বিজ্ঞানীদের গবেষণাগারে কত কিছু থাকে দেখেছ? কেমন হতো যদি তোমাদের নিজেদের এরকম একটা গবেষণাগার থাকত যেখানে নানা ধরনের উপকরণ দিয়ে তোমরা সত্যিকারের বিজ্ঞানীদের মতো সব এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে পারতে? এই অভিজ্ঞতায় তোমাদের ক্লাসরুমকেই কীভাবে একটা গবেষণাগার হিসেবে গড়ে তোলা যায় চলো দেখা যাক! নিশ্চয়ই ভাবছ, ল্যাবরেটরি বানাতে কত কিছু লাগে, এত কিছু পাওয়া যাবে কী করে? সত্যি বলতে, আমাদের বাসাবাড়িতে বা প্রাত্যহিক প্রয়োজনে আমরা যা যা ব্যবহার করি তার মধ্য থেকেই বেছে নেয়া যাবে আমাদের ল্যাবরেটরির দরকারি সব উপকরণ। চলো শুরু করা যাক!
প্রথম সেশন
বিজ্ঞানের গবেষণা মানেই বড়ো বড়ো গবেষণাগার, সেখানে অ্যাপ্রন পরে সব বিজ্ঞানী ছোটাছুটি করছে এমন একটা ছবিই তো মনে ভেসে ওঠে, তাই না? কিন্তু দামি দামি যন্ত্রপাতি আর বিশাল ল্যাবরেটরি ছাড়া কি বৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্ভব নয়? ইতোমধ্যেই তোমরা জানো, আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য উপকরণ দিয়েই দারুণ সব পরীক্ষণ করা সম্ভব। উপরের ক্লাসে উঠে তোমরা পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন আর জীববিজ্ঞানের অনেক জটিল জটিল পরীক্ষণ হয়তো করবে, সত্যিকারের বড়ো গবেষণাগারে কাজের অভিজ্ঞতাও হয়তো অনেকেরই হবে। এই মুহূর্তে যেহেতু সেটা সম্ভব নয়, আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের সুলভ উপকরণ জোগাড় করেই একটা ক্ষুদে গবেষণাগার তৈরি করলে কেমন হয়? এই শিখন অভিজ্ঞতায় এই কাজটাই তোমরা করবে। আপাতত আমাদের এই ল্যাবে মূলত হবে রসায়নের নানা গবেষণা, সেটি মাথায় রেখেই গবেষণাগার সাজাতে হবে।
প্রথমেই ভেবে দেখো, একটা ল্যাবরেটরিতে কী কী লাগে? তোমাদের বিজ্ঞান শিক্ষক এ বিষয়ে তোমাদের সাহায্য করতে পারবেন। স্কুলে যদি রসায়নের আরও কোনো শিক্ষক থাকেন তার মতামতও তোমরা নিতে পারো। আর সুযোগ থাকলে কোনো গবেষণাগার পরিদর্শন করেও দেখতে পারো সেখানে কী কী ধরনের সামগ্রী থাকে। আপাতত তোমাদের গবেষণাগারের জন্য আস্ত একটা কক্ষ দরকার নেই, বরং একটা পুরোনো বড়োসড়ো কার্টন পেলে তার মধ্যেই তোমাদের সকল সামগ্রী গুছিয়ে রাখতে পারবে।
ছোটো ছোটো দলে বসে আলোচনা করে দেখো, কী কী ধরনের সামগ্রী প্রয়োজন হতে পারে। নিচে কয়েক ধরনের সামগ্রী নমুনা হিসেবে দেয়া হলো, এর বাইরেও আর কী কী হতে পারে তোমরা ভেবে দেখো।
• পরীক্ষণের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি (বিভিন্ন ধরনের পাত্র, পরিমাপের যন্ত্র ইত্যাদি)
• রাসায়নিক উপকরণ
• কাজের রেকর্ড রাখার জন্য ল্যাবরেটরি নোটবুক
• নিরাপত্তার জন্য ফার্স্ট এইড
• পরিষ্কার করার জিনিসপত্র
তোমার দলের সঙ্গে আলোচনা হয়ে গেলে পরে এই বিভিন্ন ক্যাটাগরি বা ধরন অনুযায়ী কী কী জিনিস লাগতে পারে তার একটা তালিকা তৈরি করে নাও। আবারও নিচে একটা নমুনা তালিকা দেয়া হলো, তবে এটি শুধুই নমুনামাত্র। তোমরাই ভেবে দেখো, কী কী লাগতে পারে তোমাদের এই গবেষণাগারে।
তোমার দলের সঙ্গে আলোচনা হয়ে গেলে পরে এই বিভিন্ন ক্যাটাগরি বা ধরন অনুযায়ী কী কী জিনিস লাগতে পারে তার একটা তালিকা তৈরি করে নাও। আবারও নিচে একটা নমুনা তালিকা দেয়া হলো, তবে এটি শুধুই নমুনামাত্র। তোমরাই ভেবে দেখো, কী কী লাগতে পারে তোমাদের এই গবেষণাগারে।
উপকরণের ধরন
উপকরণের নমুনা তালিকা
পরীক্ষণের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি
বিভিন্ন আকারের পাত্র
পরিমাপের যন্ত্র ও উপকরণ (স্কেল বা রুলার, ছোটো বাটখারা ও দাঁড়িপাল্লা, স্টপওয়াচ, থার্মোমিটার ইত্যাদি)
মোমবাতি/স্পিরিট ল্যাম্প
চামচ, চিমটা
বিভিন্ন আকারের কন্টেইনার (ব্যবহৃত পুরোনো পানির বোতল, বিভিন্ন আকারের পুরোনো কৌটা, খালি আচারের বৈয়াম ইত্যাদি)
বিভিন্ন উপকরণের কন্টেইনার লেবেল করার জন্য কাগজ, আঠা, স্কচটেপ, কলম, মার্কার ইত্যাদি
রাসায়নিক উপকরণ
নির্ভর করছে তোমরা কী কী পরীক্ষণ করবে তার ওপরে। এই শিখন অভিজ্ঞতায় যেসব রাসায়নিক উপকরণ প্রয়োজন হবে তা যথাসময়ে জোগাড় করে নির্দিষ্ট কন্টেইনারে গুছিয়ে লেবেল করে রাখতে হবে।
এবং, গবেষণাগারের সকল সামগ্রী গুছিয়ে রাখার জন্য একটা পুরোনো বড়ো কার্টন, তার মধ্যে খোপ খোপ করে বা তাক বানিয়ে বিভিন্ন জিনিস রাখার জন্য ছোটো বড়ো বিভিন্ন সাইজের কার্টন বা বাক্স
তোমাদের তালিকা তৈরি? এবার বিভিন্ন দলের তালিকার উপকরণগুলোর নাম শুনে নাও, তোমাদের তালিকাও অন্যদের জানাও। যেহেতু পুরো ক্লাসে একটাই গবেষণাগার তৈরি হবে, সব দলের তালিকা মিলিয়ে আলোচনা করে কী কী লাগবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নাও। উপকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় কিছু বিষয় মাথায় রেখো;
• ফেলে দেয়া, কিংবা দৈনন্দিন ব্যবহার্য এমন, অতি স্বল্পমূল্যের বা বিনামূল্যের উপকরণ জোগাড় করতে পারলে সবচাইতে ভালো।
• তালিকার যে উপকরণগুলো বাসাবাড়িতে নিত্য ব্যবহার্য নয় (যেমন- অ্যালকোহল থার্মোমিটার), সেগুলো স্কুলে জোগাড় করা সম্ভব কি না এ নিয়ে শিক্ষকের পরামর্শ নাও।
• যে উপকরণগুলো বাসাবাড়িতে সুলভ নয়, কিংবা স্কুলেও নেই, সেগুলোর বিকল্প সহজ কী ব্যবহার করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করো।
পরের সেশনে কোন দল কী কী উপকরণ জোগাড় করবে, আর শিক্ষক কোন কোন উপকরণের দায়িত্ব নেবেন সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নাও।
তোমাদের গবেষণাগারের প্রথম পরীক্ষণ হবে পরের সেশনে। সেজন্য প্রয়োজন হবে সামান্য গুঁড়া হলুদ, চুন, আর লেবু। প্রথম দিনের উপকরণ আনার দায়িত্ব শিক্ষক নেবেন, তবে একই উপকরণ ব্যবহার করে এই পরীক্ষণ তোমরা বাড়িতেও করতে পারো।
দ্বিতীয় সেশন
গত সেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব দল তাদের নির্ধারিত উপকরণগুলো নিয়ে এসেছে? এবার তাহলে শিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলো কার্টন বা বাক্সে গুছিয়ে রাখো। স্কুলে তোমাদের অবর্তমানে এই ছোট্ট গবেষণাগার ঠিকভাবে দেখে রাখার দায়িত্ব তোমাদের শিক্ষক নিতে পারেন।
তোমরা চাইলেই দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য জিনসপত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারো। চলো তাহলে এরকম কয়েকটা পরীক্ষণ করে দেখা যাক।
বাড়ি থেকে আনা জিনিসগুলো প্রথমে কার্টুনের বিভিন্ন তাকে সাজিয়ে রাখো।
একটি গ্লাসের/পানির বোতলের অর্ধেক পানি দিয়ে পূর্ণ করে তাতে চা চামচের অর্ধেক পরিমাণ গুঁড়া হলুদ নিয়ে ভালো করে নাড়াও। দেখবে পানির রং সরষে হলুদ হয়ে গেছে।
এবার এই দ্রবণে সামান্য চুন গুলিয়ে তা ভালো করে নাড়ো। দেখো তো কী হয়? হলুদ রংটা পাল্টে লাল রং হয়ে গেল, তাই না? খুব অবাক হচ্ছো?
কোনোভাবে কী আবার হলুদ রং ফেরত আনা যাবে বলে মনে হয়? চলো চেষ্টা করে দেখা যাক।
ঐ দ্রবণে এবার একটি লেবু কেটে চিপে ফোঁটায় ফোঁটায় রস যোগ করো। দেখো তো ধীরে ধীরে হলুদ রং ফিরে আসছে কি?
হ্যাঁ, আবার দ্রবণের রং হলুদ হয়ে গেছে।
এরকম আরও পরিবর্তন আমরা হরহামেশাই দেখি। যেমন- লেবু চা বানানোর জন্য যখন চায়ের লিকারে লেবুর রস যোগ করা হয় তখন চায়ের রং কীভাবে পালটে যায় খেয়াল করেছ? চাইলে শ্রেণিকক্ষে এই কাজটি করে রঙের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পারো।
এই সবকিছুই আসলে এক ধরনের পরিবর্তন। উপরের পরীক্ষণ দুটিতে কোন ধরনের পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে তা যুক্তিসহ নিচের ছক-১ এ লিখে রাখো। কোনো কোনো পরিবর্তনে নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয় না। শুধু পদার্থের ভৌত অবস্থার পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনগুলো ভৌত পরিবর্তন। কোনো কোনো পরিবর্তনে ভিন্ন বর্ণের ও ধর্মের নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই পরিবর্তনগুলো রাসায়নিক পরিবর্তন।
ছক-১ পরিবর্তন শনাক্তকরণ ও তার পক্ষে যুক্তি
পরীক্ষণ
পরিবর্তনের নাম এবং এর পক্ষে যুক্তি
হলুদ, চুন ও লেবুর রসের পরীক্ষণ
লেবুর রস যোগ করায় চায়ের লিকারের রঙের পরীক্ষণ
সেশন শেষ করার পূর্বে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণগুলো কার্টুনের বিভিন্ন তাকে সাজিয়ে রাখো।
তৃতীয় থেকে অষ্টম সেশন
রাসায়নিক পরিবর্তন হয় রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে। কোনো নির্দিষ্ট পদার্থ কেন অন্য কোনো পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তা বুঝতে হলে আগে পদার্থের গঠন খুব ভালো করে বুঝে নেয়া জরুরি।
তোমরা ইতোমধ্যেই জানো, মৌলিক পদার্থের পরমাণু গঠিত হয় ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা। পরমাণুতে এই তিন ধরনের কণা কীভাবে বিন্যস্ত থাকে তা জেনে নেয়া জরুরি। কেন কোনো নির্দিষ্ট পদার্থ অন্য পদার্থের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে তা বুঝতে হলে এই বিন্যাস জানা দরকার। শিক্ষকের সহায়তায় তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের 'পরমাণুর গঠন' অধ্যায় থেকে পরমাণুর গঠন, ইলেকট্রন বিন্যাসের নিয়ম, রাসায়নিক সংকেত নির্ণয়, আইসোটোপ, মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ও ভরসংখ্যা, ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নাও। এই শিখন অভিজ্ঞতায় তোমরা যে রসায়নের পরীক্ষণগুলো করবে সেগুলো ব্যাখ্যা করতে এই বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন হবে।
এখন যে কোনো পদার্থের ইলেকট্রন সংখ্যা জানলে নিশ্চয়ই তোমরা তার শক্তিস্তরে ইলেকট্রন বিন্যাস বের করতে পারবে? একটু ঝালাই করে নেবার জন্য নিচের মৌলগুলোর ইলেকট্রন বিন্যাস একে দেখাও তো-
মৌলের নাম ও প্রতীক
পারমাণবিক সংখ্যা
ইলেকট্রন বিন্যাস
ফ্লোরিন (F)
৯
পটাশিয়াম (K) ১৯
১৯
ক্রোমিয়াম (Cr)
২৪
কপার (Cu)
২৯
নবম সেশন
আগের সেশনগুলোর আলোচনা থেকে তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো যে, সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন বিন্যাসের উপর নির্ভর করে কোনো মৌল অন্য কোনো মৌলের সঙ্গে কীভাবে ইলেকট্রন বিনিময় বা শেয়ারের মাধ্যমে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেবে। ইতঃপূর্বে তোমরা প্রতীক ও সংকেত সম্পর্কে ধারণা পেয়েছ। তারপরেও একটু ঝালাই করে নিতে অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের 'রাসায়নিক বিক্রিয়া' অধ্যায় থেকে 'প্রতীক, সংকেত, যোজনী ও আণবিক সংকেত লেখার নিয়ম' অংশটুকু পড়ে নাও। জোড়ায় আলোচনা করে বুঝে নাও।
তাহলে এবার বলো তো, মিথেন অণুর সংকেত CH₁। এদ্বারা যৌগটি কী কী মৌল দিয়ে গঠিত এবং কতটি করে পরমাণু আছে বলতে পারবে? তোমার উত্তর নিচে লিখে রাখো।
মৌলের নাম
মৌলের পরমাণুর সংখ্যা
যৌগের রাসায়নিক সংকেত লেখার জন্য যোজনী সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন। অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে 'যোজনী ও আণবিক সংকেত লেখার নিয়ম' অংশটুকু আরেকবার ভালো করে পড়ে নাও।
অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড' নামের যৌগটি অ্যালুমিনিয়াম এবং অক্সিজেন মৌলের সমন্বয়ে গঠিত। নিচের ফ্লো-চার্ট ব্যবহার করে এই যৌগের সংকেত কী হবে তা বের করো।
দশম ও একাদশ সেশন
যোজনী থেকে যৌগের আণবিক সংকেত তো জানা হলো। এবার চলো জেনে নেওয়া যাক রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ ও বিক্রিয়া সম্পর্কে।
তোমাকে যদি কেউ চ্যালেঞ্জ দেয় মুখ অথবা কোনো যন্ত্র ব্যবহার না করে বেলুন ফুলাতে। তাহলে তুমি কি সেই চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে? তবে তুমি এখন যে পরীক্ষণ করতে যাচ্ছো তা যদি তুমি জেনে নাও তাহলে নিশ্চয়ই এই চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে।
একটা আধা লিটার পানির বোতলে ১ কাপ পরিমাণ ভিনেগার নাও। এখন যে বেলুনটাকে তুমি ফোলাতে চাও তার মধ্যে দু-তিন চামচ বেকিং সোডা নিয়ে এমনভাবে বোতলের মুখে আটকে নাও যাতে বেকিং সোডাগুলো ভিনেগারে মিশে না যায়।
নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছো, ভিনেগারের মধ্যে বেকিং সোডা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুদবুদ ওঠা শুরু হয়েছে। আর বেলুনটাও আপনা-আপনি ফুলে উঠছে।
তুমি কি অনুমান করে বলতে পারবে এখানে কী হচ্ছে? বেলুনে পর্যাপ্ত বাতাস প্রবেশ করলে সেটিকে বোতল থেকে সাবধানে খুলে নিয়ে মুখে গিঁট বেঁধে দাও। তুমি কি বলতে পারবে কী দিয়ে বেলুনটি ফুলে উঠেছে? এজন্য তোমাকে রাসায়নিক বিক্রিয়া ও বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। তুমি যে কাজটি করলে সেটি একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং এই বিক্রিয়ার সমীকরণটি হলো-
NaHCO, CH COOH CO HOCH,COONa
এখানে NaHCO, (বেকিং সোডা) এবং CH,COOH (ভিনেগার) বিক্রিয়া করে CO, (কার্বন-ডাই- অক্সাইড), H₂O (পানি) এবং CH, COONa (সোডিয়াম এসিটেড) নামের তিনটি নতুন যৌগ তৈরি করেছে। এর মধ্যে CO, (কার্বন-ডাই-অক্সাইড) গ্যাস তোমার বেলুনটিকে ফুলিয়ে তুলেছে।
এখন চলো জেনে নেই রাসায়নিক বিক্রিয়া লেখার নিয়ম। অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে 'রাসায়নিক সমীকরণ ও সমতাকরণ' অংশটুকু ভালো করে পড়ে নাও। কোনো প্রশ্ন থাকলে শিক্ষককে করে ধারণা স্পষ্ট করে নাও।
এবার নিচের সমীকরণগুলোর সমতা করার চেষ্টা করো তো-
দ্বাদশ, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ সেশন
রাসায়নিক বিক্রিয়া লেখা তো জানলে। এবার তাহলে চলো বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। তার আগে চলো আরেকটা মজার কাজ করে আসি।
একটা পাত্রে খানিকটা লেবু অথবা পেঁয়াজ চিপে রস বের করে নাও। এক চা চামচ পরিমাণ রস হলেই চলবে।
এবার একটি কাঠির মাথায় তুলা অথবা কাপড় পেঁচিয়ে অথবা কটন বাড ব্যবহার করে রস দিয়ে সাদা কাগজে কিছু একটা লিখ। চাইলে এই অভিজ্ঞতার শিরোনাম অথবা তোমার নিজের নাম লিখতে পারো।
শুকানোর জন্য কিছুক্ষণ রেখে দাও। কোনো বন্ধুকে সাদা কাগজে কী লেখা আছে জিজ্ঞাসা করলে সে উত্তর দিতে পারবে না কারণ রসটা শুকিয়ে সাদা কাগজের সঙ্গে মিশে গেছে।
মোমবাতি জ্বালিয়ে অথবা কোনো আগুনের উপর ধরে কাগজটা এবার সাবধানে একটু তাপ দিয়ে দেখো (যেন পুড়ে না যায়)। দেখবে লেখাটা ধীরে ধীরে গাঢ় খয়েরি রং ধারণ করছে ও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এভাবে তুমি অদৃশ্য কালি তৈরি করে গোপন বার্তাও পাঠাতে পারো! যার সবকিছুর পেছনে রয়েছে রসায়ন। তাহলে চলো এবার অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে সংযোজন, দহন, প্রতিস্থাপন ও বিয়োজন বিক্রিয়া অংশটুকু পড়ে আগে জেনে নাও এই বিক্রিয়াগুলো কীভাবে হয়।
এই বিক্রিয়াগুলোর পরীক্ষা করে দেখতে হলে কী কী উপকরণ লাগবে তা শিক্ষকের সহায়তায় জেনে নাও।
এবার শিক্ষকের সহায়তায় অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে এই চার ধরনের বিক্রিয়ার যে পরীক্ষণ নির্দেশনা দেওয়া আছে সম্ভব হলে সেগুলোর সবকটি একটি একটি করে সম্পন্ন করো।
পঞ্চদশ, ষোড়শ ও সপ্তদশ সেশন
রাসায়নিক বিক্রিয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হচ্ছে শক্তির রূপান্তর। উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তর করে। বিভিন্ন প্রাণী ও আমরা খাবারের মাধ্যমে রাসায়নিক শক্তি গ্রহণ করি যা আমাদের শরীরে অন্য শক্তির জোগান দেয়। এভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে নিহিত শক্তি থেকে শুরু করে জীবাশ্ম জ্বালানির শক্তি এ সবকিছু রাসায়নিক শক্তি। চলো রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কয়েক রকমের শক্তির রূপান্তর নিয়ে কিছু পরীক্ষণ করা যাক।
রাসায়নিক শক্তি থেকে তাপশক্তির রূপান্তরের জন্য তোমরা একটা টেস্টটিউব অথবা কাচের গ্লাসে এক চামচ চুন নাও। এবার এতে আধাকাপ পরিমাণ ভিনেগার অথবা লেবুর রস যোগ করে দেখো তো কী হয়?
তুমি টেস্টটিউব বা গ্লাসের তলদেশ স্পর্শ করে দেখো ঠান্ডা লাগছে নাকি গরম লাগছে?
অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তির রূপান্তর অংশ পড়ে তোমার ধারণা আরেকটু স্পষ্ট করে নাও এবার।
রাসায়নিক শক্তি থেকে অন্য আরও কয়েকটি শক্তির রূপান্তর নিয়ে এবার আরেকটা পরীক্ষণ করা যাক।
এর জন্য তোমার চাই ৪ থেকে ৬টি লেবু, দস্তা বা জিংক দণ্ড (ঢেউটিনে দস্তার প্রলেপ থাকে, কিছুটা ঢেউটিনের অংশ কেটে নিলেও চলবে), তামার দণ্ড (বৈদ্যুতিক তারের ভেতরে যেগুলো পেন্সিলের নিবের মতো মোটা), খানিকটা বিদ্যুৎ পরিবাহী তার, একটা এলইডি বাল্ব (লাইট)।
এখন প্রত্যেকটা লেবুর দু প্রান্তে একটি করে তামার দণ্ড ও একটি করে দস্তা বা জিংকের দণ্ড প্রবেশ করিয়ে নাও। পরিবাহী তার ব্যবহার করে একটি লেবুর তামার দণ্ডের সঙ্গে আরেকটি লেবুর জিংক দণ্ড সংযোগ করে বর্তনী সম্পন্ন করো। ১ম লেবুর তামার অংশ ঋণাত্মক এবং ৪র্থ লেবুর জিংক অংশ ধনাত্মক প্রান্ত হিসেবে কাজ করবে। এবার একটি এলইডি লাইটের খাটো প্রান্ত লেবুর বর্তনীর ঋণাত্মক প্রান্তে এবং লম্বা প্রান্ত ধনাত্মক প্রান্তে যোগ করে দেখো কী হয়!
নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছো, এলইডি লাইটটি জ্বলে উঠেছে। তুমি রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করেছ যেটা এলইডি লাইটকে জ্বালিয়ে আলোক ও কিছুটা তাপশক্তিও তৈরি করছে!
এই পরীক্ষণে ব্যবহৃত ধাতব দণ্ড, সংঘটিত বিক্রিয়ার সঙ্গে অনুসন্ধান পাঠ বইয়ের লবণের (সোডিয়াম ক্লোরাইড) তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত ধাতব দণ্ড, সংঘটিত বিক্রিয়ার তুলনা করো। সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নিচে লিখে রাখো।
পরীক্ষণে ব্যবহৃত ধাতব দণ্ড, সংঘটিত বিক্রিয়া
তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত ধাতব দণ্ড, সংঘটিত বিক্রিয়া
এবার অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে শুষ্ক কোষ ব্যবহার করে রাসায়নিক শক্তি থেকে আলোকশক্তিতে রূপান্তর অংশটুকু পড়ে বলো তো এখানে তামা ও জিংকের (দস্তা) দণ্ডের মধ্যে কোনটি অ্যানোড আর কোনটি ক্যাথোড হিসেবে কাজ করছে? তা যুক্তি সহকারে লিখে রাখো।
ধাতব দণ্ড
অ্যানোড/ক্যাথোড চিহ্নিত করে তার পক্ষে যুক্তি
কপার (তামা) দণ্ড
জিঙ্ক (দন্তা) দণ্ড
হাতের কাছে কোনো নষ্ট ব্যাটারি সেল থাকলে সেটা খুলে ভেতরের অংশগুলো খুঁটিয়ে দেখতে পারো।
অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ সেশন
আমাদের নিত্যদিনের জীবনে অম্ল বা অ্যাসিড এবং ক্ষারক অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহার করে থাকি। তবে অনেক সময় আমরা জানি না কোনটা অম্ল আর কোনটা ক্ষারক। খুব সহজেই কিছু বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এবং নির্দেশক ব্যবহার করে এ দুটিকে আলাদা করা যায়। তার আগে,
এই সেশন শুরুর পূর্বেই শিক্ষকের নির্দেশে তোমরা নিচের উপকরণগুলো বাড়ি থেকে আনবে।
১টি করে- লেবু ও তেঁতুল। ১ চা চামচ পরিমাণ লবণ, চুন, ডিটারজেন্ট সাবান। ২ টেবিল চামচ পরিমাণ- ভিনেগার।
এছাড়াও শিক্ষক তোমাদেরকে আরও কিছু রাসায়নিক পদার্থ দিয়েছেন। এগুলো টেস্টটিউব অথবা অন্য কোনো পাত্রে নিয়ে পাত্রের গায়ে নাম লিখে নাও।
কোনটা অম্ল আর কোনটা ক্ষার তা কী দেখে বুঝা যাচ্ছে? তাহলে চলো আমরা লিটমাস পেপার পরীক্ষা করে দেখে নেই কোনটা অম্ল আর কোনটা ক্ষারক। কিন্তু তার আগে, অম্ল ও ক্ষারক কী, এদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী তা জেনে নেওয়া যাক।
লিটমাস পেপার কী সেই প্রশ্ন নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে? সাধারণ কাগজে যখন লাইকেন (lichen) নামক এক ধরনের গাছ থেকে প্রাপ্ত রং মিশানো হয়, তখন লিটমাস পেপার তৈরি হয়। কোন দ্রবণ অ্যাসিডিক না ক্ষারীয় তা পরীক্ষা করতে লিটমাস পেপার ব্যবহার করা হয়। অম্লীয় বা অ্যাসিডিক দ্রবণ নীল লিটমাস পেপারকে লাল করে এবং ক্ষারীয় দ্রবণ লাল লিটমাস পেপারকে নীল করে। তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে একটা চিত্র দেওয়া আছে সেটি দেখে নাও। এই লিটমাস পেপার এক ধরনের নির্দেশক। নির্দেশক হচ্ছে, এমন সব পদার্থ যাদের নিজেদের রং পরিবর্তনের মাধ্যমে কোনো একটি বস্তু অম্ল না ক্ষার বা কোনোটিই নয়, তা নির্দেশ করে।
তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে অম্ল ও ক্ষারক অংশটুকু পড়া নাও।
পড়া শেষ হলে কয়েকটি টেস্টটিউব অথবা পাত্রে ৫ মিলি পানির মধ্যে তোমাদের আনা বস্তুগুলোকে মিশিয়ে নাও।
তারপর শিক্ষকের দেওয়া লাল ও নীল দুটি লিটমাস পেপার ব্যবহার করে তোমাদের নমুনা বস্তুগুলোকে কোনটি অম্ল ও কোনটি ক্ষারক এর ভিত্তিতে আলাদা করে নিচের ছকে লিখ।
বস্তুর নাম
অম্ল নাকি ক্ষারক
কারণ?
যদি লিটমাস পেপার না থাকে তাহলেও চিন্তা নেই। ফল ও সবজি থেকে নির্যাস বের করেও নির্দেশক বানানো সম্ভব। আর কিছু না পেলে একটা সাদা কাগজে কিছু লাল ফুল (এমনকি লাল সবজি; যেমন, লাল বাঁধাকপির রসও চাইলে ব্যবহার করতে পারো) ভালো করে ঘষে কাগজটা রঙিন করে নাও। এটিও নির্দেশকের কাজ করবে।
এবার লবণ-পানির দ্রবণে লিটমাস পেপার অথবা ফলের নির্যাস থেকে বানানো নির্দেশক যোগ করে দেখো তো কোনো পরিবর্তন হয় কি না?
দেখবে লিটমাস পেপারের রং পরিবর্তন হয়নি। খাবার লবণের মতো আরও অনেক লবণ আছে যারা নিরপেক্ষ পদার্থ অর্থাৎ এরা লিটমাস পেপারের রং পরিবর্তন করতে পারে না।
তবে তুমি যে লবণটি এনেছ, তাতে আয়োডিন আছে কি না তা কিছু তুমি পরীক্ষা করে দেখতে পারো। এজন্য কিছুটা লবণ নিয়ে তাতে ভাত মেখে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস যোগ করলেই হবে। যদি লবণটা গাঢ় বেগুনি রঙের হয়ে যায় তাহলে বুঝবে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন আছে।
অম্ল ও ক্ষারক তো আলাদা করতে শিখলে, এবার এদের ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে অম্ল ও ক্ষারকের ব্যবহার অংশটুকু পড়ে জোড়ায় আলোচনা করে নাও। বইয়ে যা লেখা আছে সেটার সঙ্গে তুমি কী তোমার বা তোমার পরিবারের জীবনে অম্ল-ক্ষারকের ব্যবহারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছো? অর্থাৎ কীভাবে তোমাদের বাসাবাড়িতে এসব ব্যবহার হয়? নিচে লিখে ফেলো-
অম্লের ব্যবহার
ক্ষারকের ব্যবহার
লবণের ব্যবহার
অম্ল ও ক্ষারকের বেশ কিছু রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য আছে। অম্ল ধাতুকে গলিয়ে দিতে পারে। অনেক শক্তিশালী অম্লের কথা বাদ দিলাম।
বাসাবাড়িতে ব্যবহার্য সাধারণ অ্যাসিড যেমন ভিনেগার ব্যবহার করে একটা পরীক্ষা নিজের বাসায় করে দেখতে পারো। একটা ডিম নিয়ে ভিনেগারে ডুবিয়ে রাখো টানা দুই দিন। দুদিন পর ডিমটিকে তুলে দেখবে ডিমের শক্ত খোসা গলে কেমনে তুলতুলে হয়ে গেছে!
এই পরীক্ষায় নিশ্চয়ই বেশ মজা পেয়েছ? তবে বস্তুটা ডিম না হয়ে অন্যকিছু হলে কিন্তু আর অত মজার থাকবে না! জেনে অবাক হবে যে, বাজারে প্রচলিত কোমল পানীয়র মধ্যে ফসফরিক এসিড থাকে যা দাঁত গলিয়ে না দিলেও অতিরিক্ত পান করলে দাঁতের ক্ষতির জন্য যথেষ্ট!
বিংশ সেশন
নিজেদের গবেষণাগারে অনেক ধরনের পরীক্ষণ তো হলো, নানা ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় নতুন নতুন পদার্থ তৈরি হতেও দেখলে। চলো, এবার এমন কোনো পরীক্ষা করে দেখা যাক, যার ফলাফল আমরা দৈনন্দিন জীবনেও কাজে লাগাতে পারি।
আমাদের নিত্যদিনের জীবনে গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত অন্যতম একটি রাসায়নিক পদার্থ হলো সাবান। অল্প কিছু রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে তোমরা নিজেরাই সাবান তৈরি করতে পারো। চলো তাহলে জেনে নেওয়া যাক সাবান তৈরি করতে কী কী করতে হবে।
সাবান তৈরি করার জন্য প্রধান উপাদান হিসেবে প্রয়োজন হয় তেল বা চর্বি আর শক্তিশালী ক্ষার। তোমরা তেল বা চর্বি হিসেবে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারো। আর ক্ষার হিসেবে বিদ্যালয়ের ল্যাব থেকে সোডিয়াম অথবা পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড ব্যবহার করতে হবে।
প্রথমে 15gm (আনুমানিক ৩ চা চামচ) NaOH নিয়ে ভালো করে গুঁড়ো করে 50ml পানিতে মিশিয়ে ক্ষারের সল্যুশন তৈরি করে নাও।
একটা বড়ো বিকার অথবা পাত্রে 60ml নারিকেল তেল নাও। ক্ষারের সল্যুশনটি ধীরে ধীরে যোগ করে চামচ অথবা গ্লাসরড দিয়ে নাড়তে থাকো।
অন্য একটি পাত্রে 200ml পানিতে 20gm (আনুমানিক ৪ চা চামচ) সাধারণ খাওয়ার লবণ মিশিয়ে একটি সম্পৃক্ত দ্রবণ তৈরি করে রেখে দাও।
এরপর তেল ও ক্ষারের মিশ্রণটিকে ১০-১৫ মিনিট তাপ দাও যাতে ভালোভাবে পানি ফুটতে পারে। একই সঙ্গে মাঝে মাঝেই নাড়তে থাকো যতক্ষণ না পাত্রটিতে দুটি স্তর আলাদাভাবে দেখা যাচ্ছে।
তাপ দেওয়া বন্ধ করে আগে থেকে প্রস্তুত রাখা লবণের দ্রবণটি পাত্রে মিশাতে থাকো ও নাড়তে থাকো।
এই মিশ্রণটি খুব ভালোভাবে ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত আনুমানিক ১ ঘণ্টার মতো রেখে দাও।
দেখবে ফোমের মতো একটা অংশ ভেসে উঠেছে। এখন তুমি যে আকারের সাবান বানাতে চাও সে আকারের একটা ছাঁচ নাও। ছাঁচ হিসেবে কোনো বয়ামের মুখ অথবা ছোটো বাটি জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে পারো। চামচের সাহায্যে সাবধানে পাত্র থেকে ভাসমান ফোমের মতো অংশকে আলাদা করে নিয়ে ছাঁচে রাখো।
এভাবে সাবধানে ছাঁচটাকে ১ দিন রেখে দাও।
ব্যস, পরদিন এসে দেখবে তোমাদের সাবান প্রস্তুত। পরিষ্কার ও ফেনা হচ্ছে কি না এবার তুমি নিজেই পরীক্ষা করে দেখো।
শেষ কথা
এই শিখন অভিজ্ঞতা শেষ হয়ে গেলেও তোমাদের গবেষণাগারের কাজ তো শেষ হয়ে যাবে না। গত অনেকগুলো সেশনে যতরকম উপকরণ ব্যবহার করেছ, সেগুলো নির্দিষ্ট স্থানে গুছিয়ে রাখো। কন্টেইনার বা কৌটায় কিছু রাখলে তার উপরে লেবেল করে রেখেছ নিশ্চয়ই। পচনশীল বস্তু তো এভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে না, কিন্তু এর বাইরে তোমাদের সংগৃহীত বস্তুগুলো তোমরা পরবর্তী সময়েও বিভিন্ন পরীক্ষণে কাজে লাগাতে পারবে।