Summary
জন্ম ও বংশ পরিচয়: হযরত ইসমাঈল (আ.) আল্লাহর নবি এবং হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র, যিনি খ্রিষ্টপূর্ব ১৯১০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম হাজিরা (আ.)।
মক্কায় স্থানান্তর ও জমজম কূপ তৈরি: হযরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইসমাঈল (আ.) ও হাজিরা (আ.)-কে নির্জন স্থানে রেখে আসেন। খাবার শেষ হলে হাজিরা পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড় দৌড়ান, পরে আল্লাহর হুকুমে জমজম কূপের উৎস আবিষ্কৃত হয়।
কুরবানি: হযরত ইবরাহিম (আ.) যখন স্বপ্নে ইসমাঈল (আ.)-কে কুরবানি করার আদেশ পান, তখন ইসমাঈল (আ.) আদেশ মেনে নিতে প্রস্তুত হন। কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসমাঈল (আ.)-এর জায়গায় একটি দুম্বা কুরবানি করা হয়।
কাবাঘর নির্মাণ: হযরত ইসমাঈল (আ.) ও হযরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে কাবাঘরের পুনঃনির্মাণ করেন।
উপাধি লাভ: হযরত ইসমাঈল (আ.) 'ছাদেকুল ওয়াদ' (অঙ্গীকার পালনকারী) উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি ১৩৬ বছর বয়সে মক্কায় ইন্তিকাল করেন।
এই কাহিনী থেকে আমরা হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর আনুগত্য, পিতৃভক্তি ও অঙ্গীকার পালন করার অকল্পনীয় দৃষ্টান্ত গ্রহণ করতে পারি।
দলগত কাজ: শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর কুরবানির কাহিনী ও জমজমের উৎপত্তির ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করবে।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
হযরত ইসমাঈল (আ.) ছিলেন আল্লাহর নবি। তিনি হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র। তাঁর মাতার নাম হাজিরা (আ.)। তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ১৯১০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের সময় হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর বয়স ছিল ৮৬ বছর। তিনি কুরাইশ ও উত্তর আরবের 'আদনান' বংশের আদি পিতা।
মক্কায় স্থানান্তর ও জমজম কূপ সৃষ্টি
হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর জন্মের কিছুদিন পর তাঁর পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে তাঁকে ও তাঁর মাতাকে নির্জন ভূমিতে রেখে আসেন। তিনি তাঁদেরকে কিছু খেজুর ও এক মশক পানি দিয়ে আসেন এবং তাঁদের জন্য এ বলে দোয়া করেন-"হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার পবিত্র গৃহের নিকট। 'হে আমার প্রতিপালক! এজন্য যে তারা যেন নামায প্রতিষ্ঠা করে। অতএব, তুমি কিছু লোকের অন্তর তাঁদের প্রতি অনুরাগী করে দাও এবং ফলাদি দ্বারা তাঁদের রিযিকের ব্যবস্থা কর, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।" (সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৩৭)
অল্প কিছুদিন পর তাঁদের খাবার ফুরিয়ে যায়। শিশু ইসমাঈল পানির পিপাসায় কাতর হয়ে ওঠেন। তার চিৎকারে মা হাজিরা (আ.) অস্থির হয়ে পড়েন। তিনি পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সাতবার ছোটাছুটি করেন। কিন্তু কোথাও পানি পেলেন না। অবশেষে ফিরে এসে দেখতে পান শিশু ইসমাঈলের পদাঘাতে আল্লাহর হুকুমে সে স্থানে পানির স্রোতধারা প্রবাহিত হচ্ছে আর এটাই হলো জমজম কূপের উৎস। হযরত হাজিরা (আ.) ঐ কূপ থেকে নিজে পানি পান করেন এবং তাঁর শিশু পুত্রকেও তা পান করান। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। এ কূপকে কেন্দ্র করে জুরহুম গোত্র সেখানে বসবাস শুরু করে। এ গোত্রে হযরত ইসমাঈল (আ.) বিবাহ করেন। কুরাইশ গোত্র এ গোত্রের একটি শাখা।
কুরবানি
আল্লাহ তায়ালা হযরত ইবরাহিম (আ.)-কে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে কুরবানি করার নির্দেশ ছিল একটি পরীক্ষা। একদা হযরত ইবরাহিম (আ.) সিরিয়া থেকে বিবি হাজিরা ও পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে দেখতে মক্কায় গমন করেন। তখন হযরত ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নযোগে পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে কুরবানি করতে আদিষ্ট হন। তখন ইসমাঈলের বয়স ছিল ১৩ বছর। জাগ্রত হয়ে হযরত ইবরাহিম (আ.) পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে বলেন, 'হে পুত্র! স্বপ্নে দেখলাম আমি তোমাকে কুরবানি করছি। তুমি কী বলো?' তখন পুত্র ইসমাঈল কোনোরূপ বিচলিত না হয়ে আনন্দ চিত্তে উত্তরে বলেন, "হে পিতা! আপনি যা করতে আদিষ্ট হয়েছেন তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ আমাকে আপনি ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত দেখতে পাবেন।"
(সুরা আস-সাফফাত, আয়াত ১০২)
হযরত ইবরাহিম (আ.) পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে কুরবানি করার উদ্দেশ্যে 'মিনা'র পথে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে শয়তান ইসমাঈল (আ)-কে বারবার প্রতারিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে তিনি বিন্দুমাত্র প্রভাবিত না হয়ে নির্বিঘ্নে মিনায় পৌঁছেন। হযরত ইবরাহিম (আ.) প্রাণ-প্রিয় পুত্রকে কুরবানি করার জন্য উদ্যত হলেন। এমন সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত ইবরাহিম (আ.) আওয়াজ শুনতে পেলেন, "হে ইবরাহিম! তুমিতো তোমার স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করলে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি।" (সূরা আস-সাফফাত, আয়াত ১০৫)। অলৌকিকভাবে পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর স্থলে একটি দুম্বা কুরবানি হয়ে গেল আর ইসমাঈল (আ.) দুম্বার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। এ ধারাবাহিকতায় আজকে আমাদের এ পশু কুরবানি। কুরবানি করা ওয়াজিব।
কাবাগৃহ নির্মাণ

হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর হুকুমে তারই প্রদর্শিত স্থানে প্রথম কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন- "স্মরণ কর! যখন ইবরাহিম ও ইসমাঈল কাবাঘরের প্রাচীর তুলে ছিল, তখন তারা বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ কাজ গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাত।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১২৭)। হযরত ইবরাহিম (আ.) পাথরের গাঁথুনি লাগাতেন আর ইসমাঈল (আ.) তাঁকে পাথর তুলে দিতেন। দীর্ঘ সময় ধরে পিতা-পুত্র কাবাঘর নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেন।
উপাধি লাভ
হযরত ইসমাঈল (আ.) ছিলেন ধৈর্যশীল ও পিতাভক্ত। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে 'ছাদেকুল ওয়াদ' (অঙ্গীকার পালনকারী) উপাধিতে ভূষিত করেন। বর্ণিত আছে যে, তিনি জনৈক ব্যক্তির সাথে অঙ্গীকার করেছেন: অমুক সস্থানে তার জন্য অপেক্ষা করবেন, লোকটি কথা অনুযায়ী সে স্থানে না আসলেও তিনি তার জন্য তিন দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন এবং তৃতীয় দিন তার সাথে সেখানে দেখা হয়। (ইবনু কাছির)
নিজের ওয়াদা রক্ষার জন্য তিন দিন পর্যন্ত কষ্ট করে অপেক্ষা করেছিলেন বলে হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে আল্লাহ ছাদেকুল ওয়াদ বা অঙ্গীকার পালনকারী উপাধি দান করেছিলেন।
হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর বংশেই জন্মগ্রহণ করেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)। হযরত ইসমাঈল (আ.) একশত ছত্রিশ বছর বয়সে মক্কা নগরীতে ইন্তিকাল করেন। হযরত ইসমাঈল (আ.) কর্তৃক আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, পিতৃভক্তি, ত্যাগ, অঙ্গীকার পালন ইত্যাদি আমাদের জীবনের অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।
| দলগত কাজ: শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর কুরবানির কাহিনী ও জমজমের উৎপত্তির ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করবে। | 
Read more