হযরত উমর ফারুক (রা.)-এর জীবনাদর্শ (পাঠ ৩)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - আদর্শ জীবনচরিত | NCTB BOOK
708
Summary

পরিচয়: হযরত উমর ফারুক (রা.) ছিলেন মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা। তিনি ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাকনাম আবু হাক্স, এবং তিনি ইসলাম গ্রহণের পর 'ফারুক' উপাধিতে ভূষিত হন।

ইসলাম গ্রহণ: ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে ছিলেন এবং মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন চালাতেন। হযরত উমর (রা.) তাঁর বোনের কাছে কুরআন শুনে ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন এবং posteriormente হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর কাছে গিয়ে ইসলাম দীক্ষিত হন।

খলিফা নির্বাচন: আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর পর ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দ্বিতীয় খলিফা নির্বাচিত হন।

শাসনব্যবস্থা: হযরত উমর (রা.) মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তারে সফল হন, এবং বিচারবিভাগে সমানতার নীতি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সামাজিক কার্যক্রম, যেমন মসজিদ, বিদ্যালয়, সেতু, হাসপাতাল নির্মাণ এবং কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করেন।

চারিত্রিক গুণাবলী: তিনি সহজ সরল জীবন যাপন করতেন এবং জনসেবায় নিবেদিত ছিলেন। তাঁর মধ্যে কঠোরতা ও কোমলতার সমন্বয় ছিল।

শাহাদত: ৬৩ বছর বয়সে, মসজিদে ফজরের নামাযের সময় তিনি নিরাপত্তাহীন একটি হামলায় নিহত হন। তাঁর মৃত্যুতে সমাজের বিশাল ক্ষতি হয়, এবং তিনি শীঘ্রই ইলমের মূল আধার হয়ে থাকেন।

শিক্ষার্থীদের জন্য দিকনির্দেশ: হযরত উমর (রা.)-এর ন্যায়বিচার ও সুশাসনের ওপর একটি টীকা লিখে নিয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরিচয়
হযরত উমর ফারুক (রা.) ছিলেন মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা। তিনি ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে কুরাইশ বংশের আদি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাকনাম আবু হাক্স, পিতার নাম খাত্তাব, মাতার নাম হান্নামা। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি ফারুক (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী) উপাধিতে ভূষিত হন। বাল্যকালে তিনি উট চরাতেন, যৌবনের শুরুতে যুদ্ধবিদ্যা, কুস্তি, বক্তৃতা ও বংশ তালিকা সম্পর্কে পারদর্শী ছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির সময় কুরাইশ বংশে ১৭ জন ব্যক্তি লেখাপড়া জানতেন, তিনি তাঁদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম।

ইসলাম গ্রহণ
হযরত উমর ফারুক (রা.) ইসলাম গ্রহণের আগে আবু জাহালের নেতৃত্বে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি মুসলমানদের উপর অত্যাচার ও নিপীড়ন চালাতেন। এমনকি তাঁর চাকরানীও ইসলাম গ্রহণ করলে তিনি তার উপর নির্যাতন করা থেকে বিরত থাকেননি। তিনি একবার উন্মুক্ত তলোয়ার হাতে মুহাম্মদ (স.)-কে হত্যার উদ্দেশ্যে বের হন। পথে নঈম ইবনু আব্দুল্লাহর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে। নঈম বলল, 'কোথায় যাচ্ছ উমর?' উত্তরে রাগস্বরে বললেন, 'মুহাম্মদকে হত্যা করতে যাচ্ছি।' এ কথা শুনে নঈম বলল, 'আগে তোমার ঘর সামলাও। তোমার বোন ফাতিমা ও ভগ্নিপতি সাঈদ ইসলাম গ্রহণ করেছে।' তিনি অগ্নিশর্মা হয়ে বোনের বাড়ি গেলেন। তাঁর বোন ও ভগ্নিপতি তখন পবিত্র কুরআনের সূরা তা-হা পাঠ করছিলেন। এমতাবস্থায় হবরত উমর (রা.)-এর উপস্থিতি তাঁদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করলেও তাঁরা ইমানি চেতনা থেকে সরে যাননি। হযরত উমর (রা.)-এর জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা কুরআন পাঠের কথা জানান। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁদের উপর আঘাত করতে থাকেন। তখন তাঁর বোনের শরীর থেকে রক্ত ঝরা দেখে তাঁর মনে দয়ার উদ্রেক হয়। হযরত উমর (রা.) তাঁদের বললেন, 'তোমরা কী পাঠ করছিলে তা আমাকে দেখাও।' উত্তরে তাঁর বোন বলল, 'কুরআন পাঠ করছিলাম। এটা পবিত্র গ্রন্থ, অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ করা যায় না।' পরে তিনি পবিত্র হয়ে এলে তাঁকে কুরআন মজিদ পড়তে দেওয়া হয়। তখন তাঁর মনে চিন্তার পরিবর্তন হয়। তিনি তখন ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে রাসুল (স.)-এর নিকট যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সে সময় রাসুল (স.) সাফা পাহাড়ের পাদদেশে হযরত আরকাম (রা.)-এর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। কোষমুক্ত তরবারিসহ হযরত উমর (রা)-এর উপস্থিতি সাহাবিদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। হযরত উমর (রা.) রাসুল (স.)-এর কাছে কম্পিত কণ্ঠে বললেন, 'হে আল্লাহর নবি! আমাকে ইসলামে দীক্ষিত করুন। যে তরবারি নিয়ে আপনার শিরশ্ছেদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম, আজ হতে সে তরবারি উমরের হাতে ইসলামের শত্রু নিধনে ব্যবহৃত হবে।' হযরত উমর (রা.) হযরত মুহাম্মদ (স.) -এর হাতে তখন ইসলাম গ্রহণ করেন। মূলত তাঁর ইসলাম গ্রহণ ছিল হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর দোয়ারই ফল। রাসুল (স.) তাঁর জন্য এভাবে দোয়া করেন, 'হে আল্লাহ! উমর ইবনু হিশাম (আবু জাহাল) অথবা উমর ইবনুল খাত্তাব এ দুইজনের একজনকে ইসলামে প্রবেশ করার তাওফিক দিয়ে ইসলামকে শক্তিশালী করুন।'

খলিফা নির্বাচন
ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর ইন্তিকালের পরে তাঁর অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী হযরত উমর (রা.) ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা নির্বাচিত হন। তা অধিকাংশ সাহাবি সমর্থন করেন।
শাসনব্যবস্থা
হযরত উমর (রা.) খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। এ সময় রোম, পারস্য, সিরিয়া, মিসর ও ফিলিস্তিন মুসলিম সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। রাজ্য শাসনে তিনি রাসুল (স.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতেন। আইনের চোখে সকলকে সমানভাবে দেখতেন। এমনকি মদ্যপানের অপরাধে স্বীয় পুত্র আবু শামাকে শাস্তিদানে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন যেমন কঠোর তেমনি মানুষের দুঃখকষ্টে তিনি ছিলেন অতি কোমল। তিনি সাধারণ প্রজাদের অবস্থা জানার জন্য রাতের আঁধারে একাকী বের হয়ে পড়তেন। প্রয়োজনে তিনি নিজের কাঁধে খাদ্যসামগ্রী বহন করে গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে বিতরণ করতেন। তাঁর শাসনামলে রাজ্যে কোনো অভাব-অনটন ছিল না। সে সময় কৃষিকাজে ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। তিনি ডাক বিভাগ প্রবর্তন, সাম্য ও ন্যায়ের বাস্তব শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি হিজরি সন প্রবর্তন করেন। জনকল্যাণে তিনি অসংখ্য মসজিদ, বিদ্যালয়, সেতু, সড়ক, হাসপাতাল নির্মাণ করেন। পানির জন্য তিনি অনেক খালও খনন করেন। তাঁর সময়েই আরবে সর্বপ্রথম আদমশুমারি চালু হয়। ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় তিনি বাইতুলমাল থেকে প্রাপ্ত কাপড় সেই পরিমাণ গ্রহণ করতেন যে পরিমাণ সকলের জন্য নির্ধারিত ছিল। তাছাড়া জেরুজালেমে যাওয়ার পথে ভৃত্যকে উটের পিঠে চড়িয়ে নিজে উটের রশি ধরার দৃষ্টান্ত একজন ন্যায়পরায়ণ শাসকের বিরল ঘটনা। ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন, 'অল্প কথায় বলা যায়, হযরত উমর (রা.)-এর সরলতা ও কর্তব্যজ্ঞান ছিল তাঁর জীবনাদর্শ। ন্যায়পরায়ণতা ও একনিষ্ঠতা ছিল তাঁর শাসনামলের মূলনীতি।'

চারিত্রিক গুণাবলি
হযরত উমর (রা.) খুব সহজসরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। অর্ধপৃথিবীর শাসক হয়েও তাঁর কোনো দেহরক্ষী ছিল না, খেজুরপাতার আসন ছিল তাঁর সিংহাসন। জনসেবাই ছিল তাঁর ব্রত। ইবাদত বন্দেগিতে অতিবাহিত হতো তাঁর অধিকাংশ সময়। জাগতিক লোভ-লালসা ও জাঁকজমক তাঁকে স্পর্শ করেনি। তাঁর মধ্যে কঠোরতা ও কোমলতার ব্যাপক সমন্বয় ঘটেছিল।

শাহাদতবরণ
হযরত উমর (রা.) তাঁর গৌরবময় শাসনামলের দশম বছরে মসজিদে নববিতে ফজরের নামায আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় কুফার শাসনকর্তা হযরত মুগীরা (রা.) এর ভৃত্য অগ্নিপূজক আবু লুলুর বিষাক্ত ছুরিকাঘাতে আহত হন। তিনি আহত হওয়ার তৃতীয় দিন হিজরি ২৩ সনের ২৭শে জিলহজ বুধবার (৩রা নভেম্বর) ৬৩ বছর বয়সে শাহাদতবরণ করেন। হযরত ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, 'আমার ধারণা হযরত উমর (রা.) যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, তখন দশভাগ ইলমের নয়ভাগ তিনি সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন।' (তাবারানি) আমরা হযরত উমর (রা.)-এর মহান আদর্শ মেনে চলব এবং সে অনুসারে জীবন গড়ব।

কাজ: শিক্ষার্থীরা হযরত উমর (রা.)-এর ন্যায়বিচার ও সুশাসন সম্পর্কে বাড়ির কাজ হিসেবে একটি টীকা লিখে নিয়ে আসবে।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...