চলো বৃত্ত চিনি
ছবিগুলো লক্ষ করো। প্রতিদিন আমরা এই ধরনের কিছু জিনিস দেখি ও ব্যবহার করি। ছোট বেলায় এই ধরনের কিছু বস্তু তৈরি করে খেলা-ধূলাও করেছি তাইনা?
প্রত্যেকটি ছবিতেই একই ধরনের একটি জ্যামিতিক আকৃতি দেখা যাচ্ছে। ভেবে দেখতো এই ধরনের জ্যামিতিক আকৃতিকে কী বলা হয়? হ্যাঁ ঠিকই ভাবছো? জ্যামিতিক আকৃতিটি বৃত্তাকার।
দলগত কাজ: "বৃত্তাকার বস্তুর নাম লেখার প্রতিযোগিতা"। সময়ঃ ৫ মিনিট। দলের প্রত্যেকে নিজ নিজ খাতায় বৃত্তাকার বস্তুর নাম লিখবে। যে সবচেয়ে বেশি নাম লিখতে পারবে, সে জয়লাভ করবে। |
আয়তাকার কাগজ দিয়ে বৃত্ত বানাই
একটি পিন, একটি পেনসিল, দুইটি ছোট ছিদ্রসহ একটি আয়তাকার কাগজ সংগ্রহ করি। এবার নিচের চিত্র অনুযায়ী এগুলো ব্যবহার করে খাতায় একটি বক্ররেখা অঙ্কন করি। আমরা যদি একবার গোলাকারে পেনসিলটি ঘুরিয়ে আনি, তাহলে কেমন আকৃতি তৈরি হবে?
আমরা যদি একবার পেনসিলটিকে গোলাকারে ঘুরিয়ে আনি, তাহলে একটি সুন্দর গোল আকৃতি পাব। এই গোল আকৃতিটিকে বৃত্ত বলা হয়।
কাগজ কেটে বৃত্ত বানাই
একটি সাদা বা রঙ্গিন কাগজের উপর কাপ বা থালা বা গ্লাস উপুর করে রাখি। এক হাত দিয়ে বস্তুটি চেপে ধরে অপর হাত দিয়ে একটি কলম বা সরু পেন্সিলের মাধ্যমে বস্তুটির গাঁ ঘেষে নিচের চিত্রের মতো চারদিক ঘুরিয়ে দাগ দিই। এবার বস্তুটি সরিয়ে নিলে কাগজে একটি গোলাকার আবন্ধ বক্ররেখা দেখা যাবে।
হলুদ কাগজে আঁকা গোলাকার আবদ্ধ বক্ররেখাটিকে আমরা বৃত্ত (circle) বলে থাকি। বৃত্তের কোনো শীর্ষবিন্দু থাকে না। তোমরা কী বলতে পারবে, কেন বৃত্তের শীর্ষবিন্দু থাকে না?
আমরা জানি, ত্রিভুজের তিনটি, চতুর্ভুজের চারটি শীর্ষবিন্দু থাকে, তাই না? এভাবে পঞ্চভুজের পাঁচটি, ষড়ভুজের ছয়টি ইত্যাদি। অর্থাৎ বহুভুজের বাহুর সংখ্যা যত হবে তার শীর্ষবিন্দুর সংখ্যা ঠিক ততই হবে। কোনো বহুভুজের বাহুর সংখ্যা অসীম হলে তার শূর্ষবিন্দুর সংখ্যাও অসীম হবে। তখন বহুভুজটির বাহুগুলো একটি আবদ্ধ বক্ররেখা বা বৃত্তে পরিণত হয়।
নিচের চিত্রটি ভালোভাবে লক্ষ করলে বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে।
দড়ি ও পেরেক ব্যবহার করে মাটির উপর বৃত্ত বানাই
দিশা দড়ি ও পেরেক ব্যবহার করে মাটির উপর বৃত্ত আঁকার সিদ্ধান্ত নেয়। দড়ির দুই প্রান্তে দুইটি পেরেক বেঁধে নেয়। এবার সে তার বন্ধু মিতাকে দড়ির এক প্রান্তে বাঁধা পেরেকটি মাটির সাথে চেপে ধরতে বলে। দিশা দড়ির অপর প্রান্তে বাঁধা পেরেকটি টেনে ধরে মাটির উপর একটি বৃত্ত তৈরি করে। তাদের তৈরি করা বৃত্তটি নিচের চিত্রের মতো
দলগত কাজ:
কতগুলো ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের দড়ি ব্যবহার করে মাটিতে দিশার মতো বৃত্ত তৈরি করো। দলগুলোর নাম দাও। প্রত্যেক দলের তৈরি করা বৃত্তগুলো পর্যবেক্ষণ করো এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খাতায় লিখ।
এভাবে আঁকা বৃত্তগুলো একেবারে নিখুঁত নাও হতে পারে। তবে পেন্সিল-কম্পাস ব্যবহার করে আমরা নিখুঁতভাবে বৃত্ত অঙ্কন করতে পারি। সেক্ষেত্রে কম্পাসের কাঁটাটি কাগজের উপর চেপে ধরে অপর প্রান্তে সংযুক্ত পেন্সিলটি কাগজের উপর চারদিকে ঘুরিয়ে আনলেই একটি বৃত্ত আঁকা হয়ে যাবে, যেমনটি চিত্রে দেখানো হয়েছে
এক্ষেত্রে কাগজের উপর যে বিন্দুতে কম্পাসের কাঁটাটি চেপে ধরেছ, সেই বিন্দুটিই হবে বৃত্তটির কেন্দ্র (centre)। তাহলে, পাশের চিত্রের ০ বিন্দু বৃত্তটির কেন্দ্র হবে আর যে বক্ররেখাটি বৃত্তকে আবদ্ধ করে রেখেছে তাকে বলা হয় পরিধি (circumference)। এবার চলো ০ বিন্দু থেকে কাগজের উপর আঁকা আবদ্ধ বক্ররেখা অর্থাৎ বৃত্তটির দূরত্ব মেপে দেখি। এই দূরত্ব মাপার জন্য আবদ্ধ বক্ররেখাটির উপর কয়েকটি বিন্দু A, B, C নিয়ে কেন্দ্র থেকে বিন্দুগুলো পর্যন্ত রেখাংশগুলো আঁক। এবার স্কেলের সাহায্যে OA, OB এবং OC রেখাংশগুলোর দৈর্ঘ্য পরিমাপ করো। কী লক্ষ করলে? দৈর্ঘ্যগুলো কি সমান? রেখাংশগুলোর প্রত্যেকটিই তোমার আঁকা বৃত্তটির ব্যাসার্ধ (radius)। সুতরাং আমরা বলতে পারি, আবদ্ধ বক্ররেখা বা বৃত্তের উপরস্থ যেকোনোরে বিন্দু বৃত্তটির কেন্দ্র থেকে সমদূরবর্তী এবং কোনো বৃত্তের সকল ব্যাসার্ধই পরস্পর সমান।
বৃত্তের ব্যাসার্ধ মাপি
পেনসিল-কম্পাস দিয়ে তুমি যখন খাতায় বৃত্ত আঁক, তখন খুব সহজেই বৃত্তটির কেন্দ্র চিহ্নিত ও ব্যাসার্ধ পরিমাপ করতে পারো। কিন্তু আমাদের চার পাশে ছোট-বড় অনেক বৃত্তাকার জিনিসপত্র দেখা যায় যাদের কেন্দ্র চিহ্নিত নাই বিধায় ব্যাসার্ধ সহজে পরিমাপ করতে পারি না। সেক্ষেত্রে পেনসিল-কম্পাস ছাড়াও বিকল্প ভাবে বৃত্তাকার বস্তুর ব্যাসার্ধ পরিমাপ করা যাবে।
জোড়ায় কাজ: বোতলের ছিপির ব্যাসার্ধ মাপি
শিক্ষকের নির্দেশনা মতো দলের প্রত্যেকেই কমপক্ষে তিনটি করে একই মাপের ছিপি সংগ্রহ করে নিয়ে আসবে।
এবার ধারাবাহিকভাবে নিচের কাজগুলো করো:
ধাপ – ১
কাগজের উপর ছিপিগুলো পাশাপাশি সাজাও। ছিপিগুলো প্রত্যেকটির সাথে প্রত্যেকটি যেন মিশে থাকে। সোজা বোঝার জন্য চিত্রের মতো দুই পাশে দুটো কাঠি দিয়ে আটকে দাও।
ধাপ – ২
এবার যেখান থেকে ছিপি সাজানো শুরু হয়েছে এবং যেখানে ছিপি সাজানো শেষ হয়েছে সেই পর্যন্ত একটা স্কেলের সাহায্যে মেপে নাও। প্রাপ্ত ফলাফলটি খাতায় লিখে রাখো। মাপার সময় কাঠি বা বইয়ের এক ধারের সাহায্য নেয়া যেতে পারে ছিপিগুলো বসানো সোজা হয়েছে কিনা বোঝার জন্য।
ধাপ- ৩
ধাপ-২ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলকে ছিপির সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলেই প্রতিটি ছিপির ব্যাসের দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে। আর প্রতিটি ছিপির ব্যাসের অর্ধেকই হলো ব্যাসার্ধ।
বৃত্তের কেন্দ্র নির্ণয়
তুমি তোমার দৈনন্দিন জীবনে অনেক রকমের বৃত্তাকার জিনিপত্র ব্যবহার করো, যা দ্বারা তুমি চাইলে অতি সহজেই বৃত্ত আঁকতে পারবে। কিন্তু কেন্দ্র সহজে চিহ্নিত করা যায় না। তাইনা? কেন, ভেবে দেখেছো কী? চলো, কোনো বৃত্তের কেন্দ্র নির্ণয়ের কয়েকটি উপায় খুঁজি। ইতিমধ্যে সামির এবং মীরা বৃত্তের কেন্দ্র নির্ণয়ের দুইটি উপায় খুঁজে পেয়েছে। আরো কোনো উপায়ে বৃত্তের কেন্দ্র নির্ণয় করা যায় কিনা এবার তোমাকে চিন্তা করে বের করতে হবে। সামির ও মীরা দুজনেই বৃত্ত তৈরি করছে।
মীরা কেটে নেয়া বৃত্তাকার কাগজটিকে চিত্রের মতো দুইটি ভাঁজ দিয়ে সমান চার ভাগে ভাঁজ করে এবং দুইটি ভাঁজের ছেদবিন্দুকে কেন্দ্র চিহ্নিত করে। মীরা চিত্রের মতো এক ভাঁজ বরাবর স্কেল দিয়ে দাগ টেনে ব্যাসার্ধ এবং ব্যাস চিহ্নিত করে।
একক কাজ: প্রত্যেকেই মীরার মতো চুড়ি ব্যবহার করে বৃত্তাকার কাগজ কেটে কেন্দ্র নির্ণয় করো। চুড়ির পরিবর্তে কাপ বা গ্লাস বা অন্যকোনো বস্তু দ্বারাও বৃত্তাকার কাগজ কেটে নিতে পারবে। তাছাড়া কেন্দ্র নির্ণয়ে অন্য কোনো পদ্ধতিও ব্যবহার করতে পারবে। |
বস্তুর ভারসাম্য করণ
গণিত শিক্ষক রফিক স্যার মীরার কাছে জানতে চায় বৃত্তের কেন্দ্র কেন প্রয়োজন? মীরা তৎক্ষণাত উত্তর দিতে পারল না। স্যার বললেন কোনো সমস্যা নিই। এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য একটি খেলা খেললে কেমন হয়। খেলাটি কিন্তু খুবই মজার। খেলাটি হলো -
তোমার একটা আঙ্গুলের ডগায় তোমার খাবার থালা বা গোলাকার চাকতি নিচের চিত্রের মতো ধরে রাখতে হবে। প্রথমবার অন্তত ১০ সেকেন্ড রাখতে পারলেই হবে। তার আগে মাটিতে পড়তে দেওয়া যাবে না।
কী! ১০ সেকেন্ডের আগেই মাটিতে পড়ে গেল? আবার চেষ্টা করো।
কয়েকবার চেষ্টার পর মীরা থালাটির কেন্দ্র খুঁজে পেল এবং থালাটি তার আঙ্গুলের ডগায় ১০ সেকেন্ডের বেশি সময় রাখতে পারে। বার্ষিক ক্রিড়া অনুষ্ঠানে মাথায় হাঁড়ি নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতার কথা তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। ব্যাপারটা একটু ভেবে দেখতো উপরের খেলাটির সাথে হাঁড়ি খেলাটির কোনো সম্পর্ক আছে কিনা?
একক কাজ :
মীরার মতো তোমরা প্রত্যেকেই একবার চেষ্টা করে দেখতে পারো।
কাগজ কেটে লাটিম বানাই
বৃত্তের কেন্দ্র কেন প্রয়োজন চলো আরো একটি কাজের মাধ্যমে জেনে নিই। আমরা কাগজের লাটিম বানাই এবং কার লাটিম কত বেশি ঘুরে পরীক্ষা করে দেখি।
দলগত কাজ: রফিক স্যারের নির্দেশনায় শ্রেণিতে চার সদস্যবিশিষ্ট কয়েকটি দল গঠন করা হলো। সামির, মীরা, আকাশ ও প্রিয়াঙ্কা (শাপলা) দলের সদস্য। স্যার শিক্ষার্থদের উদ্দেশ্যে বললেন-
প্রথমে একটি কার্ডবোড বা অন্য কোনো শক্ত কাগজ নাও।
কাগজে একটি বৃত্ত আঁক। এবার বৃত্তক্ষেত্রটা কাঁচি দিয়ে কেটে নাও।
বৃত্ত আকৃতির কাগজের উপর একটা ছিদ্র করে তার মধ্যে দিয়ে একটা দেয়াশলাইয়ের কাঠি ঢুকাও। ব্যস তৈরি হয়ে গেল তোমাদের প্রত্যেকের লাটিম।
সামির, মীরা, আকাশ ও প্রিয়াঙ্কা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাসার্ধের চাররকম লাটিম তৈরি করে। লাটিমগুলোর ছবি নিম্নরূপঃ
ছবি দেখে তোমরা কী বলতে পারবে কার লাটিম বেশিক্ষণ ঘুরবে?
নিজেরাই এরকম বিভিন্ন লাটিম তৈরি করে ঘুরিয়ে দেখো। দেয়াশলাইয়ের কাঠিটি বৃত্ত আকৃতির লাটিমের কোথায় থাকলে লাটিম সবচেয়ে বেশি সময় ঘুরবে বলতে পারো? কেন ঘুরবে দলে আলোচনা করো।
বৃত্তের জ্যা ও চাপ সম্পর্কে জেনে নিই
দলগত কাজ:
চিত্রের মতো কাগজে একটি বৃত্ত আঁক। তারপর বৃত্তের উপর কতগুলো পিন বসিয়ে নাও। লক্ষ রাখবে, ব্যাসের দুই প্রান্তে বৃত্তের উপর যেন দুইটি পিন থাকে। রাবার দিয়ে চিত্রের মতো ব্যাস ও জ্যা তৈরি করো। প্রয়োজনে পিনগুলোর গোড়ায় বিন্দু দিয়ে চিহ্নিত করো। তারপর বৃত্তের ব্যাসার্ধ, ব্যাস, জ্যা, উপচাপ, অধিচাপ, অর্ধবৃত্তসহ সকল অঙ্গ নিয়ে সকলে আলোচনা করো। স্কেল ও সূতা ব্যবহার করে বৃত্তের ব্যাসার্ধ, ব্যাস, জ্যা, বৃত্তচাপ মেপে খাতায় লিখ। এবার নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে দেখোঃ
একক কাজ:
১. কাগজ কেটে নিচের চিত্রের মতো বৃত্তের কেন্দ্র, ব্যাসার্ধ, জ্যা এবং পরিধি তৈরি করো।
২. পেন্সিল কম্পাসের সাহায্যে খাতায় বিভিন্ন মাপের কয়েকটি বৃত্ত আঁক। বৃত্তগুলোর কেন্দ্র চিহ্নিত করো। বৃত্তগুলোর উপরে বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি বিন্দু নিয়ে কেন্দ্র থেকে বিন্দুগুলো পর্যন্ত রেখাংশগুলো আঁক। প্রতিটি বৃত্তের কেন্দ্রগামী জ্যা বা ব্যাস আঁক। এবার খাতায় নিচের ছক বা সারণিটি তৈরি করো। প্রতিটি বৃত্তের ব্যাসার্ধ ও কেন্দ্রগামী জ্যা বা ব্যাসের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে সারণিটি পূরণ করো এবং সহপাঠির সাথে ফলাফল নিয়ে আলোচনা করো।
বৃত্ত | কেন্দ্র থেকে বৃত্তের দৈর্ঘ্য বা ব্যাসার্ধ | কেন্দ্রগামী জ্যায়ের দৈর্ঘ্য বা ব্যাস | ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে বৃত্তের ব্যাসার্ধ ও কেন্দ্রগামী জ্যা বা ব্যাসের এর মধ্যকার সম্পর্ক বর্ণনা করো। |
১ |
|
|
|
২ |
|
|
|
৩ |
|
|
|
৪ |
|
|
|
৩. কাগজ কেটে ৩ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট পাঁচটি বৃত্ত তৈরি করো। বৃত্তগুলোকে নিচের চিত্রের মতো সাজিয়ে কেন্দ্রগুলো যোগ করে ইংরেজি বর্ণ W আকৃতিটি বানাও। এবার A থেকে B পর্যন্ত দৈর্ঘ্য নির্ণয় করো। C কেন্দ্রবিশিষ্ট বৃত্তটির চার পাশে এভাবে সর্বোচ্চ কয়টি বৃত্ত সাজানো যাবে?
বৃত্তের পরিধির দৈর্ঘ্য নির্ণয়
তোমরা ইতমধ্যেই জেনেছ, বৃত্তের সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্যকে বৃত্তটির পরিধি (circumference) বলা হয়। যেহেতু বৃত্ত সরলরেখা নয়, তাই রুলারের সাহায্যে বৃত্তের পরিধির দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা যায় না। পরিধির দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য তোমরা নিচের পদ্ধতিটি প্রয়োগ করতে পারো। তাছাড়া তুমি চাইলে, অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করেও বৃত্তের পরিধির দৈর্ঘ্য নির্ণয় করতে পারবে।
কিন্তু তোমাকে যদি বলা হয়, তোমার স্কুল বিল্ডিং এর গোলাকার পিলারগুলো কতটুকু মোটা বা স্কুলের বাগানের গাছগুলোর ব্যাস নির্ণয় করতে, তুমি তা কীভাবে পরিমাপ করবে? পিলার বা গাছগুলোকে তো আর রেখার উপর দিয়ে গড়িয়ে নেওয়া যাবে না। আমাদের বিকল্প চিন্তা করতে হবে।
ফিতা দিয়ে সহজেই পিলার বা গাছটি কতটুকু মোটা তা পরিমাপ করা যাচ্ছে, কিন্তু এর ব্যাস?
পিলারের দুই পাশ দিয়ে দুইটি সোজা লাঠি দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেল। এবার একটি স্কেল বা ফিতা দিয়ে লাঠি দুইটির মধ্যবর্তী দূরত্ব মেপে নাও। যে দূরত্বটা পাওয়া গেল তাই হলো গোলাকার পিলারটির ব্যাস।
বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত
আমরাতো বৃত্তের পরিধি ও ব্যাস পরিমাপ করা জানলাম। এখন বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের মধ্যেকার সম্পর্ক জানার জন্য নিচের কাজগুলো আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে করে দেখতে পারিঃ
আমরা সকালের নাস্তায় অনেকেই রুটি খেয়ে থাকি এবং রুটি দেখতে অনেকটা বৃত্তাকার, তাই না? একটি রুটির চারদিকে চিকন সূতা ঘুরিয়ে রুটির পরিধি সমান সূতা কেটে নাও। এবার রুটির মাঝামাঝি বরাবর ব্যাসের সমান করে সূতাটিকে কাটতে থাক। দেখবে তিনবার সমান করে কাটার পর ছোট্ট একটু সূতা থেকে যাবে। অর্থাৎ আমরা তিনটি পূর্ণ ব্যাস ও একটি ব্যাসের অংশ পেলাম। এখাবে বৃত্তাকার প্লেট বা থালা, তরমুজ কেটেও যাচাই করে দেখতে পারি।
তোমার ঘরে থাকা অন্য যেকোনো গোলাকার বস্তু যেমন: হাঁড়ি-পাতিল, গ্লাস, বালতি ইত্যাদির খোলা মুখ বা গোলকার টেবিলের উপরের তল, ক্যারামের গুটি, বিভিন্ন আকৃতির চুড়ি পরিমাপ করেও করতে পারো। এছাড়া লেবু, লাউ, বেগুন গোল করে কেটে দেখা যেতে পারে। কাজটি করে তুমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করলে তা পরের দিন শ্রেণিকক্ষে তোমার সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করো।
দলগত কাজ: পাই () মডেল তৈরিঃ
একটি শোলার বোর্ড বা মোটা কাগজের যেকোনোাে বোর্ডে বৃত্তাকার মডেল তৈরি করো। যেহেতু বৃত্ত একটি আবদ্ধ বক্ররেখা তাই এটি স্কেল দ্বারা সরাসরি মাপা সম্ভব নয়। সেজন্য একটি সূতা বা চিকন দড়ির একপ্রান্ত নিচের চিত্রের মতো বৃত্তটির উপরস্থ একটি পিনের সাথে বেঁধে সূতা বা দড়িটিকে বৃত্তটির উপর দিয়ে ঘুরিয়ে আনো যেন সূতাটি পিনে বাঁধা প্রান্তটিকে স্পর্শ করে। সূতার স্পর্শ বিন্দু বরাবর চিহ্নিত করো এবং কাঁচি বা ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলো। এবার সূতার কাঁটা অংশটি সোজা করে স্কেল দিয়ে মেপে নাও এবং খাতায় লিখে রাখো। এবার বৃত্তক্ষেত্রটির ব্যাস মেপে নাও।
ভিন্ন ভিন্ন ব্যাসার্ধের বৃত্তক্ষেত্র তৈরি করে দলের সকলেরই নির্দেশনা মতো কাজটি করো। খাতায় নিচের মতো একটি সারণি তৈরি করো। সারণিতে দলের সদস্যদের নাম লিখে নিজ নিজ পরিমাপগুলো লিপিবদ্ধ করে হিসাব করো।
নাম | বৃত্তের ব্যাসার্ধ | বৃত্তের ব্যাস | বৃত্তের পরিধি | পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত |
নিলীমা |
|
|
|
|
শাহেদ |
|
|
|
|
রঞ্জনা |
|
|
|
|
প্রতীক |
|
|
|
|
_____ |
|
|
|
|
সারণির ফলাফল দেখে অবাক হয়ে গেলে মনে হয়? তোমরা হয়তো ভাবছ, প্রত্যেতেই ভিন্ন ভিন্ন ব্যাসার্ধের বৃত্তক্ষেত্র নিয়েছো এবং ব্যাস ও পরিধির পরিমাপও ভিন্ন ভিন্ন হয়েছে অথচ ফলাফল সবারই প্রায় একই রকম। এটি কীভাবে সম্ভব? দলের সকলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করো।
সুতরাং সারণি পর্যবেক্ষণ করে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি কোনো বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত একটি ধ্রুবক। আর এই ধ্রুবকটি একটি গ্রিক অক্ষর Ⅱ (পাই) দ্বারা নির্দেশ করা হয়। গ্রিক বর্ণ । (পাই) গ্রিক পরিধি থেকে এসেছে। সম্ভবত ১৭০৬ সালে উইলিয়াম জোনস সর্বপ্রথম এটি ব্যবহার করেন।
অর্থাৎ বৃত্তের পরিধি ৫ ও ব্যাস d হলে, পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত = π বা c = πd
আবার বৃত্তের ব্যাস ব্যাসার্ধের দ্বিগুণ; অর্থাৎ বৃত্তের ব্যাসার্ধ হলে, d = 2r অতএব c = 2πr
প্রাচীন কাল থেকেই গণিতবিদগণ π এর আসন্ন মান নির্ণয়ের চেষ্টা করে চলেছেন। আর্কিমিডিস বৃত্তের ভিতরে ৯৬ বাহুবিশিষ্ট সুষম বহুভুজের পরিসীমা বের করে। এর আসন্ন মান 3.1419 নির্ণয় করেন। বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন π এর আসন্ন মান ১৫ ঘর পর্যন্ত সঠিক বের করেছিলেন। বৃত্তের ব্যাস 1 একক হলে, π এর আসন্ন মান নিচের চিত্রের মতো দেখানো যায়।
ভারতীয় গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজন (ডিসেম্বর ২২,
১৮৮৭ – এপ্রিল ২৬, ১৯২০) π এর আসন্ন মান দশমিকের পর মিলিয়ন ঘর পর্যন্ত সঠিক বের করেছিলেন। তবে বিশ শতকে কম্পিউটার আবিষ্কারের পর π এর আসন্ন মান নির্ণয়ে নতুন জোয়াড় আসে এবং তা চলমান আছে। প্রকৃতপক্ষে, π একটি অমূলদ সংখ্যা। [মূলদ ও অমূলদ সংখ্যার অধ্যায়ে অমূলদ সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে]। আমাদের দৈনন্দিন হিসাবের প্রয়োজনে π এর আসন্ন মান 3.14 ধরা হয়ে থাকে। তাহলে আমরা বলতে পারি, বৃত্তের পরিধি = 3.14 × বৃত্তের ব্যাস
পাই দিবসঃ
১৯৮৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (United States of America) সান ফ্রান্সিসকোর বিজ্ঞান জাদুঘরে পদার্থবিজ্ঞানী, কিউরেটর এবং শিল্পী ল্যারি শ (পূর্ণনামঃ Lawrence N. Shaw) প্রথম পাই দিবস উদযাপন শুরু হয়। কিন্তু পাইয়ের মাঝে আবার ১৪ মার্চ কোথা থেকে এলো? আর ১৪ মার্চই বা কেনো বেছে নেওয়া হলো। এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে কীভাবে তুমি প্রতিদিনের তারিখ লেখো তার উপর। আমরা সাধারণত 'প্রথমে দিন, তারপর মাস এবং তারপর বছর' অর্থাৎ ১/৪/২০০৩ মানে ১ এপ্রিল, ২০০৩। কিন্তু কোন কোন দেশ যেমন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (United States of America) 'প্রথমে মাস তারপর দিন এবং তারপর বছর' এভাবে লেখা হয়। তারমানে ৩/২৭/২০২৩ মানে হচ্ছে ২৭ মার্চ ২০২৩। আর এজন্যই পাইয়ের মান ৩.১৪১৫৯২ থেকে প্রথম ৩টি অঙ্ক নিয়ে ৩/১৪ এভাবে লেখা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেহেতু মাস/দিন/বছর এরকমভাবে লেখা হয় কাজেই ৩/১৪ মানে ১৪ মার্চ কে 'পাই দিবস' হিসেবে পালন করা হয়। ২০০৯ সালে আমেরিকায় জাতীয়ভাবে 'পাই দিবস' কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ১৪ মার্চ ছাড়াও আরো অন্য অনেক দিনকেই 'পাই দিবস' ঘোষণা করা যেতো।
উত্তরঃ |
উত্তরঃ |
উত্তরঃ |
আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে ২০১৯ সালে UNESCO তাদের ৪০ তম সাধারণ অধিবেশনে '১৪ মার্চ' কে 'আন্তর্জাতিক গণিত দিবস (International Day of Mathematics)' ঘোষণা করে।
তোমার বিদ্যালয়ে 'বন্ধুদের জন্মদিন' উদযাপনের মত করেই তোমরা 'পাই দিবস' এবং 'আন্তর্জাতিক গণিত দিবস' উদযাপন করতে পারো। পাই নিয়ে ছবি আঁকতে পারো, শুনতে পারো পাই নিয়ে তৈরি গান, পাইয়ের মতো দেখতে খাবার খেতে পারো।
একক কাজ:
নিচের ছকটি খাতায় তৈরি করে নির্দেশনা অনুসারে পূরণ করো।
একটি বৃত্তাকার পার্কের ব্যাস ও পরিধির পার্থক্য 90 মিটার। পার্কটির ব্যাসার্ধ নির্ণয় করো।
একটি গাড়ির সামনের চাকার ব্যাস 28 সেন্টিমিটার এবং পিছনের চাকার ব্যাস 35 সেন্টিমিটার। ৪৪ মিটার পথ যেতে সামনের চাকা পিছনের চাকা অপেক্ষা কত বার বেশি ঘুরবে?
বৃত্তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল (The Area of a Circle)
মীরা সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার স্কুলের সামনের মাঠটিও অনেক বড়। মাঠে প্রতিদিন সকালে সমাবেশ হয়। মাঠের ছোট ছোট সবুজ ঘাসগুলোর আলতো ছোঁয়ায় মীরার মনটা কেন জানি আনন্দে ভরে ওঠে। মাঠের পাশে ঠিক তার শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালের সাথে যে বৃত্তাকার খোলা জায়গাটুকু আছে সেখানে একটি ফুলের বাগান করার কথা অনেক দিন ধরেই মীরা ভাবছিল। একদিন সে ক্লাসের গণিত শিক্ষককে তার ইচ্ছার কথা জানায়। মীরার কথা শুনে ক্লাসের সহপাঠীরা একত্রে শিক্ষকের কাছে বাগান করার আবেদন করে। শিক্ষক তাঁর প্রিয় শিক্ষার্থীদের কথা শুনে খুব খুশি হয়। তিনি প্রধান শিক্ষক মহোদয়কে শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার কথা বলেন এবং অনুমতি পেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঐ স্থানে যান। স্থানটি প্রায় ৭ মিটার ব্যাসার্ধে একটি বৃত্তাকার জায়গা। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, আমরা যদি এখানে ফুলের বাগান করি, আমাদের বাগানটিকে পরিচর্যা করতে হবে, সার দিতে হবে। সার কেনার জন্য প্রতি বর্গমিটারে কি পরিমাণ সার লাগবে তা জানতে হবে। তোমরা কি বলতে পারবে এই ধরনের ক্ষেত্রে আমাদের কী খুঁজে বের করতে হবে? জমিটির পরিধি না এলাকা? প্রায় সকল শিক্ষার্থীই এক সাথে বলে, আমাদের প্রথমে এলাকা বা জমির ক্ষেত্রফল বের করতে হবে। আমরা তা কীভাবে নির্ণয় করবো?
সামির এবং মীরা মনে মনে বৃত্তক্ষেত্রের ছবি কল্পনা করে।
তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আমরা পূর্বের শ্রেণিতে গ্রাফ পেপার ব্যবহার করে দ্বিমাত্রিক বস্তুর ক্ষেত্রফল পরিমাপ করেছি। তাই না? একইভাবে গ্রাফ পেপার ব্যবহার করে বৃত্তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলও পরিমাপ করতে পারব।
প্রথমে বৃত্তাকার ক্ষেত্রটিকে সমান চার ভাগে ভাগ করো।
তাহলে একভাগ উপরের চিত্রের মতো হবে।
এবার গণনা করে দেখ নীল ও লাল রং এর কয়টি সম্পূর্ণ বর্গ আছে। তারপর বৃত্তের পরিধি দ্বারা কেটে নেওয়া লাল রং এর আংশিক বর্গগুলোর প্রতিটি 0.5 বর্গ সেন্টিমিটার ধরে আনুমানিক ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো।
তাহলে হিসাবটি হবে – নীল বর্গগুলোর ক্ষেত্রফল = বর্গ সেন্টিমিটার = বর্গ সেন্টিমিটার
লাল বর্গগুলোর ক্ষেত্রফল = বর্গ সেন্টিমিটার = বর্গ সেন্টিমিটার
লাল আংশিক বর্গগুলোর ক্ষেত্রফল= 0.5 বর্গ
সেন্টিমিটার = বর্গ সেন্টিমিটার
সম্পূর্ণ বর্গ ও আংশিক বর্গগুলোর ক্ষেত্রফলের সমষ্টিই হবে বৃত্তাকার ক্ষেত্রটির চার ভাগের একভাগের ক্ষেত্রফল।
সুতরাং সম্পূর্ণ বৃত্তক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল হবে = 4 বর্গ সেন্টিমিটার।
আর কোনো উপায়ে বৃত্তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায় কিনা চলো খুঁজে দেখি।
দলগত কাজ:
কাগজ কেটে বিভিন্ন রং এর এক বর্গ সেন্টিমিটার ব্লক এবং সমকোণী ত্রিভুজ দ্বারা মেপে বৃত্তের ক্ষেত্রফল পরিমাপ করো
বৃত্তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র খুঁজি
দলগত কাজ:
১. সামির তার ভাবনাটি দলের সদস্যদের সাথে আলোচনা করে। সে অনুসারে একটি আর্ট পেপার বা পুরাতন ক্যালেন্ডারের পিছনের সাদা পৃষ্ঠায় বৃত্ত এঁকে বৃত্তক্ষেত্রটি কেঁটে নেয়। এবার বৃত্তাকার ক্ষেত্রটি মাঝ বরাবর পর্যায়ক্রমে তিনবার ভাঁজ করে এবং ভাঁজ বরাবর কেটে নেয়। ফলে বৃত্তটি সমান আটটি অংশে বিভক্ত হয়। বৃত্তের টুকরোগুলোকে চিত্রের ন্যায় সাজানোর ফলে বৃত্তাকার ক্ষেত্রটি অন্য রকম একটি জ্যামিতিক আকৃতিতে রূপান্তরিত হলো।
রূপান্তরিত জ্যামিতিক আকৃতিটি একটি সামান্তরিকে মতো হবে। এক্ষেত্রে বৃত্তের আবদ্ধ বক্ররেখাটির অর্ধেক সামান্তরিকের ভূমি এবং বৃত্তের ব্যাসার্ধ সামান্তরিকের উচ্চতা হবে। এবার সামান্তরিকের ভূমি ও উচ্চতা পরিমাপ করে সহজেই এর ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যাবে? যেহেতু বৃত্তক্ষেত্রটিকে কেটে টুকরোগুলো সাজিয়ে সামান্তরিক বানানো হয়েছে, সেহেতু সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল ও বৃত্তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল সমান হবে।
২. সাবিহা বৃত্তাকার ক্ষেত্রটিকে সমান ১৬টি অংশে বিভক্ত করে। টুকরোগুলোকে পাশের চিত্রের মতো সাজিয়ে ত্রিভুজ আকৃতি খুঁজে পেল।
৩. তারেক বৃত্তাকার ক্ষেত্রটিকে সমান ১৬টি অংশে বিভক্ত করে। টুকরোগুলোকে একইভাবে সাজিয়ে সামান্তরিকের মতো আকৃতি খুঁজে পেল।
৪. মীরা আরো একটি বৃত্তক্ষেত্র কেটে নিয়ে তাকে সমান ৩২টি অংশে বিভক্ত করে। টুকরোগুলোকে একইভাবে সাজিয়ে নিম্নরূপ চিত্রটি পেল।
মীরা টুকরোগুলোকে সাজিয়ে যে জ্যামিতিক আকৃতিটি পেল তা একটি আয়তরূপ। এক্ষেত্রে আয়তের দৈর্ঘ্য হবে বৃত্তক্ষেত্রটির অর্ধ পরিসীমা এবং প্রস্থ হবে বৃত্তক্ষেত্রটির ব্যাসার্ধের সমান।
৫. কোনো বৃত্তাকার ক্ষেত্রকে সামির, সাবিহা, তারেক ও মীরার মতো যদি আমরা ৬৪ বা তারও বেশি সমান অংশে বিভক্ত করি এবং উপরের চিত্রের মতো সাজাই, সেক্ষেত্রে বৃত্তক্ষেত্রটি আয়তক্ষেত্রের মতই হবে। আমরা যদি নিচের চিত্রটি ধাপে ধাপে পর্যবেক্ষণ করি, তবে বিষয়টি সম্পর্কে আরো পরিস্কার ধারণা পাব।
এবার চলো নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজি।
= পরিধির অর্ধেক ব্যাসার্ধ
= বর্গ একক।
জোড়ায় কাজ:
(ক) প্রত্যেক দল ভিন্ন ভিন্ন ব্যাসার্ধে বৃত্ত অঙ্কন করো। ক্ষুদ্রতম বর্গগুলো গণনা করে বৃত্তক্ষেত্রটির আনুমানিক ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো।
(খ) একই বৃত্তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় করে যাচাই করো।
একক কাজ:
১. তোমরা প্রত্যেকে পছন্দমতো ভিন্ন ভিন্ন ব্যাসার্ধের কয়েকটি বৃত্ত আঁক। বৃত্তক্ষেত্রগুলোর ব্যাসার্ধ, ব্যাস, পরিধি পরিমাপ করো। তারপর ছক কাগজ ও সূত্র দ্বারা ক্ষেত্রফল পরিমাপ করে সারণিটি পূরণ করো।
বৃত্ত | ব্যাসার্ধ | ব্যাস | পরিধি (সূতা বা দড়ি ব্যবহার করে) | পরিধি (সূত্র ব্যবহার করে) | ক্ষেত্রফল (ছক কাগজ ব্যবহার করে) | ক্ষেত্রফল (সূত্র ব্যবহার করে) | ছক কাগজ ও সূত্র ব্যবহার করে পাওয়া ক্ষেত্রফলদ্বয়ের মধ্যে তুলনা |
১ |
|
|
|
|
|
|
|
২ |
|
|
|
|
|
|
|
৩ |
|
|
|
|
|
|
|
৪ |
|
|
|
|
|
|
|
২. নিচের ছকটি খাতায় আঁক এবং হিসাব করে খালি ঘরগুলো পূরণ করো।
৩. পাশের চিত্রে দুইটি সমকেন্দ্রিক বৃত্ত প্রদর্শিত আছে। OAB সমকোণী ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল ১৮ বর্গ মিটার।
ক) ছোট বৃত্তটির পরিধি নির্ণয় করো।
খ) বড় বৃত্তটির পরিধি নির্ণয় করো।
গ) ছোট বৃত্তটির ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো।
ঘ) বড় বৃত্তটির ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো।
ঙ) সবুজ অংশের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো।
৪. একটি পুরাতন ক্যালেন্ডারের পিছনের পৃষ্ঠায় ১৫ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের বৃত্ত আঁক। এবার ক্যালেন্ডারের বৃত্তাকার অংশটুকু কেটে নাও। বৃত্তাকার অংশ থেকে ২.৫ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের দুইটি বৃত্তাকার অংশ এবং ৩.৫ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ও ২ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি আয়তাকার অংশ কেটে ফেলে দাও। বাকী অংশটুকু তোমার পছন্দমতো রং করো। তোমার রং করা অংশের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো।
৫. একটি বৃত্তাকার পার্কের ব্যাস ২৫ মিটার। পার্কটিকে বেষ্টন করে ভিতরে ২ মিটার প্রশস্ত একটি পথ আছে। পথটির ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো
৬. কাগজ কেটে পাশের চিত্রের মতো ৬ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট একটি বৃত্তক্ষেত্র কেটে নাও। এবার ৫ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট আরো চারটি বৃত্তক্ষেত্র কেটে নাও।
এবার ছোট বৃত্তক্ষেত্রগুলো তোমার পছন্দমতো রং করে উপরের চিত্রের মতো বড় বৃত্তের ভিতরে আঁঠা দিয়ে বসাও। এখন নিচের ছকটি খাতায় তৈরি করে ফাঁকা ঘরগুলো পূরণ করো।
ক্রমিক নং | বৃত্তের ব্যাসার্ধ | ব্যাস | পরিধি | ক্ষেত্রফল |
১ | ৬ সেন্টিমিটার |
|
|
|
২ |
| ৫ সেন্টিমিটার |
|
|
৩ | বড় বৃত্তের যে অংশটুকু রং করা হয়নি তার ক্ষেত্রফল |
|
|
৭. ফাতিন তার বড় বোন লামিয়ার সাথে পিজ্জা হাটে গেল পিজ্জা কিনবে বলে। দোকানে ঝুলিয়ে রাখা মূল্য তালিকায় দুই ধরনের প্যাকেজ দেখতে পেলো। উভয় প্যাকেজের পিজ্জার উচ্চতা সমান।
ক. ৩৫ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট একজোড়া পিজ্জার দাম ৩০০ টাকা
খ. ৩০ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট তিনটি পিজ্জার দাম ৩৫০ টাকা
কোন প্যাকেজটি কিনলে ফাতিন ও লামিয়া লাভবান হবে?
৮. বৃত্তাকার সামগ্রী প্রদর্শন ও খুঁটিনাটি হিসাব সংক্রান্ত প্রজেক্টঃ শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ও পরিচিত বৃত্তাকার জিনিসপত্র সংগ্রহ করে জিনিসপত্রগুলোর ব্যাসার্ধ, ব্যাস, পরিধি ও ক্ষেত্রফল মেপে হিসাবসহ প্রদর্শন করো। দলের সকল সদস্য পরস্পরের সাথে আলোচনা করে অন্যান্য দলের সামনে উপস্থাপন করো।
৯. রুমাল, নেপকিন, কুশন বা যেকোনো কাপড়ে বিভিন্ন রকমের সূতা দিয়ে নকশা তৈরি করা নীতুর পছন্দের একটি কাজ। লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে সে কাপড়ের উপর সুই-সুতা দিয়ে বিভিন্ন রকমের নকশা তৈরি করে। নীতু যে বৃত্তাকার চাকতিটি (Embroydery Hoop) ব্যবহার করে তার ব্যাসার্ধ ১৫ সেন্টিমিটার।
ক) চাকতিটির পরিধি নির্ণয় করো।
খ) চাকতির ভিতরের কাপড়ের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো।
আরও দেখুন...