আমাদের আজকের বিশ্বে ক্রমাগত ডিজিটালাইজেশনের সাথে ডিজাইন প্রক্রিয়াটি অসাধারণভাবে বিকশিত হয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এই প্রক্রিয়াগুলো পরিবর্তিত হওয়ার অর্থ এই নয় যে ডিজাইনাররা এখনও পেন্সিল এবং কাগজের মতো ঐতিহ্যগত গ্রাফিক্স ডিজাইনের সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করছে না । পেশাদার ডিজাইনারদের একটি শৈল্পিক প্রবণতাসহ একটি সৃজনশীল মন থাকে। একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার তার গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কিত কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করেন। যেগুলোর সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
এটি একটি ঐতিহ্যবাহী টুল যা আইডিয়া স্কেচ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি রুক্ষ ডিজাইনগুলোর লেখার দ্রুততম উপায়, যা ডিজাইনাররা অন্যান্য সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও বিকাশ করতে পারে।
কম্পিউটার একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। কেননা, এটির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যায়। যেমন লেখালেখি কাজ, প্রোগ্রামিং, হিসাব-নিকাশ, ড্রইং, তথ্য বিশ্লেষণ ইত্যাদি করা যায়। তদ্রুপ গ্রাফিক্স ডিজাইনের মতো শৈল্পিক কাজ করতে কম্পিউটার অবশ্যই দরকার। এই ডিভাইসে প্রয়োজনীয় গ্রাফিক্স প্রোগ্রাম ইনস্টল করে গ্রাফিক্স প্রোগ্রামগুলো চালু করে যেকোনো ধরনের ডিজাইন করা যায়।
দ্বিমাত্রিক (2D) গ্রাফিক্স তৈরিতে সাধারণত ৭০০০ থেকে ১৫০০০ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মানের মাদারবোর্ড নিতে হবে। যদি 3D গ্রাফিক্স এনিমেশনের কাজ করতে হয় তাহলে আর একটু আপগ্রেড মাদারবোর্ড নিতে হবে, তবে সেক্ষেত্রে দাম একটু বেশি পড়বে। মাদারবোর্ড কেনার সময় অবশ্যই প্রসেসর এর সাথে মিল রেখে মাদারবোর্ড কেনা উচিত। যদি ইন্টেলের প্রসেসর ব্যবহার হয়, তাহলে ইন্টেল এর মাদারবোর্ডই ব্যবহার করতে পারলে ভালো আর যদি রাইজনের প্রসেসর ব্যবহার করতে চাই তাহলে রাইজনের মাদারবোর্ড ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির মাদারবোর্ড রয়েছে তবে এর মধ্যে গিগাবাইট এর মাদারবোর্ড অপেক্ষাকৃত ভালো ।
গ্রাফিক্স এর কাজ করার জন্য অবশ্যই ভালো মানের প্রসেসর থাকতে হবে। সাধারণত গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা Intel অথবা AMD প্রসেসর ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রসেসর Intel, Intel core i5 / Intel core i7 প্রসেসর। তবে ইদানিং AMD-ও খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রসেসর কেনার সময় Processor Generation এবং স্পীড (GHz) কত তা দেখে কিনতে হবে। যখন পিসি কেনা হবে, তখনকার সময়ের Generation বা তার কাছাকাছি জেনারেশনের প্রসেসর কেনার চেষ্টা করতে হবে। যেমন বর্তমানে বাজারে Intel 9th Generation ও AMD 3rd Generation এর প্রসেসর পাওয়া যায়। গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করার জন্য প্রসেসর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। প্রসেসর কম্পিউটার এর বেশির ভাগ কাজ প্রসেস করে থাকে তাই ভালো প্রসেসর খুবই জরুরি। কম্পিউটারের প্রসেসরের মান যদি খারাপ হয় তাহলে যখন অনেকগুলো ফাইল বা প্রোগ্রাম একসাথে ওপেন করে কাজ করতে হয় তখন কম্পিউটার এর গতি কমে আসবে, এমনকি কম্পিউটার হ্যাং ও হতে পারে।
ভালো মানের প্রসেসর এর কার্যক্ষমতা বাড়াতে তার প্রধান মেমোরি বা র্যাম যত বেশি হবে তত কম সময়ে প্রসেসিং হবে। গ্রাফিক্স ডিজাইনে ফটোশপ অনেক জনপ্রিয় একটি সফটওয়্যার। ফটোশপ চালাতে মেমোরি বা র্যাম বেশি প্রয়োজন হয় তাই র্যাম যতো বেশি হবে ফলে কাজ করতে সুবিধা হবে। ফটোশপ সব সময় অনেক ডেটা নিয়ে কাজ করে আর এই ডেটাগুলো কম্পিউটার র্যাম এ জমা থাকে তাই র্যাম এর স্পেস বেশি থাকা প্রয়োজন। যখন অনেক বড় বড় ফাইল নিয়ে কাজ করা হয়, তখন র্যাম যদি কম হয় তাহলে প্রোগ্রাম স্লো হয়ে যাবে, আর এই স্লো বা হ্যাং হওয়ার কারণে কাজটি সঠিক সময় শেষ করা হবে না। তাই কাজের উপর নির্ভর করে র্যাম ৮-১৬ গিগাবাইট এর মধ্যে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
জেনে রাখো : একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যদি উইন্ডোজ এর ৬৪ বিট ব্যবহার করা হয় আর ফটোশপ যদি ৬৪ বিটে ইনস্টল না করা হয় তাহলে কম্পিউটারে বেশি র্যাম কোন কাজে আসবে না। যদি মনে করা হয়। ১৬ গিগাবাইট ব্যবহার করবো সে ক্ষেত্রে ৮ গিগাবাইট এর দুইটি র্যাম একসাথে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোর সিরিজের প্রসেসর আর ৪ জিবির উপর র্যাম থাকলে কাজে দারুন গতি আসে। |
---|
র্যাম একটি বেশি আরেকটি কম হলে কাজ ঠিকমত হবে না, কাজের জন্য দুটোর মিলবন্ধন থাকা দরকার। আর গ্রাফিক্স কার্ড (জিপিইউ) খুব গুরুত্বপূর্ণ যদি থ্রিডি বা অন্য কোন চাপের কাজ করতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে CORE i3 +8GB RAM CORE i7 4 GB RAM। সবসময় RAM-এর চেয়ে বেশি নেওয়া ভালো। বাজারে অনেক কোম্পানির র্যাম পাওয়া যায়। Twinmos / Apacer / A Data কোম্পানির DDR3 / DDR4 ভার্সনের ৮ জিবি র্যাম নেওয়া যায়।
ITB Harddisk প্রয়োজন হতে পারে এবং C ড্রাইভের জন্য 120 / 128 GB এই SSD হার্ডডিস্ক নেওয়া যেতে পারে, এতে করে কম্পিউটার কয়েক গুণ বেশি গতি বৃদ্ধি হবে।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য 22" মনিটর হলে ভালো হবে। Dell/HP / Asus ব্রান্ড মনিটর বর্তমানে জনপ্রিয়। বেশিরভাগ গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা Dell S2218H 21.5 Inch Full HD LED Borderless মনিটর ব্যবহার করে থাকেন।
আলাদা ভাবে গ্রাফিক্স কার্ড লাগানো যায়, কিন্তু গ্রাফিক্স কার্ড বেশ দামি তাই থ্রিডি এনিমেশন অথবা ভিডিও এডিটিং এর দিকে না গেলে মাদারবোর্ড এর সাথে যে গ্রাফিক্স কার্ড থাকে সেটাই যথেষ্ট। তবে যদি আলাদা গ্রাফিক্স কার্ড লাগাতে চাই তাহলে OpenCL capable GPU, CUDA cores দরকারি নয়। অ্যাডোবির CS6 Mercury ইঞ্জিন OpenGL and OpenCL এর কাজ করে। তাই গ্রাফিক্স কার্ড সাথে CUDA cores দরকার নেই ।
বেশি স্পেস এর র্যাম, ভালো মানের প্রসেসর, গ্রাফিক্স কার্ড মনিটর থাকলেও কোন লাভ নেই। কারণ ভালো কালার সিস্টেম এর মনিটর নিতে হবে, যার সাইজ মিনিমাম 1920 x 1200 পিক্সেল ডাইমেনশন, 21-24 ইঞ্চি। যদি প্রিন্ট ডিজাইন এর কাজ করা হয়, কালার কেলিব্রাটর (Color Calibrate) সেট আপ করে নিতে হবে। কারণ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মনিটরে যে কালার দেখায় তা প্রিন্ট করার পর সে রকম কালার পাওয়া যায় না। মার্কেটে অনেক ব্রান্ডের মনিটর আছে তবে ২১-২৪ ইঞ্চি এর মধ্যে মনিটর ব্যবহার করলে ভালো হয় কিন্তু সাইজের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কালার সিস্টেম।
দীর্ঘ সময় ব্যবহারের জন্য A4 Tech বা Logitech কী-বোর্ড ও মাউস ব্যবহার করা যেতে পারে।
👤নিজে করো : ছকে গ্রাফিক্স ডিজাইনে ব্যবহৃত বিভিন্ন হার্ডওয়্যার এর নাম দেওয়া আছে। এগুলোর ১টি করে উদ্দেশ্য লিখ। একটি করে দেখানো হলো।
হার্ডওয়্যারের নাম | কাজ/উদ্দেশ্য |
---|---|
মাদারবোর্ড | দ্বিমাত্রিক (2D) গ্রাফিক্স তৈরিতে বা 3D গ্রাফিক্স এনিমেশনের কাজ এর জন্য মাদারবোর্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। |
প্রসেসর | |
র্যাম | |
গ্রাফিক্স কার্ড |