রিপিটার (Repeater)

- তথ্য প্রযুক্তি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি | | NCTB BOOK

রিপিটার (Repeater) হলো একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা নেটওয়ার্ক সিগন্যালকে পুনরায় শক্তিশালী এবং সম্প্রসারিত করে। এটি সাধারণত তারবিহীন (Wireless) এবং তারযুক্ত (Wired) নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়, যাতে দীর্ঘ দূরত্বের নেটওয়ার্ক কানেকশন সঠিকভাবে এবং শক্তিশালীভাবে কাজ করতে পারে। রিপিটার সিগন্যালের দুর্বলতা বা ক্ষয় দূর করে, যা নেটওয়ার্কের দূরত্ব বাড়াতে এবং ডেটা ট্রান্সমিশনের মান উন্নত করতে সহায়ক।

রিপিটারের কাজ করার পদ্ধতি:

১. সিগন্যাল রিসিভ করা:

  • রিপিটার একটি দুর্বল বা ক্ষয়প্রাপ্ত সিগন্যাল রিসিভ করে, যা নেটওয়ার্কের দূরত্ব বাড়ার ফলে বা বাধার কারণে দুর্বল হয়ে যায়।

২. সিগন্যাল পুনরুজ্জীবিত করা:

  • সিগন্যাল পাওয়ার পর, রিপিটার সেই সিগন্যালকে পুনরায় শক্তিশালী করে। এটি মূল সিগন্যালের শক্তি এবং গুণমান বজায় রেখে পুনরায় ট্রান্সমিট করে।

৩. সিগন্যাল ফরওয়ার্ড করা:

  • পুনর্জীবিত সিগন্যাল পুনরায় ট্রান্সমিট করে নেটওয়ার্কের পরবর্তী অংশে পাঠানো হয়। এটি দীর্ঘ দূরত্বে ডেটা ট্রান্সমিশন নিশ্চিত করে এবং সিগন্যালের গুণমান বজায় রাখে।

রিপিটারের বৈশিষ্ট্য:

১. সিগন্যাল শক্তিশালীকরণ (Amplification):

  • রিপিটার দুর্বল বা ক্ষয়প্রাপ্ত সিগন্যাল পুনরায় শক্তিশালী করে, যা দীর্ঘ দূরত্বে ডেটা ট্রান্সমিশনে সহায়ক।

২. সিগন্যাল ক্লিনিং (Noise Reduction):

  • কিছু রিপিটার সিগন্যালের শোর বা নয়েজ কমিয়ে সিগন্যালের গুণমান উন্নত করতে পারে, যা ক্লিন এবং নির্ভুল ডেটা ট্রান্সমিশন নিশ্চিত করে।

৩. স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল প্রক্রিয়াকরণ:

  • রিপিটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিগন্যাল রিসিভ, পুনরুজ্জীবিত এবং পুনরায় ট্রান্সমিট করে, যা নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা সহজ করে।

রিপিটারের প্রকারভেদ:

১. অ্যানালগ রিপিটার (Analog Repeater):

  • অ্যানালগ রিপিটার অ্যানালগ সিগন্যাল পুনর্জীবিত করে এবং পুনরায় প্রেরণ করে। এটি সাধারণত পুরোনো টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়।

২. ডিজিটাল রিপিটার (Digital Repeater):

  • ডিজিটাল রিপিটার ডিজিটাল সিগন্যাল পুনর্জীবিত করে এবং পুনরায় প্রেরণ করে। এটি অধিকাংশ আধুনিক নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়, যেখানে ডেটা ট্রান্সমিশন ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়।

৩. ওয়্যারলেস রিপিটার (Wireless Repeater):

  • ওয়্যারলেস রিপিটার ওয়াইফাই বা ওয়্যারলেস সিগন্যাল পুনর্জীবিত করে এবং নেটওয়ার্কের পরিসর বাড়ায়। এটি সাধারণত বড় ঘর বা অফিসে ওয়াইফাই সিগন্যাল বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।

রিপিটারের সুবিধা:

১. নেটওয়ার্ক পরিসর বাড়ানো:

  • রিপিটার ব্যবহার করে নেটওয়ার্কের পরিসর বাড়ানো যায়, যাতে দূরবর্তী স্থানেও নেটওয়ার্কের সংযোগ বজায় থাকে।

২. সিগন্যাল শক্তিশালীকরণ:

  • রিপিটার সিগন্যাল পুনর্জীবিত করে, যা সিগন্যালের গুণমান বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ডেটা ট্রান্সমিশন উন্নত করে।

৩. নেটওয়ার্ক স্থায়িত্ব বৃদ্ধি:

  • রিপিটার সিগন্যালের শক্তি পুনরায় বাড়িয়ে নেটওয়ার্কের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে, যা দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকরী সিগন্যাল নিশ্চিত করে।

রিপিটারের সীমাবদ্ধতা:

১. কনফিগারেশনের জটিলতা:

  • কিছু ক্ষেত্রে রিপিটার কনফিগারেশন জটিল হতে পারে, বিশেষত যখন একাধিক রিপিটার ব্যবহৃত হয়।

২. সিগন্যাল ল্যাটেন্সি:

  • রিপিটার সিগন্যাল পুনরায় ট্রান্সমিট করতে সময় নেয়, যা সিগন্যাল ট্রান্সমিশনে ল্যাটেন্সি বা দেরি তৈরি করতে পারে।

৩. সিগন্যাল ড্রপ:

  • অনেক সময় রিপিটার ব্যবহার করে সিগন্যাল পুনর্জীবিত করা হলে, কিছু সিগন্যাল ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে বা ড্রপ হতে পারে, যা ডেটা ট্রান্সমিশনের মান প্রভাবিত করতে পারে।

সারসংক্ষেপ:

রিপিটার (Repeater) হলো একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা সিগন্যাল পুনর্জীবিত করে এবং নেটওয়ার্ক পরিসর বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সিগন্যাল শক্তিশালীকরণ এবং শোর হ্রাস করে নেটওয়ার্কের গুণমান বজায় রাখে। যদিও রিপিটার ব্যবহারে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে এটি নেটওয়ার্ক সংযোগ এবং ডেটা ট্রান্সমিশন উন্নত করতে সহায়ক।

Content added By
Content updated By
Promotion