বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও ভিয়েতনাম এই চারটি দেশ এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত। এই দেশগুলোর মধ্যে ভৌগোলিক দিক থেকে যেমন কিছু সাদৃশ্য আছে তেমনি কিছু বৈসাদৃশ্যও রয়েছে। এই চারটি দেশের প্রধান কৃষি উৎপাদন হচ্ছে ধান এবং এর জনগণ প্রধানত ভাত খেতে অভ্যস্ত। এদের মধ্যে চীন, ভারত ও বাংলাদেশ অত্যন্ত জনবহুল দেশ । অবশ্য ভিয়েতনাম ততটা নয়।
বাংলাদেশের তুলনায় চীন কৃষিতে অনেক উন্নত। অনেক ক্ষেত্রেই কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে চীন বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে আছে। ধানের বংশগতির পরিবর্তন এমনভাবে ঘটাতে সক্ষম হয়েছে যে চীনের অধিকাংশ ধানের জাত আর মৌসুম নির্ভরশীল নেই। এই জাতগুলো পূর্বের প্রচলিত জাতগুলোর চেয়ে হেক্টর প্রতি সাতগুণ পর্যন্ত ফলন দিচ্ছে। চীনের ধান গবেষকগণ দাবি করছেন আগামী প্রজন্মের ধান জাতগুলো এখনকার চাইতে দ্বিগুণ উৎপাদন দেবে। এই ‘সুপার হাইব্রিড' ধানের একটি বড় ধরনের অসুবিধা হলো এই সকল অত্যাধুনিক ধানের বীজ সংরক্ষণ করা যায় না। এক প্রজন্মেই বীজের গুণাগুণ শেষ হয়ে যায়। চীনের বর্তমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে এই সব ফসল হয়ত সহায়ক। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। কারণ ঐতিহ্যগতভাবে ধান বীজের জন্য বাংলাদেশের চাষিদের বীজ ব্যবসায়ীদের মুখাপেক্ষী না হলেও চলে, কেননা দেশের মোট ব্যবহৃত ধান বীজের অন্তত ৮৫% চাষিরা নিজেরাই সংরক্ষণ ও ব্যবহার করে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট Bangladesh Rice Research Institute (BRRI) এ পর্যন্ত যতগুলো উচ্চ ফলনশীল ধান জাত High Yielding Variety (HYV) উদ্ভাবন করেছে সেগুলোর বীজ সঠিক মাঠ ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব ধানক্ষেতেই উৎপাদন করা যায় এবং চাষিরা পরবর্তী ফসলের জন্য বীজ সেখান থেকে সংরক্ষণ করতে পারেন। অর্থাৎ ধান বীজের জন্য বাংলাদেশের চাষিদের এক ধরনের সার্বভৌমত্ব রয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট সুপার হাইব্রিড ধান উৎপাদনের জন্য জোর গবেষণা চালাচ্ছে। শীঘ্রই হয়ত বাংলাদেশের চাষিরা এই অতি উচ্চ ফলনশীল দেশি ধান বীজ পাবে । তবে এই ধান উৎপাদনের অভিজ্ঞতা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশি চাষিরা রপ্ত করেছেন। কারণ কয়েকটি বীজ ব্যবসায়ী কোম্পানি এ ধরনের ধানের বীজ বাংলাদেশে চালু করতে আগ্রহী ছিল। এই প্রেক্ষিতে সরকার পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত আকারে এ জাতীয় ধান উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছিল এই শর্তে যে, কোম্পানিগুলো দেশেই এই ধান বীজ উৎপাদন করবে।
আরও দেখুন...