কাজের মাঝে আনন্দ

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীবন ও জীবিকা - | NCTB BOOK
21
21

নিজ ও পারিবারিক কাজ

তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় আমরা নিজ নিজ পরিবারের বিভিন্ন কাজ করে একেকজন একেকটা খেতাব পেয়েছিলাম। কেউ টাইটানিয়াম সদস্য, কেউ প্লাটিনিয়াম সদস্য, কেউ গোল্ড, সিলভার, ব্রোঞ্জ এবং সাধারণ সদস্যপদ পেয়েছিলাম। আমরা প্রতিজ্ঞাও করেছিলাম পরিবারের এই কাজগুলো চলমান রাখব যাতে আমাদের পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় থাকে। কারণ, নিজের কাজ নিজে করার মধ্যে যেমন আনন্দ আছে, তেমনি পরিবারের সদস্যদের কাজে সহায়তা করতে পারার মধ্যেও আত্মতৃপ্তি আছে। বিশেষ করে রান্নাবান্নাসহ বাড়ির অন্যান্য কাজ, হিসাবনিকাশ, ভাইবোন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিভিন্ন কাজে প্রয়োজনমতো সহায়তা করলে পরিবারে স্নেহভালোবাসা যেমন অটুট থাকে, তেমনি বয়ে আনে অনাবিল সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধি। ছোটবেলা থেকে নিজের কাজ নিজে করা এবং পরিবারের সদস্যদের কাজে হাত লাগিয়ে তাদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ানোর চর্চা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে মানসিক তৃপ্তি যেমন পাওয়া যায়, তেমনি আমাদের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়, যা আমাদের সব ধরনের শারীরিক এবং মানসিক সুখবোধের অন্যতম উৎস। তাই চলো আমরা সবাই আবারও প্রতিজ্ঞা করি—

এবার আমরা আমাদের বিগত ছয় মাসের কাজগুলো ফিরে দেখব এবং বাবা-মা কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে নিচের ছকটি পূরণ করব। যদি এমন হয় যে-

মাসের বেশিরভাগ সময় কাজটি করেছ তাহলে স্কোর দিবে - ৩

ঐ মাসে মাঝে মাঝে কাজটি করেছ তাহলে স্কোর দিবে - ২

মাসের খুব অল্প কয়েকদিন কাজটি করেছ তাহলে স্কোর দিবে - ১

আর যদি একেবারেই না করে থাক তাহলে স্কোর দিবে - ০

                                                                           ছক ১.১: ফিরে দেখা

ক্রমকাজের বিবৃতি১ম মাস২য় মাস৩য় মাস৪র্থ মাস৫ম মাস৬ষ্ঠ মাসমোট নম্বর
নিজের বিছানা গুছিয়েছি       
সময়মত পড়াশুনা করেছি        
নিজের খাবারের প্লেট, মগ, চামচ ধুয়েছি       
পড়ার টেবিল,বই, খাতা,কলম ইত্যাদি গুছিয়ে রেখেছি       
নিজের জামা-কাপড়, জুতা-মোজা ইত্যাদি গুছিয়ে রেখেছি       
খাবারের সময় রীতিনীতি মেনে চলেছি       
নিজের শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখেছি       
রান্নার কাজে সহায়তা করেছি       
কাপড় ধোয়ার কাজে সাহায্য করেছি       
১০ঘর গোছানোর কাজে সাহায্য করেছি       
১১ছোট/বড় ভাইবোনদের কাজে সহায়তা করেছি       
১২অন্যান্য সদস্যদের (অসুস্থ/বৃদ্ধ/ শিশু) সেবাযত্ন করেছি       
১৩বাড়িতে অতিথি আসলে যত্ন করেছি       
১৪…………………….       
১৫……………………..       
অভিভাবকের মতামতসর্বমোট স্কোর 
শিক্ষকের মন্তব্য

পারিবারিক আয় ও ব্যয়

আমরা জানি, জীবন ধারনের জন্য আমাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হয়। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো হলো- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। কীভাবে আমরা এ মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারি তা সম্পর্কে তোমরা কি কিছু জানো? খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান (বাড়ি) কিনতে হলে আমাদের অর্থ বা টাকার প্রয়োজন, তাই না? শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে গেলেও অর্থের প্রয়োজন। এই অর্থ আমরা কোথা থেকে পাই? আমাদের মা-বাবারা কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন। তা দিয়ে তাঁরা আমাদের সংসারের খরচ এবং পরিবারের সকল সদস্যের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করেন। অর্থ যদি যত্ন সহকারে পরিকল্পনা মতো খরচ করা হয়, তাহলে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যয় মিটিয়েও কিছু অর্থ সঞ্চয়ও করতে পারি ।

সেবা প্রদান, পণ্য বিক্রয় বা বিনিয়োগ থেকে অর্থ প্রাপ্তি বা আর্থিক মূল্য আছে এমন কিছু প্রাপ্তিকে আয় বলে। এই আয় বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে। আয়ের উৎস হতে পারে হতে পারে চাকরি থেকে পাওয়া বেতন, খণ্ডকালীন কাজ থেকে প্রাপ্ত সম্মানী, ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত লাভ, বাড়ি বা দোকান থেকে পাওয়া ভাড়া, ব্যাংক থেকে বা শেয়ার বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত সুদ বা লাভ এবং অন্যান্য বিনিয়োগ হতে আয়। আবার শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়লব্ধ লাভ, কৃষিজাত পণ্য বা ফসল বিক্রয়লব্ধ লাভ, পরিবারের তৈরি/ উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়লব্ধ লাভ থেকেও আয় হতে পারে। পরিবারের সদস্যদের দক্ষতা ব্যবহার করেও আয় হতে পারে, যেমন রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল, গাড়ি, বাস, ট্রাক, নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার, বিমান চালিয়ে উপার্জিত অর্থ।

পারিবারিক আয় হলো- একই পরিবারে বসবাসকারী লোকদের একত্রিত করা মোট আয়। অন্যভাবে বলা যায়, পরিবারের সদস্যদের দক্ষতা ব্যবহার করে বিভিন্ন উৎস থেকে আয়; যেমন- পরিবারের সদস্যদের বেতন, ভাতা, ভাড়া, ক্ষুদ্র-মাঝারি-বৃহৎ ব্যবসা থেকে আয়, চাষাবাদ ও খামার থেকে আয়, উৎপাদিত পণ্য বা সামগ্রী, ফসল, শাকসবজি, ফল-মূল বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত আয়, ব্যাংক থেকে এবং সঞ্চয় থেকে প্রাপ্ত সুদ প্রভৃতি।

পারিবারিক আয় পরিবারের এক বা একাধিক ব্যক্তির মাধ্যমে হতে পারে। এই আয় কখনও সুনির্দিষ্ট থাকে, কখনও বা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে পারিবারিক আয়ের পরিমাণ যতই হোক না কেন, আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। কথায় বলে-

আয় থেকে আমরা আমাদের চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন জিনিস কিনে যে টাকা খরচ করি, তাকে ব্যয় বলা হয়। পরিবারে কিছু কিছু খরচ আছে অতি প্রয়োজনীয়, যা আমরা আমাদের জীবন ধারনের জন্য ব্যয় করি। আবার কিছু কিছু খরচ আছে যা আমরা আমাদের জীবনকে সাজাতে বা রাঙাতে ব্যয় করি। তবে দু'ধরনের ব্যয়ই সাধারণত: খাদ্য, বাসস্থান, পোশাক, শিক্ষা, পরিবহন, চিকিৎসা, বিনোদন, বিল পরিশোধ ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। আবার শহর এবং গ্রাম ভেদে এই ব্যয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়। আয় একটি পরিবারে অর্থ নিয়ে আসে আর ব্যয় অর্থ বের করে দেয়, তখন অন্য কিছুর জন্য আর অর্থ অবশিষ্ট থাকে না। প্রকৃতপক্ষে আয়ের তুলনায় ব্যয় কম হলে পরিবারে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করে।

একক কাজ

তোমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে তোমার পরিবারের আগামী এক সপ্তাহের সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব লিপিবদ্ধ করো। ব্যয়ের তালিকা করার জন্য নিচের ছকটি ব্যবহার করতে পারো।

ছক ১.২ : সাপ্তাহিক পারিবারিক ব্যয়

তারিখব্যয়ের খাতব্যয়মন্তব্য
    
    
    
    
    
    
    
অভিভাবকের মতামতশিক্ষকের মন্তব্য

 

পারিবারিক বাজেট

আমরা জানি, সঞ্চয় হলো আমাদের বিপদের বন্ধু। কিছু অর্থ সঞ্চয় নিশ্চিত করতে, আয়ের তুলনায় ব্যয় কম করতে হয়। পরিবারে আয়ের চেয়ে কম ব্যয় করার জন্য, ব্যয়ের পরিকল্পনা করা ভীষণ জরুরি। যৌক্তিকভাবে আয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে এমনভাবে ব্যয় করা উচিৎ, যাতে পরিবারের সমস্ত চাহিদা পূরণ হয়। এর জন্য প্রত্যেক পরিবারকে একটি ‘ব্যয় পরিকল্পনা' করতে হয়।

‘ব্যয় পরিকল্পনা’ হলো- ব্যয় করার একটি পরিকল্পিত পদ্ধতি। এটা একটি পরিবারের মোট আয়ের উপর নির্ভর করে । এটি পরিবারকে তাদের আয়ের মধ্যে বসবাস করতে এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজন এবং জরুরি অবস্থার জন্য অর্থ সঞ্চয় করতে সহায়তা করে।

বাজেট হলো এমন একটি পরিকল্পনা যেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়কালের আয় ও ব্যয়ের বিভিন্ন খাতের বর্ণনা থাকে। অর্থাৎ বাজেটে একদিকে যেমন আয়ের বিভিন্ন খাতের বিবরণ থাকে তেমনি পরিকল্পিত ব্যয়েরও বিভিন্ন খাতের বিবরণও থাকে। বাজেট এমনভাবে প্রণয়ন করা হয় যেখানে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সকল প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়।

বাজেটের ধারণা অনুযায়ী আমরা কি এখন অনুমান করতে পারব পারিবারিক বাজেট কী?

পারিবারিক বাজেট হলো- একটি নির্দিষ্ট সময়কালে একটি পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের বিভিন্ন খাত থেকে সম্ভাব্য আয় ও বিভিন্ন খাতে পরিকল্পিত ব্যয় বিবরণ।

পারিবারিক বাজেট বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের নিশ্চয়তা প্রদান করে। একই সঙ্গে একটি পরিবারে আয়ের একটি অংশ ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য আলাদা করে রাখতে হয়। তোমরা নিশ্চয়ই জানো, এই অর্থ যা আলাদা করে রাখা হয় তা হলো ‘সঞ্চয়’ । সঞ্চয়কৃত অর্থ ভবিষ্যতে যেকোনো সময় পারিবারিক প্রয়োজন বা জরুরি অবস্থা, পরিবারের কারো বিয়ে বা উচ্চতর শিক্ষা, বার্ধক্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য প্রয়োজন বা বিলাসদ্রব্য কেনা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। পারিবারিক বাজেট একটি পরিবারকে ঋণগ্রস্থ হওয়া থেকে মুক্ত রাখে। কারণ, আমরা জানি আয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যয় পরিকল্পনা করলে একটি পরিবার ঋণগ্রস্ত হয় না। একটি ভালো বাজেটের বৈশিষ্ট্য হলো-

আয়ের সঠিক অনুমানব্যয়ের সঠিক অনুমানআয়ের যুক্তিসংগত বরাদ্দ নমনীয়
একটি নির্দিষ্ট সময়কালে কোন কোন খাত থেকে আয় হতে পারে তা যতটা সম্ভব সঠিকভাবে অনুমান করা।পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের প্রয়োজন বিবেচনা করে ব্যয়ের খাতগুলো সঠিকভাবে অনুমান করা। গত কয়েক মাসের ব্যয়ের খাত বিশ্লেষণ করে যথাসম্ভব সঠিকভাবে ব্যয়ের সম্ভাব্য হিসাব করতে হয়বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের যুক্তিসংগত বরাদ্দ নিশ্চিত করা।এমনভাবে ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ নির্দিষ্ট করা যাতে বিভিন্ন খাতে চাহিদা পরিবর্তন হলে তা মিটানো যায়।

সঠিক অনুমান ও যৌক্তিকতা বজায় রেখে বাজেটে এমনভাবে ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ নির্দিষ্ট করতে হয় যাতে বিভিন্ন খাতে চাহিদা পরিবর্তন হলে তা মিটানো যায়। অর্থাৎ সবচাইতে প্রয়োজনীয় খাতে সম্ভাব্য খরচের চাইতে একটু বেশি বরাদ্দ রাখতে হয়। এর ফলে প্রয়োজন অনুযায়ী একটি আইটেম থেকে অন্য আইটেমে কিছু অর্থ পরিবর্তনের সুযোগ থাকে।

 

দলগত কাজ

এবার চলো আমরা বাজেট প্রণয়নের অনুশীলন করি-

শিল্পী বেগম একটি টেইলরিং হাউসের মালিক। বৃদ্ধ বাবা-মা, দুই ছেলে-মেয়ে, স্বামীসহ তাদের ছয়জনের পরিবার। শিল্পী বেগমের স্বামীও টেইলরিং হাউসে তার সঙ্গে কাজ করেন এবং তাদের বাড়ির পুকুরে মাছ চাষ করেন। প্রতি মাসে গড়ে শিল্পী প্রায় ২০,০০০ টাকা উপার্জন করেন, আবার তার স্বামীও প্রায় ২০,০০০ টাকা উপার্জন করেন। তারা প্রতি মাসে প্রায় ৫০০০ টাকার মতো মাছ বিক্রয় করেন। মেয়ে রামিয়া ৭ম শ্রেণিতে পড়ে এবং তার ভাই টুকু চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। রামিয়া তার পরিবারের জন্য পারিবারিক বাজেট প্রণয়ন করতে চায়। চলো, আমরা রামিয়াকে তার পরিবারের একটি সম্ভাব্য বাজেট প্রণয়ন করতে সহায়তা করি। সম্ভাব্য যতরকম ব্যয়ের খাত আছে সবগুলো ছকে তালিকা করার চেষ্টা করি।

 

ছক ১.৩ : রামিয়ার পারিবারিক বাজেট পরিকল্পনা

আয়ের উৎসআয়ের পরিমাণ (টাকা)ব্যয়ের খাত (টাকা)ব্যয় বরাদ্দ (টাকা)মন্তব্য

 

 

 

 

 

 

 

 

    
মোট আয় মোট ব্যয়  
উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি 

 

পারিবারিক বাজেট প্রণয়ন

এবার আমরা আমাদের নিজের পরিবারের জন্য মাসিক পারিবারিক বাজেট প্রণয়ন করব। পারিবারিক বাজেট প্রণয়নে যা প্ৰয়োজন-

- বাজেট প্রণয়নের জন্য আমাদের প্রথমে প্রয়োজন হবে পরিবারের মাসিক সম্ভাব্য আয় নিরূপণ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আয়ের সম্ভাব্য খাতগুলো চিহ্নিত করতে হবে।

- পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যয়ের খাতগুলো জেনে নিতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সম্ভাব্য সকল রকম ব্যয়ের খাত নির্দিষ্ট করতে হবে। কোন খাতে কত অর্থ ব্যয় হতে পারে তা হিসাব করে বের করতে হবে।

একক কাজ

পরিবারের সকল সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে তোমার পরিবারের আগামী মাসের পারিবারিক বাজেট প্রণয়ন করো। বাজেট প্রণয়নে নিচের ছক ব্যবহার করো। প্রয়োজন অনুযায়ী ছকে আরও লাইন যোগ করতে পারো।

 

ছক ১.৪: নিজ পারিবারিক বাজেট

মাসের নাম:………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

আয়ের উৎসআয়ের পরিমাণ (টাকা)ব্যয়ের প্রধান খাতপ্রধান খাতের বিস্তারিতব্যয় বরাদ্দ (টাকা)
  খাদ্য

- চাল 

- শাকসবজি 

- মাছ-মাংস-ডিম-দুধ

- মসলা 

- অন্যান্য

--

--

--

--

--

  বাসস্থান  
  পোশাক  
  শিক্ষা  
  পরিবহন  
  পরিবারের বিলসমূহ  
  চিকিৎসা ব্যয়  
  বিনোদন  
  মোবাইল ফোন/ইন্টারনেট  
  অন্যান্য (উল্লেখ করো)   
     
     
মোট আয় মোট ব্যয়  
উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি 

 

পারিবারিক বাজেট তৈরি করার পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে নিচের অনুশীলনগুলো করি-

- মাসিক সম্ভাব্য মোট আয়ের সঙ্গে মোট পরিকল্পিত ব্যয় তুলনা করি। আয়ের চাইতে ব্যয় বেশি, কম বা সমান কি না, তা যাচাই করি।

- কোন খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে? এই ব্যয় মোট ব্যয়ের শতকরা কত তা বের করি।

- কোন কোন খাত থেকে ব্যয় কমানো যেতে পারে এবং কীভাবে?

- ব্যয় কমানোর একটি পরিকল্পনা তৈরি করি।

পারিবারিক আয়-ব্যয়ের হিসাব

আগামী মাসের শুরু থেকেই আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখবো। (এজন্য ষষ্ঠ শ্রেণির আর্থিক ডায়েরি ছকটি ব্যবহার করবো। এই কাজটি করার জন্য তোমার জীবন ও জীবিকা খাতায় আর্থিক ডায়েরির ছকটি এঁকে নাও।) প্রতিদিনের শেষে পরিবারের সকল সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে আর্থিক ডায়েরিতে প্রতিদিনের আয়- ব্যয়ের হিসাব রাখবো। প্রয়োজন অনুযায়ী আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখার জন্য আরও ঘর যোগ করি।

ছক ১.৫ : আর্থিক ডায়েরি

তারিখআয়ের খাতআয় (টাকা)ব্যয়ের খাতব্যয় (টাকা)মন্তব্য
      
      
      
      
      
      
      
মাস শেষে মোট    

মাসিক পারিবারিক বাজেটের সঙ্গে মাসিক আর্থিক ডায়েরির তুলনা

মাস শেষে আর্থিক ডায়েরি থেকে কোন খাতে মোট কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা বের করি। আবার বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত মোট আয় নিরূপণ করি। এবার পরিকল্পিত আয়-ব্যয়ের সঙ্গে প্রকৃত আয় ব্যয়ের তুলনা করে ছকটি পূরণ করি।

ছক ১.৬: পরিকল্পিত আয়-ব্যয়ের সঙ্গে প্রকৃত আয়-ব্যয়ের তুলনা

আয়ের খাতসম্ভাব্য আয় (টাকা)প্রকৃত আয় (টাকা)ব্যয়ের খাতপরিকল্পিত ব্যয় (টাকা)প্রকৃত ব্যয় (টাকা)উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি ব্যয় (টাকা)
  খাদ্য    
  বাসস্থান    
  পোশাক    
  শিক্ষা    
  পরিবহন    
  পরিবারের বিলসমূহ (পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদি)    
  চিকিৎসা ব্যয়    
  বিনোদন    
  মোবাইল ফোন/ইন্টারনেট    
  অন্যান্য (উল্লেখ করো)    
মোট আয় মোট ব্যয়    

পরিকল্পিত আয়-ব্যয়ের সঙ্গে প্রকৃত আয়-ব্যয়ের তুলনা করে ছকটি পূরণ করার পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে নিচের অনুশীলনগুলো করি -

- সম্ভাব্য আয়ের সঙ্গে প্রকৃত আয়ের তুলনা করি, কোনো পার্থক্য থাকলে তার কারণ খুঁজে বের করি। 

- কোন কোন খাতে পরিকল্পিত ব্যয়ের সঙ্গে প্রকৃত ব্যয়ের পার্থক্য অনেক বেশি, কারণ খুঁজে বের করি। 

- ব্যয় কমিয়ে কীভাবে সঞ্চয় বৃদ্ধি করা যায় তার উপায় খুঁজে বের করি। 

- ব্যয় কমানোর একটি পরিকল্পনা তৈরি করি।

একক কাজ

এখন থেকে প্রতি মাসের শুরুতে মাসিক পারিবারিক বাজেট প্রণয়ন করো, আর্থিক ডায়েরিতে সারা মাসের আয় ব্যয়ের হিসাব লিপিবদ্ধ করো এবং বাজেট পরিকল্পনার সঙ্গে প্রকৃত আয়-ব্যয়ের তুলনা করো। প্রতি মাসের শুরুতে আগের মাসের হিসাব শিক্ষকের নিকট জমা দাও।

 

পরিবারের আর্থিক কাজ চিহ্নিত করা ও পরিবারের আর্থিক কাজে সহযোগিতা করা

তোমার কি মনে হয়, তুমি এবং তোমার ভাইবোন পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে বা আর্থিক কাজে অবদান রাখতে পারো? একটু চিন্তা করে দেখ তো! হ্যাঁ, তুমি ঘরের কাজে সহায়তা করতে পার যেমন, ঘর পরিষ্কার করা, ঘর মোছা, থালা-বাসন বা কাপড় ধোয়া। তুমি বাড়িতে জামা-কাপড় সেলাই করতে পারো, শাকসবজি চাষ বা মুরগি পালন করতে পারো বা পরিবারে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, স্মার্ট ফোন বা গ্যাজেট মেরামত করতে পারো বা অন্যদের প্রয়োজনে টাইপিং বা কম্পিউটার কম্পোজ করতে পারো। যে কাজগুলো করতে তোমার পরিবারের ব্যয় হয় সেই কাজগুলো তুমি নিজে করা মানে এই কাজের জন্য তোমার পরিবার যে ব্যয় করতো তা বাচাঁতে পারো অর্থাৎ পরোক্ষভাবে তুমি পরিবারের জন্য আয় করছো। আবার ব্যয় কমিয়েও আয় করা যায় যেমন- বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানি কম ব্যবহার করা, রিকশার পরিবর্তে হেঁটে গেলে বা বাসে স্কুলে গেলেও তোমার পারিবারিক ব্যয় কম হবে, যা এক ধরনের পারিবারিক আয়।

 

কেস : ক্ষুদে রোজগেরে

সুমন আর সুমি দুই যমজ ভাই-বোন। দুজনেই ৭ম শ্রেণিতে পড়ে। সুমনের ছোটবেলা থেকেই হাঁস-মুরগি পালনের প্রতি খুব আগ্রহ। কয়েক মাস অন্তর অন্তর সে হাঁস-মুরগির ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করে। দশ বারোটা হাঁস-মুরগি সুমনের সব সময়ই থাকে। পরিবারে ডিম ও মুরগির চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশীরাও এখন সুমনের মুরগির ডিম, মুরগি কিনে নিয়ে যায়। সুমনের পরিকল্পনা আছে বড় হয়ে সে হাঁস-মুরগির খামার তৈরি করবে এবং বড় বড় সুপারশপে সে হাঁস-মুরগি সরবরাহ করবে।

অন্যদিকে হাঁস-মুরগি পালনে সুমির তেমন কোনো আগ্রহ নেই। সুমি খুব ভালো মোবাইল রিপিয়ারিং শিখেছে। সুমির বড় মামা ঢাকায় একটি মোবাইল সার্ভিস সেন্টারে কাজ করেন। মূলত তার কাছেই সুমি মোবাইল মেরামতের অল্প বিস্তর কাজ শিখেছে। আশেপাশে কারও কোনো মোবাইলের সমস্যা হলে সবাই সুমির নামটাই প্রথমে মনে করে। সুমি কম্পিউটারেও বেশ ভালো। ইতোমধ্যে সে কোডিং শিখে নিয়েছে। সুমি পরিকল্পনা করছে সে পড়াশোনার পাশাপাশি আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু করবে। সুমন আর সুমির বাবা-মা ভীষণ খুশি কেননা তাদের দুটি সন্তানই পড়ালেখার পাশাপাশি আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং এই কাজগুলো লেখাপড়ার ফলাফলেও অবদান রাখছে।

 

প্রশ্ন ১: সুমন আর সুমি কীভাবে তাদের পরিবারে সহযোগিতা করছে?

 
 
 

প্রশ্ন ২: তুমি তোমার পরিবারের যেসব কাজে সহযোগিতা করো সেখান থেকে আর্থিক কাজগুলো শনাক্ত করে একটি তালিকা তৈরি করো।

পরিবারের যেসব আর্থিক কাজে সহযোগিতা করতে পারিআর্থিক মূল্য (টাকা)
১/ 
২/ 
৩/ 
৪/ 
৫/ 

প্রশ্ন ৩: তুমি তোমার বাবা-মা/অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে এমন একটি কাজের পরিকল্পনা করো যেখান থেকে অর্থ উপার্জিত হবে এবং এর মাধ্যমে তুমি তোমার পরিবারের আর্থিক কাজে সরাসরি সহযোগিতা করতে পারবে।

কাজের নাম:
১ম মাসের পরিকল্পনা২য় মাসের পরিকল্পনা৩য় মাসের পরিকল্পনা
   
চূড়ান্ত ফল
অভিভাবকের মতামত:
শিক্ষকের মন্তব্য:

 

১। পারিবারিক বাজেটে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পেরে তোমার কেমন লাগছে, কী কী নতুন বিষয় শিখতে পেরেছ এবং এসব দক্ষতা পরবর্তী সময়ে তোমার কী কী কাজে লাগাতে পারবে?

২। এই অধ্যায়ে আমরা যা যা করেছি ........ . (√ টিক চিহ্ন দাও)

কাজসমূহকরতে পারিনি (১)আংশিক করেছি (২)ভালোভাবে করেছি (৩)
বিগত ছয় মাসের কাজগুলো ফিরে দেখা   
আগামী এক সপ্তাহের সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব করা   
বাজেট প্রণয়নের অনুশীলন করা   
পরিবারের পারিবারিক বাজেট প্রণয়ন করা   
আর্থিক ডায়রিতে পারিবারিক আয় ব্যয়ের হিসাব রাখা   
পরিকল্পিত আয় ব্যয়ের সাথে প্রকৃত আয় ব্যয়ের তুলনা করা   
পরিবারের আর্থিক কাজ চিহ্নিত করা   
পরিবারের আর্থিক কাজে সহযোগিতা করা   
কেসস্টাডি থেকে আর্থিক পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করা   
অর্থ উপার্জিত হবে একটি কাজের পরিকল্পনা করা   
মোট স্কোর: ৩০আমার প্রাপ্ত স্কোর :
অভিভাবকের মন্তব্য:
শিক্ষকের মন্তব্য :

এই অধ্যায়ের যেসব বিষয়গুলো আমাকে আরো ভালোভাবে জানতে হবে তা লিখি-

 

 

 

যে কাজগুলোর নিয়মিত চর্চা আমাকে চালিয়ে যেতে হবে সেগুলো লিখি-

 

 

 

 

Content added By
Promotion