ইউনিক্স (UNIX)

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | | NCTB BOOK

ইউনিক্স (UNIX) হলো একটি শক্তিশালী এবং বহুমুখী অপারেটিং সিস্টেম, যা ১৯৬৯ সালে AT&T's Bell Labs-এ তৈরি করা হয়েছিল। এটি মূলত কম্পিউটার বিজ্ঞানী কেন থমসন, ডেনিস রিচি, এবং ডগলাস ম্যাকইলরয় দ্বারা বিকশিত হয়। ইউনিক্স মূলত বহুভুজ এবং মাল্টি-টাস্কিং ক্ষমতাসম্পন্ন একটি অপারেটিং সিস্টেম, যা একাধিক ব্যবহারকারী এবং প্রক্রিয়া একই সময়ে পরিচালনা করতে পারে। এটি কম্পিউটার সার্ভার, ওয়ার্কস্টেশন, এবং মেইনফ্রেমে ব্যবহৃত হয় এবং আজকের অনেক আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

ইউনিক্সের মূল বৈশিষ্ট্য:

১. মাল্টি-ইউজার (Multi-User):

  • ইউনিক্স একাধিক ব্যবহারকারীকে একই সময়ে একাধিক কাজ সম্পন্ন করার সুযোগ দেয়। প্রতিটি ব্যবহারকারী তাদের নিজস্ব পরিবেশ এবং ফাইল সিস্টেমে কাজ করতে পারে।

২. মাল্টি-টাস্কিং (Multi-Tasking):

  • ইউনিক্সের মাধ্যমে একাধিক প্রোগ্রাম বা প্রক্রিয়া একই সময়ে চালানো সম্ভব। এটি ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ফোরগ্রাউন্ডে প্রোগ্রাম চালানোর সুবিধা দেয়।

৩. পোর্টেবিলিটি (Portability):

  • ইউনিক্স একটি হার্ডওয়্যার-স্বাধীন অপারেটিং সিস্টেম, যা বিভিন্ন কম্পিউটার আর্কিটেকচারে সহজেই চালানো যায়। এটি মূলত C প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা হওয়ায় পোর্ট করা সহজ।

৪. হায়ারার্কিকাল ফাইল সিস্টেম (Hierarchical File System):

  • ইউনিক্স একটি হায়ারার্কিকাল ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করে, যা ফাইল এবং ডিরেক্টরিগুলোকে সংগঠিত করে। এটি ফাইল স্ট্রাকচার এবং এক্সেসিং সহজ করে।

৫. সিকিউরিটি এবং পারমিশন:

  • ইউনিক্স শক্তিশালী সিকিউরিটি ব্যবস্থা প্রদান করে, যেখানে প্রতিটি ফাইল এবং ডিরেক্টরির জন্য মালিকানা এবং পারমিশন নির্ধারণ করা যায় (যেমন রিড, রাইট, এবং এক্সিকিউট পারমিশন)।

৬. শেল এবং কমান্ড-লাইন ইন্টারফেস (Shell and CLI):

  • ইউনিক্স শেল (bash, sh, csh ইত্যাদি) ব্যবহার করে, যা কমান্ড-লাইন ইন্টারফেসে কাজ করার সুযোগ দেয়। এটি ব্যবহারকারীদের কমান্ডের মাধ্যমে সিস্টেম পরিচালনা এবং কনফিগার করতে সাহায্য করে।

ইউনিক্সের গঠন:

ইউনিক্সের গঠনমূলক উপাদানগুলো হলো:

১. কর্নেল (Kernel):

  • কর্নেল হলো ইউনিক্সের কেন্দ্রীয় অংশ, যা অপারেটিং সিস্টেমের সমস্ত কার্যপ্রণালী পরিচালনা করে। এটি মেমোরি ম্যানেজমেন্ট, প্রসেস ম্যানেজমেন্ট, এবং হার্ডওয়্যার ডিভাইস কন্ট্রোল করে।

২. শেল (Shell):

  • শেল হলো একটি ইন্টারপ্রেটার, যা ব্যবহারকারী এবং কর্নেলের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। শেল ব্যবহার করে ব্যবহারকারী কমান্ড দিতে পারে এবং সিস্টেমের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

৩. ফাইল সিস্টেম:

  • ইউনিক্স একটি হায়ারার্কিকাল ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করে, যেখানে সবকিছু একটি ফাইল বা ডিরেক্টরি হিসেবে গঠিত। এটি রুট (/) থেকে শুরু করে বিভিন্ন ডিরেক্টরি এবং ফাইল পর্যন্ত বিস্তৃত।

৪. ইউটিলিটি প্রোগ্রাম (Utility Programs):

  • ইউনিক্সে অনেক ইউটিলিটি প্রোগ্রাম থাকে, যা সিস্টেমের কার্যক্রম পরিচালনা, ফাইল ম্যানেজমেন্ট, টেক্সট প্রসেসিং, এবং নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: ls, cp, grep, awk, sed ইত্যাদি।

ইউনিক্সে কিছু সাধারণ কমান্ড:

১. ফাইল এবং ডিরেক্টরি ম্যানেজমেন্ট:

  • ls: বর্তমান ডিরেক্টরির ফাইল এবং ডিরেক্টরি তালিকা প্রদর্শন করে।
  • cd: ডিরেক্টরি পরিবর্তন করে।
  • mkdir: নতুন ডিরেক্টরি তৈরি করে।
  • rm: ফাইল বা ডিরেক্টরি মুছে ফেলে।
  • cp: ফাইল বা ডিরেক্টরি কপি করে।

২. ফাইল দেখার এবং সম্পাদনা করা:

  • cat: ফাইলের বিষয়বস্তু প্রদর্শন করে।
  • more এবং less: বড় ফাইলের বিষয়বস্তু ধাপে ধাপে দেখায়।
  • nano এবং vim: টেক্সট এডিটর, যা ফাইল সম্পাদনা করতে ব্যবহৃত হয়।

৩. সিস্টেম এবং প্রসেস ম্যানেজমেন্ট:

  • ps: বর্তমান চলমান প্রক্রিয়ার তালিকা দেখায়।
  • top: রিয়েল-টাইম প্রসেস ম্যানেজমেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • kill: একটি চলমান প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ব্যবহৃত হয়।

৪. অন্যান্য কমান্ড:

  • chmod: ফাইল বা ডিরেক্টরির পারমিশন পরিবর্তন করে।
  • chown: ফাইল বা ডিরেক্টরির মালিকানা পরিবর্তন করে।
  • ping: নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি পরীক্ষা করে।

ইউনিক্সের ব্যবহার এবং অ্যাপ্লিকেশন:

১. সার্ভার সিস্টেম:

  • ইউনিক্স এবং ইউনিক্স-ভিত্তিক সিস্টেম (যেমন Linux) সার্ভার পরিচালনা এবং নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্টে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

২. ওয়েব হোস্টিং:

  • অনেক ওয়েব সার্ভার যেমন Apache এবং Nginx ইউনিক্স বা Linux ভিত্তিক পরিবেশে কাজ করে, কারণ এটি নিরাপদ এবং কার্যকর।

৩. সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট:

  • ইউনিক্স সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং কোডিং পরিবেশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি দ্রুত এবং কার্যকরভাবে টুল এবং কম্পাইলার পরিচালনা করতে সক্ষম।

৪. এন্টারপ্রাইজ এবং কর্পোরেট সিস্টেম:

  • ইউনিক্স বড় প্রতিষ্ঠানে ডেটাবেস সার্ভার, মেইল সার্ভার, এবং নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ইউনিক্সের সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা:

সুবিধা:

  • নির্ভরযোগ্য এবং স্থিতিশীল: ইউনিক্সের স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য প্রকৃতি এটি বড় এবং জটিল সিস্টেমে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে।
  • পোর্টেবল: এটি বিভিন্ন হার্ডওয়্যার প্ল্যাটফর্মে সহজে পোর্ট করা যায়।
  • নিরাপদ: ইউনিক্সে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পারমিশন মডেল রয়েছে।
  • খোলা প্ল্যাটফর্ম: ইউনিক্স এবং Linux-এর মতো ইউনিক্স-ভিত্তিক সিস্টেম ওপেন সোর্স, যা কোডিং এবং সফটওয়্যার উন্নয়নের জন্য উপযোগী।

সীমাবদ্ধতা:

  • ব্যবহার কঠিন: নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য ইউনিক্সের শেল এবং কমান্ড-লাইন ইন্টারফেস শেখা কিছুটা কঠিন হতে পারে।
  • সফটওয়্যার কম্প্যাটিবিলিটি: কিছু নির্দিষ্ট সফটওয়্যার ইউনিক্স প্ল্যাটফর্মে কাজ নাও করতে পারে।

সারসংক্ষেপ:

ইউনিক্স হলো একটি শক্তিশালী, পোর্টেবল, এবং নিরাপদ অপারেটিং সিস্টেম, যা বড় এবং জটিল সিস্টেমের জন্য উপযোগী। এটি মাল্টি-ইউজার এবং মাল্টি-টাস্কিং সক্ষমতা, শেল প্রোগ্রামিং, এবং শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রদান করে। ইউনিক্স এবং এর ভিত্তিতে তৈরি সিস্টেমগুলো যেমন Linux সার্ভার, নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট, এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

Promotion