রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় মূলত সরকারি নিয়ম-কানুন পালন করে সরকারি উদ্যোগে গঠিত হয় রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে বা দেশের আইনসভার বিশেষ আইনবলে অথবা বেসরকারি ব্যবসায় জাতীয়করণ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সংগঠিত হতে পারে ।
নিম্নে এ ব্যবসায়ের সুবিধা আলোচনা করা হলো:
১ . সামাজিক ন্যায়বিচার (Social justice): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সমাজের কিছুসংখ্যক ব্যক্তির হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রবণতা বন্ধ করে এবং জনগণের ভাগ্যেন্নয়নের লক্ষ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে ।
২. জনকল্যাণ সাধন (Public welfare): এরূপ ব্যবসায় জনকল্যাণের উদ্দেশ্যেই মূলত গঠিত ও পরিচালিত হয়। জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন খাত; যেমন-ওয়াসা, রেলওয়ে, ডাক ও তার ইত্যাদির মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আমাদের দেশে এ ব্যবসায় জনগণের অশেষ উপকার সাধন করে ।
৩. অধিক কর্মসংস্থান (More employment): এ ব্যবসায় শ্রমিক-কর্মীদের শোষণ না করে বরং তাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠন ও এতে প্ৰয়োজনীয় সংখ্যক লোক নিয়োগ করে অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
৪. সুষম শিল্পায়ন (Balanced industrialization): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশের সকল অঞ্চলের উন্নয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এ ছাড়া দেশে যাতে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থাৎ সকল ধরনের শিল্পের উন্নয়ন ঘটে তার প্রতিও নজর দেয়া হয় । ফলে দেশের সুষম শিল্পায়ন ঘটে ।
৫. চাহিদা ও যোগান সমতা বিধান (Balancing between demand and supply): এক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত পরিকল্পনার মাধ্যমে শিল্প সংক্রান্ত কার্যাবলি বিশেষত উৎপাদন ও বণ্টনের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় ও ভারসাম্য বজায় রাখা যায়। ফলে স্বল্প বা অধিক উৎপাদনের সম্ভাবনা হ্রাস পায় ।
৬. একচেটিয়া প্রভাব রোধ ( Resisting monopoly influence): ব্যক্তিমালিকদের মধ্যে একচেটিয়া প্রভাব সৃষ্টির অসৎ প্রবণতা লক্ষণীয়। এজন্য তারা বিভিন্ন সময় নানান ধরনের অপকৌশল গ্রহণ করে জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তা বন্ধ করা যায়।
৭. দুর্নীতি ও অপচয় রোধ (Resisting corruption and wastage): ব্যক্তিমালিকগণ অধিক মুনাফার আশায় অনেক সময় নানা ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে। কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতায় ভোগে। যা রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ঘটে না। এছাড়া এ ব্যবসায় ভারসাম্যহীন প্রতিযোগিতা রোধ করে অপচয় হ্রাস করতে সাহায্য করে।
৮. ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ (Control of business) : দেশের শিল্প-বাণিজ্যের উপর সরকারের প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। দেশের আমদানি-রপ্তানির উপরও সরকারের প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ থাকা আবশ্যক। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যাংক, বীমা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে সরকার দেশের অর্থ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৯. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার (Best utilization of natural resources): বেসরকারি খাতে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ছেড়ে দেয়া হলে ব্যক্তিস্বার্থ বিবেচনায় তার অপব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি থাকে। রাষ্ট্রীয় মালিকানায় প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করা হলে দেশের সকল মানুষ এর সুফল পায়।
১০. মন্দাজনিত সংকট রোধ (Resisting problem relating to recession): অর্থনৈতিক মন্দার সময় দেশের দেশের বেসরকারি খাতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষত কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার বেকার সমস্যা প্রকট হয়। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাজারে পণ্যের তীব্র সংকট দেখা যায় । কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যবসায় এ ধরনের সংকট সৃষ্টি করে না।
১১. গবেষণা ও উন্নয়ন (Research and development): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় বৃহদায়তন প্রকৃতিতে গড়ে উঠায় এবং আর আর্থিক সামর্থ্য ভালো থাকায় এক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়নের সুযোগ বেশি থাকে । উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে এ ব্যবসায় সহজেই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।
আরও দেখুন...