বাংলাদেশে সবজি চাষের বর্তমান অবস্থা

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

বাংলাদেশে বিভিন্ন সবজির বর্তমান ও অতীত পরিসংখ্যান

প্রাচীনকাল থেকে মানুষ শাক সবজি খেয়ে আসছে। তবুও বাংলাদেশের জনগণ এখনো সবজির খাদ্যমান ও অন্যান্য গুনাগুণ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। বাংলাদেশে সবজি উৎপাদনে জমির ব্যবহার ও প্রকৃত উৎপাদন সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। কেননা মানুষ প্রয়াজন মেটাতে বা সখের বশবর্তী হয়ে বাড়ির আশেপাশে, ঘরের চালে, বাড়ির ধারে, আনাচে কানাচে, গাছের উপর বাইয়ে দিয়ে সবজি উৎপাদন করে থাকে। অনেক সময় জমির আইলে, সাথী ফসল হিসেবে বা মিশ্র ফসল হিসেবে সবজি চাষ হয়। এরূপ অবস্থায় সবজির জমি ও উৎপাদনগত সঠিক তথ্য পাওয়া কষ্টসাধ্য। বাংলাদেশে ঋতু বৈচিত্রের কারণে কিছু কিছু সবজি নির্দিষ্ট মৌসুমে সফলভাবে চাষ হয়। আবার কিছু কিছু সবজি সারাবছরই চাষ হয়। সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় ১০০০০ রকমের শাক সবজির পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশে আর ৬০টি শাক সবজি পাওয়া যায়। এগুলোকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার জন্য তাদের অংশগুলোকে কয়েকটি ভাগে বিভাজন করা হয়। যেমন- পাতাজাতীয় মূলজাতীয়, কম্পজাতীয়, কচুজাতীয়, শিমজাতীয়, কপিজাতীয়, কুমড়াজাতীয়, ফলজাতীয় ইত্যাদি। উৎপাদন মৌসুম হিসেবে শাক-সবজিকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- শীতকালীন, গ্রীষ্মকালীন ও বারমাসি । শাক সবজির কতগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন- দ্রুত বর্ধনশীল, স্বল্প সময়ে উৎপাদন করা যায় এবং সহজে আহারপোযোগী হয়, একর/হেক্টর প্রতি ফলন অন্যান্য খাদ্যশস্য অপেক্ষা অনেক বেশি, অনেক সময় সেচ ছাড়াই জন্মানো যায়, ইত্যাদি।

শাক সবজি আহারের সাথে মানুষের স্বাস্থ্যের বিরাট সম্পর্ক আছে। যারা যত বেশি শাক-সবজি খাবে, তাদের শরীরে রোগবালাই তত কম হবে। প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ শাক সবজি খেলে পুষ্টিহীনতা দূর হবে এবং অন্ধত্ব, রাতকানা, এ্যানিমিয়া, পলগন্ড, স্ক্যাব প্রভৃতি সমস্যা হতে রেহাই পাবে। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০-২২০ গ্রাম সবজি খাওয়া উচিত, কিন্তু বাংলাদেশে এর বিপরীতে যায় মাত্র ৩০-৩৫ গ্রাম। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩.২৫ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। এ জমি থেকে প্রায় ৪২.৫৫ লাখ মে. টন সবজি উৎপাদন হচ্ছে। অথচ বর্তমানে চাহিদা প্রায় ১১০ লাখ মে.টন। এ চাহিদা পুরণ করতে বর্তমান উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বাড়াতে হবে।

বিভিন্ন প্রকার সবজি 

ক. শীতকালীন সবজি ও আলু, বেগুণ, টমেটো, মূলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, কচু, মিষ্টি কুমড়া, শিম, পালংশাক ইত্যাদি। 

খ. গ্রীষ্মকালীন সবজি: বেগুন, লাউ, চালকুমড়া, পটল, ঝিঙা, করলা, শশা, চিচিঙ্গা, ডাঁটা, পুঁইশাক, ঢেঁড়শ, বরবটি, পেঁপে, কাঁচা কলা প্রভৃতি। বাংলাদেশে সবজি সরবরাহ বা বাজারে সবজি সরবরাহের অধিক প্রাপ্তি ও স্বল্প প্রাপ্তির সময় সীমা উল্লেখ করা হলো। উন্নত দেশে সংরক্ষণ ও আমদানির মাধ্যমে প্রধান প্রধান সবজি সারা বছরই ক্রেতাদের কাছে সহজলভ্য। বাংলাদেশের সবজির সরবরাহ সুষম নয়। মৌসুম অনুযায়ী এর প্রচুর ব্যবধান রয়েছে, সবজি আমদানির সুযোগও কম। এদেশের মাত্র কয়েকটি সবজি সারা বছর পাওয়া যায়। অন্যান্য সবজির উৎপাদন ও ব্যবহার ঋতুভিত্তিক। নিচে বাংলাদেশের কোন মাসে কি পরিমাণ সবজি বাজারে পাওয়া যায় তা দেয়া হলো।

মার্চ-এপ্রিল মাসে সর্বাধিক পরিমাণ সবজি পাওয়া যায় এবং এ সময়ে সবজি সংখ্যায়ও বেশি। তারপর নভেম্বর পর্যন্ত এদের প্রাপ্তি কমতেই থাকে। অক্টোবর মাসে দুঃষ্প্রাপ্য হয়।

মৌসুমভিত্তিক বাংলাদেশে সবজির উৎপাদন টন/হেক্টর

বাংলাদেশে সবজি উৎপাদনের প্রতিবন্ধকতা

বাংলাদেশে সবজি উৎপাদনের প্রতিবন্ধকতা অনেক, যেমন-

(১) জলবায়ুগত সমস্যাঃ বাংলাদেশে বিরাজমান জলবায়ুর কারণে বছরের সবসময় সব ধরনের শাক-সবজির উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। ঠান্ডা আবহাওয়া ভালো এমন সবজি কেবল রবি মৌসুমে এবং গরম আবহাওয়া উপযোগী সবজিগুলোকে খারিফ মৌসুমে উৎপাদন করা সম্ভব হয়। বর্ষাকালে অত্যাধিক বৃষ্টিপাতের দরুণ সবজি উৎপাদন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। মার্চ-মে মাসে বৃষ্টিপাত অনিশ্চিত ও অনিয়মিত হলেও এ সময়ে বারবার প্রবল ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায় যা সবজির জন্য নিরাপদ নয়।

(২) নিম্নমানের ফলনঃ বাংলাদেশের সবজির গড় ফলন অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম, যদিও অন্যান্য দেশের তুলনায় জমির গুণাগুণ এত খারাপ নয়। উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহার না করা এর প্রধান কারণ ।

(৩) বীজের সমস্যাঃ বীজ সমস্যার কারণে এ দেশের সবজি উৎপাদন ভীষণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সবজি বীজ সমস্যার মধ্যে অনেক সবজির বীজ আমাদের দেশে উৎপাদিত না হওয়া, উৎপাদিত বীজের নিম্নমান এবং বিদেশ থেকে বীজ আমদানিতে সমস্যা। বিদেশ থেকে যে বীজগুলো আমদানি করা হয় তা আমাদের দেশের জলবায়ুতে উৎপন্ন হয় না যেমন-বাঁধাকপি, ফুলকপি ।

(৪) বাজারজাতকরণ সমস্যাঃ বাংলাদেশে সবজির বাজারজাতকরণের সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। উৎপাদন মৌসুমে চাহিদা আছে এমন স্থানে শাক-সবজির যথেষ্ট মূল্য থাকলেও উৎপাদন এলাকায় এর মূল্য থাকে খুবই কম থাকে ।

(৫) সবজির উচ্চ উৎপাদন খরচ ও নিম্নমূল্যঃ সবজি চাষের উপকরণের মধ্যে বীজ, সার, ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও সিঞ্চন যত্র ইত্যাদি উপকরণের দুষ্প্রাপ্যতা, নিম্ন গুণাগুণ ও দাম খুব বেশি ।

(৬) সবজির উৎপাদনে যথাযথ ও সমন্বিত প্রচেষ্টার অভাবঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা থেকে অনেক উন্নত জাতের সবজির জাত আবিষ্কার করেছে, কিন্তু এগুলো সকল অঞ্চলের কৃষকদের দ্বার পর্যন্ত সময়মত পৌঁছায় না ।

শাক-সবজির বর্তমান অবস্থা উন্নয়নের পদক্ষেপ

সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জাতীয় ও কৃষক পর্যায়ে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে সে সম্পর্কে তেমন কোন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। শাক-সবজির উৎপাদন, ব্যবহার ও সার্বিক উন্নয়নে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে।

ঘাটতি মৌসুমে শাক সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি : জলবায়ুগত কারণে বছরের সব সময় সবজির উৎপাদন সমান থাকে না যথাযথ উৎপাদন কৌশল ও উপযোগী জাতের ব্যবহারের মাধ্যমে ঘাটতি মৌসুমগুলোতে সবজি উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

শাক সবজি উৎপাদনে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করেঃ শীতকালীন শাক-সবজির চাষ অনেকাংশে পানিসেচ সুবিধার ওপর নির্ভরশীল। সেচের সুযোগ বৃদ্ধি করে সবজি চাষাধীন জমি বাড়ানো সম্ভব।

শাক সবজি ফলন বৃদ্ধিঃ উন্নত ও উপযোগী জাত দ্বারা সবজির ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব। সকল কৃষকই যদি উন্নত জাতের সবজি চাষ করে তাহলে সবজির ফলন অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে।

বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করেঃ আমাদের কৃষকেরা খুবই কম পরিমাণে সবজি উৎপাদন করে এবং কম জমিতে সবজি চাষ করে। সবজি যদি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় তাহলে সবজি উৎপাদন বেড়ে যাবে।

সবজি বীজ উৎপাদনের মাধ্যমেঃ বাংলাদেশে সব ধরনের বীজ সব জায়গায় উৎপাদনের জন্য উপযোগী নয়। তাই যে অঞ্চলে বীজ উৎপাদন ভালো হয়, সেভাবে বীজ উৎপাদন করা যায়। সবজি বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।

গবেষণা জোরদারকরণঃ সবজির জাত উন্নয়ন এবং প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফসল রক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে সবজির উন্নত জাত উদ্ভাবন করতে হবে। রোগ ও পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত বের করা খুবই প্রয়োজন।

উৎপাদন উপকরণের সরবরাহ নিশ্চিতকরণঃ উন্নত মানের বীজ, নির্ভেজাল বালাইনাশক ও অন্যান্য উৎপাদন উপকরণ কৃষকেরা যাতে সময়মত এবং যুক্তিসঙ্গত দামে ক্রয় করতে পারে, তার ব্যাবস্থা করা। সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় সবজির উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সবজি উৎপাদনের বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। এজন্য বাংলাদেশে সবজি চাষকৃত জমির পরিমাণ, সবজি উৎপাদন ও বিশ্বে সবজি উৎপাদন পরিস্থিতি সম্পর্কিত তথ্য জানা দরকার। সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নিম্নরূপ ব্যবস্থা অবলম্বন করা যেতে পারে।

(১) সবজির উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন। 

(২) পতিত জমিকে অধিক পরিমাণে শাক-সবজির উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা। 

(৩) প্লাবনমুক্ত পাহাড়ি এবং টিরেস এলাকায় সবজি উৎপাদন বাড়ানো। 

(৪) হিমাগারের সংখ্যা ও আয়তন বৃদ্ধি করে বীজআলু সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন। 

(৫) বর্ষাকালে সবজি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে দেশের উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম এলাকায় বিশেষ প্রকল্প 

(৬) বাড়ি-ঘর, অফিস, স্কুল-কলেজ এবং রাস্তার পার্শ্ববর্তী পতিত জমিতে শাক-সবজি উৎপাদন। 

(৭) সুষম সার ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। 

(৮) কীট-পতঙ্গ ও রোগ দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ । 

(৯) শিম, মিষ্টি আলু, শাক ও কচুজাতীয় সবজির উৎপাদন বাড়ানো । 

(১০) লবণাক্ত অঞ্চলে চাষাবাদের জন্যে বিভিন্ন সবজির জাত উদ্ভাবন । 

(১১) মিশ্র ফসলের চাষ, সাথী ফসলের চাষ।

বর্তমানে সবজি উৎপাদন ব্যবস্থা ৩ ভাগে পরিচালিত হচ্ছে-

ক) বসতবাড়ির আশপাশ ও অনির্ধারিত পতিত স্থানে সবজি উৎপাদন 

খ) বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে সবজি উৎপাদন এবং 

গ) বীজের ব্যবসাকে লক্ষ করে সবজি উৎপাদন।

বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৫০ হাজার খানা আছে। এসব খানায় পারিবারিক চাহিদা পূরণের জন্য ১৫টি গ্রীষ্মকালীন ও ১৩টি শীতকালীন সবজি সারাবছরই চাষ হয়ে থাকে। ব্যবসায়িক উৎপাদনের উন্নয়ন করা হলে অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদা পূরণ এবং রপ্তানির জন্য উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ আছে। সাম্প্রতিককালে শহরের আশেপাশে ও শহরতলীতে শাকসবজি উৎপাদন হচ্ছে। সবজি চাষ বৃদ্ধি এবং নিবিড়তার কারণে সবজি বীজের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। তাই উন্নতমানের বীজ উৎপাদনের জন্য সরকার বিএডিসি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের মাধ্যমে বীজ সরবরাহ করছে এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চলছে । বাংলাদেশে সবজির মধ্যে আলুকে অন্যতম ফসল ধরা হয়। আলু মূলত শ্বেতসারজাতীয় খাদ্য। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে বেশি পরিমাণে সবজি গ্রহণ করা হলে শরীরের পুষ্টি চাহিদা সুষম হয়। শরীরের মোট ক্যালোরির অন্তত ৫% ফল সবজি হতে আসা উচিত। এতে যে পরিমাণ সবজি খেতে হবে তাতে শরীরের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ হবে।

বাংলাদেশে ২০০৬-২০০৭ ও ২০০৭-২০০৮ এ দানা শস্য চাষের অধীন জমি ছিল ১১৯.০৭ ও ১২২.৪৭ লাখ হেক্টর এবং উৎপাদন ছিল 330.8১ ও ৩৫২.৯২ লাখ মেট্রিক টন। আমরা খাদ্য হিসেবে শুধু দানাদার শস্য (ধান, গম ও ভূট্টা) বেশি গ্রহণ করে থাকি। অথচ সবজির তুলনায় দানাদার শস্যের হেক্টর প্রতি ফলন অনেক কম। তাই খাদ্য ঘাটতি পূরণে দানাদার শস্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তা পূরণ করা সম্ভব নয়। শাক সবজি যেহেতু অল্প সময়ে বেশি পরিমাণে উৎপাদন করা যায়, তাই খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য শাক সবজির উৎপাদন ও বেশি আহার করা প্রয়োজন। উন্নত বিশ্বের জনগণ মাথাপিছু দৈনিক ৩০০-৫০০ গ্রাম শাকসবজি খেয়ে থাকে। যারফলে তাদের স্বাস্থ্য অনেক ভালো এবং নিরোগ। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের শাকসবজি খাওয়ার হার প্রতিদিন প্রায় ৩০ গ্রাম এবং দানাশস্য গ্রহণের হার প্রায় ৫০০ গ্রাম। এতে খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য দানাশস্য চালের ওপর বেশি চাপ পড়ে। শাক সবজি খাওয়া পরিমাণের প্রতি একটু যত্নশীল হলেই বাড়ানো সম্ভব। তাতে শাক সবজির বার্ষিক খাওয়ার পরিমাণ প্রায় ২৮-৩০ লক্ষ টন হতে প্রায় ২০০ লাখ টনে উন্নিত হবে। অধিকাংশ শাকসবজিই সংগ্রহের পর পরই খেতে হয়। তবুও অনেক সবজি আছে, যা অন্য উপায়ে বা শুকিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।

সারণিঃ বাংলাদেশ, ভারত ও জাপানের জনগণের মাথাপিছু দৈনিক খাদ্য গ্রহণের তুলনামূলক চিত্র

একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের দৈনিক খাদ্য তালিকায় যা থাকা উচিত তা হলো-

শাকসবজি উৎপাদন কম, তাই গ্রহণের পরিমাণও কম। অন্যদিকে শাকসবজি ব্যবহারেরও যথেষ্ট ত্রুটি আছে। যেমন-

(ক) শাকসবজি উঠানোর/সংগ্রহকালে অপরিচ্ছন্ন পাত্রে বা মাটিতেই রাখা হয়। শাকসবজি নরম ও রসালে বিধায় অনেক রোগ জীবাণু তাতে সহজে প্রবেশ করে। 

(খ) শাক সবজি যতদূর সম্ভব টাটকা অবস্থায় খাওয়া উচিত। কিন্তু একমাত্র পারিবারিক বাগান ছাড়া বাণিজ্যিক- ভাবে উৎপাদিত শাক-সবজি টাটকা পাওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া সেগুলো নোংরা পানিতে ধুয়ে বা নোংরা পানির ছিটা দিয়ে নোংরা পরিবেশে নোংরা পাত্রে ভরে দীর্ঘসময় গরম পরিবেশে বহন করে বাজারে/আড়তে পৌঁছায়। 

(গ) বাজারে শাক সবজি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নাই, ফলে গুণাগুণ অনেকটা নষ্ট হয়ে যায় । কিন্তু তা না করে কাটার পর পানিতে ধুয়ে নেওয়া হয়, ফলে পুষ্টিগুণ বহুগুণে কমে যায় । 

(ঘ) শাক সবজি চাষকালে মারাত্মক বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। 

(ঙ) শাকসবজি রান্নার আগে যখন কেটে প্রস্তুত করা হয় তার পূর্বে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত। 

(চ) রান্নার সময় যতদূর সম্ভব সবজি কম সেদ্ধ করতে হয়। কিন্তু তা না করে অতিরিক্ত সিদ্ধ বা ভাজা পোড়া করে রান্না করা হয়, তাতে সবজির পুষ্টিমান নষ্ট হয়ে যায়। 

(ছ) যতটা সম্ভব কম পানি দিয়ে সবজি সিদ্ধ করতে হয় এবং পানি ফেলে দিতে হয় না। কিন্তু তা না করে সিদ্ধ করার পর পানি ফেলে দিয়ে বেশিরভাগ পরিবারে রান্না করে থাকে । 

(জ) যে সব সবজি কাঁচা খাওয়া যায়, সেগুলো কাঁচা অবস্থাতেই খাওয়া উচিত। যেমন- টমেটো, ক্যাপসিকাম, শশা, গাজর, লেটুস, মটরশুটি ইত্যাদি। অথচ টমেটো, শশা, গাজর রান্নার তরকারির সাথে যোগ করে দেওয়া হয়, তাতে অনেক পুষ্টি নষ্ট হয়ে যায় । 

(ঝ) ঢেঁড়শ কাঁচা অবস্থায় খাওয়া সম্ভব, যদি কচি সংগ্রহ করা যায়। তবে একটু সিদ্ধ করে তাতে সামান্য লবণ দিয়ে খাওয়া যায়। কিন্তু ঢেঁড়শ সাধারণত ভাজা করে খায়। এতে পুষ্টিমান কমে যায় ।

Content added By

এক কথায় উত্তর 

১. শাক সবজি উৎপাদন মৌসুম হিসেবে শাকসবজি কয় ভাগে বিভক্ত ? 

২. বাংলাদেশে বর্তমানে সবজির চাহিদা কত মেট্রিক টন ? 

৩. বাংলাদেশে মোট খানার সংখ্যা কত ? 

8. উন্নত বিশ্বের জনগণ মাথাপিছু দৈনিক কত গ্রাম সবজি খায় ? 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন  

১. সবজি চাষের সমস্যাসমূহ কী কী ? 

২. সবজি চাষের সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় ? 

রচনামূলক প্রশ্ন 

১. বাংলাদেশে সবজি চাষের বর্তমান অবস্থা কীভাবে উন্নত করা যায় তা আলোচনা কর ।

Content added By
Promotion