রেশমি বস্ত্র বেশি উত্তাপ, ক্ষার ও ঘর্ষণ সহ্য করতে পারে না। ঘাম, ময়লাযুক্ত রেশমি বস্ত্র দ্রুত ধোয়া উচিত । কারণ ঘামের এসিড রেশমকে দুর্বল করে ।
এই ধরনের বস্ত্র ধৌতকরণের লক্ষণীয় বিষয়গুলো নিম্নরূপ-
- ধোয়ার সময় সাদা ও রঙিন রেশমি বস্ত্র আলাদা করে নিতে হয়। রঙিন রেশমি বস্ত্র ভিজিয়ে রাখলে রং উঠে এবং সাদা রেশমি বস্ত্রের সাথে একত্রে ধুলে সাদা বস্ত্রে রং লেগে যেতে পারে। তাই সাদা ও রঙিন বস্ত্র আলাদা ধোয়া উচিত।
- সব সময় রেশমি বস্ত্রে মৃদু গরম পানি এবং কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করতে হয়। রেশমি বস্ত্র ধোয়ার জন্য ডিজারজেন্ট হিসাবে রিঠা, ভালো সাবান বা সাবানের গুঁড়া ব্যবহার করা উচিত। এই ধরনের যে কোনো একটি পরিষ্কারক উপকরণ প্রয়োগ করে সামান্য মৃদু পানি সহযোগে অল্প সময় ধরে নেড়ে চেড়ে নিলে ময়লা বের হয়ে যায় ৷
- ময়লা ও সাবান দূর করার জন্য বড় গামলা বা বালতিতে পরিষ্কার পানিতে একাধিকবার নেড়ে চেড়ে নিতে হয়। রঙিন কাপড়ের বেলায় শেষবার প্রক্ষালনের সময় ঠান্ডা পানিতে প্রতি গ্যালনে বড় এক চামচ লবণ ও সমপরিমাণ ভিনিগার মিশিয়ে নেওয়া উচিত। এতে রঙিন রেশমের উজ্জ্বলতা ঠিক থাকে। হাত দিয়ে চেপে পানি বের করতে হয়।
- অনেকবার ধোয়া হয়েছে এমন রেশমি বস্ত্রের কাঠিন্য ঠিক রাখার জন্য এরারুটের দ্বারা তৈরি মাড় প্রয়োগ করা হয়। গাঁদও রেশমি বস্ত্রের কাঠিন্য ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়।
- রেশমি বস্ত্র সব সময় ছায়ায় শুকাতে হয়। সূর্যের তাপ রেশমি বস্ত্রের রং ও উজ্জ্বলতা নষ্ট করে।
- রেশমি বস্ত্র কিছুটা আর্দ্র অবস্থায় ইস্ত্রি করতে হয়। সুতি কাপড়ের মতো রেশমি বস্ত্রে পানি ছিটানো বা স্প্রে করতে হয় না। এতে কাপড়ে পানির ফোঁটার দাগ বসে যায়। রেশমি কাপড় উল্টা পিঠে মৃদু তাপে ইস্ত্রি করলে উজ্জ্বলতা ঠিক থাকে। ইস্ত্রি শেষে কাপড়ের জলীয় বাষ্প শুকিয়ে গেলে যথাস্থানে সংরক্ষণ করতে হয়।
পশমি বস্ত্র ধৌতকরণ—
পশমি কাপড় প্রাণিজ তন্তু থেকে উৎপন্ন হয়। পানি, উত্তাপ, ক্ষার ও ঘর্ষণ পশম তন্তুকে দুর্বল করে। এ জন্য পশমি কাপড় ধোয়ার সময় ঈষদুষ্ণ পানি, কম ক্ষারযুক্ত পরিষ্কারক দ্রব্য ব্যবহার করতে হয়।
ধোয়ার পদ্ধতি—
পশমি কাপড় চোপড় ধোয়ার আগে প্রয়োজন অনুসারে মেরামত, দাগ অপসারণের কাজটি করে নিতে হয়। সাদা ও রঙিন কাপড়গুলো ভাগ করতে হয় কারণ এগুলো আলাদা ধোয়া উচিত। তারপর কাপড়গুলো হালকাভাবে ব্রাশ করে আলগা ধুলাবালি পরিষ্কার করতে হয়। হাতে বোনা পশমের জামাকাপড় বেশ নমনীয় প্রকৃতির হয়। ধোয়ার পর এগুলির আকৃতি প্রায়ই ঠিক থাকে না। এ জন্য ধোয়ার আগে এসব পোশাকের আকৃতি বা নকশা একটা কাগজের উপর এঁকে রাখতে হয়। ধোয়ার পর ওই নকশা আঁকা কাগজের উপর পোশাক রেখে হাত দিয়ে টেনে আকৃতি ঠিক করে নেওয়া যায় |
- পশমি কাপড় ধোয়ার কাজে ঈষদুষ্ণ পানি ব্যবহার করতে হয়। কম ক্ষারযুক্ত গুঁড়া সাবান যেমন: জেট পাউডার ইত্যাদি পশমি বস্ত্র ধোয়ার জন্য উপযোগী। একটা বড় গামলায় ঈষদুষ্ণ পানিতে সাবান গুলে কাপড় কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তারপর দুই হাত দিয়ে ধরে এপিঠ-ওপিঠ করে সাবান লাগাতে হয় ৷ পশমি কাপড় বেশিক্ষণ পানিতে থাকলে দুর্বল হয়ে পড়ে। এ জন্য বেশিক্ষণ সাবান মাখিয়ে রাখা ঠিক নয় ।
- সাবান লাগাবার পর দুই হাত দিয়ে হালকাভাবে চাপ দিয়ে নেড়েচেড়ে এপিঠ-ওপিঠ করে কেচে পরিষ্কার র করতে হয়। মাঝে মাঝে পানি দিয়ে নিতে হয় ৷
- কাপড়ের ময়লা ভালোভাবে দূর হওয়ার পর সাবান ও ময়লা পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন পানি দিয়ে ধুয়ে ধুয়ে ছাড়াতে হয়। তিন-চারবার ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধোয়া উচিত। একই সাথে একাধিক পাত্রে একই তাপমাত্রার পানি রাখলে কাপড় ধোয়ার কাজ সহজ ও দ্রুত হয়। পশমের সাদা জামাকাপড় শেষবার পানি দিয়ে ধোয়ার সময় পানির মধ্যে কয়েক ফোঁটা সাইট্রিক এসিড বা লেবুর রস মিশিয়ে নিলে কাপড়ের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। রঙিন পশমি কাপড় ধোয়ার সময় পানিতে ভিনিগার মিশিয়ে নিলে কাপড়ের রং ভালো থাকে। ধোয়ার পর একটি মোটা বড় পরিষ্কার তোয়ালের মধ্যে ভেজা কাপড়টিকে জড়িয়ে দুই হাতে চেপে চেপে পানি বের করতে হয়। কাপড় কখনই মুচড়িয়ে নিংড়াতে হয় না। এতে কাপড়ের ক্ষতি হয় ।
- পশমি বস্ত্র মৃদু সূর্য কিরণ অথবা আলো বাতাসপূর্ণ ছায়াযুক্ত স্থানে শুকাতে হয়। মেশিনে তৈরি পশমি বত্র সমতল স্থানে পাটি, মাদুর, কাঁথা প্রভৃতি মেলে তার ওপর ভেজা কাপড়গুলো বিছিয়ে শুকাতে হয় । মাঝে মাঝে কাপড়গুলো এপিঠ-ওপিঠ করে নেড়ে দিলে তাড়াতাড়ি শুকায়।
- পশমি বস্ত্ৰ কিছুটা আর্দ্র অবস্থায় উল্টা দিক দিয়ে মৃদু তাপে এবং হালকা চাপে ইস্ত্রি করতে হয়। ইস্ত্রি করার সময় একটা পাতলা ভেজা কাপড় উপরে বিছিয়ে নিয়ে তার উপর ইস্ত্রি চালাতে হয়। এতে তন্তুর ক্ষতি হয় না এবং উজ্জ্বলতা বজায় থাকে। কাপড় ইস্ত্রি করার পর কিছুক্ষণ বাতাসে রেখে উত্তমরূপে জলীয় বাষ্প দূর করে নিতে হয়। তারপর যথাস্থানে সংরক্ষণ করতে হয়।
Read more