এই অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবে
শীতকালে স্কুল আগে ছুটি হয়ে গেলে তোমরা নিশ্চয়ই কখনো না কখনো দুপুরে বিছানায় লেপমুড়ি দিয়ে গল্পের বই পড়েছ। বিছানার পাশে জানালা থাকলে দুপুরে প্রতিদিন জানালা দিয়ে বিছানায় রোদ পড়তে দেখবে। শীতের দুপুরে দেখবে সূর্যের আলো ও তাপ (যাকে আমরা এক সাথে রোদ হিসেবে জানি) বিছানায় সবচেয়ে বেশি জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। আবার গরমের সময় দেখবে একই সময়ে সূর্যের আলো বিছানার উপর অনেক কম জায়গা নিয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, সূর্যের আলোর দিকও পরিবর্তিত হয়ে গেছে। গ্রীষ্মকালে বিছানার সাথে যত ডিগ্রি কোণে সূর্যের আলো পড়ে শীতকালে তার চাইতে অনেক কম কোণে সূর্যের আলো পড়ে। আবার শীতকালে বিছানার বেশি অংশ জুড়ে সূর্যের আলো পড়লেও গরম সময়ের তুলনায় অনেক কম ভাপ পাওয়া যায়।
তেমনি গ্রীষ্ম বা বর্ষায় যেদিন খুব ঝড় বৃষ্টি হয় তার কিছু সময় কয়েক ঘন্টা বা দিন) আগে থেকে ভ্যাপসা গরম লাগে। এই সকল ঘটনা ঘটে আবহাওয়ার নানান পরিবর্তনের জন্য।
আবহাওয়া
আবহাওয়া ও জলবায়ু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিচিত দুটি শব্দ। প্রতিদিন টেলিভিশনের খবরে একটা অংশ থাকে আবহাওয়ার প্রতিবেদন। এছাড়া রেডিও, দৈনিক পত্রিকা এমনকি স্মার্টফোনেও আমরা প্রতিদিনের আবহাওয়ার প্রতিবেদন দেখতে পাই। এই প্রতিবেদনে আবহাওয়ার যে বিষয়গুলোর কথা জানানো হয় তার মধ্যে রয়েছে,
এগুলোকে বলা হয় আবহাওয়ার উপাদান। এগুলোর বিভিন্ন মানের ভিত্তিতে আবহাওয়া কেমন হবে তা বোঝা যায়।
পৃথিবীতে শক্তির প্রধান উৎস সূর্য। তাপ ও আলো আকারে এই শক্তি সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসে। একে সূর্যালোক বা রোদ এবং ইংরেজিতে ইসালেশন ( Insolation) বলা হয়। বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যালোক বিভিন্ন পরিমাণে পৃথিবীতে আসে। এটা নির্ভর করে সূর্য আকাশে কত সময়ব্যাপী থাকে এবং আকাশ কতটা পরিষ্কার তার ওপর। এখন বলো তো বছরের কোন সময় (মাস অথবা ঋতু) আকাশ বেশি সময় ধরে পরিষ্কার ও নীল থাকে এবং কোন সময় মেঘলা থাকে?
একইভাবে সূর্য আকাশে কত সময় ধরে অবস্থান করছে তার উপরেও সূর্যালোকের পরিমাণ নির্ভর করে। সূর্য যদি বেশি সময় ধরে। আকাশে অবস্থান করে তাহলে স্বাভাবিকভাবে সেই স্থানের পৃথিবীপৃষ্ঠ বেশি সূর্যালোক পাবে। এখানে পৃথিবী পৃষ্ঠ বলতে পৃথিবীর মাটি, পানি এবং বাতাসকে বোঝানো হচ্ছে। আবার দিনের কম সময়ব্যাপী যদি সূর্য আকাশে থাকে তাহলে পৃথিবী পৃষ্ঠ কম সূর্যালোক পাবে। শীতকালে দেরিতে সূর্য ওঠে এবং তাড়াতাড়ি সূর্য অস্ত যায়। ফলে আকাশে সূর্যের অবস্থানকাল সংক্ষিপ্ত হয়। কম সময় ধরে সূর্যালোক পাওয়ার কারণে পৃথিবীর পৃষ্ঠ তুলনামূলকভাবে শীতল থাকে। তাহলে বলো তো বছরের কোন সময়ে সূর্য বেশি সময় ধরে আকাশে থাকে? তখন পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা কেমন হবে?
রোদ বেশি সময়ব্যাপী এবং তীব্র হলে সেই স্থানে বাষ্পীভবনের পরিমাণও বেড়ে যায়।
গ্রীষ্মকালে রোদে না গিয়ে ছায়ায় বা ঘরে থাকলেও গরম অনুভূত হয়। এর কারণ তখন আমাদের চারপাশে বায়ুর তাপমাত্রা বেশি থাকে। এই তাপমাত্রা কেমন হয় তা নির্ভর করে—
থার্মোমিটার (Thermometer) দিয়ে বায়ুর তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়।
আবহাওয়ার একটি অন্যতম উপাদান হলো বৃষ্টি। বছরের বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বর্ষাকালে বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। আকাশ থেকে বিভিন্ন আকারের পানির অসংখ্য ফোঁটা করে পড়ে। এই পানি আসলো কোথা থেকে?
এখন কয়েকটি ঘটনা দেখা যাক। চুলায় ভাত রান্না করার সময় অথবা পানি গরম করলে সেই পাত্রা থেকে পানির বাষ্প উপরে উঠতে দেখা যায়। আবার ভেজা কাপড় পড়িতে বিশেষ করে রোদে মেলে দিলে তা শুকিয়ে যায়। এই পানি যায় কোথায়? এই পানি বাতাসের সাথে মিশে যায়। একইভাবে দিনের বেলা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ভূপৃষ্ঠ বা পৃথিবীপৃষ্ঠের উপরিভাগে অবস্থিত মাটি, পানি এবং উদ্ভিদ থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায়। বাতাসে এই জলীয়বাষ্প কিন্তু অনির্দিষ্ট পরিমাণে মিশে থাকতে পারে না। যে কোনো স্থানের বাতাসে জলীয়বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা সীমিত এবং তা নির্ভর করে ঐ স্থানের তাপমাত্রার উপর। এটিকে আমরা একটি পানি খাবার গ্লাসের সাথে তুলনা করতে পারি। ঐ গ্লাসের পানি ধারণক্ষমতা নির্দিষ্ট। তাই গ্লাসে ইচ্ছেমতো পানি ঢাললে গ্লাসের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পানি গ্লাস থেকে উপচে বাইরে পড়ে। পৃথিবীপৃষ্ঠে বাতাসের ক্ষেত্রে (পৃথিবীর বায়ুর এই স্তরকে বায়ুমণ্ডল বলা হয়) কোনো স্থানের বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ সেখানকার বায়ুর ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত হয়ে গেলে সেই অতিরিক্ত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে তরল পানির ছোট ছোট কণায় রূপান্তরিত হয় এবং তা পুনরায় পৃথিবীপৃষ্ঠে ফিরে আসে । বৃষ্টি এই ফিরে আসা পানির অনেকগুলো রূপের একটি রূপ মাত্র। এক্ষেত্রে জলীয়বাষ্প ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে উঠে গেলে তা ক্রমশ ঠান্ডা ও ঘনীভূত হয়ে প্রথমে মেঘ (যা অত্যন্ত ছোট তরল পানির কণা এমনকি বরফের কণা দিয়েও গঠিত হতে পারে) এবং তারপর বৃষ্টির পানির ফোঁটায় পরিণত হয়। পানির সূক্ষ্ম কণা যখন
একীভূত হয়ে আরো বড় পানির কণায় পরিণত হয় তখন তা আর বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকতে পারে না এবং বৃষ্টির পানির ফোঁটা আকারে ঝরে পড়ে। পরবর্তীতে তা নদী, নালা, খাল, বিল ইত্যাদির মাধ্যমে সমুদ্রে প্রবাহিত হয়। বৃষ্টিপাত পরিমাপের যন্ত্র হলো রেইন গরু (Rain gauge)।
আমাদের চারপাশে যে বায়ু আছে তার উপর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির একটা প্রভাব রয়েছে। ফলে তারও কিন্তু একটা ওজন রয়েছে এবং এই বায়ু যা কিছু স্পর্শ করে তার উপরই চাপ প্রয়োগ করে। ভূপৃষ্ঠের উপরস্থ যে কোনো বস্তু বা স্থানের উপর বায়ুমণ্ডল একক ক্ষেত্রফলে যে চাপ প্রয়োগ করে সেটাই বায়ুচাপ। এই চাপ সবদিক দিয়ে প্রয়োগ হয়। যদি আমরা একটা পানির গ্লাস কানায় কানায় পানি দিয়ে পূর্ণ করি এবং তার মুখের উপর একটি শক্ত কাগজ বা কার্ডবোর্ড দিয়ে আটকিয়ে গ্লাসটি উল্টাই তবে দেখা যাবে পানিসহ গ্লাসটি উল্টে থাকা সত্ত্বেও পানি পড়ে যাচ্ছে না। বায়ু সবদিক থেকে চাপ দেয় বলেই এমন হয়। আমরা পানিতে নেমে ডুব দিলে পানির নিচে শরীরের যতটুকু অংশ আছে তার উপর চাপ অনুভব করি। - কারণ পানি বাতাসের তুলনায় অনেক ভারী। বায়ুমণ্ডলও আমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করছে যা আমরা সহজে বুঝতে পারি না। তবে অনেক উঁচু স্থানে গেলে বা বিমানে ভ্রমণ করার সময় বায়ুচাপের পরিবর্তন কিছুটা টের পাওয়া যায়। এই বায়ুচাপ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুচাপের একক হলো মিলিবার ( Millibar)। বাতাসের পড় বায়ুচাপ হলো ১০১৩ মিলিবার। এর চেয়ে বায়ুচাপ বেশি হলে তাকে উচ্চচাপ এবং কম হলে নিম্নচাপ বলা হয়। বায়ুচাপ কমে গেলে বা নিম্নচাপ হলে তা ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করে। বায়ুচাপ মাপার যন্ত্রের নাম ব্যারোমিটার (Barometer)।
বায়ুচাপ যে সকল বিষয়ের উপর নির্ভর করে তা হলো—
বাতাস কোন দিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস। যেমন, বাংলাদেশে শীতকালে উত্তর দিক থেকে শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়। এবং বায়ুর তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। আবার গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু প্রবাহিত হয়। অধিক জলীয়বাষ্পের উপস্থিতির কারণে এই বায়ু প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই বায়ুর নাম মৌসুমী বায়ু । বায়ুপ্রবাহের দিক বের করার যন্ত্রের নাম উইন্ডডেন (Wind vane)।
বায়ুতে একক আয়তনে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণ হলো বায়ুর আর্দ্রতা। এই আর্দ্রতা পরিমাপের দুইটি পদ্ধতি রয়েছে। যেমন,
বাতাসের আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয় হাইগ্রোমিটার ( Hygrometer) এর মাধ্যমে।
জলবায়ু হলো কোনো একটি এলাকার নির্দিষ্ট সময়ের পড় আবহাওয়া। কোনো একটি এলাকার জলবায়ু বুঝতে হলে কমপক্ষে ৩০ বছরের আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের তথ্য দরকার। তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাত হচ্ছে জলবায়ু বিষয়ে জানার প্রধান দুটি উপাদান। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, আবহাওয়ার যে সকল উপাদান আছে তা একই সাথে জলবায়ুরও উপাদান (রোদ, বৃষ্টি, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ইত্যাদি)।
কোনো এলাকার জলবায়ু ব্যাখ্যা করার জন্য জলবায়ু বিজ্ঞানীরা যে তিনটি বিষয় বিবেচনা করে থাকেন তা হলো,
(১) সেই স্থানের গড় তাপমাত্রা
(২) সেই স্থানের গড় বৃষ্টিপাত কতা
(৩) বিভিন্ন বাহুতে সেখানে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন কতটা হয়?
সুতরাং জলবায়ু বলতে আমরা একটি এলাকার আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের কয়েক বছরের (৩০ বছর বা তার বেশি) পরিবর্তনের ধারা (Pattern) বুঝে থাকি। বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং মানুষের সৃষ্টি করা কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হয়ে থাকে যা অনেক ক্ষেত্রে মানুষ ও অন্যান্য জীবের জন্য ক্ষতির কারণ: হয়ে দাঁড়ায়। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, কলকারখানা ও বিভিন্ন যানবাহন থেকে নির্গত গ্রিনহাউজ গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অনেকাংশে জড়িত। সেক্ষেত্রে যে সকল দেশে অধিক কলকারখানা এবং তেল গ্যাস চালিত যানবাহন রয়েছে সেসব দেশ অধিক পরিমাণে গ্রিনহাউজ গ্যাস বায়ুমণ্ডলে নির্গত করে যা জলবায়ুর পরিবর্তনে অধিক দায়ী।
শিনহাউস প্রতিক্রিয়া (greenhouse (effect)
গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া এখন একটি প্রক্রিয়া যেটির কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হয়ে যায়। এই নামটি এসেছে শীতপ্রধান দেশে কৃষিকাজ করার জন্য ব্যবহৃত কাচ বা অন্য স্বচ্ছ বস্তু দিয়ে নির্মিত গ্রিনহাউস নামক ঘরের নাম থেকে। এই গ্রিনহাউস দিনের বেলা সূর্য থেকে যে তাপ ও আলো পায়, তা রাতের বেলায় অপেক্ষাকৃত লম্বা তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে পুনরায় বিকিরণ করে। যার ফলে গ্রিনহাউসের ভিতরের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার তুলনায় বেশি থাকে। ঠিক একই প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের কিছু গ্যাস সূর্যের তাপে উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের পুনরায় বিকিরণ করা তাপ শোষণ করে বায়ুর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই প্রক্রিয়া সামগ্রিকভাবে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া নামে পরিচিত। জলীয়বাষ্প, মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাসের কারণে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া ঘটে এবং এই গ্যাসগুলোকে গ্রিনহাউস গ্যাস হয়। গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির কারণগুলো হলো,
অন্তত ১০ গুণ ক্ষতিকর এবং সর্বোচ্চ প্রায় ৩০০ গুণ বেশি ক্ষতি করতে সক্ষম।
বন ধ্বংস এবং গাছ কাটার ফলে বাঙালের কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার জন্য গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিছু যন্ত্রপাতি এবং দ্রব্যাদি (যেমন, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, ফোম, অ্যারোসল ইত্যাদি) থেকে ফ্লোরিনেটেড গ্যাস বের হয়। এই গ্যাসের গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় প্রায় ২৩,000 গুণ বেশি।
এই গ্যাসগুলোর পরিমাণ যত বাড়বে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া তত বেশি হবে। গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার কারণে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর দুই মেরুতে (উত্তর ও দক্ষিণ মেরু) জমে থাকা বরফ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি অনেক ধরনের রোগ জীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠায় বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে।
বৃষ্টির পানির সাথে অ্যাসিড বা অ্যাসিড জাতীয় উপাদান মিশ্রিত থাকলে সেটাকে অ্যাসিড বৃষ্টি বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বৃষ্টির পানির সাথে সালফিউরিক অ্যাসিড বা নাইট্রিক অ্যাসিড মিশ্রিত অবস্থায় ভূপৃষ্টে ঝরে পড়ে। এমনকি তুষার, কুয়াশা, শিলা বৃষ্টির বরফ খণ্ড, ধূলিকণার সাথেও কঠিন বা তরল অবস্থায়। আসিড জাতীয় পদার্থ মিশ্রিত থাকতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো বৃষ্টির পানি, কুয়াশা, তুষার ইত্যাদিতে এই অ্যাসিড আসলো কী করে? বিভিন্ন মানুষসৃষ্ট এবং প্রাকৃতিক উৎস হতে নির্গত সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড বাতাসে উপস্থিত জলীয়বাষ্প, অক্সিজেন এবং অন্যান্য রাসায়নিকের সাথে। বিক্রিয়া করে সালফিউরিক এবং নাইট্রিক অ্যাসিড তৈরি হয়। তারপর তা পানি এবং অন্যান্য বস্তুর সাথে মিশ্রিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইডের সামান্য অংশ প্রাকৃতিক উৎস (যেমন, আগ্নেয়গিরি) থেকে আসলেও অধিকাংশ আসে মানুষসৃষ্ট বিভিন্ন উৎস থেকে । উৎসগুলো হলো—
বায়ু এসব উৎস থেকে নির্গত দূষণকারী গ্যাস ও অন্যান্য কণাকে অনেক দূর পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং সেখানে অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটাতে পারে। এর ফলে দূষণকারী দেশ ছাড়াও দূরের অন্য দেশে আসিড বৃষ্টি হয়ে সেই এলাকার ক্ষতি হতে পারে। অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে যে সকল ক্ষতি হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো-
বায়ুমণ্ডলের নিচের দিক থেকে দ্বিতীয় স্তরে (স্ট্র্যাটোমণ্ডল) ওজোন গ্যাসের একটি অংশ আছে যা ওজোন স্তর নামে পরিচিত। এই স্তর সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীর বিভিন্ন জীবকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। কিন্তু কিছু দূষণকারী উপাদানের উপস্থিতির কারণে এই স্তর ক্ষয়ে যাচ্ছে। যার ফলে ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করে জীবজগতের ক্ষতি করছে। ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী দূষণকারী উপাদানগুলো হচ্ছে ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, হাইড্রো ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন ইত্যাদি। ওজোন স্তরের ক্ষয়ের ফলে নিম্নরূপ ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ করা যায়,
মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: ওজোন স্তর ক্ষয়ের ফলে মানুষ ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির। সরাসরি স্পর্শে আসে। ফলে তাদের মধ্যে নানানরকম শারীরিক সমস্যা যেমন, চর্মরোগ, ক্যান্সার, সূর্যের তাপে চামড়া পোড়ার মতো লাল হয়ে যাওয়া, চোখে ছানি পড়া, তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে। যাওয়া, দুবল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইত্যাদি দেখা দেয়।
প্রাণীর উপর প্রভাবঃ অতিবেগুনি রশ্মির সরাসরি স্পর্শে প্রাণীদের চোখ ও চামড়ার ক্যান্সার হয়ে থাকে।
উদ্ভিদের উপর প্রভাবঃ শক্তিশালী অতিবেগুনি রশ্মি গাছের বৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে, খাদ্য তৈরি ( একে সালোকসংশ্লেষণ বলা হয়) এমনকি ফুল ফোটার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ফলে বনের গাছপালাগুলোকে এই ক্ষতিকর প্রভাব বহন করতে হয়।
সজল ও সামুদ্রক জীনের উপর প্রভাবঃ অতি ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী (যেগুলো প্ল্যাংকটন নামে। পরিচিত) অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মাছ ও অন্যান্য জলজ জীবের খাদ্যের উৎস হলো এই প্ল্যাংকটন। এগুলো ধ্বংস হলে জলজ জীবও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অনুশীলনী
১। উঁচু পাহাড়ের উপরে বায়ুচাপ কি বেশি হবে নাকি কম?
২। তোমার আশপাশের মানুষদের কিংবা কলকারখানার কোন কোন কর্মকাণ্ড বায়ুমণ্ডলে প্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া বাড়াতে কাজ করছে? লক্ষ করে দেখো।
আরও দেখুন...