পরিচ্ছেদ ১৬.২ : নারীর প্রতি সহিংসতা

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় - বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা ও এর প্রতিকার | NCTB BOOK

নারীর প্রতি সহিংসতার ধারণা
পুরুষ বা নারী কর্তৃক যে কোনো বয়সের নারীর প্রতি শুধু নারী হওয়ার কারণে যে সহিংস আচরণ করা হয় তাই নারীর প্রতি সহিংসতা। কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টি নানা অজুহাতে নারীর আর্থ-সামাজিক, শারীরিক কিংবা মানসিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ঘটিয়ে থাকে। নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক বা মানসিকভাবে এই নির্যাতন চালানো হয়। এ সহিংস আচরণ বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, কর্মক্ষেত্র, হাট-বাজার থেকে শুরু করে যে কোনো স্থানে ঘটতে পারে।

নারীর প্রতি সহিংসতার প্রকৃতি
বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা নারীর স্বাধীনতা এবং ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধক। নারীর প্রতি সহিংসতার নানা প্রকৃতি রয়েছে। নারীরা বাড়িতে শারীরিক ও মানসিক যেসব নির্যাতনের শিকার হয় তাকে বলে পারিবারিক সহিংসতা। সাধারণত স্বামী, শাশুড়ি, ননদ এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য দ্বারা নারী এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়। এসব সহিংসতার মধ্যে রয়েছে প্রহার, যৌতুক সম্পর্কিত নির্যাতন, শিক্ষা ও সম্পত্তির অধিকারের বঞ্চনা, অত্যধিক কাজের বোঝা চাপানো, কন্যা শিশুকে মারধর, নিপীড়ন প্রভৃতি ।

যৌন হয়রানি, নির্যাতন ও ধর্ষণ, মনগড়া ফতোয়া, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু পাচার প্রভৃতি হলো বর্বর, নির্মম ও পৈশাচিক সহিংসতা।

যৌন হয়রানি : সাম্প্রতিক সময়ে যৌন হয়রানি বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা। এটি নৈতিকতার চরম অবক্ষয়, একটি সামাজিক বিপর্যয়। নারীরা বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। বর্তমানে কিশোরী, তরুণী এমনকি বিবাহিত নারীও জঘন্য যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। যৌন হয়রানিকে ইভটিজিংও (Eveteasing) বলা হয়। ইভটিজিং শব্দটি যৌন হয়রানির ইংরেজি প্রতিশব্দ। ইভটিজিং হচ্ছে লোকসমাগমপূর্ণ স্থানে পুরুষ কর্তৃক নারীদের নিগ্রহ বা উত্ত্যক্ত করা। গৃহঅভ্যন্তরে, কর্মক্ষেত্রে অথবা যাতায়াতের পথে, কখনোবা নিরিবিলি স্থানে অসৎ উদ্দেশ্যে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য পুরুষ কর্তৃক নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হয়। অনেক সময় শিশুরাও যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

ফতোয়া : গ্রামীণ এলাকায় মনগড়া ফতোয়ার মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটানো হয়। কখনো কখনো গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ মনগড়া আইনের মাধ্যমে বিচারকার্য পরিচালনা করে। এসব দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী।

এসিড নিক্ষেপ : এসিড নিক্ষেপ নারীর প্রতি একটি ভয়াবহ সহিংসতা। বর্তমানে বাংলাদেশে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত নারীদের উপরই এসিড নিক্ষেপের ঘটনা অধিক ঘটে থাকে। প্রেম ও অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক কলহসহ নানা কারণে এসিড নিক্ষেপের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটে।

নারী ও শিশু পাচার : নারী ও শিশুরা পাচার হয়ে নানাভাবে সহিংসতার শিকার হয় । দক্ষিণ এশিয়ায় নারী ও শিশু পাচারের পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর নারী ও শিশু পাচার হয়ে যায়। এদের বলপূর্বক বিভিন্ন অবমাননাকর এবং অমানবিক কাজ, যেমন- দেহ ব্যবসায়, উটের জকি ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় এসব পাচারকৃত নারী ও শিশুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গও বিক্রি করা হয়।

নারীর প্রতি সহিংসতার কারণ
সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতার বহু কারণ রয়েছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন কাজে নারী সর্বদা অপারদর্শী অদক্ষ হিসেবে পরিগণিত হয়। বাইরের বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকে বঞ্চিত রাখা, যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, ক্রমাগত কন্যা সন্তানের জন্ম ও এর ফলে পুত্রসন্তানের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠা প্রভৃতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। প্রকৃত শিক্ষার অভাব এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থা আমাদের দেশে যৌতুক প্রথাকে প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত করেছে। ক্রমে যৌতুকপ্রথা পরিণত হয়েছে সহিংসতার হাতিয়ার রূপে। তাছাড়া নারীকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখা, মতলবি ফতোয়া, বিভিন্ন সামাজিক কুপ্রথা প্রভৃতি নারীর প্রতি সহিংসতার গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

এখনও আমাদের সমাজে অনেক পুরুষ নারীকে দুর্বল ও অবলা হিসেবে মনে করে। গ্রামীণ ও শহুরে সমাজের কতিপয় পরিবারে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি হলো নারীর কাজ গৃহে রান্না-বান্না, সন্তান জন্মদান,   লালন-পালন, সবজি বাগান করা, গবাদিপশু পালন, শিশুকে পাঠদান, শারীরিক শুশ্রুষা করা প্রভৃতি।পুরুষতান্ত্রিক অন্যান্য দৃষ্টিভঙ্গি, যেমন- পুরুষ নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, নারীরা স্বামীর সেবাদাসী, স্বামীর পদতলে স্ত্রীর বেহেস্ত প্রভৃতি মনোভাব থেকেই নারীর প্রতি সহিংসতার সৃষ্টি হয়। আবার শৈশবে নিজ পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বঞ্চনার অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে একজন পুরুষকে সহিংস করে তুলতে পারে। কন্যা সন্তানকে শিক্ষা দানের প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া, কন্যা সন্তানের প্রতি মা-বাবার উদাসীনতা, পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য দেওয়া, বিবাহে কন্যার ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে উপেক্ষা করার মনোভাব প্রভৃতি নারীর প্রতি সহিংসতাকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দেয় ৷

নারীর প্রতি সহিংসতার গুরুত্বপূর্ণ কারণ দারিদ্র্য। দারিদ্র্য ঘোচাতে কাজের খোঁজে এসে অনেক নারী সহিংসতার শিকার হয়। বাংলাদেশে নারী শ্রমিকের একটা বিরাট অংশ পোশাক শিল্পে কাজ করে। এসব নারী শ্রমিক রাতে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে বা শয়নকক্ষ সংকটের কারণে একই ঘরে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বসবাস করার কারণে অনেকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। এছাড়াও বাসাবাড়িতে কাজ করে এমন গৃহকর্মী নারী বা শিশু অনেকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে ।

লোকলজ্জা, পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদার ভয়সহ নানা কারণে বাংলাদেশের নারী সমাজ অনেক সময় নির্যাতনের বিষয় বাইরে প্রকাশ করতে বা প্রতিবাদ করতে পারে না। ফলে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংস ঘটনা আরও বেড়ে যাচ্ছে। তবে নারী ও শিশুর এ নীরবতা ভাঙতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা, যেমন— আইন সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ পুলিশের ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার', ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

                                                            কাজঃ                                                                     একক : গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতার ধরনগুলো লেখা ।

 দলগত : নারীর প্রতি সহিংসতার কারণগুলোর একটি ছক তৈরি কর।

নারীর প্রতি সহিংসতার প্রভাব
নারীর জীবনে সহিংসতার প্রভাব জটিল ও ভয়াবহ। নারীর প্রতি শারীরিক নির্যাতন কখনো কখনো নারীর অঙ্গহানি ঘটায়। সহিংস ঘটনায় নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতবিক্ষত হয়। অনেক ক্ষেত্রে নারী আত্মহত্যা পর্যন্ত করে থাকে। সহিংসতার শিকার নারীরা সমাজে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। নারীর প্রতি এই সহিংসতা আমাদের দেশের অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

কাজঃ একক : নারীর প্রতি সহিংসতা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলে তা পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের আলোকে ব্যাখ্যা কর।

 

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইনি প্রতিকার
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কতিপয় আইনি প্রতিকার হলো:                                                     
১. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (২০০৩ সালে সংশোধিত) যৌন হয়রানিকে শাস্তিমূলক অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে—'যদি কোনো পুরুষ অযাচিতভাবে তার যৌন লালসা চরিতার্থ করার জন্য নারীর শালীনতা অবমাননা কিংবা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি বা ইঙ্গিতের মাধ্যমে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ ঘটায় তবে উক্ত ব্যক্তি অনূর্ধ্ব সাত বছর এবং সর্বনিম্ন দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

২. এসিড অপরাধ দমন আইন-২০০২ : এসিড অপরাধ দমন আইনে এসিড দ্বারা মৃত্যু ঘটানো, এসিড দ্বারা আহত করা, এসিড নিক্ষেপ করা বা নিক্ষেপের চেষ্টা করা এবং এ অপরাধে সহায়তা করা প্রভৃতির শাস্তি, বিচার পদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এসিড দ্বারা মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি : যদি কোনো ব্যক্তি এসিড দ্বারা অন্য কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটান তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

এসিড দ্বারা আহত করার শাস্তি : এই আইনে আরও বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এসিড দ্বারা কাউকে এমনভাবে আহত করেন যে- ক. তার দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নষ্ট হয় বা মুখমণ্ডল বিকৃত বা নষ্ট হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব এক লক্ষ টাকার অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। খ. শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ, গ্রন্থি বা অংশ বিকৃত বা নষ্ট হয় বা শরীরের কোনো স্থান আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক চৌদ্দ বছর কিন্তু অন্যূন সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব পঞ্চাশ হাজার টাকার অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। এছাড়া এসিড নিক্ষেপ করা বা নিক্ষেপের চেষ্টা বা অপরাধে সহায়তা করার জন্যও শাস্তির বিধান রয়েছে। এসিড নিয়ন্ত্রণ আইনে সরকার এসিডের মজুদ, বহন, আনা-নেওয়া ব্যবস্থা ইত্যাদির ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক এসিড নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) আইন-২০১০ পাস হয়।

৩. নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইন : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এ বলা হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি পতিতাবৃত্তি বা বেআইনি বা নীতিগর্হিত কোনো কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে কোনো নারী বা শিশুকে বিদেশ থেকে আনয়ন করেন বা বিদেশে পাচার বা প্রেরণ করেন অথবা ক্রয় বা বিক্রয় করেন বা অনুরূপ কোনো উদ্দেশ্যে কোনো নারী ও শিশুকে তার দখলে বা হেফাজতে রাখেন তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ বছর কিন্তু অন্যূন ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। এছাড়াও নারী ও শিশু অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, যৌনপীড়ন, যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানো ইত্যাদির ক্ষেত্রে আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। 

                                                                       কাজঃ                                                                  দলগত : নিম্নোক্ত ছকে প্রদত্ত আইনের বিধানে শাস্তি উল্লেখ করে  নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব চিহ্নিত কর।

আইন  বিধানাবলি  শাস্তি  দায়িত্ব ও কর্তব্য
যৌন হয়রানি      
এসিড নিক্ষেপ      
নারী ও শিশু পাচার      

মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১১-এ মানব পাচারের জন্য দায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডসহ পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সমাজের করণীয়                                                                  নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজের করণীয় কী তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. নারী শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ, বিধবা ভাতা প্রদান এবং নারীর জন্য ঋণদান কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি ;                                                                                                              ২. নির্যাতন, সহিংসতার ধরন ও প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আইন প্রণয়ন এবং এর যথাযথ প্রয়োগ;                                                                                                                                    ৩.পরিবারে ছেলেমেয়ে উভয়কেই পারিবারিক জীবনে নৈতিক মূল্যবোধ গঠন সম্পর্কিত শিক্ষাপ্রদান;
৪. নারী অধিকার এবং অধিকার সংশ্লিষ্ট আইন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি;
৫. নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মতৎপরতার সম্প্রসারণ;
৬. নারী নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা;
৭. নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রবর্তিত আইন, যেমন- এসিড অপরাধ দমন আইন, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন, যৌতুক প্রতিরোধ আইন, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, বাল্যবিবাহ অধ্যাদেশ, সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশ ইত্যাদির যথাযথ প্রয়োগ;
৮. সামাজিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা;
৯. নারীর বিরুদ্ধে সহিংস ঘটনার প্রভাব ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার করে জনমনে সচেতনতা সৃষ্টি;
১০. নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট আইনের বিষয়বস্তু সহজভাবে জনসমক্ষে উপস্থাপন ও প্রচার।

                                                               কাজঃ

দলগত কাজ : যৌন  হয়রানি বন্ধে তুমি কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পার? উল্লেখ কর।

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আরও কতকগুলো বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়রোধ, অপসংস্কৃতিরোধ, নারী ও পুরুষের শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, সুস্থ পরিবার গঠন, শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আদর্শ অনুশীলন করা, নারীর ভূমিকা ও মর্যাদার যথাযথ মূল্যায়ন করা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । এছাড়াও সামাজিক চাপ প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, যেমন- গ্রাম আদালত, ইউনিয়ন পরিষদ প্রভৃতিকে অধিক সক্রিয় করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংস ঘটনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অপরাধী কিংবা অপরাধীর পরিবারের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়, অপরাধীকে সামাজিকভাবে বয়কট করে এক ঘরে করে রাখা প্রভৃতি সামাজিক চাপসংক্রান্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে সহিংস ঘটনা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। অপরাধীকে খুঁজে বের করার ক্ষেত্রেও অপরাধ প্রতিরোধে সামাজিক চাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।

শিশু শ্ৰম
দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও শিশু শ্রম আছে। যে বয়সে একটি শিশু স্কুলে যাওয়া আসা করবে, সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলা করবে ঐ বয়সে দরিদ্র শিশুদের জীবিকার জন্য কাজ করতে হয়। বাংলাদেশে শিশু শ্রমের প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো — অর্থনৈতিক দুরবস্থা। দরিদ্র পরিবারের পক্ষে ভরণ-পোষণ মিটিয়ে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগানো বাবা-মার পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে তাদের স্কুলে পাঠাতে অভিভাবকেরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থায় পিতা বা মাতা মনে করেন, সন্তান কোনো পেশায় নিয়োজিত হয়ে আয় রোজগার করলে পরিবারের উপকার হবে। শিশুদের অল্প পারিশ্রমিকে দীর্ঘক্ষণ কাজে খাটানো যায় বলে নিয়োগ কর্তারাও তাদেরকে কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহী হয়। দরিদ্র পিতা-মাতা শিক্ষাকে একটি অলাভজনক কর্মকাণ্ড মনে করে। সন্তানদের ১৫-১৬ বছর ধরে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়ার মতো ধৈর্য ও অর্থ তাদের থাকে না। শিশু শ্রমের কুফল সম্পর্কে অভিভাবকদের উদাসীনতায় শিশু শ্ৰম বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরজীবনে গৃহস্থালি কাজে গৃহকর্মীর ওপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীলতাও শিশু শ্রমকে উৎসাহিত করছে।

শিশু শ্রম প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইন ও বাংলাদেশ অনুসমর্থিত আন্তর্জাতিক সনদসমূহ বাংলাদেশের সংবিধানে শিশুদের অধিকার : বাংলাদেশের সংবিধানে শিশুসহ সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে শিশুদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬-এ শিশু ও কিশোরদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে শিশুর ন্যূনতম বয়স ১৪ বছর এবং কিশোরের ন্যূনতম বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৪ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে কাজে নিয়োগ করা যাবে না এবং শিশুর পিতামাতা কিংবা অভিভাবক শিশুকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য কারও সাথে কোনো প্রকার চুক্তি করতে পারবে না। কিশোর শ্রমিক নিয়োগ করতে হলে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের কাছ থেকে মালিকের খরচে ফিটনেস সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। কিশোর শ্রমিকদের স্বাভাবিক কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে দৈনিক ৫ ঘণ্টা। তবে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৭টা পর্যন্ত কোনো কিশোর শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো যাবে না। কিশোর শ্রমিককে দিয়ে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক কাজ করানো যাবে না। পাশাপাশি এ আইনে আরও বলা হয়েছে যে, ১২ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের কেবল সে ধরনের হালকা কাজই করানো যাবে যে কাজে কোনো ক্ষতি হবে না এবং যা তাদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকারকে বিঘ্নিত করবে না।

                                                                কাজঃ

দলগত : শিশু শ্রম বন্ধে তোমাদের কী করণীয় উল্লেখ কর ।

জাতীয় শিশু শ্রম নিরসন নীতি ২০১০-এ শিশু শ্রম বিলোপ সাধনে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শিশু শ্রম প্রতিরোধ ও নির্মূলে কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত হতে ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম নিরসনে সুনির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সব ধরনের শিশু শ্রম বিলোপে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ : ১৯৮৯ সালের জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে শিশু শ্রম বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। এই সনদে বলা হয়েছে, স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে সদস্য রাষ্ট্রগুলো শিশু শ্রমের জন্য বয়স, বিশেষ কর্মঘণ্টা ও কর্মে নিয়োগের যথার্থ শর্তাবলি নির্ধারণ করবে। এছাড়া এ সনদে শিশুর সুরক্ষা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে যা পরোক্ষভাবে শিশুশ্রম নিরসনে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে এ সনদ অনুসমর্থন করেছে।

কিশোর অপরাধ
কিশোর অপরাধ প্রতিটি সমাজের জন্য একটি উদ্বেগজনক সামাজিক সমস্যা। আমাদের সমাজে এবং পৃথিবীব্যাপী উল্লেখযোগ্য হারে সমস্যাটি বিদ্যমান রয়েছে। সামাজিক সুষ্ঠু পরিবেশ ও মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হয়ে খারাপ সঙ্গ এবং পাচারকারী ও বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে জড়িত হয়ে শিশু-কিশোররা অপরাধী হয়ে ওঠে। শিশুরা জাতির মূল্যবান সম্পদ। সুতরাং তাদের উন্নয়নের জন্য এবং সমসুযোগ-সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে। কর্মক্ষম ও নৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে এবং সমাজের প্রয়োজনে উপযুক্ত দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা অর্জন করতে পারে। বঞ্চিত ও অবহেলিত শিশু-কিশোররা সহজেই অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে। কাউকে পরোয়া না করা, বিচক্ষণতার অভাব, উদ্যম, শারীরিক শক্তি এবং টিকে থাকার ক্ষমতা, দুঃসাহসিক প্রকৃতি প্রভৃতি কারণে কিশোররা অপরাধ ও বিভিন্ন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পারিবারিক অভাব-অনটন, শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং বাবা-মায়ের দায়িত্বহীন আচরণ ও নিয়ন্ত্রণের অভাবে শহরের বস্তিতে বসবাসকারী কিশোররা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বেশি জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া শহর জীবনের একাকিত্ব, বাবা-মায়ের কর্মব্যস্ততা, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবসহ নানা কারণে কিশোররা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়। গঠনমূলক পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি, পরিবার ও বিদ্যালয়ে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, চিত্তবিনোদনমূলক কার্যক্রম, অপসংস্কৃতিরোধ প্রভৃতি পদক্ষেপের মাধ্যমে কিশোর অপরাধ মোকাবিলা করা যেতে পারে। আবার যেসব শিশু ও কিশোর ইতোমধ্যেই অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে তাদের চরিত্র সংশোধনের জন্য কিশোর আদালত, কিশোর হাজত, সংশোধনী প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির মাধ্যমে তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।

কিশোর অপরাধ দমন আইন এবং বিচার ব্যবস্থা : কিশোর অপরাধের বিচার ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সাজা দেওয়া নয় বরং তারা যেন তাদের ভুলগুলো উপলব্ধি করে সংশোধন হওয়ার সুযোগ পায় ।

কিশোর অপরাধী : জাতিসংঘ শিশু অধিকার কনভেনশন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী সকলেই শিশু বলে বিবেচিত । বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে এ সনদ অনুমোদন করে। বাংলাদেশে শিশুদের সংজ্ঞায়নে বিভিন্ন ধরনের আইন রয়েছে।

কিশোর অপরাধ আইন : সাধারণত সাত থেকে ষোলো বছর বয়সী শিশুরাই কিশোর-কিশোরী হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশ শিশু আইন-১৯৭৪-ই কিশোর অপরাধ দমন ও বিচারের মূল আইন হিসেবে ধরা হয়। এ আইনে কিশোর অপরাধের বিচার সংক্রান্ত কিশোর আদালত গঠন, আলাদা হাজত বা আটক স্থান এবং কিশোর সংশোধনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়।

                                                                   কাজঃ

দলগত: কিশোর অপরাধীকে সুপথে আনার জন্যে করণীয় পদক্ষেপ চিহ্নিত কর ।

এছাড়া এ আইন অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়ে শিশু আদালত গঠিত হবে। এ আদালত প্রতিমাসে অন্তত ২ থেকে ৩ বার কিংবা তার অধিক সংখ্যক বার বসবে। 

 আইনে বলা হয়, কিশোর হাজত সাধারণ হাজত থেকে ভিন্নতর হবে। কিছু কিছু অপরাধ খতিয়ে দেখতে বিচারের শুনানি এবং নিষ্পত্তির জন্য কিশোরদের প্রায়শই আটক রাখার প্রয়োজন হয়। এ সময় তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আটক শিশুকে পর্যবেক্ষণ করবেন এবং শিশুর চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে অপরাধ সংঘটনের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন। তদন্ত কর্মকর্তারা বিচার, বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে এবং অভিভাবকদের তথ্য অনুযায়ী আদালতে রিপোর্ট পেশ করবেন। কিশোর হাজতে আটক অবস্থায় শিশু-কিশোরদের বিভিন্নভাবে সংশোধনমূলক কর্মকাণ্ডে এবং খেলাধুলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়।
কিশোর সংশোধন : আইনে কিশোরদের সংশোধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ও দোষী শিশু এবং আনুষ্ঠানিক সংশোধন প্রয়োজন এমন কিশোরদের সংশোধন কেন্দ্রে প্রেরণ করতে হবে।   

মাতৃকল্যাণ
স্বাস্থ্য একটি মানবাধিকার। সকল জনগণের সুস্বাস্থ্য অর্জনের লক্ষ্যে সেবা প্রাপ্তিতে সাম্য, নারী-পুরুষ সমতা এবং সমগ্র জনগোষ্ঠীর সেবার নিশ্চয়তা বিধান করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে মায়েদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এককথায়, মাতৃকল্যাণ বলতে মায়ের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং ভালো থাকার জন্য সমাজ এবং সামাজিক সংগঠন কর্তৃক সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টাসমূহকে বোঝায়। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য সেবা, প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, নিরাপদ প্রসূতি সেবা, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর উপস্থিতি ও পরিচর্যা, প্রজননকালীন রুগ্নতা, মাতৃত্বজনিত মৃত্যুহার রোধ প্রভৃতি মাতৃকল্যাণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক।
মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে মাতৃত্বজনিত মৃত্যু নারীদের বাঁচার ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকারকে মারাত্মকভাবে আঘাত হানে। বাংলাদেশে সার্বিক মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য পরিস্থিতি উন্নতির পথে। তবে মাতৃত্বজনিত কারণে এখনও অনেক প্রসূতি মা মারা যাচ্ছেন।

বাংলাদেশের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির অন্যতম লক্ষ্য শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস করা; বিশেষ করে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে এ হারকে যুক্তিসংগত পর্যায়ে নামিয়ে আনা। এ লক্ষ্যে সরকার মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সন্তোষজনক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে । যথাসম্ভব প্রতিটি গ্রামে নিরাপদ প্রসূতি সেবা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে। মা ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসা অর্জন করছে।

বাংলাদেশ সরকার ১১ জানুয়ারি ২০১১ গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত নারী কর্মীদের জন্য ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি ঘোষণা করে, যা ৯ জানুয়ারি ২০১১ সাল থেকে কার্যকর হয়। মাতৃত্বজনিত ছুটি বৃদ্ধির ফলে মায়েরা তাদের সন্তানদের বুকের দুধ পান করাতে সমর্থ হবেন এবং এর ফলে নবজাতক শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর হবে।

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion