কম্পিউটার সিস্টেম কতগুলো ইন্টিগ্রেটেড উপাদান (ইনপুট / আউটপুট যন্ত্রপাতি, মেমোরি, সিপিইউ ইত্যাদি) নিয়ে গঠিত যা প্রোগ্রামের লিখিত নির্দেশাবলী পালন করে। ইনপুট বা আউটপুট যন্ত্রপাতিগুলো সিপিইউ (CPU) থেকে নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কাজ করতে পারে না। অনুরূপভাবে মেমোরিও এককভাবে কোন কাজ করতে পারে না। কাজেই সকল উপাদান একত্রে মিলে কাজ করে একটি কাজ সম্পূর্ণ করে। কম্পিউটার সিস্টেমের উপাদানগুলো নিম্নরূপ—
হার্ডওয়্যার (Hardware):
হার্ডওয়্যার একটি ইংরেজী শব্দ। এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসাবে আমরা সচরাচর লোহা-লক্কর বুঝে থাকি। কম্পিউটারের ক্ষেত্রে এই হার্ডওয়্যার হচ্ছে যন্ত্র বা যন্ত্র সরঞ্জাম। যাকে কম্পিউটারের অবকাঠামো বলা যায়। কম্পিউটারের বাহ্যিক আকৃতি সম্পন্ন সকল যন্ত্র বা ডিভাইস সমূহকে হার্ডওয়্যার বলে। কম্পিউটার সিস্টেমে ব্যবহৃত ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, মাইক্রোপ্রসেসর, মাদারবোর্ড, র্যাম (RAM), রম (ROM) প্রভৃতি যন্ত্রপাতি দিয়ে সুন্দরভাবে সম্পাদন ও সহায়তা করার জন্য রয়েছে অন্যান্য ডিভাইসমূহ যেমন-ডিস্ক, ডিস্ক ড্রাইভ, কী-বোর্ড, মাউস, মনিটর, প্রিন্টার ইত্যাদি। উল্লিখিত সকল যন্ত্রপাতির সমন্বয়েই গঠিত হয় কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার। অর্থাৎ হার্ডওয়্যার হচ্ছে কম্পিউটারের বাহ্যিক কাঠামো যা আমরা স্পর্শ করতে পারি। হার্ডওয়্যারকে কার্যক্ষম ও ব্যবহার উপযোগী করার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত সফটওয়্যার। সর্বোপরি হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সমন্বিতভাবে একটি পরিপূর্ণ সিস্টেম হিসাবে কাজ করে।
সফটওয়্যার (Software):
কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায় এমন সমন্বিত প্রোগ্রামকে সফটওয়্যার বলে। কম্পিউটার অন্যের সাহায্য ছাড়া নিজে কখনো কোনো কিছু করতে পারে না। কম্পিউটার প্রয়োজনীয় কাজটি সম্পন্ন করতে একটি নির্দেশ গ্রহণ করে থাকে। সফটওয়্যার হচ্ছে হার্ডওয়্যারের প্রাণশক্তি বা জীবনী শক্তি । প্রোগ্রাম কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে হার্ডওয়্যারকে কার্যক্ষম ও ব্যবহার উপযোগী করে তাকেই সফটওয়্যার বলে। সত্যিকার অর্থে সফটওয়্যার কম্পিউটার পরিচালনা করে। সফটওয়্যার ছাড়া হার্ডওয়্যার অর্থহীন। এক কথায় বলা যায় যে, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার একে অন্যের পরিপূরক।
ফার্মওয়্যার (Firmware ) :
ফার্মওয়্যারও এক ধরনের সফটওয়্যার। ফার্মওয়্যারকে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মাঝামাঝি গাঠনিক অবস্থান বলে মনে করা হয়। এ ধরনের প্রোগ্রামগুলো স্থায়ীভাবে মেমোরিতে সংরক্ষিত থাকে। সাধারণভাবে ফার্মওয়্যার পরিবর্তন করাও সম্ভব নয়। কম্পিউটার তৈরি করার সময় মেমোরিতে যে প্রোগ্রামসমূহ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে দেয়া হয় যেগুলোকে ফার্মওয়্যার বা মনিটর প্রোগ্রাম বলে। এ সকল প্রোগ্রামের আউটপুট কেবল পর্যায়ক্রমে মনিটরে প্রদর্শিত হয়। যেমন- রমে (ROM) রক্ষিত প্রোগ্রামসমূহ। কম্পিউটারে স্থায়ীভাবে রাখা দরকার সেইসব নির্দেশনাবলী যেসব নির্দেশনাবলী বা কমাণ্ডের মাধ্যমে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। শুধুমাত্র এই নির্দেশনাগুলো কম্পিউটারের সেমিকন্ডাক্টর (Semiconductor) রমে স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ROM BIOS (Read Only Memory Basic Input Output System) এর মধ্যে যে ডেটা এবং নির্দেশগুলো থাকে তা ফার্মওয়্যার। কম্পিউটার ছাড়াও কিছু কিছু মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক সিস্টেম আছে যেখানে ফার্মওয়্যার ব্যবহৃত হয়। যেমন ভিসিডি প্লেয়ার, ভিসিআর, অটোমোবাইল, মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ইত্যাদি।
হিউম্যানওয়্যার (Humanware ) :
কম্পিউটার এককভাবে কোনো কাজ করতে পারে না। কম্পিউটারে কোনো কাজ সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাত্ত এবং নির্দেশ দিয়ে দিতে হয়। এই নির্দেশের ভিত্তিতে কম্পিউটার কাজ করে থাকে। আর এই নির্দেশ দেয়া হয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে। অর্থাৎ সফটওয়্যার ছাড়া কম্পিটারের হার্ডওয়্যার মূল্যহীন। কম্পিউটারের সাহায্যে সুনির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য ব্যবহারকারীকে প্রথমে ডেটা সংগ্রহ করতে হয় যাকে ডেটা কালেকশন (Data Collection) বলে। ব্যবহারকারী কম্পিউটারে কাজটি প্রক্রিয়াকরণের জন্য কম্পিউটারের সিস্টেম (ইনপুট / আউটপুট এবং অন্যান্য সিস্টেম) ডিজাইন করেন ও কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখেন। এরপর ব্যবহারকারী কম্পিউটার চালানোর (Operate) মাধ্যমে তৈরিকৃত প্রোগ্রামটি চালিয়ে দেখেন এবং সংগ্রহীত ডেটাগুলোকে পরীক্ষা করেন। যে সমস্ত ব্যক্তি ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য কম্পিউটার পরিচালনা, ডেটা সংরক্ষণ, পরীক্ষাকরণ, রেকর্ড লিপিবদ্ধকরণ ইত্যাদি কাজ করে তাদেরকে হিউম্যানওয়্যার বলে।
কর্মপত্র : আমরা ইতিমধ্যে কম্পিউটারের সফটওয়্যার ও ফার্মওয়্যার সম্পর্কে জেনেছি। তুমি এটি সম্পর্কে কী ধারণা লাভ করলে, তার তুলনামূলক ৫টি বৈশিষ্ট্য তৈরি করে একটি অ্যাসাইনমেন্ট প্রস্তুত করো। |
---|
আরও দেখুন...