অপারেটিং (Operating) শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো পরিচালনা, সিস্টেম (System) অর্থ হলো পদ্ধতি অর্থাৎ অপারেটিং সিস্টেম-এর অর্থ হলো পরিচালনা পদ্ধতি। অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে এমন একটি প্রোগ্রাম যেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবসময় নির্বাহ হয় এবং অন্যান্য প্রোগ্রামের নির্বাহের পরিবেশ তৈরি করে। অন্যভাবে বলা যায়, কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে কাজের সমন্বয় সাধন করে অভ্যন্তরীণ সমগ্র কর্ম-প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারকে অপারেটিং সিস্টেম বলে। মূলত অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) হলো একটি সিস্টেম সফটওয়্যার (System Software) যা কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কম্পিউটারের সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারগুলো পরিচালনা করে থাকে। ANSI (American National Standards Institute)-এর মতে অপারেটিং সিস্টেমের সংজ্ঞা হলো—
“Operating system is a software which controls the execution of computer programs and which may provide scheduling, debugging input / output control, accounting. compilation, storage assignment, data management and related services.”
অর্থাৎ “অপারেটিং সিস্টেম একটি সফ্টওয়্যার যা কম্পিউটার প্রোগ্রামের নির্বাহকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং যা অনুসূচী, ভুল নির্ণয়, ইনপুট/আউটপুট নিয়ন্ত্রণ, হিসাব, একত্রীকরণ, সংরক্ষণ, ডেটা ব্যবস্থাপনা ও সম্পর্কযুক্ত কাজ করে থাকে। ”
অপারেটিং সিস্টেমের ভূমিকা (Importance of Operating System)
অন্যান্য সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামের ন্যায় অপারেটিং সিস্টেমও এক ধরনের সফটওয়্যার। কম্পিউটার সিস্টেম জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কম্পিউটার বুটিং করা থেকে শুরু করে বন্ধ করা পর্যন্ত সকল কাজই অপারেটিং সিস্টেমের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের ব্যবহার সহজ করে দিয়েছেন। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষেও কম্পিউটার ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেমের কারণেই তা সম্ভব হচ্ছে। অপারেটিং সিস্টেম হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে। কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ কাজগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। হার্ডওয়্যার দিয়ে যাবতীয় কাজ করানোর দায়িত্ব ব্যবহারকারীর পরিবর্তে অপারেটিং সিস্টেম পালন করে। কম্পিউটারে সব ধরনের সফটওয়্যার থাকলেও অপারেটিং সিস্টেম ব্যতীত এটি কোনো কাজ করে না। কম্পিউটারে সম্পাদিত তথ্যাবলি সংরক্ষণ, ফাইল সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি নির্ণয়, সিস্টেম বণ্টন, তত্ত্বাবধান, ইনপুট ও আউটপুট অপারেশন, প্রোগ্রাম পরিচালনা — সর্বোপরি কম্পিউটারের যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদনে অপারেটিং সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই কম্পিউটার পরিচালনার জন্য অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারের প্রয়োজন অনস্বীকার্য।
নিম্নে অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্ব উল্লেখ করা হলো-
১. প্রধান মেমোরির ব্যবস্থাপনা।
২. কেন্দ্রিয় প্রক্রিয়াকরণ অংশকে নিয়ন্ত্রণ করা।
৩. প্রধান মেমোরিতে ফাইল ও অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম নিয়ে আসা এবং কাজ করানো।
৪. নতুন ডিস্ক বা সাময়িক অনুপযোগী ডিস্ককে কাজের উপযোগী করে তোলা।
৫. ডিস্কের ত্রুটি নির্ণয় ও সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সংশোধন।
৬. ইনপুট/আউটপুট ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণ করা।
৭. স্থায়ী মেমোরিতে ফাইল সিস্টেম তৈরি করা।
৮. ব্যবহারকারীর সাথে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যাররের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা।
৯. ব্যবহারকারী ও প্রোগ্রামের নিরাপত্তা দেয়া।
১০. একাধিক কম্পিউটারের মাঝে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা।
১১. বিভিন্ন ধরনের ভুল-ত্রুটি নির্ধারণ করে ব্যবহারকারীকে জানানো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১২. একাধিক ব্যবহারকারী বা একাধিক প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ও বিভিন্ন কাজের সময়সূচী নির্ধারণ করা।
১৩. হার্ডওয়্যার সমূহের অবস্থা পর্যবেক্ষণ, সমন্বয় সাধন ও মনিটরে বার্তা প্রদর্শন ।
অপারেটিং সিস্টেমের কাজ (Functions of Operating System )
অপারেটিং সিস্টেম অনেকগুলো প্রোগ্রাম নিয়ে গঠিত একটি সমন্বিত সফটওয়্যার। এই সিস্টেম সফটওয়্যার- এর অন্তর্ভূক্ত প্রোগ্রামগুলো কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করে। নিম্নে অপারেটিং কাজগুলো দেওয়া হলো-
১. অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারকে সচল ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলে।
২. প্রসেসর (Processor) পরিচালনা (Management) করে অর্থাৎ প্রসেসরের বিভিন্ন কাজ এই সিস্টেমের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
৩. মেমোরি পরিচালনা করে, অর্থাৎ প্রধান মেমোরিতে ডেটা ও প্রোগ্রাম নিয়ে আসে এবং কার্যকরী করে।
৪. ইনপুট / আউটপুট যন্ত্রগুলো পরিচালনা করে অর্থাৎ প্রিন্টার, ফ্লপি ডিস্ক, হার্ডডিস্ক, মাউস, কী-বোর্ড, মনিটর প্রভৃতির নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় সাধন করে।
৫. ফাইল পরিচালনা করে অর্থাৎ মেমোরিতে রক্ষিত বিভিন্ন ফাইল এক ডিভাইস হতে অন্য ডিভাইসে পাঠাতে এবং পরিবর্তন করতে সাহায্যে করে।
৬. অপারেটিং সিস্টেম নির্ধারণ করে কম্পিউটারের কোন কাজটি আগে কার্যকর হবে।
৭. অপারেটিং সিস্টেম কম্পাইলার, অ্যাসেম্বলার, ইউটিলিটি প্রোগ্রাম এবং বিভিন্ন সফটওয়্যারের মধ্যে সমন্বয় সাধন, পরিচালনায় ও নির্দেশ গ্রহণে সহায়তা করে।
৮. অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কোনো প্রকার সমস্যা দেখা দিলে শব্দ, চিহ্ন ও Error message দিয়ে ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেয়।
৯. ডেটা ও প্রোগ্রাম ম্যানিপুলেশন (Manipulation), সিকিউরিটি (Security) এবং ইন্টিগ্রিটি বজায় রাখে। অর্থাৎ ডেটা আদান-প্রদান, স্থানান্তর ও সংরক্ষণের কাজ করে। অন্য কোনো ব্যবহারকারীর মাধ্যমে যেন কোনো কিছু নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখে।
১০. অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে যোগাযোগ (Communication) সহজ করে দেয় ।
১১. অপারেটিং সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন (Application) প্রোগ্রামগুলোকে নির্ধারণ করে কিভাবে ব্যবহারকারী কম্পিউটারের সাথে ইন্টার-অ্যাক্ট (Interact) করবে।
১২. ব্যবহারকারীর দেওয়া নির্দেশ গ্রহণ করে ধারাবাহিকভাবে প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা করে।
আরও দেখুন...