ঈশ্বর নিরাকার ব্রহ্মরূপে সর্বত্র বিরাজমান। সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আমরা তাঁকে অনুভব করি। তিনি নিত্য, শুদ্ধ ও পরম পবিত্র। সর্বশক্তিমান নিরাকার ঈশ্বরের বিশেষ কোনো গুণ বা শক্তির সাকার রূপ হলো দেবতা বা দেব- দেবী। তাই হিন্দুধর্মে বিভিন্ন দেব-দেবীর কথা উল্লেখ রয়েছে। আমরা ঈশ্বরের সাকাররূপী বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করে থাকি। এছাড়া ঈশ্বর দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালনের জন্য জীবদেহ ধারণ করে পৃথিবীতে আসেন। তাঁর এই আসা বা অবতরণ করাকে বলা হয় অবতার।
বিশ্বকর্মা বিশ্বভুবনের স্থপতি। তিনি শিল্প ও পুরকৌশলের দেবতা। শিল্পনৈপুণ্য, স্থাপত্যশিল্প এবং কারুকার্য সৃষ্টিতে তিনি অনন্য গুণশালী দেবতা। পুরাণ অনুসারে তিনি দেবশিল্পী। তিনি স্থাপত্য বেদ নামে একটি উপবেদের রচয়িতা। বিশ্বকর্মা দেবের চার হাত। তাঁর বাম দিকের এক হাতে আছে ধনুক আর এক হাতে তুলাদণ্ড। ডান দিকের এক হাতে হাতুড়ি, অন্য হাতে আছে কুঠার। তাঁর বাহন হাতি। তাঁর কৃপায় মানুষ শিল্পকলা ও যন্ত্রবিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করে। তিনি অলংকার শিল্পেরও স্রষ্টা। দেবতাদের বিমান ও অস্ত্রনির্মাতা। তিনি পুষ্পকরথ, শিবের ত্রিশূল, ভগবান বিষ্ণুর সুদর্শনচক্র, কুবেরের অস্ত্র ইত্যাদি নির্মাণ করেছেন। তিনি শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকাপুরীও নির্মাণ করেছেন।
ভাদ্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ সংক্রান্তির দিন বিশ্বকর্মার পূজা করা হয়। সূতার-মিস্ত্রিদের মধ্যে তাঁর পূজার প্রচলন সর্বাধিক। তবে বাংলাদেশে স্বর্ণকার, কর্মকার, কারুশিল্প, স্থাপত্যশিল্প, মৃৎশিল্প প্রভৃতি শিল্পকর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিগণও বিশ্বকর্মার পূজা করে থাকেন।
জগদ্ধাত্রী দেবী দুর্গার একটি রূপ। বাঙালি হিন্দুসমাজে দেবী দুর্গা ও কালীর পরেই দেবী জগদ্ধাত্রীর স্থান। জগদ্ধাত্রী শব্দের আভিধানিক অর্থ জগতের ধাত্রী বা পালিকা। জননীরূপে তিনিই বিশ্বপ্রসূতি, আবার ধাত্রীরূপে তিনিই বিশ্বধাত্রী। মহাদেবী জগদ্ধাত্রী নানা অলংকারে ভূষিতা হয়ে সিংহের কাঁধে আরোহণ করে থাকেন।
জগদ্ধাত্রী দেবী ত্রিনয়না। দেবীর গাত্রবর্ণ উদীয়মান সূর্যের ন্যায়। তাঁর চার হাত। বাম দিকের দুই হাতে আছে শঙ্খ ও ধনুক। ডান দিকের দুই হাতে আছে চক্র ও বাণ। গলায় সর্পপৈতা। রক্তলালবর্ণ বস্ত্র পরিহিতা এ দেবীর বাহন সিংহ। কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
শীতলা দেবী হিন্দুদের একজন লৌকিক দেবী। পুরাণ অনুসারে শীতলা দেবী আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গারই একটি রূপ। এজন্য মা শীতলাকে অনেকে পৌরাণিক দেবীও বলে থাকেন। ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষত উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল, বাংলাদেশে শীতলা দেবীর পূজা করা হয়।
দোলপূর্ণিমার পর অষ্টমী তিথিতে শীতলা দেবীর পূজা করা হয়। এই তিথিটি শীতলাষ্টমী নামে পরিচিত।
বসন্ত ঋতু শুধু প্রেম-ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় না, সঙ্গে নিয়ে আসে নানা রোগ-ব্যাধির জীবাণু। বসন্ত ও চর্মরোগ থেকে পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে মা শীতলা পূজা করা হয়। ভক্তগণের মতে, এ দেবীর পূজা করলে বসন্ত রোগের জ্বালা নিবারণ হয়ে শরীর শীতল হয়ে যায়। এ কারণে এ দেবী শীতলা নামে পরিচিত হয়েছেন । শীতলা দেবীর এক হাতে থাকে সম্মার্জনী বা ঝাড়ু আর অন্য হাতে জলের কলস।। ভক্তদের ব্যাখ্যায়, ওই ঝাঁড়ু দিয়ে দেবী সমস্ত জীবাণু নষ্ট করে জল দিয়ে রোগ নির্মূল করেন। কখনো কখনো তিনি নিমের পাতা বহন করে থাকেন। নিম রোগ প্রতিরোধকারী উদ্ভিদ। শীতলা কে স্বাস্থ্যবিধি পালন বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দেবী বলা হয়। শীতলা পূজার মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্যবিধি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন হয়ে থাকি। অপদেবতার হাত থেকেও তিনি রক্ষা করেন। তাঁর কৃপায় সকল অমঙ্গল দূর হয়।
শীতলা দেবীর মাথায় কুলা আকৃতি মুকুট এবং গর্দব এর উপর তিনি উপবিষ্ট থাকেন। গর্দব তার বাহন। স্কন্দপুরাণে বর্ণিত শীতলা দেবী শ্বেতবর্ণা ও দুই হাত বিশিষ্ট ৷
আমরা জানি পৃথিবীতে যখন অধর্ম বেড়ে যায়, তখন সৃষ্টিকর্তা বিভিন্ন রূপে আর্বিভূত হয়ে অধর্মকে বিনাশ করে ধর্ম রক্ষা করেন। সৃষ্টিকর্তাই আমাদের মঙ্গলের জন্য অবতাররূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। পূর্বে তোমরা এরকম কয়েকজন অবতার সম্বন্ধে জেনেছিলে, চলো, এখন আমরা আরও কয়েকজন অবতার সম্পর্কে জানব।
মাঝে মাঝে পৃথিবীতে খুব অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মানুষ ভালো পথ থেকে খারাপ পথে চলে যায়। ধর্মের পথ থেকে চলে যায় অধর্মের পথে। অধার্মিক তথা দুষ্ট লোকেরা প্রবল শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সমাজের ভালো মানুষ তথা ধার্মিকদের জীবনে নেমে আসে নিপীড়ন ও নির্যাতন। এমতাবস্থায়, পৃথিবীতে যখন অধর্ম বেড়ে যায়, তখন সৃষ্টিকর্তা বিভিন্ন রূপে আর্বিভূত হয়ে অধর্মকে বিনাশ করে ধর্ম রক্ষা করেন। সৃষ্টিকর্তাই আমাদের মঙ্গলের জন্য অবতাররূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। এসময় সৃষ্টিকর্তা বা ভগবান বিষ্ণু দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের জন্য বিভিন্ন রূপ গ্রহণ করেন। তিনি মানুষ বা অন্য কোনো জাগতিক রূপ নিয়ে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। তখন তাঁর সেই জাগতিক রকে অবতার বলা হয়। অবতার দুই প্রকার— পূর্ণ অবতার ও অংশ অবতার। বিষ্ণু পূর্ণভাবে অবতীর্ণ হলে তাঁকে পূর্ণ অবতার বলে। অংশরূপে অবতীর্ণ হলে তাঁকে অংশ অবতার বলা হয়। শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী ‘কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্' অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ নিজেই ভগবান। তাই পূর্ণ অবতার হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ। দশজন অংশ অবতারের কথা বিশেষভাবে জানা যায়। মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, বুদ্ধ ও কল্কি।
পূর্ববর্তী শ্রেণিতে আমরা চারজন অবতারের পরিচয় জেনেছি। এখানে অবশিষ্ট ছয়জন অবতারের পরিচয় দেওয়া হলো :
ভগবান বিষ্ণুর পঞ্চম অবতার হলো বামন অবতার। দৈত্যরাজ বলিকে দমন করার জন্য শ্রীহরি বামনরূপে সত্য যুগে আবির্ভূত হয়েছিলেন। একসময় প্রহ্লাদের নাতি দানবরাজ বলি স্বর্গের রাজা ইন্দ্রকে পরাজিত করে স্বর্গরাজ্য অধিকার করেন এবং দেবলোক থেকে দেবতাদের তাড়িয়ে দেন বিষ্ণু। তিনি বলির হাত থেকে দেবতাদের রক্ষার অঙ্গীকার করেন। তখন শ্রীহরি বামন বা খর্বাকার রূপ ধারণ করেন। দৈত্যরাজ বলি তখন এক বিরাট যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেছিলেন। তিনি প্রচার করেন, এই যজ্ঞে তাঁর কাছে যে যা চাইবে তিনি তাকে তাই দিবেন। দেবতারা এ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিষ্ণুর আরাধনা শুরু করেন। তাঁদের আরাধনায় সন্তুষ্ট হন ভগবান এই সুযোগে বামনদেব বলির কাছে প্রার্থী হয়ে ত্রিপাদ পরিমাণ ভূমি চাইলেন।
অর্থাৎ তিনটি পা ফেলার মতো জায়গা। এ কথা শুনে দানবরাজ হেসে উঠলেন। ক্ষুদ্রকায় বামনের তিন পা পরিমাণ ভূমি খুবই সামান্য ব্যাপার। তিনি বামনের কথায় রাজি হয়ে গেলেন। তখনই বামনদেবের তিন পা হঠাৎ করে অনেক বড় হয়ে গেল। তিনি তার প্রথম পা পৃথিবীতে রাখলেন। দ্বিতীয় পা স্বর্গে রাখলেন। তাঁর নাভির দিক থেকে আর একটি পা বের হলো। এই তৃতীয় পা তিনি কোথায় রাখবেন? তখন দৈত্যরাজ বলি কী করবেন! তিনি বামনকে কথা দিয়েছেন। কথা রাখতে হবে। কোনো উপায় না দেখে তিনি তার নিজের মস্তক এগিয়ে দিলেন। বামন বলির মস্তকে তৃতীয় পা রাখলেন। এভাবে বামনরূপে ভগবান বিষ্ণু বলিকে দমন করলেন। দেবতারা দেবলোক ফিরে পেল। সর্বত্র শান্তি স্থাপিত হলো।
পরশুরাম বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার। ‘পরশুরাম’ নামের আক্ষরিক অর্থ কুঠার হস্তে রাম। তখন ত্ৰেতা যুগ। এই সময় ক্ষত্রিয় রাজারা প্রবল শক্তিশালী হয়েছিল। তাঁরা অত্যাচারী হয়ে উঠল। ক্ষত্রিয় রাজাদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রজারা ভগবান বিষ্ণু ও ব্রহ্মার স্তব-স্তুতি করতে লাগলেন। তাদের স্তুতিতে সন্তুষ্ট হয়ে বিষ্ণুদেব পরশুরামরূপে জন্মগ্রহণ করেন। পরশুরামের পিতার নাম জমদগ্নি, মাতা রেণুকা। তিনি ক্ষত্রিয় রাজাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন এবং হাতে তুলে নেন পরশু বা কুঠার নামক এক বিশেষ অস্ত্র। তখন থেকেই তাঁর নাম হয় পরশুরাম। পরশুরাম ছিলেন ব্ৰহ্মক্ষত্রিয়। অর্থাৎ ব্রাহ্মণ হয়েও তিনি ক্ষত্রিয়ের মতো আচরণ করেছেন। যুদ্ধ করেছেন। তিনি একুশবার এ পৃথিবীকে ক্ষত্রিয়শূন্য করে শান্তি স্থাপন করেছিলেন।
রামচন্দ্র ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। তিনি ছিলেন অযোধ্যার রাজা দশরথ এবং কৌশল্যার পুত্র। রামচন্দ্র ছিলেন অশেষ গুণের অধিকারী।
আমরা রামায়ণ থেকে রামের কথা জানি। রামের স্ত্রীর নাম সীতা। পিতার দেয়া শর্ত রক্ষা করার জন্য তিনি স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষ্মণকে নিয়ে বনে যান। এই সময় লংকার রাজা ছিলেন রাবণ। রাবণ ছিলেন রাক্ষসদের রাজা। তিনি খুবই অত্যাচারী এবং শক্তিশালী ছিলেন। দেবতাদেরও তিনি পরাজিত করেন। তাঁর অত্যাচারে পৃথিবীতে চরম অশান্তির সৃষ্টি হয়। একসময় রাবণ সীতাকে অপহরণ করেন। রামচন্দ্র বানর সৈন্যদের নিয়ে রাবণকে সবংশে বিনাশ করেন এবং স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করেন। পৃথিবী রাক্ষসমুক্ত হয়। রাবণের মৃত্যুতে সর্বত্র শান্তি ফিরে আসে। বিষ্ণুর অবতার হিসেবে রামচন্দ্র ছিলেন সত্যের রক্ষক, ন্যায়পরায়ণ ও প্রজাবৎসল রাজা। তাঁর শাসনে প্রজারা খুব সুখী ছিলেন ।
ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হলেন বলরাম। তিনি বলভদ্র নামেও পরিচিত। তাঁর পিতা বসুদেব ও মাতা রোহিণী। তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই।
তাঁর প্রধান অস্ত্র ছিল ‘হল' বা 'লাঙ্গল'। তাই তিনি হলধর নামেও পরিচিত। তখনকার দিনে যমুনা নদী বৃন্দাবন থেকে বেশ কিছুটা দূর দিয়ে প্রবাহিত হতো। ফলে কৃষকদের কৃষিকাজ করতে বেশ পরিশ্রম করতে হতো। বলরাম তাঁর লাঙ্গল দিয়ে মাটি খুঁড়ে যমুনাকে বৃন্দাবনের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। এতে বৃন্দাবনবাসীদের অনেক সুবিধা হয়। তিনি জগৎকে এই বার্তা দিয়ে গেছেন যে, দলনিরপেক্ষ ও গোষ্ঠীনিরপেক্ষভাবে সব কৃষককে কৃষির মাধ্যমে দেশের কাজে নিয়োজিত হতে হবে। তিনি কৃষকদের জন্য রেখে গেছেন তাঁর অনন্ত আশীর্বাদ। এ ছাড়া তিনি ছিলেন অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী। তিনি অনেক অত্যাচারীকে শাস্তি দিয়ে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা স্থাপন করেন। তিনি বাল্যকালে ধেনুকাসুর ও প্রলম্ব অসুরকে হত্যা করেন। তিনি এবং তাঁর ছোট ভাই শ্রীকৃষ্ণ মিলে অত্যাচারী কংস রাজাকে হত্যা করেন। কংস এবং তাঁর অনুসারীদের মৃত্যুতে সমাজে শান্তি ফিরে আসে।
বুদ্ধদেব শ্রীবিষ্ণুর নবম অবতার। ভগবান বুদ্ধদেবকে শান্তি এবং জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বুদ্ধদেব ক্ষত্রিয় শাক্যবংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শুদ্ধোদন এবং মাতার নাম মায়াদেবী। বাল্যকালে তাঁর নাম ছিল সিদ্ধার্থ। তাঁর আরেক নাম গৌতম। তিনি একসময় স্ত্রীপুত্র ছেড়ে সংসার ত্যাগ করেন।
ছোটবেলা থেকে মানুষের বার্ধক্য, অসুস্থতা, মৃত্যু, জরা-ব্যাধি, দুঃখকষ্ট দেখে তিনি খুব চিন্তিত হন। এর থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় এটাই ছিল তাঁর চিন্তা। মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি দুঃখের কারণ থেকে মুক্তির উপায় অনুসন্ধানের জন্য কঠোর সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। অবশেষে ৩৫ বছর বয়সে তিনি বোধি অর্জন করেন। বোধি বা জ্ঞান লাভের জন্য তাঁর নাম হয় বুদ্ধ। তাঁর অনুসারীদের বলা হয় বৌদ্ধ।
দুঃখবিদ্ধ মানুষের যন্ত্রণা দূর করা এবং অকারণে প্রাণী হত্যা বন্ধ করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। তাঁর মতে প্রাণী হত্যা মহাপাপ। প্রত্যেক প্রাণী তার নিজের জীবনকে ভালোবাসে। তাই কোনো প্রাণীকে আঘাত দেওয়া বা হত্যা করা যাবে না। তিনি মানুষকে হিংসার পরিবর্তে ভালোবাসার শিক্ষা দিয়েছেন। বুদ্ধদেবের সময় সমাজে অনেক খারাপ অবস্থা ছিল। তিনি সমাজের অনেক কুসংস্কার দূর করেন। জাতিভেদ, বর্ণভেদ দূর করেন। তিনি মানুষের সদাচরণ ও সৎ চিন্তার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি সকলের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটাতে চেয়েছেন। বুদ্ধদেবের উপদেশ গ্রহণ করলে সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। সর্বত্র শান্তি বিরাজ করবে।
হিন্দুধর্ম অনুসারে কল্কিদেব বিষ্ণুর দশম অবতার। তিনি কলি যুগের অবসান ঘটাবেন। কলিযুগ হলো চার যুগের শেষ যুগ। কলিযুগে অধর্ম খুব বেড়ে যাবে। কলিযুগের শেষে সমাজে ক্ষমতাবান দুষ্ট লোকেরা আসুরিক আচরণ করবে এবং মন্দ কাজে লিপ্ত হবে। এ সময় ভগবান বিষ্ণু কল্কি অবতাররূপে এই পৃথিবীতে আসবেন। তিনি বিষ্ণুযশা ও সুমতির পুত্ররূপে সম্ভল নামক এক গ্রামে জন্ম নেবেন। তিনি কলিযুগের শেষের দিকে জন্ম নেবেন। তখন এই পৃথিবীর অল্পসংখ্যক মানুষ ব্যতীত সকলেই ধর্মকে ভুলে যাবে।
ভালো মানুষদের নিয়ে লোকে হাসিঠাট্টা ও বিদ্রুপ করবে। মন্দলোক ভালো লোকদের পশুর মতো মারবে। গোটা পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে নরকে পরিণত হবে। ঠিক তখনই মহাশক্তিশালী, ক্ষমতাধর এবং মহানুভব কল্কিদেব অবতীর্ণ হবেন। তিনি দেবদত্ত নামক একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে হাতে তরবারি নিয়ে সমস্ত অন্যায়কারীকে বিনাশ করবেন। দুষ্ট ও অধার্মিক মানুষদের ভয়ানক প্রভাব থেকে তিনি পৃথিবীকে রক্ষা করবেন। পৃথিবীতে আবার শান্তি ফিরে আসবে। শুরু হবে সত্যযুগের।