তোমরা মোম জ্বালালে কী ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় তা জেনেছ। এবার বলতো এখানে কোনো ধরনের শক্তির রূপান্তর ঘটছে কি? জ্বলন্ত মোমের কাছাকাছি হাত নিলে হাতে গরম লাগে। আবার অন্ধকারে মোম জ্বালালে আমরা এর আশেপাশে দেখতে পাই। তাহলে একথা বলা যায় যে, মোম জ্বালানোর ফলে ভাপাতি উৎপন্ন হয় বলেই হাতে গরম লাগে আর আলোক শক্তি উৎপন্ন হয় বলেই অন্ধকারে মোম জ্বালালে আমরা এর আশেপাশের জিনিস দেখতে পাই। মোম একটি রাসায়নিক কচু। একে পোড়ালে এতে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি পরিবর্তিত হয়ে তাপশক্তি ও আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। একইভাবে গ্যাসের চুলার গ্যাস জ্বালালেও গ্যাসে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি পরিবর্তিত হয়ে প্রচুর তাপশক্তি ও আলোক শক্তি উৎপন্ন করে। উৎপন্ন তাপশক্তি দিয়েই আমরা রান্নাবান্নার কাজ করি।
তাহলে আমরা দেখলাম যে, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শক্তির রূপান্তর ঘটে।
কাজ : খাবার সোডা ও লেবুর রসের বিক্রিয়া প্রয়োজনীয় উপকরণ : খাবার সোডা বা বেকিং সোডা, টেস্টটিউব, লেবুর রস, ড্রপার পদ্ধতি : টেস্টটিউবে কিছু খাবার সোডা নাও। ড্রপার দিয়ে আস্তে আস্তে লেবুর রস টেস্টটিউবে যোগ করো। কী দেখতে : পাচ্ছ? গ্যাসের বুদবুদ উঠছে? হ্যাঁ, প্রচুর গ্যাসের বুদবুদ উঠছে। টেস্টটিউবের তলায় স্পর্শ করে দেখ হাতে ঠান্ডা লাগে কি? |
লেবুর রসে থাকে প্রচুর সাইট্রিক এসিড যা বেকিং সোডার সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম সাইট্রেট, কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস ও পানি তৈরি করে। আমরা যে বুদবুদ দেখি তা কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়া আর কিছুই নয়।
টেস্টটিউব স্পর্শ করলে ঠাণ্ডা লাগার কারণ কী ? কারণ হলো এই বিক্রিয়ায় তাপশক্তি হ্রাস পায়। তা না হলে ঠাণ্ডা লাগত না।
এখন তোমরা বেকিং সোডার সাথে লেবুর রসের বদলে ভিনেগার বা এসিটিক এসিড যোগ করে দেখ কী ঘটে?
কাজ : চুন ও ভিনেগারের রাসায়নিক বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ উপকরণ : চুন, ভিনেগার, বিকার, হাতমোজা, ড্রপার পদ্ধতি : হাতমোজা পরে কিছু চুন বিকারে নাও। এবার এতে ড্রপার দিয়ে আস্তে আস্তে ভিনেগার যোগ করো। বিকারটি হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখ। গরম লাগছে? কারণ কী? এখানে চুনের সাথে ভিনেগারের বিক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম এসিটেট ও পানি তৈরি হচ্ছে আর প্রচুর তাপশক্তিও উৎপন্ন হচ্ছে। উৎপন্ন তাপের কারণেই বিকার স্পর্শ করলে গরম লাগছে। |
এখানে চুন হলো ক্ষারীয় পদার্থ ও এসিটিক এসিড হলো অম্লধর্মী পদার্থ আর উৎপাদিত ক্যালসিয়াম এসিটেট হলো নিরপেক্ষ পদার্থ। এ জাতীয় বিক্রিয়ায় যেখানে বিপরীতধর্মী পদার্থ একে অপরের সাথে বিক্রিয়া করে নিরপেক্ষ পদার্থ তৈরি করে তাকে প্রশমন বিক্রিয়া (Neutralization reaction) বলে।
এখন তোমরা চুনে ভিনেগারের বদলে লেবুর রস দিয়ে দেখ কী ধরনের বিক্রিয়া ঘটে?
কাজ : চুনের সাথে পানির বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ প্রয়োজনীয় উপকরণ : চুন, পানি, বিকার, হাতমোজা, স্পেচুলা, ড্রপার পদ্ধতি : ৫ গ্রাম (ভিন্ন পরিমাণও নেওয়া যেতে পারে) চুন বিকারে নাও। ড্রপার দিয়ে ৪০ গ্রাম পানি আস্তে আস্তে যোগ কর। হাতমোজা পরে বিকার স্পর্শ করো। পানি যোগ করার পর কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছ? |
বিকার অনেক বেশি গরম হয়ে যাচ্ছে আর বিকারের মিশ্রণটি পানি ফুটানোর সময় যে রকম টগবগ করে অনেকটা সেরকম করছে। এখানে চুনে পানি যোগ করার ফলে, চুন ও পানির মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন হয়।
উৎপন্ন স্ন্যাক লাইম নামেই বেশি পরিচিত। এই বিক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে তাপশক্তি উৎপন্ন হয় যার ফলে পানি ফুটতে থাকে। স্ন্যাক লাইম বা পানিতে খুব অল্প পরিমাণে দ্রবীভূত হয়। আর পানিতে এর সম্পৃক্ত দ্রবণকেই চুনের পানি বা লাইম ওয়াটার বলা হয়৷
উপরের পরীক্ষাতে তোমরা যে সাসপেনসনটি পেলে তা কিছুক্ষণ রেখে দাও। উপরে পরিষ্কার পানির মতো যে অংশটি দেখা যাচ্ছে সেটিই কিন্তু চুনের পানি।
আরও দেখুন...