খনিজ সম্পদ

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - রসায়ন - খনিজ সম্পদ: ধাতু অধাতু | NCTB BOOK
1.8k

খনিজ সম্পদ:  আমাদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধাতু, অধাতু, উপধাতু বা তাদের বিভিন্ন যৌগ প্রকৃতিতে মাটি, পানি কিংবা বায়ুমণ্ডল থেকে সংগ্রহ করা হয়। মাটি, পানি বা বায়ুমণ্ডলের যে অংশ থেকে এগুলোকে সংগ্রহ করা হয় তাকে খনিজ বলে। খনিজ কঠিন হতে পারে, যেমন—লোহা বা তামার খনিজ। তরল হতে পারে, যেমন—পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেলের খনিজ, আবার গ্যাসীয় হতে পারে যেমন—প্রকৃতিক গ্যাসের খনিজ।
 

আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় যা রান্নার কাজে, যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বা বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পেট্রোলিয়ামের খনিজ রয়েছে, যা তারা সারা পৃথিবীতে রপ্তানি করছে এবং সমস্ত পৃথিবীর খনিজ তেলের চাহিদা পূরণ করছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে রয়েছে সোনা ও হীরার খনিজ। এছাড়া বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পাওয়া যার, যা দেশ তথা সমগ্র পৃথিবীর উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। তাই কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় এ খনিজগুলোকে একত্রে খনিজ সম্পদ বলা হয়।

 

শিলা ( Rocks)
বিভিন্ন খনিজ পদার্থ মিশ্রিত হয়ে কিছু শন্তু কণা তৈরি হয়, ঐ শক্ত কণাসমূহ একত্র হয়ে যে পদার্থ তৈরি হয় তাকে শিলা বলে। এ সকল শিলা যেভাবে তৈরি হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে শিলা সাধারণত তিন প্রকার: (i) আয়ের শিলা, (ii) পাললিক শিলা ও (iii) রূপান্তরিত শিলা 

 

আগ্নেয় শিলা(Igneous Rock) 

আগ্নেয়গিরি থেকে যে গলিত পদার্থসমূহের মিশ্রণ বের হয় তাকে ম্যাগমা বলে। ম্যাগমা যখন ঠাণ্ডা হয়ে কঠিন পদার্থে পরিণত হয় তখন তাকে আগ্নেয় শিলা বলে। যেমন— গ্রানাইট। আগ্নেয় শিলা থেকে অনেক মূল্যবান খনিজ পাওয়া যায়।

 

পাললিক শিলা (Sedimentary Rock) 

আবহাওয়া ও জলবায়ু ইত্যাদি পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টির পানি, বাতাস, কুয়াশা, ঝড় ইত্যাদির কারণে মাটির উপরিভাগের ভূ-ত্বকের কাদামাটি, বালিমাটি ইত্যাদি ধুয়ে কোনো কোনো জায়গার পলি আকারে জমা হয় তারপরে পলির মধ্যে জমে থাকা কণাগুলো বিভিন্ন স্তরে স্তরে সজ্জিত হয়ে যে শিলা তৈরি হয় তাকে পাললিক শিলা বলে। যেমন— বেলেপাথর। রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock) আগের শিলা, পাললিক শিলা বিভিন্ন তাপ ও চাপে পরিবর্তিত হয়ে নতুন ধরনের যে শিল তৈরি হয় সেগুলোকে রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন: করলা । মাটির নিচে শিলার বিভিন্ন স্তর সৃষ্টির প্রক্রিয়া। মাটির নিচে শিলা বিভিন্ন স্তরে সজ্জিত থাকে। মাধ্যাকর্ষণ বল, তাপ, চাপ এবং প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে মাটির নিচে শিলা বিভিন্ন স্তর সৃষ্টি করে।

 

খনিজ ও আকরিক
খনিজ (Minerals): মাটির উপরিভাগে বা মাটির তলদেশে যে সকল পদার্থ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যেমন—বিভিন্ন প্রকার ধাতু বা অধাতু ইত্যাদি সংগ্রহ করে থাকি তাদেরকে খনিজ বলা হয়। যে অঞ্চল থেকে খনিজ উত্তোলন করা হয় তাকে খনি বলে ।
 

আকরিক (Ores)
যে সকল খনিজ থেকে লাভজনকভাবে ধাতু বা অধাতুকে সংগ্রহ বা নিষ্কাশন করা যায় সে সকল খনিজকে আকরিক বলে৷ যেমন— গ্যালেনা (Pbs) থেকে লাভজনকভাবে লেড ধাতু নিষ্কাশন করা যায়, তাই গ্যালেনাকে লেড ধাতুর আকরিক বা লেড ধাতুর খনিজ বলা হয়৷ বক্সাইট থেকে লাভজনকভাবে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশন করা যায়। অতএব বক্সাইটকে অ্যালুমিনিয়ামের আকরিক বা খনিজ বলা হয়। আবার, কাদামাটি থেকে লাভজনকভাবে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশন করা যায় না, সেজন্য কাদামাটি শুধু অ্যালুমিনিয়ামের খনিজ কিন্তু আকরিক নয়। অতএব, আমরা বলতে পারি আকরিক হলে সেটা অবশ্যই খনিজ হবে কিন্তু খনিজ হলে সেটা আকরিক নাও হতে পারে। আয়রনের সালফাইডকে আয়রন পাইরাইটস (FeS2 ) বলা হয়। আয়রন পাইরাইটস থেকে আয়রন ধাতু নিষ্কাশন করা যায় ।
 

খনিজ সম্পদের অবস্থান
আগে মনে করা হতো যে শুধু ভূগর্ভে বা মাটির নিচেই বুঝি খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। এখন আর এ ধারণা সঠিক বলা যায় না। কোনো কোনো খনিজ ভূগর্ভে আবার কোনো কোনো খনিজ ভূপৃষ্ঠে পাওয়া যায়। সালফার খনিজ ভূগর্ভে পাওয়া যায়। নেত্রকোনার বিজয়পুরে সাদা মাটি বা কেউলিন খনিজ ভূপৃষ্ঠেই পাওয়া যায়৷ কক্সবাজারের সমুদ্রের বালিতে জিরকোনিয়ামের খনিজ জিরকন, আবার লোহার খনিজ হেমাটাইট, অ্যালুমিনিয়ামের খনিজ বক্সাইট এগুলো অনেক জায়গাতে ভূপৃষ্ঠেই পাওয়া যায়। হ্যালোজেনসমূহের খনিজ সমুদ্রের পানিতে পাওয়া যায়।

 

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...