Summary
এই পাঠ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এককোষী ও বহুকোষী জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বহুকোষী জীবের দেহে টিস্যু, অঙ্গ ও তন্ত্রের ভিন্ন গঠন রয়েছে এবং এই জীবগুলোর বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা প্রয়োজন।
স্নায়ুতন্ত্র: স্নায়ুতন্ত্র দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সংযোগ রক্ষা করে, জৈবিক কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন করে এবং পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে। এর প্রধান অংশ হলো মস্তিষ্ক, যা নিউরন নামের বিশেষ কোষ দ্বারা গঠিত।
নিউরনের গঠন: নিউরন দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত:
- কোষদেহ: বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে এবং এতে সেন্ট্রিওল থাকে না।
- প্রলম্বিত অংশ: ডেনড্রন ও অ্যাক্সন, যেখানে অ্যাক্সন লম্বা অংশ এবং ডেনড্রন ছোট শাখা হিসেবে কাজ করে।
সিন্যাপস হলো নিউরনের অ্যাক্সন এবং ডেনড্রাইটের মিলনের স্থান, যেখানে স্নায়ুতাড়না পরিবাহিত হয়। নিউরন বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন উদ্দীপনা বহন করা, চিন্তা করা ও নির্দেশ দেওয়ার কাজ করে।
স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণী: স্নায়ুতন্ত্রকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়:
- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র
- প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র
- স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র
তোমরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে শ্রেণিবিন্যাস থেকে এককোষী ও বহুকোষী জীবের বৈশিষ্ট্য জেনেছ। বহুকোষী জীবের দেহে টিস্যু, অঙ্গ ও তন্ত্র ইত্যাদির ভিন্ন ভিন্ন গঠন পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে রয়েছে অগণিত কোষের বিচিত্র কর্মকাণ্ড। এই কর্মকাণ্ডের সাথে যোগসূত্র রচনা করা এবং পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য জীবদেহে দ্রুত যোগাযোগ রক্ষা করা প্রয়োজন। যেমন- কারো দুঃখে তোমার কান্না পায়, কারো খুশিতে তুমি খুশি হও, পরীক্ষায় ভালো ফল করলে তোমার আনন্দ হয়। এই কাজগুলো ঘটে বিভিন্ন উদ্দীপকের কার্যকারিতার ফলে। দেহের বিভিন্ন অংশের উদ্দীপনা বহন করা, দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কাজের সমন্বয় সাধন করা ও পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রাখা স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান কাজ। প্রাণিদেহের যে তন্ত্র দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সংযোগ রক্ষা করে, বিভিন্ন জৈবিক কার্যাবলীর সমন্বয় সাধন করে এবং উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে উপযুক্ত প্রতিবেদন সৃষ্টি করার মাধ্যমে পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে তাকে স্নায়ুতন্ত্র বলে। স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অংশ হলো মস্তিষ্ক। উন্নত মস্তিষ্কের কারণে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পরিগণিত হয়। মস্তিষ্ক অসংখ্য বিশেষ কোষ দ্বারা গঠিত। এরা নিউরন বা স্নায়ুকোষ নামে পরিচিত।
স্নায়ুকোষ বা নিউরন
স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও কার্যকরী একককে স্নায়ুকোষ বা নিউরন বলে। নিউরন মানবদেহের দীর্ঘতম কোষ। নিউরন দুইটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- ১. কোষদেহ এবং ২. প্রলম্বিত অংশ।
১. কোষদেহ : কোষদেহ নিউরনের প্রধান অংশ। কোষদেহ বিভিন্ন আকৃতির হয় যেমন— গোলাকার, ডিম্বাকার বা নক্ষত্রাকার। কোষদেহ কোষ আবরণী, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস দ্বারা গঠিত। এই কোষে সেন্ট্রিওল থাকে না। তাই এরা অন্যান্য কোষের মতো বিভাজিত হয় না।
২. প্রাম্বিত অংশ : কোষদেহ থেকে উৎপন্ন শাখা-প্রশাখাকে প্রলম্বিত অংশ বলে। প্রলম্বিত অংশ দুই প্রকার। যথা- ক) অ্যাক্সন এবং খ) ডেনড্রন।
ক) অ্যাক্সন : কোষদেহ থেকে উৎপন্ন লম্বা সুতার মতো অংশকে অ্যাক্সন বলে। অ্যাক্সনের যে প্রান্তে কোষদেহ থাকে তার বিপরীত প্রান্ত থেকে শাখা বের হয়। সাধারণত একটি নিউরনে একটি মাত্র অ্যাক্সন থাকে।
খ) ডেনড্রন : কোষদেহের চারদিক থেকে উৎপন্ন শাখাগুলোকে ডেনড্রন বলে। এগুলো বেশি লম্বা হয় না। ডেনড্রন থেকে সৃষ্ট শাখাগুলোকে ডেনড্রাইট বলে। এদের দ্বারা স্নায়ুতাড়না নিউরনের দেহের দিকে পরিবাহিত হয়। একটি স্নায়ুকোষের অ্যাক্সন অন্য একটি স্নায়ুকোষের ডেনড্রাইটের সাথে মিলিত হওয়ার স্থানকে সিন্যাপস বলে। সিন্যাপসের মাধ্যমেই স্নায়ুতাড়না এক স্নায়ুকোষ থেকে অন্য স্নায়ুকোষে পরিবাহিত হয়। উদ্দীপনা বহন করা, প্রাণিদেহের ভিতরের ও বাইরের পরিবেশের সাথে সংযোগ রক্ষা করা, প্রাণিদেহের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে কাজের সমন্বয় সাধন করা, মস্তিষ্কে স্মৃতিধারণ করা, চিন্তা করা ও বিভিন্ন কাজের নির্দেশ দেওয়া ও পরিচালনা করা নিউরনের কাজ। নিউরনের উদ্দীপনা বহন প্রক্রিয়া নিচের চিত্রে দেখানো হলো।
স্নায়ুতন্ত্রকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- ১. কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ২. প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র ৩. স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র।
Read more