ধৈর্য এর আরবি প্রতিশব্দ 'সবর' (সা)। যার অর্থ ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, দৃঢ়তা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, বিরত রাখা ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় জীবনের সকল ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে সহিষ্ণুতার সাথে আল্লাহর বিধান মোতাবেক সকল কর্তব্য পালন করাকে ধৈর্য বলে। কুরআন ও হাদিসের আলোকে ধৈর্য বিশ্লেষণ করলে এর তিনটি বিশেষ দিক স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
১. অবৈধ ও হারাম বস্তু থেকে নিজের নফস বা প্রবৃত্তিকে বিরত রাখতে ধৈর্যধারণ করতে হয়।
২. আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও আনুগত্যে ধৈর্যধারণ করতে হয়।
৩. যেকোনো বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করতে হয়।
তাৎপর্য
ধৈর্য মানবজীবনের একটি মহৎ গুণ। এটি মানবজীবনের সফলতার চাবিকাঠি। ধৈর্যের অনুশীলন ছাড়া ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে সাফল্য অর্জন করা যায় না। ধৈর্যধারণ করা খুবই কঠিন কাজ তথাপি সমাজের মানুষের কল্যাণের জন্য তা করা অপরিহার্য। সমাজ জীবনে শান্তি শৃঙ্খলা ও কল্যাণময় জীবনযাপনের জন্য ধৈর্যের (সবরের) গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে অফুরন্ত প্রতিদান দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থ : “অবশ্যই ধৈর্যশীলগণকে তাদের প্রতিদান অগণিতভাবে দেওয়া হবে।” (সূরা আয্-যুমার, আয়াত -১০) ধৈর্যের বিপরীত হচ্ছে অধৈর্য। অধৈর্য মানুষকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দেয়। এ কারণে জীবনে চলার পথে মানুষকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে।
মানুষের জীবনে আসে সুখ-দুঃখ, বিপদ-আপদ, সফলতা-বিফলতা ও জয়-পরাজয়। এসব ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণের প্রয়োজন হয়। বিপদে যেমন সুদিনের আশায় ধৈর্যধারণ করতে হয়, তেমনি সুদিনে আত্মহারা না হয়ে ধৈর্যধারণ করতে হয় । সুখশান্তি প্রাপ্তিতে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে, জীবনে যাঁরা বড় হয়েছেন তাঁরা সবাই ছিলেন ধৈর্যশীল। বিখ্যাত নবি হযরত ইবরাহিম (আ.) ছিলেন ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক। জালিম শাসক নমরুদের মূর্তি পূজার বিরোধিতা করায় তিনি অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। তিনি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে সাহায্য চান নি। এমনিভাবে হযরত আইয়ুব (আ.)ও কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন । তাঁর দেহে পচন ধরেছিল। শরীর থেকে গোশত খসে পড়েছিল। আত্মীয়স্বজন তাঁকে ত্যাগ করেছিল। তাঁর সন্তানাদি মারা গিয়েছিল। তাঁর ঘরবাড়ি সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এমন কঠিন মুহূর্তেও তিনি ধৈর্যহারা হন নি। আমাদের নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)ও ধৈর্যের চরম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তাঁর ধৈর্য ছিল অতুলনীয়। তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল তবু ধৈর্য হারান নি। সকল বিপদেই তিনি ছিলেন অটল ও অবিচল।
শরিয়তের বিধান পালন করতেও ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, রমযান মাসের সিয়াম পালন, প্রচুর অর্থ ব্যয় করে হজ সম্পাদন, সঞ্চিত সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসাবে প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রচুর ধৈর্যধারণ করতে হয়।
এমনিভাবে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বিভিন্ন স্তরে ধৈর্যধারণের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা সকল বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করব। বিপদ মুক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করব।
আমরা ধৈর্যশীল হব।
কাজ : শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ধৈর্যধারণের সুফলগুলোর একটি তালিকা তৈরি করবে এবং উপস্থাপন করবে। |
আরও দেখুন...