আমরা জানি, কোনো রোধকের এক প্রান্ত যদি একটি তড়িৎ কোষের ধনাত্মক পাতের সাথে এবং অপর প্রান্ত যদি ঋণাত্মক পাতের সাথে সংযুক্ত করা হয়, তাহলে ঐ তড়িৎ কোষ ঐ রোধের মধ্যদিয়ে একই দিকে স্থির মানের তড়িৎ প্রবাহ প্রেরণ করে। এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহকে সমপ্রবাহ বা একমুখী প্রবাহ (direct current) বলে। এখন যদি কোষের প্রান্তদ্বয়ের স্থান বিনিময় করে রোধকের সাথে সংযুক্ত করা হয়, তাহলে এ রোধকের মধ্যদিয়ে তড়িৎ প্রবাহ বিপরীত দিকে চলবে। যদি এভাবে বার বার তড়িৎ কোষের মেরুর সাথে সংযোগ পরিবর্তন করা হয়, তাহলে রোধকের মধ্যদিয়ে তড়িৎ প্রবাহের দিক বার বার পরিবর্তিত হবে। এখন তড়িৎ প্রবাহ যদি নির্দিষ্ট সময় পর পর দিক পরিবর্তন করে এবং তড়িৎ প্রবাহের মানও পর্যায়ক্রমে কম বেশি হয়, তাহলে সেই প্রবাহকে দিক পরিবর্তী প্রবাহ বা পর্যাবৃত্ত প্রবাহ ( alternating current) বলা হয় । আর যে তড়িচ্চালক শক্তির ক্রিয়ায় বর্তনীতে দিক পরিবর্তী প্রবাহ চলে সেই তড়িচ্চালক শক্তিকে দিক পরিবর্তী তড়িচ্চালক শক্তি বা পর্যাবৃত্ত তড়িচ্চালক শক্তি বলা হয়।
আমরা জানি, কোনো বদ্ধ কুণ্ডলীকে একটি সুষম চৌম্বকক্ষেত্রে কৌণিক বেগে ঘুরানো হলে কুণ্ডলীতে দিক পরিবর্তী তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হয়। সবচেয়ে পরিচিত দিক পরিবর্তী তড়িচ্চালক শক্তি সময়ের সাথে সাইন সদৃশ্যভাবে (sinusodially) পরিবর্তিত হয় এবং তা নিচের সমীকরণ দিয়ে প্রকাশ করা যায়,
এখানে
= যে কোনো সময় t তে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির মান ।
= আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির সর্বোচ্চ বা শীর্ষ মান
= উৎসের কৌণিক বেগ তথা তড়িচ্চালক শক্তির কৌণিক কম্পাঙ্ক ।
এই তড়িৎ প্রবাহ যদি R রোধবিশিষ্ট কোনো বর্তনীতে প্রয়োগ করা হয় [চিত্র ৫.১২] তাহলে ঐ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ
এখানে তড়িৎ প্রবাহের সর্বোচ্চ বা শীর্ষ মান।
সময়ের সাথে সাথে দিক পরিবর্তী প্রবাহ কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা ৫.১৩ চিত্রে দেখানো হলো।
দিক পরিবর্তী তড়িচ্চালক শক্তি বা তড়িৎ প্রবাহের পর্যায়কাল T এবং কম্পাঙ্ক f হলে,
দিক পরিবর্তী প্রবাহ বা তড়িচ্চালক শক্তির ক্ষেত্রে তড়িচ্চালক শক্তিকে E এর পরিবর্তে £ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টির যান্ত্রিক ব্যবস্থা : ৫.১৪ চিত্রে দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টির যান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখানো হয়েছে যা এসি ডায়নামো নামেও পরিচিত। এতে একটি চুম্বক NS থাকে। একে ক্ষেত্র চুম্বক (field magnet) বলে। চুম্বকের মধ্যবর্তী স্থানে একটি কাঁচা লোহার পাতের উপর একটি তারের আয়তাকার কুণ্ডলী (চিত্রে CD) থাকে। কাঁচা লোহার পাতটিকে আর্মেচার বলে। আর্মেচারটিকে চুম্বকের দুই মেরুর মধ্যবর্তী স্থানে যান্ত্রিক উপায়ে সমদ্রুতিতে ঘুরানো হয় । আয়তাকার কুন্ডলীর দুই প্রান্ত দুটি স্লিপ রিং-এর সাথে সংযুক্ত থাকে। স্লিপ রিং দুটি আর্মেচারের সাথে একই অক্ষ বরাবর ঘুরতে পারে। দুটি কার্বন নির্মিত ব্রাশ এমনভাবে স্থাপন করা হয় যেন তারা যখন আর্মেচার ঘুরতে থাকে তখন স্লিপ রিং দুটিকে স্পর্শ করে থাকে। ব্রাশ দুটির সাথে বহিবর্তনী R সংযুক্ত থাকে ।
যখন আর্মেচারটিকে ঘুরানো হয় তখন আর্মেচার কুণ্ডলী চৌম্বকক্ষেত্রের ক্ষেত্ররেখাগুলোকে ছেদ করে এবং তাড়িতচৌম্বক আবেশের নিয়মানুযায়ী কুণ্ডলীতে তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হয়। এখন কুণ্ডলীটির দুই প্রান্ত বহির্বর্তনীর সাথে সংযুক্ত থাকায় বর্তনীতে পর্যাবৃত্ত বা দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহের উৎপত্তি হয়। আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের মান প্রধানত চৌম্বকক্ষেত্রের মান ও কুগুলীর কৌণিক বেগের উপর নির্ভর করে। কুণ্ডলীর একবার পূর্ণ ঘূর্ণনে এর মধ্যে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ একবার পরিবর্তিত হয়। এভাবে আমরা যান্ত্রিক শক্তি থেকে দিক পরিবর্তী প্রবাহ উৎপন্ন করতে পারি। আর্মেচার কুণ্ডলীটি চৌম্বকক্ষেত্র B তে কৌণিক বেগে ঘুরতে থাকলে, t সময়ে চৌম্বক ফ্লাক্স হলে = NBA cos , যেখানে আর্মেচারের পাক সংখ্যা, A কুণ্ডলীর ক্ষেত্রফল। আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি