গ্রাফিক্স ডিজাইন মূলত সফটওয়্যার নির্ভর একটি সেক্টর। এখানে যাই করা হউক না কেন, সফটওয়্যারের প্রয়োজন হবেই। তাই সফটওয়্যারকে গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রাণ বলা যেতে পারে। তবে সব সফটওয়্যার দিয়েই আবার গ্রাফিক্স ডিজাইন করা সম্ভব নয়। গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য আলাদা স্পেশাল কিছু সফটওয়্যার রয়েছে, যেগুলো শুধুমাত্র বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিক্স ডিজাইন এ ব্যবহৃত হয়। আবার গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার গুলোকে বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়। এক্ষেত্রে একেক ধরনের সফটওয়্যার গ্রাফিক্স ডিজাইনের একেকটি কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন— কতগুলো সফটওয়্যার দিয়ে শুধু ফটো এডিটিং করা যায়। আবার লোগো, ব্যানার, পোস্টার ইত্যাদি ডিজাইনের জন্য আরেক ধরনের সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়। এরপর এনিমেশন ও থ্রিডি মডেলিং এর কাজের জন্য প্রয়োজন হয় অন্য আরেক ধরনের সফটওয়্যার। নিচে কয়েকটি সফটওয়্যার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
অ্যাডোবি ফটোশপ মূলত একটি ফটো এডিটিং টুল ও গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার যা অ্যাডোবি উইন্ডোজ ও ম্যাক কম্পিউটারের জন্য তৈরি করা হয়। এটা তৈরির পর থেকেই গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ফটো এডিটিং এর বাজারে এটি নিজের উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিতে সক্ষম হয়। শুরুতে অনেকেই মনে করতো যে, ফটোশপ দিয়ে শুধুমাত্র ছবিই সম্পাদন করা যায়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি সবার অবগত হয় যে ফটোশপের কার্যপরিধি শুধু ছবি সম্পাদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না, বরং এটি দ্বারা সুন্দর গ্রাফিক্স তৈরি করা সম্ভব। তাছাড়া গ্রাফিক্স ডিজাইনের পাশাপাশি ওয়েব ডিজাইনের ক্ষেত্রেও ফটোশপের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্লাগ-ইন, ব্রাশ, অ্যাকশন কাজকে করে তোলে আরো বেশি সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। ফটোশপের ফাইল ফরমেটের নাম হলো psd।
ফটোশপে অন্যান্য অনেক সফটওয়্যারের মতোই অ্যাড-অন ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে যাকে প্লাগ-ইন বলে । অ্যাডোবি নিজের জন্য কিছু প্লাগ-ইন তৈরি করলেও অ্যাডোবির বেশির ভাগ প্লাগ-ইনই থার্ড পার্টি কোম্পানিগুলো তৈরি করে থাকে। প্লাগ-ইন কয়েক ধরনের হতে পারে। যেমন— ফিল্টার, এক্সপোর্ট, ইমপোর্ট, সিলেকশন, কালার কারেকশন এবং অটোমেশন। এদের মধ্যে বেশির ভাগ প্লাগ-ইনই ফিল্টার জাতীয় প্লাগ-ইন যা 8bf প্লাগ-ইন হিসেবেও পরিচিত। ফিল্টার জাতীয় প্লাগ-ইনগুলো সাধারণ ছবিকে সম্পাদন করে অথবা নতুন কন্টেন্ট তৈরি করার কাজ করে থাকে ।
ছবি সম্পাদনের জন্য অ্যাডোবির রয়েছে বেশ কিছু বিল্ট-ইন টুলস। যখন ইউজার ফটোশপ ওপেন করা হয়, তখন ফটোশপ স্ক্রিনের বাম পাশে মাল্টিল্যাংগুয়াল টুলবার এসে উপস্থিত হয়। কাজের ধরন অনুযায়ী ফটোশপের টুলসগুলোকে ড্রইং, পেইন্টিং, মেজারিং ও নেভিগেশন, সিলেকশন, টাইপিং ও রিটাচিং ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায় । ফটোশপের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত টুলগুলোর মধ্যে পেন টুলস, ক্লোন ষ্টাম্প টুলস, শেপ টুলস, মেজারিং এন্ড নেভিগেশন টুলস, ক্রপিং টুলস, স্লিকিং টুলস, মুভিং টুলস, মার্ক টুলস, ল্যাসো টুলস, ম্যাজিক ওয়ান্ড টুলস, ইরেজার টুলস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর অ্যাডোবি কোম্পানির তৈরি সবচেয়ে ভালো ভেক্টর ডিজাইনিং সফটওয়্যার হিসেবে পরিচিত। এটি অ্যাডোবি সিস্টেমের অন্যতম সেরা একটি অ্যাডোবি ডিজাইন সফটওয়্যার। ভেক্টর ডিজাইনিং সফটওয়্যার হওয়ার কারণে অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর দ্বারা ইলাস্ট্রেশন অংকন, কার্টুন, ডায়াগ্রাম, চার্ট, লোগো ইত্যাদি খুব সহজেই তৈরি করা যায়। ভেক্টর হওয়ার কারণে ইলাস্ট্রেটর ডিজাইন রেজুলেশন ও গুণগত মানের কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়াই ভেক্টরকে যে কোন সাইজে পরিবর্তন করতে পারে। যা অ্যাডোবির অন্য কোন সফটওয়্যার দ্বারা করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ভেক্টর ডিজাইনের ক্ষেত্রে রেজুলেশনের কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়াই ডিজাইনের সাইজ পরিবর্তন, লাইনগুলোর ইচ্ছা অনুযায়ী দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নির্ধারণ, ফাইলের সাইজ অনেক কম ও ইলাস্ট্রেশনের জন্য সবচেয়ে ভালো হওয়ায় ইলাস্ট্রেটর ডিজাইনারদের প্রথম পছন্দ হিসেবে পরিগণিত হয়।
তবে সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও থাকা একটি সাধারণ ব্যাপার। অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর এর অসুবিধাগুলো হলো এর দ্বারা তৈরিকৃত ড্রইংগুলো ফ্লাট এবং কার্টুন। তাছাড়া বাস্তবতার সাথে মিলে যায় এমন ড্রইং করা এতে খুবই কষ্টের।
অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর যেসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে লোগো ডিজাইন, ম্যাপ ড্রইং, ইলাস্ট্রেশন ড্রইং, ইনফোগ্রাফিক্স, ফটোরিয়ালিস্টিক ড্রইং, প্যাকিং ডিজাইন ইত্যাদি। অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর এবং অ্যাডোবি ফটোশপ এ দুটি সফটওয়্যারের সমন্বয়ে অসাধারণ গ্রাফিক্স তৈরি করা যায় ।
অ্যাডোবি ইনডিজাইন একটি ডেস্কটপ পাবলিশিং সফটওয়্যার। পোষ্টার, ফাইয়ার, ব্রোশিয়ার, ম্যাগাজিন, নিউজ পেপার, প্রেজেন্টেশন, বই, ই-বুক ইত্যাদি তৈরিতে অ্যাডোবি ইনডিজাইন অতুলনীয়। তাই এটি গ্রাফিক্স ডিজাইনার ও পাবলিশারদের কাছে অন্যতম সেরা অ্যাডোবি ডিজাইন সফটওয়্যার হিসেবে খুবই জনপ্রিয়।
অটোক্যাড থ্রিডি মডেলিং নিয়ে কাজ করার জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার। অটোক্যাড সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে মূলত থ্রিডি ডিজাইনিংয়ের বিভিন্ন কাজ করা হয়। বিশেষ করে প্রফেশনাল থ্রিডি ডিজাইনারদের পছন্দের একটি সফটওয়্যার হলো অটোক্যাড। অটোক্যাডের সাহায্যে সাধারণ ড্রইং ছাড়াও ডিজাইন, ব্লক, সিথল, লোগো ডিজাইন, গ্রিল ডিজাইন, এমব্রয়ডারী ডিজাইন করা যায়।
অ্যাডোবি ড্রিমওয়েভার অ্যাডোবির একটি প্রোপাইটরি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট টুল। অ্যাডোবি ড্রিমওয়েভার ১৯৯৭ সালে তৈরি করা হয়েছিল এবং ২০০৫ সাল পর্যন্ত এটি শুধুই ড্রিমওয়েভার হিসেবেই পরিচিত ছিল। বর্তমানে, এটি অ্যাডোবি ডিজাইন সফটওয়্যার হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়।
আমরা সবাই জানি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করার জন্য এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট, পিএইচপি এর মতো ল্যাংগুয়েজ জানা প্রয়োজন। বতর্মান সময়ে জব মার্কেটপ্লেসগুলোতেও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর উপরে প্রচুর কাজ থাকে। অনেকেই আবার এটিকে মূল পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এর ভীতির কারণে অনেকেই এ পেশায় আসতে ভয় পায়। আর তাদের জন্যই আদর্শ হলো অ্যাডোবি ড্রিমওয়েভার। অ্যাডোবি ড্রিমওয়েভারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি প্রোগ্রামিং জ্ঞান ছাড়াই একজন ডিজাইনারের ভিজ্যুয়াল কর্মকে কোডিং এ রূপান্তরিত করে ওয়েবসাইট তৈরিতে সক্ষম। আর বিশ্বজুড়ে ডিজাইনারদের কাজ করার সুবিধার্থে এটিতে রয়েছে মাল্টিল্যাংগুয়াল ফাংশন যার মাধ্যমে সহজেই নিজ মাতৃভাষায় এটিকে ইনস্টল ও কাজ করতে পারে।
এই সফটওয়্যারটি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার এর ডিজাইনকে, আরও কিছুটা সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা পালন করে। যদি ওয়েব ডিজাইন এবং গ্রাফিক্স এডিটিং উভয়কে একসাথে পেতে হয় তাহলে কোরেল ড্র হতে পারে প্রথম পছন্দ। ড্রিম ওয়েভার এবং ইলাস্ট্রেটর, ইন ডিজাইন এর যৌথ সুবিধা পেতে পারে একটিতেই। আর সূক্ষ্মভাবে ডিজাইন এর ক্ষেত্রেও কোরেল ড্র সামনের সারির সফটওয়্যারগুলোর একটি।
অ্যাডোবি আফটার ইফেক্ট অ্যাডোবির তৈরি ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট, মোশন গ্রাফিক্স এবং কম্পোস্টিং অ্যাপ্লিকেশন যা চলচ্চিত্রের পোষ্ট প্রোডাকশন এবং টেলিভিশন প্রোডাকশনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাছাড়া নন-লাইনার এডিটর, অডিও এডিটর ও মিডিয়া ট্রান্সকোডার হিসেবেও অ্যাডোবি আফটার ইফেক্টের ব্যবহার কম নয়। অ্যাডোবি আফটার ইফেক্টের প্লাগ-ইন এর হিসাব করতে গেলে এটিকে অ্যাডোবি ফটোশপের সাথে তুলনা করলে ভুল হবে না। ফটোশপের মতো অ্যাডোবি আফটার ইফেক্টেরও রয়েছে অনেক বিস্তৃত প্লাগ-ইন সাপোর্ট। তাছাড়া থার্ড পার্টি প্লাগ-ইন তো আছেই। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো থ্রিডি ইফেক্ট। অ্যাডোবির আফটার ইফেক্ট থ্রিডি ইফেক্ট রেন্ডার করতে সক্ষম। তাছাড়া এটি বেসিক 2D লেয়ার থেকেও 3D লেয়ার কনভার্সনের ক্ষেত্রে অসাধারণ। থ্রিডি ইফেক্ট ছাড়াও অ্যাডোবির আফটার ইফেক্টের রয়েছে বেশ কিছু প্লাগ-ইন যা থেকে ভিডিওকে চলচ্চিত্র বা কার্টুনের মতো করে তৈরি করা যায়। আগুন, ধোয়া অথবা পানির মতো ইফেক্ট তৈরি করা সম্ভব। আমাদের দেশে প্রাথমিক পর্যায় থেকে অ্যাডভান্সড ভিডিও এডিটিং এর জন্য অ্যাডোবির আফটার ইফেক্টের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
■ নিজে করো : ছকে বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার নাম দেওয়া আছে। এদের ১টি করে ব্যবহার লিখ।
সফটওয়্যার নাম | কাজ/ব্যবহার |
---|---|
অ্যাডোবি ফটোশপ | |
অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর | |
অ্যাডোবি ইনডিজাইন | |
অটোক্যাড | |
অ্যাডোবি ড্রিমওয়েভার | |
কোরেল ড্র | |
অ্যাডোবি আফটার ইফেক্ট | |
ব্রেন্ডার |