শারীরিক শিক্ষা দেহ ও মনের সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন সাধন করে। শারীরিক শিক্ষা ছাড়া শিক্ষার পূর্ণতা আসে না। যে সব গুণ থাকলে দেশের প্রতিটি নাগরিক সুস্থ, সবল ও দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠে এবং নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়, শারীরিক শিক্ষা সেই গুণাবলি অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। মানুষ সমাজে স্বীকৃতি পেতে চায়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমেই তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। তাই নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব গঠনেও শারীরিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। আমাদের দেহ কতকগুলো অঙ্গের সমষ্টি। আবার প্রত্যেকটি অঙ্গ নানাপ্রকার মাংসপেশি, হাড়, শিরা, ধমনি ইত্যাদি নিয়ে গঠিত। দেহকে ঠিক রাখার জন্য সব সময়ই দেহের মধ্যে কতকগুলো প্রক্রিয়া কাজ করছে। এই প্রক্রিয়াগুলো সুষ্ঠুভাবে চলার জন্য প্রয়োজন শারীরিক সুস্থতা। উপযুক্ত খাবার, অঙ্গ সঞ্চালন, বিশ্রাম ও ঘুম এইগুলির অভাবে শরীর সঠিকভাবে বৃদ্ধি পায় না ও সুস্থ থাকে না। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা দৈহিক ও মানসিক বিকাশের উপর সমান গুরুত্ব আরোপ করছে।
মাদ্রাসায় শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো-
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তাই সমাজ সংরক্ষণ, সমাজ সংস্কার ও ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তনের কাজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমাজ ও দেশের কাছে দায়বদ্ধ। দেশের মানবসম্পদকে সঠিকভাবে বিকশিত করা এবং আজকের শিশুকে আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর ন্যস্ত। এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ মূলত দ্বিমুখী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম কাজ হলো শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বিকাশ সাধন করা। এর মধ্যে শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক দিক অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় কাজ হলো শিক্ষার্থীর জৈবিকসত্তাকে সামাজিক সত্তায় রূপান্তরিত করা। এর মধ্যে শিশুর চারিত্রিক ও মূল্যবোধের উন্নতি এবং সামাজিক বিকাশ অন্তর্ভুক্ত। এই কাজের মধ্যে প্রথমটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যক্ষ কাজ এবং দ্বিতীয়টি তার পরোক্ষ দায়িত্ব। শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজন হয়। মাসলো-এর মতে শিক্ষার্থীর এই প্রয়োজন তিনটি স্তরে বিন্যস্ত। যেমন-
১. শারীরিক ও শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজন (Biological need )
২. মানসিক ও আত্মিক পরিপূর্ণতার প্রয়োজন (Psychological need)
৩. সামাজিক প্রয়োজন (Social need)
১. শারীরিক ও শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজন : শিক্ষার্থীর শারীরিক ও শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজন পূরণে শারীরিক শিক্ষা প্রত্যক্ষ কাজ করে। এ ব্যাপারে শারীরিক শিক্ষার ভূমিকা হলো-
ক. শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীর গতিশীল কাজের জৈবিক প্রয়োজন পূরণ করে ।
খ. শিক্ষার্থীর দৈহিক গঠন সুন্দর ও মজবুত করে।
গ. শিক্ষার্থীর শারীরিক সক্ষমতা ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ঘ. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ৷
ঙ. শিক্ষার্থী খেলাধুলার কৌশল শেখার মাধ্যমে খেলাধুলায় পারদর্শিতা অর্জন করে।
চ. শারীরিক শিক্ষা সুস্থ মনের জন্য সুস্থ দেহ গড়ে তোলে।
২. মানসিক ও আত্মিক পরিপূর্ণতা প্রয়োজন
ক. শিশুর মানসিক ও বুদ্ধিমত্তার ভিত গড়ে তোলে।
খ. পড়াশোনার একঘেয়েমিতা দূর করে।
গ. শিক্ষার্থীর চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায় ।
ঘ. আত্মসচেতনতা, আত্মনির্ভরতা, আত্মোপলব্ধি ও আত্মসম্মান বাড়িয়ে তোলে।
ঙ. পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে সাহায্য করে।
চ. শিক্ষার্থীর মনে সৃজনশীলতার অনুভূতি জাগ্রত করে।
ছ. ক্ষতিকর নেশা থেকে দূরে রাখে।
জ. চিত্তবিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর উপায় নির্বাচনে সাহায্য করে।
৩. সামাজিক প্রয়োজন
ক. প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলে।
খ. খেলাধুলায় সামাজিক সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটে ও মানসিক গুণ অর্জনে সহায়তা করে।
গ. শারীরিক শিক্ষা নেতৃত্বদানের ক্ষমতার বিকাশ ঘটায় ৷
ঘ. দেশ ও সমাজের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটায় ।
ঙ. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সৌভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তোলে ।
চ. শিক্ষার্থীর উদার মানসিকতা ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে।
কাজ -১ : |
শারীরিক ও শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজনগুলো কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে আলোচনা কর। |
কাজ- ২ : |
মানসিক ও আত্মিক প্রয়োজনীয়তাগুলো ৩টি দলে ভাগ হয়ে প্রত্যেক দল ২টি করে প্রয়োজনীয়তা উপস্থাপন কর। |
কাজ- ৩ : |
সামাজিক প্রয়োজনগুলো বোর্ডে লেখ । |
Read more