আধুনিক বিশ্বে যোগাযোগ প্রযুক্তিগত গতিধারায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিদ্যার অগ্রগতি ও উন্নয়নের মূলে রয়েছে উত্তম যোগাযোগ ব্যবস্থা ।
যোগাযোগ মানবজীবনের একটি সর্ব বিস্তৃত কার্যক্রম। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই যোগাযোগনির্ভর । সুতরাং যোগাযোগের আওতা এতই ব্যাপক যে, তা নির্দিষ্ট সীমারেখা টেনে আলোচনা করা যায় না । মানুষের কর্মপরিধি যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত যোগাযোগের আওতাও ততদূর বিস্তৃত ।
যোগাযোগ প্রক্রিয়ার সাথে মানুষের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত । সামাজিক দল গঠনে যোগাযোগ ব্যবস্থার ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত । তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ।
নিম্নে ব্যবসায় সাফল্য লাভে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় আলোচনা করা হলোঃ
১. লক্ষ্য অর্জন: ফলপ্রসূ যোগাযোগ সংগঠনের বিভিন্ন ব্যক্তি ও দলকে মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিয়োগ করতে সমর্থ করে। যোগাযোগের উপস্থিতির কারণেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মী সার্বিক লক্ষ অর্জনের জন্য সচেষ্ট হয় ।
২. পরিকল্পনা প্রণয়ন: ব্যবসায়িক কার্যাবলি দক্ষতা ও নিপুণতার সাথে পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। পরিকল্পনা প্রণয়ন করার জন্য নানারূপ তথ্য প্রয়োজন হয়। যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং পরিকল্পনা করা হয় ।
৩. পলিসি নির্ধারণ: কারবার সংগঠনের সার্বিক সফলতা নির্ভর করে পলিসি নির্ধারণের উপর। যোগাযোগ বিভিন্ন পক্ষের মতামত সংগ্রহের মাধ্যমে পলিসি প্রণয়নে সহায়তা করে ।
৪. পরিকল্পনা বাস্তবায়ন: পরিকল্পনা প্রণয়নের পর এর সার্বিক বাস্তবায়ন আবশ্যক। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যোগাযোগের উপর নির্ভর করতে হয়। যোগাযোগই প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করে থাকে ।
৫. পরিকল্পনা ও নীতির ব্যাখ্যা: প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রণীত পরিকল্পনা কর্মসূচিসমূহের প্রকৃত ব্যাখ্যার জন্য অনেক সময়ই নিচের স্তরের কর্মচারীদের উচ্চস্তরের কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হয়।
৬. সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধি: কারবার প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা তথা গতিশীলতা বৃদ্ধিতে যোগাযোগের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যেসব প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগের তেমন বাস্তব প্রয়োগ নেই সেখানে লক্ষ্য অর্জন বিঘ্নিত হতে বাধ্য ।
৭. কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিঃ যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত করে বলে তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায় । ফলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় ।
৮. সমস্যা সম্পর্কে অবগত করা: যোগাযোগের মাধ্যমে উচ্চস্তরের ব্যবস্থাপক বা নির্বাহীগণ কারবার প্রতিষ্ঠানের অধস্তন কর্মীদের সমস্যা ও অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পারেন। এতে তারা সংশোধনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন । ফলে কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় ।
৯. তথ্যের আদান-প্রদান: যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে প্রয়োজনীয় সংবাদ আদান-প্রদান করে থাকে । ফলে সবাই তাদের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারে। এতে প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয় ।
১০. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা: কারবারের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ব্যবস্থাপকদের প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় । আর সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজন সঠিক তথ্য যা জোগান দেয় দক্ষ যোগাযোগ ব্যবস্থা ।
১১. অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা: যোগাযোগ কারবার প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এরূপ পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ।
১২. সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি: যোগাযোগের সাহায্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে আন্তরিকতা ও পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধি পায় । ফলে একে অপরকে কার্য সম্পাদনে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসে ।
১৩. মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা: উত্তম যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে । এতে শিল্প বিরোধের মতো অবাঞ্ছিত ঘটনাবলি হ্রাস পায়।
১৪. পণ্য প্রচার: নতুন উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে সম্ভাব্য ভোক্তাদের অবগত করানোর জন্য প্রচারকার্য সম্পাদনে ব্যবসায়ীকে যোগাযোগের উপর নির্ভর করতে হয় ।
১৫. কর্মীদের আগ্রহ সৃষ্টি: যোগাযোগের মাধ্যমে কারবারের বিভিন্ন দিক কর্মীদের অবহিত করে। ফলে কর্মীরা তাদের কার্য সম্পাদনে আগ্রহী হয় ।
১৬. নেতৃত্বের বিকাশ: যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে তার নেতৃত্বের প্রসার ঘটাতে পারে । যোগাযোগের উপর গুরুত্বারোপ করা না হলে নেতৃত্ব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য ।
১৭. বাজার গবেষণায় সহায়তা: বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক কারবারি জগতে টিকে থাকতে হলে কারবার প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগী এবং ক্রেতাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে হয় । সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু থাকলে ব্যবস্থাপক বাজার গবেষণার সাহায্যে এ সমস্ত বিচারে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় । এ সকল তথ্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে ।
১৮. বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্ক: ব্যবসায়-বাণিজ্যে আন্তর্জাতিকতা লাভের উদ্দেশে ব্যবসায়ীকে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয় ।
আরও দেখুন...