকে এক কার্যাপণ (টাকা) নিয়ে গেলেন। দ্বিতীয় দিন দুই কার্যাপণ নিয়ে গেলেন। ধনরক্ষক এটি দেখেও কিছু বললেন না। পরদিন এক মুষ্টি কার্যাপণ নিয়ে যাবার সময় ধনরক্ষক বললেন, 'আর্য, আপনি পরপর তিন দিন রাজার ধন চুরি করেছেন। 'এরকম বলে তিনি চিৎকার করে বললেন, রাজার ধন হরণকারীকে ধরেছি।' তা শুনে অনেক লোক একত্র হয়ে ব্রাহ্মণকে উত্তমমধ্যম দিয়ে রাজার কাছে নিয়ে গেলেন। রাজা অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে বললেন, 'ব্রাহ্মণ, তুমি এমন দুঃশীল কর্মে প্রবৃত্ত হয়েছ কেন?' এরপর রাজকর্মচারীকে নির্দেশ দিলেন, তাঁকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করার জন্য। তখন ব্রাহ্মণ বললেন, 'মহারাজ, আমি চোর নই। আপনি আমাকে খুবই সম্মান করেন। ভাবলাম, কেন আমাকে সবাই সম্মান করেন- এটি কি আমার বংশ, গোত্র কিংবা চারিত্রিক বিশুদ্ধতার কারণে, তা পরীক্ষা করার জন্য আপনার ধনভান্ডার থেকে অর্থ হরণ করেছিলাম। এখন বুঝতে পেরেছি যে, চারিত্রিক বিশুদ্ধতার জন্যই আমি সবখানে সম্মানিত হচ্ছি, বংশ গোত্রের জন্য নয়। কিন্তু গৃহে অবস্থান করে ভোগসম্পত্তিতে লিপ্ত থেকে জীবনে কখনো চরিত্রবান হতে পারব না। অতএব, আজই জেতবনে বুদ্ধের কাছে গিয়ে আমি প্রব্রজিত হব।'তারপর রাজার অনুমতি নিয়ে ব্রাহ্মণ শ্রাবস্তীতে গিয়ে বুদ্ধের কাছে প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা গ্রহণ করলেন। তিনি অচিরে অর্হত্ত্ব মার্গফলে প্রতিষ্ঠিত হলেন।
ব্রাহ্মণের অর্হত্ত্বলাভের কথা সঙ্ঘমধ্যে প্রচার হলো। তখন ভিক্ষুসঙ্ঘ ধর্মসভায় সমবেত হয়ে আলোচনা করতে লাগলেন, 'দেখ শীলমীমাংসক ব্রাহ্মণ রাজার উপস্থাপক ছিলেন। তিনি নিজের চরিত্রবল পরীক্ষা করতে গিয়ে শেষে রাজসভা ও সংসার ত্যাগ করে অর্হত্ত্বে উপনীত হয়েছে।' এভাবে ব্রাহ্মণের গুণকীর্তন করার সময় ভগবান বুদ্ধ সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁদের কথোপকথন শুনতে পেয়ে বললেন, 'কেবল এই ব্রাহ্মণই যে নিজের চরিত্রবল পরীক্ষাপূর্বক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে মুক্তি লাভ করেছেন তা নয়, পণ্ডিতেরাও অতীতকালে এভাবে করেছিলেন।' এরপর তিনি সেই অতীত কথা বলতে লাগলেন:
অতীতে বারাণসীরাজ ব্রহ্মদত্তের সময় বোধিসত্ত্ব তাঁর পুরোহিত ছিলেন। রাজা অন্যসব ব্রাহ্মণের চেয়ে তাঁকে বেশি সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন। এই রাজপুরোহিতও শীলমীমাংসক ব্রাহ্মণের মতো রাজ ধন হরণ করায় তাঁকে বন্দী করে রাজার কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি দেখতে পেলেন, পথে একস্থানে সাপুড়েরা সাপ নিয়ে খেলা করছে। তারা সাপ নিয়ে নিজেদের গলায় জড়াচ্ছে। তা দেখে ব্রাহ্মণ বললেন, 'ওহে, তোমরা সাপটাকে এমন করে ধরবে না, নিজেদের গলায়ও জড়াবে না; তোমাদের দংশন করতে পারে।' সাপুড়েরা বললেন, 'ঠাকুর, আমাদের সাপ শীলবান ও আচার সম্পন্ন, তোমার মতো দুঃশীল নয়। তুমি দুঃশীল, তাই রাজার ধন চুরি করেছ এবং সেজন্য রাজকর্মচারীরা তোমাকে বেঁধে রাজদরবারে নিয়ে যাচ্ছে।'
এ কথা শুনে বোধিসত্ত্ব ভাবলেন, 'যদি সাপ দংশন বা আঘাত না করে, তাহলেও লোকে তাকে শীলবান বলে, মানুষের তো কথাই নেই। ইহলোকে শীলই শ্রেষ্ঠ। তার চেয়ে উৎকৃষ্ট আর কিছু হতে পারে না।'
বোধিসত্ত্বকে রাজার কাছে নেওয়া হলে রাজা সব বিষয় জেনে তাঁকে শাস্তিদানের নির্দেশ দিলেন। বোধিসত্ত্ব আগের মতো বললেন, 'মহারাজ, আমি চোর নই। চারিত্রিক গুণ পরীক্ষা করার জন্য আমি এই অর্থ চুরি করেছি।
আমি বুঝতে পেরেছি যে, শীলই সর্বোৎকৃষ্ট, শীলের মতো আর কিছু নেই। কায়বাক্য মনে শীল পালন করলে অশেষ কল্যাণ সাধিত হয়।' এভাবে বোধিসত্ত্ব রাজাকে ধর্মতত্ত্ব শিক্ষা দিয়ে সব বিষয় বাসনা ত্যাগ করে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে হিমালয়ের পাদদেশে গিয়ে ধ্যানসাধনা বলে পঞ্চ অভিজ্ঞা ও অষ্ট সমাপত্তি লাভ করেন। মৃত্যুর পরে তিনি ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হন।
সমবধান: তখন রাজপুরোহিত ছিলেন বোধিসত্ত্ব এবং রাজপুরুষরা ছিলেন তাঁর শিষ্য।
উপদেশ: শীলগুনের সমান আর কিছু নেই।
আরও দেখুন...