লেবুর রস, ভিনেগার, চুন, এন্টাসিড ঔষধ, খাবার লবণ এগুলো আমাদের िপ্রানী প্রম। এদের মধ্যে কোনোটি অম্ল বা এসিড, কোনোটি ক্ষারক থাকার কোনোটি হয়তো লবণ। এদের রাসারনিক ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন। ধর্ম অনুযায়ী এদের একেকটি এক এক কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
• অম্ল ও ক্ষারকের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে পারব;
• কানের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে পারব:
• লবণের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে পারব:
• নিরপেক্ষ পদার্থ ব্যাখ্যা করতে পারব;
• পরীক্ষণ কার্যক্রমে যন্ত্রপাতির ব্যবহার সঠিকভাবে করতে পারব;
• আমাদের জীবনে অম্ল, ক্ষার ও লবণের অবদান উপলব্ধি করতে পারব:
• পরীক্ষণ কার্যক্রম চলাকালীন জনী নর সদস্যদের সচেতন করতে পারব।
কাজ : অম্ল কী তা জানা প্রয়োজনীয় উপকরণ : লেবুর রস, লিটমাস পেপার, বিকার, চিমটা পদ্ধতি : টেস্টটিউবে ২-৩ মিলিলিটার লেবুর রস নাও। প্রথমে চিমটা দিয়ে লাল লিটমাস কাগজ বিকারে নেওয়া লেবুর রসে ডুবাও। কাগজের রং কি পরিবর্তন হলো ? না, হলো না। এবার নীল লিটমাস কাগজ লেবুর রসে ডুবাও। এখন কি লিটমাস কাগজের রং পরিবর্তন হলো ? হ্যাঁ, লিটমাস কাগজের রং নীল থেকে লাল হয়ে গেল। |
তোমরা কি জানো এর কারণ কী? লিটমাস কাগজ তৈরি করা হয় সাধারণ কাগজে লাইকেন (Lichens) নামক এক ধরনের গাছ থেকে প্রাপ্ত রঙের সাহায্যে। এভাবে প্রাপ্ত লিটমাস কাগজ দেখতে লালবর্ণের হয়। এ লালবর্ণের লিটমাস কাগজকে যেকোনো ক্ষারীয় দ্রবণে ডুবালে তা নীলবর্ণ ধারণ করে। অন্যদিকে নীলবর্ণের লিটমাস কাগজে কোনো এসিড যোগ করলে তা লাল বর্ণের লিটমাস কাগজে পরিণত হয়।
কাজ : লেবুর রসের বদলে তোমরা নিজেদের মধ্যে দল করে ভিনেগার, কামরাঙ্গা, কমলার রস ইত্যাদি নিয়ে লাল ও নীল লিটমাস কাগজ দিয়ে পরীক্ষা করে রং পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করো । |
তাহলে একথা বলা যায় যে, এসিডের একটি ধর্ম হলো এরা নীল লিটমাসকে লাল করে।
তোমরা কি জানো, লেবুর রসের মতো আমলকি, করমচা, কামরাঙ্গা, বাতাবি লেবু, আঙুর ইত্যাদি টক লাগে কেন? কারণ হলো এই ফলগুলোতে নানা রকম এসিড থাকে। অর্থাৎ এটা বলা যায় যে, এসিডসমূহ টক স্বাদযুক্ত হয়। নিচের টেবিলে বেশ কিছু ফল ও এতে উপস্থিত এসিডের নাম দেওয়া হলো।
ফলের নাম | উপস্থিত এসিড |
---|---|
আঙুর, কমলা, লেবু | সাইট্রিক এসিড |
তেঁতুল | টারটারিক এসিড |
টমেটো | অক্সালিক এসিড |
আমলকি | এসকরবিক এসিড |
আপেল, আনারস | ম্যালিক এসিড |
কাজ : ক্ষারক সম্পর্কে জানা প্রয়োজনীয় উপকরণ : চুন, বিকার, পানি, লাল ও নীল লিটমাস কাগজ, হাতমোজা, নাড়ানি, চামচ, ড্রপার, চিমটা পদ্ধতি : হাতমোজা পরে চামচ দিয়ে ৫-১০ গ্রাম চুন বিকারে নাও। এবার ড্রপার দিয়ে আস্তে আস্তে ১০০ মিলিলিটার পানি যোগ করো। নাড়ানি দিয়ে ভালোভাবে নাড়া দাও। এরপর ১০ মিনিট মিশ্রণটিকে রেখে দাও। সতর্কতার সাথে মিশ্রণের উপরিভাগ থেকে পরিষ্কার দ্রবণ আলাদা করে নাও। এই পরিষ্কার দ্রবণটিই হলো চুনের পানি। এখন চুনের পানিতে চিমটা দিয়ে লাল ও নীল লিটমাস কাগজ ডুবাও। লিটমাস কাগজের রং কি পরিবর্তন হলো? |
হ্যাঁ, লাল লিটমাস কাগজের রং পরিবর্তিত হয়ে নীল হয়ে গেল আর নীল লিটমাসের রং পরিবর্তন হলো না। পরবর্তীতে তোমরা রং পরিবর্তনের কারণ আরও বিশদভাবে জানতে পারবে।
চুনের পানিতে থাকা এর মতো যে সকল রাসায়নিক পদার্থ লাল লিটমাস কাগজকে নীল করে তাদেরকে আমরা ক্ষারক বলি। সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH) একটি ক্ষারক যা সাবান তৈরির একটি মূল উপাদান। এটি কাগজ ও রেয়ন শিল্পেও ব্যবহৃত হয়।
নির্দেশক : তোমরা উপরে যে লিটমাস কাগজ ব্যবহার করলে তা নিজের রং পরিবর্তনের মাধ্যমে কোনো একটি পদার্থ অম্ল না ক্ষারক তা নির্দেশ করল। লিটমাস কাগজ এর মতো যেসব পদার্থ নিজেদের রং পরিবর্তনের মাধ্যমে কোনো একটি বস্তু অম্ল না ক্ষার বা কোনোটিই নয় তা নির্দেশ করে তাদেরকে নির্দেশক বলে। লিটমাস কাগজের মতো মিথাইল অরেঞ্জ, ফেনোফথ্যালিন, মিথাইল রেড এগুলো নানা রকমের নির্দেশক যা একটি অজানা পদার্থ এসিড, ক্ষারক না নিরপেক্ষ তা বুঝতে সাহায্য করে।
এসিড : আমরা কয়েকটি এসিডের সংকেত লক্ষ করি। ভিনেগার বা এসিটিক এসিড (COOH), অক্সালিক এসিড (HOOC-COOH), হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCI), সালফিউরিক এসিড ()। এই সবগুলো এসিডের মিল কোথায়?
এদের সবগুলোতেই এক বা একাধিক H পরমাণু আছে এবং এরা সবাই পানিতে হাইড্রোজেন আয়ন () তৈরি করে। তাহলে বলা যায় যে, এসিড হলো ঐ সকল রাসায়নিক পদার্থ যাদের মধ্যে এক বা একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে এবং যারা পানিতে উৎপন্ন করে।
মিথেন () কি এসিড
এটি এসিড নয়। মিথেনে ৪টি H পরমাণু আছে, কিন্তু মিথেন পানিতে H+ উৎপন্ন করে না। এবার দুটি ক্ষারকের দিকে লক্ষ করি। সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH) এবং ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ।
ক্ষারক হলো সেই সকল রাসায়নিক পদার্থ যাদের মধ্যে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে এবং যারা পানিতে হাইড্রোক্সিল আয়ন () তৈরি করে।
তবে কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থ, যেমন- ক্যালসিয়াম অক্সাইড বা চুন, অ্যামোনিয়া (), যাদের মধ্যে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন দু'ধরনের পরমাণু নেই, কিন্তু এরা পানিতে তৈরি করে, এদেরকেও ক্ষারক বলা হয়।
ক্ষারক : তোমরা এর আগে জেনেছ যে, ক্ষারক হলো মূলত ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড। কিছু কিছু ক্ষারক আছে যারা পানিতে দ্রবীভূত হয় আর কিছু আছে যারা দ্রবীভূত হয় না। যে সমস্ত ক্ষারক পানিতে দ্রবীভূত হয় তাদেরকে ক্ষার বলে। তাহলে ক্ষার হলো বিশেষ ধরনের ক্ষারক। NaOH, NH OH এগুলো ক্ষার। এগুলোকে কিন্তু ক্ষারকও বলা যায়। পক্ষান্তরে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড [Al(OH)3] কিন্তু পানিতে দ্রবীভূত হয় না। তাই এটি একটি ক্ষারক হলেও ক্ষার নয়। অতএব একথা বলা যায় যে, সকল ক্ষার ক্ষারক হলেও সকল ক্ষারক কিন্তু ক্ষার নয়।
তোমরা সবাই জানো যে, সাবান স্পর্শ করলে পিচ্ছিল মনে হয়। এর কারণ হলো সাবানে ক্ষার থাকে। তাহলে বলা যায় যে, ক্ষার ও ক্ষারকের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এরা পিচ্ছিল হয়। আবার দেখা গেছে যে ক্ষার ও ক্ষারকসমূহ সাধারণত কটু স্বাদযুক্ত হয়। উল্লেখ্য ক্ষারকের স্বাদ পরীক্ষা না করাই ভালো।
তোমরা কি জানো, আমাদের বহুল ব্যবহৃত ব্লিচিং পাউডার কীভাবে তৈরি হয়?
এটি তৈরি হয় শুকনো ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ক্লোরিন গ্যাসের (CL) বিক্রিয়া ঘটিয়ে। আবার ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের পাতলা দ্রবণ যা চুনের পানি বা লাইম ওয়াটার (Lime water) নামে পরিচিত সেটি আমাদের ঘরবাড়ি হোয়াইট ওয়াশ করতে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে পানি ও ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের তৈরি পেস্ট যা মিল্ক অফ লাইম (Milk of Lime) নামে অধিক পরিচিত, তা পোকামাকড় দমনে ব্যবহৃত হয়।
তোমরা কি জানো, আমাদের পাকস্থলীতে এসিডিটি হলে যে এন্টাসিড ঔষধ খাই তা আসলে কী?
এন্টাসিড ঔষধ হলো মূলত ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড যা সাসপেনশান ও ট্যাবলেট দুভাবেই পাওয়া যায়। ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর সাসপেনশান মিল্ক অফ ম্যাগনেসিয়া (Milk of Magnesia) নামেই অধিক পরিচিত। কখনো কখনো এন্টাসিডে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইডও থাকে।
তোমরা কি জানো, আমাদের সমাজের কিছু খারাপ চরিত্রের লোক যে এসিড ছুড়ে মানুষের শরীর ঝলসে দেয় সেগুলো কোন ধরনের এসিড? এগুলো হলো খনিজ এসিড।
তোমরা কি জানো, এসিড ছোড়ার শাস্তি কী?
এসিড ছোড়ার শাস্তি খুবই কঠোর এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।
দুষ্ট চরিত্রের লোকেরা এসিড ছুড়ে একদিকে যেমন মারাত্মক অপরাধ করছে অন্যদিকে শিল্প কারখানায় অতি প্রয়োজনীয় এসিড অপচয় করছে। এর বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের সোচ্চার হতে হবে এবং মানুষকে সচেতন করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা পোস্টার, লিফলেট এগুলো তৈরি করে মানুষের মধ্যে বিলি করতে পারি। এতে একদিকে যেমন আমাদের মূল্যবান সম্পদ খনিজ এসিডসমূহের অপচয় রোধ করা যাবে অন্যদিকে এসিড ছোড়ার মতো মারাত্মক শাস্তিযোগ্য অপরাধ থেকে আমাদের সমাজও রক্ষা পাবে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং শিল্প কারখানায় এসিডের ব্যবহার অনস্বীকার্য। আমরা টয়লেট পরিষ্কারের কাজে যে সমস্ত পরিষ্কারক ব্যবহার করি তাতে এসিড থাকে। সোনার গহনা তৈরির সময় স্বর্ণকাররা নাইট্রিক এসিড ব্যবহার করেন। আমরা বিভিন্ন কাজে যেমন— আইপিএস, গাড়ি, মাইক বাজানোর সময়, সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে ব্যাটারি ব্যবহার করি তাতে সালফিউরিক এসিড ব্যবহৃত হয়। তোমরা অনেকে হয়তো জানো যে, বাসাবাড়িতে সাপের উপদ্রব কমানোর জন্য যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয় সেটি হলো কার্বোলিক এসিড।
তোমরা কি জানো, আমাদের খাদ্যদ্রব্য হজম করার জন্য পাকস্থলীতে এসিড অত্যাবশ্যকীয় এবং সেটি হলো হাইড্রোক্লোরিক এসিড।
সার কারখানায় অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হলো সালফিউরিক এসিড। এছাড়া ডিটারজেন্ট থেকে শুরু করে নানারকম রং, ঔষধপত্র, কীটনাশকসহ পেইন্ট, কাগজ, বিস্ফোরক ও রেয়ন তৈরিতে প্রচুর H2SO4 ব্যবহৃত হয়।
কোনো একটি দেশ কতটা শিল্পোন্নত তা বিচার করা হয় ঐ দেশ কতটুকু ব্যবহার করে তার উপর ভিত্তি করে। ইস্পাত তৈরির কারখানা, ঔষধ, চামড়া শিল্প ইত্যাদি অনেক শিল্পে HCl ব্যবহৃত হয়।
সার কারখানায়, বিস্ফোরক প্রস্তুতি, খনি থেকে মূল্যবান ধাতু যেমন সোনা আহরণে ও রকেটে জ্বালানির সাথে HNO3 ব্যবহৃত হয়।
কাজ : চুনাপাথরের সাথে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ প্রয়োজনীয় উপকরণ : চুনাপাথর, চামচ, পাতলা হাইড্রোক্লোরিক এসিড, কাচের ড্রপার, এ্যাপ্রোন পদ্ধতি : এ্যাপ্রোনটি পরে নাও। চুনাপাথর গুঁড়া করে চামচে নাও। এবার কাচের ড্রপার দিয়ে পাতলা হাইড্রোক্লোরিক এসিড চামচে যোগ করতে থাক। কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছ? গ্যাসের বুদবুদ উঠছে? হ্যাঁ, গ্যাসের বুদবুদ উঠছে এবং অনেকটা ফেনার মতো মনে হচ্ছে। কারণ চুনাপাথরে পাতলা হাইড্রোক্লোরিক এসিড যোগ করাতে ক্যালসিয়াম কার্বনেট ও হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মধ্যে বিক্রিয়া ঘটে এবং ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হয় এবং সে কারণেই আমরা বুদবুদ দেখি। উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড চলে গেলে আমরা ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডের ও পানির পরিষ্কার দ্রবণ দেখতে পাই। |
হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মতো প্রায় সকল এসিডই কার্বনেটের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে ৷
তোমরা শুনে আশ্চর্য হবে যে, কখনো কখনো এসিডের এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে উৎপন্ন আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত হয়৷
তোমরা বলোতো খাবার সোডা ও হাইড্রোক্লোরিক এসিডের বিক্রিয়ায় কী ঘটবে?
খাবার সোডা ও হাইড্রোক্লোরিক এসিডের বিক্রিয়ায় সোডিয়াম ক্লোরাইড লবণ, পানি ও CO2 গ্যাস উৎপন্ন হবে।
তোমরা পূর্বের শ্রেণিতে খাবার সোডাতে লেবুর রস বা ভিনেগার যোগ করলে কী ঘটে তা জেনেছ। তোমাদের তা কি মনে আছে? এখানে কী ধরনের বিক্রিয়া ঘটবে লেখ।
কাজ : এসিডের সাথে ধাতু মেশালে কী ঘটে তা পর্যবেক্ষণ প্রয়োজনীয় উপকরণ : ধাতু হিসেবে দস্তার গুঁড়া (Zn), পাতলা হাইড্রোক্লোরিক এসিড, স্পিরিট ল্যাম্প, পদ্ধতি : এ্যাপ্রোন পরে নাও। টেস্টটিউবের অর্ধেক পরিমাণ পাতলা হাইড্রোক্লোরিক এসিড নাও। অল্প পরিমাণ দস্তার গুঁড়া টেস্টটিউবে নেওয়া এসিডে ছেড়ে দাও। কোনো গ্যাসের বুদবুদ উঠছে কি? না উঠলে স্পিরিট ল্যাম্প জ্বালিয়ে টেস্ট টিউবের তলায় হালকা তাপ দাও । গ্যাসের বুদবুদ উঠছে কি? |
এটি দস্তা ও হাইড্রোক্লোরিক এসিডের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হাইড্রোজেন গ্যাসের বুদবুদ। এটি হাইড্রোজেন গ্যাস কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে পার। টেস্টটিউবের মুখে একটি জ্বলন্ত দিয়াশলাই ধরে দেখ কী ঘটে? পপ পপ শব্দ করে জ্বলছে? হ্যাঁ ঠিক তাই। এটি হাইড্রোজেন ছাড়া অন্য গ্যাস হলে এমন শব্দ হতো না।
হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মতো প্রায় সকল এসিডই ধাতুর সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
কাজ : চুনের পানির সাথে এসিডের বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ প্রয়োজনীয় উপকরণ : চুন, পানি, সালফিউরিক এসিড, বিকার, লাল লিটমাস কাগজ, নাড়ানি, চিমটা, ড্রপার পদ্ধতি : চুনের পানি তৈরি করো। ছোট বিকারে ১০ মিলিলিটার চুনের পানি নাও। এবার চিমটা দিয়ে লাল লিটমাস কাগজকে চুনের পানিতে ডুবাও। লিটমাস কাগজের রং লাল থেকে নীল হয়ে গেল কি? হ্যাঁ, ঠিক তাই। এতে প্রমাণিত হলো চুনের পানি একটি ক্ষারকীয় পদার্থ। এবার পাতলা সালফিউরিক এসিড ড্রপার দিয়ে আস্তে আস্তে যোগ করো ও নাড়ানি দিয়ে নাড়া দাও। লিটমাস কাগজ বিকারের দ্রবণে ডুবিয়ে দেখ এর রঙের কী ধরনের পরিবর্তন হয়। এভাবে আস্তে আস্তে H2SO4 যোগ করতে থাক এবং লিটমাস কাগজ ডুবিয়ে পরীক্ষা করো। এক পর্যায়ে দেখবে লিটমাস কাগজের রং আর পরিবর্তন হচ্ছে না। |
কেন লিটমাস কাগজের রং পরিবর্তন হচ্ছে না?
কারণ হলো চুনের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর সাথে সালফিউরিক এসিড বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম সালফেট ও পানি উৎপন্ন করে। ফলে ধীরে ধীরে এর পরিমাণ কমতে থাকে এবং যখন সব Ca (OH)2, H2SO এর সাথে বিক্রিয়া করে ফেলে তখন লিটমাস কাগজের রং আর পরিবর্তন হয় না।
এখানে উৎপন্ন ক্যালসিয়াম সালফেট হলো একটি লবণ। তাহলে আমরা বলতে পারি ক্ষারক ও এসিডের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন মূল পদার্থই হলো লবণ।
আরও কিছু ক্ষারক ও এসিডের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন লবণ দেখে নেওয়া যাক :
তবে একমাত্র ক্ষারক ও এসিডের বিক্রিয়াতেই যে লবণ উৎপন্ন হয় তা নয়। অন্য বিক্রিয়ার মাধ্যমেও লবণ উৎপন্ন করা যায়। যেমন- ধাতু ও এসিডের মধ্যে বিক্রিয়ায় লবণ উৎপন্ন হয়।
আবার কার্বনেটের সাথে (যা একটি লবণ) এসিডের বিক্রিয়া ঘটিয়েও লবণ উৎপন্ন করা যায়।
কাজ : পানি ও খাবার লবণের মিশ্রণে লিটমাস কাগজের রং পরিবর্তন হয় কি না তা পর্যবেক্ষণ প্রয়োজনীয় উপকরণ : বিকার, নাড়ানি, লবণ, পানি, লাল ও নীল লিটমাস কাগজ, চিমটা পদ্ধতি : একটি বিকারে ৫০ মিলিলিটার পানি নিয়ে তাতে ১০-১৫ গ্রাম খাবার লবণ যোগ করো। নাড়ানি দিয়ে ভালোভাবে নাড়া দাও। এবার চিমটা দিয়ে প্রথমে নীল লিটমাস কাগজ ও পরে লাল লিটমাস কাগজ লবণ-পানির মিশ্রণে ডুবাও। লিটমাস কাগজের রং কি পরিবর্তন হলো? না, হলো না। কেন হলো না? |
কারণ এখানে কোনো এসিড বা ক্ষারক নেই। এসিড থাকলে নীল লিটমাস লাল হতো আর ক্ষারক থাকলে লাল লিটমাস নীল হতো। পানিতে যে লবণ আছে তা একটি নিরপেক্ষ পদার্থ। না এসিড, না ক্ষারক। তাই কোনো লিটমাস কাগজের রং পরিবর্তন হয় না। খাবার লবণের মতো অনেক লবণ আছে যারা নিরপেক্ষ পদার্থ অর্থাৎ এরা লিটমাস কাগজের রং পরিবর্তন করে না।
কখনো কখনো বিশেষ কারণে অর্থাৎ দূষিত পানিতে এসিড বা ক্ষারক থাকতে পারে। তখন কিন্তু নিরপেক্ষ পদার্থ হলেও পানি লিটমাস কাগজের রং পরিবর্তন করতে পারে।
কাজ : ফুল ও সবজির নির্যাস তৈরি এবং অম্ল ও ক্ষারক শনাক্তকরণ প্রয়োজনীয় উপকরণ : জবা, বাগান বিলাস ও হলুদ কৃষ্ণচূড়া ফুলের পাপড়ি, বেগুনি বাঁধাকপির পাতা, সালাদ তৈরির বীট, পুঁই শাকের বীজ, বিকার (৬টি), নাড়ানি, পানি, বুনসেন বার্নার বা গ্যাসের চুলা, ফিল্টার কাগজ, বোতল, কাগজ, কলম, লেবুর রস, ভিনেগার, টক দই, চুনের পানি, সাবান পানি, খাবার সোডা, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, কাচের খন্ড, ড্রপার। পদ্ধতি : উপরে বর্ণিত নানা রকম ফুল ও সবজির উপাদান সংগ্রহ করো। আলাদাভাবে এক একটি বিকারে এক একটি ফুলের পাপড়ি বা সবজির উপাদান নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে বুনসেন বার্নার বা চুলায় জ্বাল দাও ৷ পানি প্রায় অর্ধেক হলে মিশ্রণগুলো ঠাণ্ডা করো। ফিল্টার কাগজ দিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে ছেঁকে প্রাপ্ত নির্যাস ভিন্ন ভিন্ন বোতলে রাখ। কোন বোতলে কোন ধরনের নির্যাস তা বোতলের গায়ে লিখে রাখ। এবার টেস্টটিউব নিয়ে একে একে লেবুর রস, চুনের পানি, টক দই, ভিনেগার, সাবান পানি, খাবার সোডা, HCl, NaOH নাও ও কোনটিতে কী নিলে তা গায়ে লিখে রাখ। এবার একটি নির্যাস নিয়ে ড্রপার দিয়ে অল্প পরিমাণে প্রতিটি টেস্টটিউবে যোগ করে ভালোভাবে ঝাঁকাও। নির্যাসের রঙে কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছ? কোন কোন দ্রব্যের ক্ষেত্রে বর্ণ লাল ও কোন কোন ক্ষেত্রে নীল হয়েছে তা ছক তৈরি করে লিখে রাখ। এই ছক থেকে তোমরা বুঝতে পারবে কোন দ্রব্যটি এসিডীয় ও কোনটি ক্ষারকীয় । |
একে একে প্রতিটি নির্যাস নিয়ে রং পরিবর্তন ছকে লিখে রাখ। এবার প্রতিটি দ্রব্য নিয়ে লাল ও নীল লিটমাস কাগজ দিয়ে দেখ কোন দ্রব্যটি অম্লীয় আর কোনটি ক্ষারকীয়। একই ধরনের সকল বস্তু একই রকম বর্ণ ধারণ করে।
এই অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম-
- যে সমস্ত পদার্থ পানিতে হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন করে তারা হলো অম্ল বা এসিড।
- অম্ল নীল লিটমাসকে লাল করে। অম্ল টক স্বাদযুক্ত হয়।
- ধাতব অক্সাইড ও হাইড্রোক্সাইডসমূহ হলো ক্ষারক। ক্ষারক লাল লিটমাসকে নীল করে ৷
– ক্ষার হলো সেই সমস্ত ক্ষারক যারা পানিতে দ্রবীভূত হয়। ক্ষারকসমূহ কটু স্বাদের হয়।
- নির্দেশকসমূহ নিজেদের বর্ণ পরিবর্তনের মাধ্যমে কোনো একটি বস্তু অম্ল, ক্ষারক না নিরপেক্ষ তা নির্দেশ করে।
- লবণ হলো অম্ল ও ক্ষারকের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন নিরপেক্ষ পদার্থ।
- এসিডের সাথে ধাতব কার্বনেট বা বাইকার্বনেটের বিক্রিয়ায় লবণ, পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি হয়।
- এসিডের সাথে ধাতুর বিক্রিয়ায় লবণ ও হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।