টিস্যু ও টিস্যুতন্ত্রঃ একই উৎস থেকে সৃষ্ট, একই ধরনের কাজ সম্পন্নকারী সমধর্মী একটি অবিচ্ছিন্ন কোষগুচ্ছকে বলা হয় টিস্যু বা কোষকলা বলা হয়। আবার কতকগুলো টিস্যু যখন উদ্ভিদের এক একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে অবস্থান করে নানা ধরনের কাজ সম্পন্ন করে তখন তাদের সমষ্টিকে টিস্যুতন্ত্র বলা হয়। সাধারণত একটি উদ্ভিদে বিভিন্ন ধরনের টিস্যু থাকে। তবে সব রকমের টিস্যুকে, টিস্যু গঠনকারী কোষের বিভাজন অনুযায়ী দুটি ভাগে ভাগ করা যায়; যথা-
ভাজক টিস্যু ও স্থায়ী টিস্যু।
তরুক্ষীর টিস্যু
জাইলেম
ফ্লোয়েম
প্যারেনকাইমা
ভাজক টিস্যুঃ যে সব টিস্যুর কোষ বিভাজন ক্ষমতা রয়েছে সেগুলােকে ভাজক টিস্যু বলে। উদ্ভিদের বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে (যেমন – কান্ড ও মূলের শীর্ষে, কচি পাতায়), পুষ্প, কান্ডমুকুল, পর্বমধ্য ও কান্ডের পরিধিতেও ভাজক টিস্যু থাকে। ভাজক কোষ দিয়ে ভাজক টিস্যু গঠিত হয়৷ এই টিস্যুর কোষগুলো বার বার বিভক্ত হয়, ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটে। ভাজক টিস্যু হতেই অন্যান্য স্থায়ী টিস্যু সৃষ্টি হয়৷
ভাজক টিস্যুর বৈশিষ্ট্যঃ
*ভাজক টিস্যুর কোষগুলো আকৃতিতে সমান ব্যাসবিশিষ্ট ও আয়তনে খুবই ছোট;
*অপরিণত কোষে গঠিত ভাজক টিস্যু সর্বদাই বিভাজনক্ষম ও মাইটোসিস পদ্ধতিতে বরাবর বিভাজিত হয়;
*কোষগুলো সাধারণত আয়তাকার, ডিম্বাকার, পঞ্চভুজ বা ষড়ভুজাকার হয়;
*কোষগুলো পেকটিন ও সেলুলোজ নির্মিত এবং পাতলা এবং এই কোষে সাধারণত সেকেন্ডারি কোষ প্রাচীর থাকে না;
*কোষে ঘন দানাদার সাইটোপ্লাজম ও বড় আকারের নিউক্লিয়াস থাকে;
*কোষে সাধারণত কোনো কোষ গহ্বর থাকে না থাকলেও আকারে ক্ষুদ্র ও সংখ্যায় অগণিত যাদের প্রো ভ্যাকুওল বলে;
*কোষগুলো আকারে ছোট এবং দৈর্ঘ্য প্রস্থের প্রায় সমান;
*কোষে বিদ্যমান প্লাস্টিড আদি প্রকৃতির ( প্রো-প্লাস্টিড);
*এ টিস্যু বিপাক হার বেশি বলে কোষে কোনো প্রকার বর্জ্য পদার্থ, সঞ্চিত খাদ্য ও ক্ষরিত পদার্থ থাকে না;
*এই টিস্যু সাধারণত মূল ও কান্ডের অগ্রভাগে অবস্থান করে;
*ভাজক কলার কোষগুলোর মাঝে সাধারণত কোনো আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকে না৷
ভাজক টিস্যুর কাজঃ
শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যুর বিভাজনের মাধ্যমে উদ্ভিদ দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায়। এতে ছােট গাছ ক্রমে উঁচু ও লম্বা হয়। পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যুর বিভাজনের ফলে উদ্ভিদের ব্যাস বৃদ্ধি পায়। এতে সরু কাণ্ড ক্ৰমে মােটা হয়। ভাজক টিস্যু থেকে স্থায়ী টিস্যুর সৃষ্টি হয়।
১. উৎপত্তি অনুসারে :
ক) প্রোমেরিস্টেম বা প্রারম্ভিক ভাজক টিস্যু (Promeristem) : মূল বা কাণ্ডের অগ্রভাগের শীর্ষদেশে একটি ক্ষুদ্র অঞ্চল রয়েছে যেখান থেকে পরবর্তীতে প্রাইমারি ভাজক টিস্যুর উৎপত্তি ঘটে, তাকে প্রারম্ভিক ভাজক টিস্যু বলে। এ অঞ্চল থেকেই প্রথম বৃদ্ধি শুরু হয়।
(খ) প্রাইমারি ভাজক টিস্যু (Primary meristem) : যে ভাজক টিস্যু উদ্ভিদের ভ্রূণাবস্থায়ই উৎপত্তি লাভ করে, তাকে প্রাইমারি ভাজক টিস্যু বলা হয়। মূল এবং কাণ্ডের শীর্ষে যে ভাজক টিস্যু থাকে তা-ই প্রাইমারি ভাজক টিস্যু। এদের কোষ বিভাজনের ফলে উদ্ভিদ দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এ টিস্যু আমৃত্যু বিভাজনক্ষম থাকে। প্রারম্ভিক ভাজক টিস্যু হতে এদের উৎপত্তি হয়। প্রাইমারি ভাজক টিস্যু হতে প্রাইমারি স্থায়ী টিস্যুর সৃষ্টি হয়।
(গ) সেকেন্ডারি ভাজক টিস্যু (Secondary meristem) : যে ভাজক টিস্যু কোনো স্থায়ী টিস্যু হতে পরবর্তী সময়ে উৎপন্ন হয়, তাকে সেকেন্ডারি ভাজক টিস্যু বলে। সেকেন্ডারি ভাজক টিস্যু উদ্ভিদের ভ্রূণাবস্থার অনেক পরে সৃষ্টি হয়। উদাহরণ – কর্ক ক্যাম্বিয়াম, ইন্টার ফ্যাসিকুলার ক্যাম্বিয়াম।
২. অবস্থান অনুসারে :
(ক) শীর্ষক ভাজক টিস্যু (Apical meristem) : মূল, কাণ্ড বা এদের শাখা-প্রশাখার শীর্ষে অবস্থিত ভাজক টিস্যুকেই শীর্ষক ভাজক টিস্যু বলে। কতক পাতা ও ফলের শীর্ষেও ভাজক টিস্যু থাকতে পারে। শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যুর বিভাজনের মাধ্যমেই এসব অঙ্গ দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এরা প্রাথমিক স্থায়ী টিস্যু তৈরি করে থাকে। পুষ্পক উদ্ভিদে শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যু একাধিক কোষ দিয়ে গঠিত। এরা প্রাইমারি ভাজক টিস্যু।
(খ) ইন্টারক্যালারি বা নিবেশিত ভাজক টিস্যু (Intercalary meristem) : দুটি স্থায়ী টিস্যুর মাঝখানে অবস্থিত ভাজক টিস্যুকে ইন্টারক্যালরি বা নিবেশিত ভাজক টিস্যু বলে। অঙ্গসমূহের বৃদ্ধির সময় শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যু হতে কিয়দংশ পৃথক হয়ে এ প্রকার ভাজক টিস্যু সৃষ্টি করে। কাজেই এরা প্রাইমারি টিস্যু। ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ, পাইন, হর্সটেইল প্রভৃতি উদ্ভিদের পত্রমূল, মধ্যপর্বের গোড়ায়, পর্ব সন্ধিতে ও ফুলের বোঁটায় এ ধরনের ভাজক টিস্যু থাকে।
(গ) পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যু (Lateral meristem) : মূল বা কাণ্ডের পার্শ্ব বরাবর লম্বালম্বিভাবে অবস্থিত ভাজক টিস্যুকে পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যু বলে। এ প্রকার টিস্যুও দুটি স্থায়ী টিস্যুর মাঝখানে অবস্থিত। এরা স্থায়ী টিস্যু হতে উৎপন্ন হয়, তাই এরা সেকেন্ডারি ভাজক টিস্যু। এদের বিভাজনের ফলে মূল ও কাণ্ডের বৃদ্ধি প্রস্থে হয়ে থাকে। ইন্টারফেসিকুলার ক্যাম্বিয়াম, কর্ক ক্যাম্বিয়াম প্রভৃতি পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যুর উদাহরণ। এদের কোষ বিভাজনের কারণে উদ্ভিদের সেকেন্ডারি বৃদ্ধি ঘটে।
৩. কোষ বিভাজন অনুসারে :
(ক) মাস ভাজক টিস্যু (Mass meristem) : যে ভাজক টিস্যুর কোষবিভাজন সৰ তলে (plane) ঘটে থাকে, ফলে সৃষ্ট কোষ সমষ্টি কোনো নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জিত না থেকে কোষপুঞ্জ গঠন করে, তাকে মাস ভাজক টিস্যু বলা হয়। এ প্রকার বিভাজনের ফলে উদ্ভিদ অঙ্গটি ঘনত্বে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়; যেমন- বর্ধনশীল ভ্রূণ, রেণুথলি, এন্ডোস্পার্ম তথা সস্য টিস্যু, মজ্জা, কর্টেক্স প্রভৃতি।
(খ) প্লেট ভাজক টিস্যু (Plate meristem) : যে ভাজক টিস্যুর কোষ মাত্র দুটি তলে (plane) বিভাজিত হয়, ফলে কোষগুলো প্লেটের মতো করে সজ্জিত হয়, তাকে প্লেট ভাজক টিস্যু বলা হয়। এ প্রকার বিভাজনের ফলে অঙ্গটি আয়তনে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়; যেমন -পাতা, বর্ধিষ্ণু বহিঃত্বক।
(গ) রিব ভাজক টিস্যু (Rib meristem) : যে ভাজক টিস্যুর কোষগুলো একটি তলে বিভাজিত হয়, ফলে কোষগুলো রৈখিক সজ্জাক্রমে একসারিতে অবস্থান করে এবং দেখতে বুকের পাঁজরের ন্যায় দেখায়, তাকে রিব ভাজক টিস্যু বলা হয়। এ প্রকার কোষ বিভাজনের ফলে একসারি কোষ সৃষ্টি হয়; যেমন- বর্ধিষ্ণু মূল ও কাণ্ডের মজ্জা রশ্মি।
৪. কাজ অনুসারে :
(ক) প্রোটোডার্ম (Protoderm) : যে ভাজক টিস্যুর কোষসমূহ উদ্ভিদদেহের ত্বক সৃষ্টি করে তাকে প্রোটোডার্ম বলে। মূল, কাণ্ড ও এদের শাখা-প্রশাখার ত্বক (এপিডার্মিস বা এপিব্লেমা) সৃষ্টি করা হলো প্রোটোডার্ম-এর কাজ।
(খ) প্রোক্যাম্বিয়াম (Procambium) : ক্যাম্বিয়াম, জাইলেম ও ফ্লোয়েম সৃষ্টিকারী ভাজক টিস্যুকে প্রোক্যাম্বিয়াম বলে। পরিবহন টিস্যু সৃষ্টি করাই প্রোক্যাম্বিয়ামের কাজ।
(গ) গ্রাউন্ড মেরিস্টেম (Ground meristem) : শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যুর যে অংশ বারবার বিভাজিত হয়ে উদ্ভিদ দেহের মূল ভিত্তি তথা কর্টেক্স, মজ্জা ও মজ্জা রশ্মি সৃষ্টি করে তাকে গ্রাউন্ড মেরিস্টেম বলে।
সরল টিস্যু (Simple tissue) : সরল স্থায়ী টিস্যুর সবগুলো কোষ আকার, আকৃতি ও গঠন বৈশিষ্ট্যে একই ধরনের হয়।
কোষের আকৃতি ও প্রকৃতির উপর নির্ভর করে সরল টিস্যুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে; যথা : ক. প্যারেনকাইমা, খ. কোলেনকাইমা এবং গ. স্ক্লেরেনকাইমা।
জটিল টিস্যু (Complex tissue) : জটিল স্থায়ী টিস্যু একাধিক প্রকার কোষ দিয়ে গঠিত এবং সম্মিলিতভাবে একই ধরনের কাজ সম্পন্ন করে।
কাজ, অবস্থান ও গঠন প্রকৃতি অনুযায়ী জটিল টিস্যু প্রধানত দু’প্রকার। যথা : ক. জাইলেম টিস্যু এবং খ. ক্লোয়েম টিস্যু। এ দু’প্রকার টিস্যু একত্রে পরিবহনতন্ত্র গঠন করে। এটি মূল থেকে পাতা পর্যন্ত বিস্তৃত। খাদ্যদ্রব্য ও পানি পরিবহন করাই এটির প্রধান কাজ।
ক্ষরণকারী বা নিঃস্রাবী টিস্যু (Secretory tissue) : যে টিস্যু হতে নানা প্রকার তরল পদার্থ (উৎসেচক, বর্জ্য পদার্থ = রেজিন, গদ, উদ্বায়ী তেল, আঠা ইত্যাদি) নিঃসৃত হয়ে থাকে, তাকে ক্ষরণকারী বা নিঃস্রাবী টিস্যু বলে।
ক্ষরণকারী টিস্যু দু’প্রকার যথা: ক. তরুক্ষীর টিস্যু (laticiferous tissue) এবং খ. গ্রন্থি টিস্যু (glandular tissue)।
যে টিস্যুতন্ত্র উদ্ভিদ অঙ্গের প্রাথমিক গঠন সৃষ্টিতে অংশ নেয় এবং উদ্ভিদ অঙ্গের বহিরাবরণ সৃষ্টি করে, ভাষ এপিডার্মাল টিস্যুতন্ত্র বলে। কাণ্ড, পাতা ও ফুলের বিভিন্ন অংশের ত্বক, বিটপের প্রোটোডার্ম থেকে এবং মূলের মূলম আবৃত অংশের শীর্ষ ভাজক টিস্যুর একটি কোষস্তর থেকে এর উৎপত্তি হয়। এক কথায় এপিডার্মাল টিস্যুর টাপা প্রাইমারি শীর্ষক ভাজক টিস্যু থেকে। এপিডার্মাল টিস্যুতন্ত্র উদ্ভিদের ত্বক, ত্বকীয় উপবৃদ্ধি এবং রক্ত নিয়ে গঠিত।
এপিডার্মিস (epidermis) বা ত্বক এপিডার্মাল টিস্যুতন্ত্রের যে অংশ উদ্ভিদ অঙ্গের অর্থাৎ মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল, ফল ও বীজের বহির্দেশে অবস্থানকা অঙ্গগুলোর বহিরাবরণ নির্মাণ করে তাকে এপিডার্মিস বা ত্বক বলে।
ত্বক বিভিন্ন উদ্ভিদ অঙ্গে এক অবিচ্ছিন্ন স্তর গঠন করে। স্তরটি সাধারণত একটিমাত্র প্যারেনকাইমা কোষ নির্মিত হয়, তবে অশ্বত্ব, পাকুর, রাবার, খেজুর, বট প্রভৃতি গাছের পাতায় এবং মরুজ উদ্ভিদের মূলে কোষস্তরটি পুনরা বিভক্ত হয়ে ২-৩টি স্তরে পরিণত হয়। করবী গাছের পাতায় তিনসারি কোষের ত্বক দেখা যায়। ত্বকের কোষগুলো প্যারেনকাইমা জাতীয় এবং নলাকার বা ডিম্বাকার। কোষগুলো ঘনসন্নিবিষ্ট হওয়ায় আন্তঃকোষীয় ফাঁক নেই। কোম্পা সেলুলোজ নির্মিত এবং প্রাচীরের ধার ঘেঁষে সামান্য পরিমাণ সাইটোপ্লাজম থাকে। অভ্যন্তরে রয়েছে একটি বড় গা ও বর্ণহীন প্লাস্টিড (লিউকোপ্লাস্ট)। সাধারণত রক্ষী কোষ ব্যতীত অন্য কোনো কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে না। তা জলজ উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায়। ফুলের পাপড়ি ও ফলের ত্বকে অ্যান্থোসায়ানিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকে। অনেক সময় কোষের সাইটোপ্লাজমে মিউসিলেজ, ট্যানিন, বিভিন্ন কেলাস ও বর্জ্য পদার্থ সঞ্চিত থাকে। কোষপ্রাচী বাইরে পুরু বা পাতলা কিউটিন, লিগনিন, সুবেরিন, মোম প্রভৃতির প্রলেপ থাকে। গম, ভুটা, আখ ইত্যাদি গাছের পরা ত্বকে বুলিফর্ম (বৃহদাকৃতির ত্বকীয় কোষ) কোষ থাকে। কিউটিনযুক্ত কোষপ্রাচীরকে কিউটিকল (cuticle) বলে।
এটি শীর্ষ ভাজক টিস্যুর একটি কোষস্তর থেকে সৃষ্টি হয়; এটি পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করে কোষপ্রাচীরে কিউটিকল প্রভৃতির প্রলেপও থাকে না। তাই মূলের বহিরাবরণকে এপিব্লেমা (epiblema) এবং অন্যান্য অঙ্গের বহিরাবরণকে এপিডার্মিস বলে। এবিব্লেমার বিভিন্ন কোষ থেকে এককোষী মূলরোম সৃষ্টি হয়।
কাজ :
( i)এপিডার্মিস বা ত্বক উদ্ভিদকে, বিশেষ করে উদ্ভিদের অভ্যন্তরীণ টিস্যুকে বাইরের আঘাত থেকে ও প্রতিকূল অবস্থা হতে রক্ষা করে।
(ii) রোমযুক্ত ত্বক, বিশেষ করে বিষাক্ত গ্রন্থিওয়ালা রোমযুক্ত ত্বক বিভিন্ন আক্রমণ হতে উদ্ভিদকে রক্ষা করে থাকে।
(iii) অনেক সময় ত্বক কর্তক পানির অপচয় বন্ধ করে থাকে।
(iv)মোমের আস্তরণ পড়া ত্বক ছত্রাকের আক্রমণ হতে অভ্যন্তরীণ টিস্যুকে রক্ষা করতে পারে।
(v) ত্বক (স্টোম্যাটা= পত্রবন্ধ) দিয়ে উদ্ভিদ অভ্যন্তর ও বাইরের পরিবেশের মধ্যে বিভিন্ন গ্যাসের আদান-প্রদান করে।যুক্ত ত্বক খাদ্য তৈরি করে।
(vii) মূলরোম পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করে।
(viii) বুলিফর্ম কোষ ৮% সময় করে এবং পাতার প্রসারণ ও বিকাশে সহায়তা করে।
(ix) ত্বককোষ প্রয়োজনে বিভাজিত হতে পারে এবং সারিয়ে তোলে।
এপিডার্মাল এপিডার্মিস অনেক জায়গায় একধরনের সুনির্দিষ্ট ও সুগঠিত রক্তপথে বিদীর্ণ বা উন্মুক্ত থাকে । এসব বন্ধ বিশেষ করে পাতাতে নিয়মিত ও অসংখ্য থাকে। বস্তুগুলো দুরকম, যথা-১, পত্ররন্ধ্র(stomata)
২. পানিরন্ধ্র (hydathode বা stomata) নিচে এদের অবস্থান কাজের বর্ণনা দেয়া হলো।
পত্ররন্ধ্র বা স্টোমাটাঃ সাধারণত দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের বিষমষ্ঠ পাতার নিচের ত্বকে বেশি থাকে। অর্ধপূর্ণ পাতার উভয় ত্বকেই কিছু সংখ্যক পরবদ্ধ ত্বকের তল থেকে সামান্য ভেতরের দিকে অবস্থান করে। সাধারণত উদ্ভিদের পাতায় এবং জলজ উদ্ভিদের ভাসমান পাতার উপরের ত্বকে পরজে থাকে। পানিতে নিমজ্জিত পাতায় বা মূলে পত্রবন্ত থাকে না। মরুজ গাছের পাতায় পররক্ত বহিঃত্বকের গভীরে অবস্থান করে। পত্ররন্ধে মাধুবীক্ষণিক । প্রত্যেক পরবস্তু দুটি অর্ধচন্দ্রাকার রক্ষীকোষ নিয়ে গঠিত। কোষটির বিশেষ ভঙ্গিতে অবস্থানের কারণে হাতখানে বন্ধের সৃষ্টি হয়। রক্ষীকোষে ঘন সাইটোপ্লাজম, একটি সুনির্দিষ্ট নিউক্লিয়াস ও কতকগুলো ক্লোরোপ্লাস্ট রয়েছে । কেনপক্ষে বস্তু ও রক্ষীকোষমুটি একত্রে মিলে পরবন্ধ (stom, বহুবচনে) গঠন করে। রন্ধের নিচে একটি বায়ুপূর্ণ থাকার থাকে। বন্ধুকে ঘিরে থাকা রক্ষীকোষের অবতল অংশ অন্য অংশ অপেক্ষা বেশি স্কুল। রক্ষীকোষকে ২-৪টি বহিঃত্বকীয় কোষ বেষ্টন করে রাখে। রক্ষীকোষের কর্মকাণ্ডে রন্ধ্র খোলে ও বন্ধ হয়। কোষের কর্মকান্ড পরিচালিত রাস্ফীতিজনিত চাপের প্রভাবে। এ প্রভাবের কারণে পত্ররন্ধ্র দিনে খোলা ও রাতে বন্ধ থাকে।
কাজ :
(i) শ্বসনের সময় রক্তপথে বায়ু (বাতাসের O2) প্রবেশ করে এবং CO2 নির্গত হয়।
(ii) সালোকসংশ্লেষণের সময় বাতাসের CO, বৃক্ষপথে প্রবেশ করে এবং উৎপন্ন O2 বেরিয়ে যায়।
(iii) মাটি থেকে শোষিত অতিরিক্ত পানি প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বাষ্পাকারে বের করে দেয়।
(iv) রক্ষীকোষের ক্লোরোপ্লাস্ট খাদ্য প্রস্তুত করে।
(v) রক্ষীকোষ রক্তের মালা ও বন্ধ হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
পানিরন্ধ্র বা হাইডাথোড (Hydathode) হাইডাথোড এক বিশেষ ধরনের পানি নির্মোচন অঙ্গ। টমেটো, কচু প্রভৃতি গাছের পাতার কিনারায় গুমোট গরমের দিনে পানির ফোঁটার সারি দেখে এ অঙ্গের অবস্থান বোঝা যায়। বিশেষ পরিস্থিতিতে উদ্ভিদদেহ থেকে হাইডাথোডের মাধ্যমে পানি পরিত্যক্ত হয় বলে হাইড্রাথোডকে পানিবন্ধ বা পানি- নিবন্ধে বলে। হাইডাগোপ দিয়ে তরল পানি বের হয়ে যাওয়াকে গাটেশন (guttetion) বলে। হাইভাথোডের শীর্ষে রক্ষীকোষে আবদ্ধ একটি রক্ত থাকে। রন্ধের নিচে রয়েছে একটি গহ্বর। গহ্বরের নিচে গুলো অসংলগ্ন কোষ থাকে, এগুলোকে এপিথেম বলে। মূল চাপে পানি ট্রাকিভের শেষপ্রান্ত দিয়ে এপিখেমের মাধ্যমে বিন্দু আকারে বন্ধমুখে জমা হয়। ভোরে এসব বিন্দু দেখা যায়। অন্য সময় পানি দ্রুত বাষ্পায়িত হয় বলে তা দেখা যায় ।
এপিডার্মাল উপাঙ্গসমূহ (Epidermeal appendages) ত্বকের কিছু কোষ থেকে বাইরের দিকে এককোষী বা বহুকোষী নানা আকৃতি ও প্রকৃতির উপবৃদ্ধি উদগত এগুলোকে এপিডার্মাল উপাঙ্গ বা ট্রাইকোম (trichome) বলে । ট্রাইকোম নিম্নোক্ত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।
i. রোম (Hairs): রোম এককোষী বা বহুকোষী। এরা আবার শাখানিত বা অশাখ হতে পারে। মূলের রোম সর্বদাই এককোষী। মূলরোমের মাধ্যমে উদ্ভিদ মাটি থেকে পানি ও খনিজ লবণ পরিশোষণ করে। কাজের বহিত্বকের কোন কোন কোষ ল হ কারোম গঠন করে। কাওরোম এককোষী বা বহুকোষী, শাখাহীন বা শাখান্বিত হতে পারে। একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাছে কারোম নেই। কার্পাস তুলার বীজবুক উদ্ভুত রোমগুলো আঁশের মতো এবং তুলার জন্তু গঠন করে।
ii . গ্রন্থিরোম বা কোলেটারস (Glandular hairs or Collcters) : এগুলো বহুকোষী এবং বৃত্তক। গ্রন্থিকোষ এক ধরনের চটচটে আঠালো পদার্থে পূর্ণ থাকে। উদ্ভিদের পরিপাক গ্রন্থি এ ধরনের ট্রাইকোম বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
iii. দংশনরোম (Stinging hairs) এগুলো এককোষী, লম্বা, সূঁচালো ও এক ধরনের বিষাক্ত রসে পূর্ণ ট্রাইকোম প্রাণিদেহের সংস্পর্শে কোষের সূঁচালো ডগা ভেঙ্গে গিয়ে বিষাক্ত রস মুক্ত হয়, ফলে চামড়ায় তীব্র জ্বালা ধরায়। কিছু আলকুশি প্রভৃতি উদ্ভিদে এ রোম পাওয়া যায়।
iv. পানিথলি (Water bladder) বরফ উরিস নামে পরিচিতি Mesenbrayanthemum crystallin (মেসেমরায়াছিলাম ক্রিস্টালিনাম )- এর ত্বককোষ স্ফীত খালির আকার ধারণ করে এবং বিপুল পরিমাণ পানি ধরে রাখে। শীতকালে এ পানি বরফে পরিণত হয়।
v. শঙ্ক (Scales) পাতলা ঝিল্লি সদৃশ বিশেষ ধরণের রোমকে শল্ক বলে। এরা প্রস্বেদনের হার কমায়।
গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্রঃ এপিডার্মাল ও ভাস্কুলার টিস্যুতন্ত্রের অন্তর্গত টিস্যু ছাড়া উদ্ভিদের অন্যান্য অংশ যে টিস্যুতে গঠিত, তাকে গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্র বলে । এটি এপিডার্মিসের অন্তঃস্তর থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত । এতে রয়েছে একাধিক বৈচিত্র্যময় টিস্যু । এখানে প্যারেনকাইমা কোষের আধিক্য থাকলেও কোলেনকাইমা ও স্ক্লেরেনকাইমা কোষও থাকে। গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্রের উৎস হচ্ছে পেরিব্লেম জাতীয় ভাজক টিস্যু। মূলের ক্ষেত্রে এটি বহিঃস্তর (cortex) ও অন্তঃত্বক (endodermis) নিয়ে গঠিত এবং কাণ্ডের ক্ষেত্রে এটি অধঃত্বক (hypodermis), বহিঃস্তর (cortex) ও অন্তঃত্বক নিয়ে গঠিত। কিছুক্ষেত্রে অধঃত্ব স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত আর বাকি সবটুকু প্যারেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত। পাতায় এই তন্তু শুধু প্যারেনকাইমা দিয়ে গঠিত হয়।
উদ্ভিদের মূলে ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডে গ্রাউন্ড টিস্যু দুটি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত। যথা- বহিঃস্টিলিয় অঞ্চল (extrastclar region) এবং অন্তঃস্টিলিয় অঞ্চল (intrastelar region)। (কাণ্ডে ও মূলের কেন্দ্রে অবস্থিত পরিচক্র (পরিসাইকেল) থেকে মজ্জা পর্যন্ত বিস্তৃত টিস্যুগুচ্ছকে স্টিলি (stele) বে ) বলে। স্টিলির অভ্যন্তরীণ টিস্যুগুচ্ছকে অন্তঃস্টিলিয় অঞ্চল বা অন্তস্টিলিয় টিস্যু বলে। মূলের এ অঞ্চলটি পরিচক্র ও মজ্জা এবং কান্ডে এ অঞ্চলটি পরিচক্র, মজ্জা ও মজ্জারশ্মি নিয়ে গঠিত । স্টিলির বাইরের টিস্যুগুচ্ছকে বহিঃস্টিলিয় টিস্যু বলে।
ক. বহিঃস্টিলিয় অঞ্চলঃ স্টিলির বাইরের অংশকে বহিঃস্টিলিয় অঞ্চল বলে। এটি নিম্নোক্ত অংশগুলো নিয়ে গঠিত।
১.হাইপোডার্মিস (Hypodermis) বা অধঃত্বকঃ (এপিডার্মিসের নিচে এক বা একাধিক কোষস্তরবিশিষ্ট কেন্দ্রীভূত অংশকে হাইপোডার্মিস বলে।) একবীজপত্রী উদ্ভিদে এই টিস্যু (স্ক্লেরেনকাইমা কোষে এবং (দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে কোলেনকাইমা কোষে গঠিত (মূলে অধঃত্বক অনুপস্থিত)।
২.কর্টেক্স (Cortex) : হাইপোডার্মিসের নিচু থেকে এন্ডোডার্মিস পর্যন্ত বিস্তৃত বিরাট অংশকে কর্টেক্স বলে। এটি সাধারণত প্যারেনকাইমা জাতীয় কোষে গঠিত। এর কোষগুলো গোল হওয়ায় আন্তঃকোষীয় অবকাশ থাকে। মূলের কর্টেক্স বহুস্তরবিশিষ্ট ও কাণ্ডের কর্টেক্স কমেক স্তরবিশিষ্ট। এ সকল কোষে অনেক সময় স্ক্লেরাইড, তেলগহ্বর ও রেজিননালি উপস্থিত থাকে। মূলের কর্টেক্সের প্রধান কাজ হচ্ছে পানি ও খাদ্য সঞ্চয় করে রাখা। কাজের কর্টেক্স পানি শু খাদ্য সঞ্চয় ছাড়াও উদ্ভিদকে দৃঢ়তা প্রদান করে এবং সালোকসংশ্লেষণে অংশ নেয়।
কাজ : কর্টেক্স অন্তঃস্টিলিয় টিস্যুগুলোকে রক্ষা করে। মূলজ চাপ নিয়ন্ত্রণ করায় ভূমিকা রাখে। মূলরোম দিয়ে শোষিত পানি ও রস জাইলেম বাহিকায় প্রবেশের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। কর্টেক্স শ্বেতসার জাতীয় খান্য জমিয়ে রাখে।
৩. এন্ডোডার্মিস (Endodermis) বা অন্তঃত্বকঃ কর্টেক্সের একেবারে ভিতরের দিকে অবস্থিত স্তরটি। এন্ডোডার্মিস। এটি স্টিলিকে কর্টেক্স থেকে পৃথক করে MAT রাখে। এন্ডোডার্মিস একটি মাত্র কোষস্তরে গঠিত। কোষগুলো পিপাকৃতির, ঘনসন্নিবিষ্ট এবং আন্তঃকোষীয় কোষবিহীন। মূলের অন্তঃত্বকীয় কোষের প্রস্থ ও পার্শ্বপ্রাচীর সুবেরিন ও লিগনিনযুক্ত হয়ে সরু ফিতার মতো বেষ্টনির সৃষ্টি করে। আবিষ্কারক বিজ্ঞানী ক্যাসপেরি (Caspary - ১০১ 1865)-এর নামানুসারে একে ক্যাসপেরিয়ান ফিতা বা স্ট্রিপ (casperian strip) বলে। কিন্তু অন্তঃত্বকের যেসব কোষগুলোর প্রাচীর পাতলা থাকে তাদের পারণ কোষ | (passage cell) বলে। দ্বিবীজপত্রী কাণ্ডের অন্তঃত্বকীয় কোষে এ ফিতা না থাকায় এবং কোষগুলোতে প্রচুর শ্বেতসার দানা সঞ্চিত থাকায়। একে এন্ডোডার্মিস না বলে স্টার্চ সিথ (starch sheath) বলে।
কাজঃ ভাস্কুলার বান্ডল ও তৎসংলগ্ন কোষগুলো যাতে বায়ু ও পানিতে আবদ্ধ হয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য এন্ডোডার্মিস বাঁধ (dam)-এর মতো কাজ করে। এছাড়া খাদ্য সঞ্চয় করাও এর কাজ।
খ.অন্তঃস্টিলিয় অঞ্চলঃ
স্টিলীর ভেতরের অংশকে অন্তঃস্টিলিয় অঞ্চল বলে ) এটি নিম্নোক্ত অংশগুলো নিয়ে গঠিত ।
১. পেরিসাইকল (Pericycle) : অন্তঃত্বকের ঠিক নিচে অবস্থিত এক বা একাধিক স্তরে বিন্যস্ত টিস্যুকে পরিসাইকল বলে। শুধু প্যারেনকাইমা টিস্যু অথবা স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু অথবা দুই টিস্যুর মিশ্রণে এ স্তর গঠিত হতে পারে। কুমড়া ও কুমারিকা কাণ্ডে পরিচক্র বহুস্তর বিশিষ্টি ও স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু শুধু — ফ্রায়েমের মাথায় টুপির মতো অবস্থান করে, তখন একে হার্ড বাষ্ট বা গুচ্ছটুপি বলে। এ স্তর হতে ভাজক টস্যুর সৃষ্টি হয়। (bundle cap) বলে (যেমন-সূর্যমুখী)। পরজীবী ও জলজ উদ্ভিদ ছাড়া সপুষ্পক উদ্ভিদের মূলে ও টেরিডোফাইট উদ্ভিদের কাণ্ড ও মূলে পেরিসাইকল রয়েছে। আধুনিক ধারণা অনুযায়ী, পেরিসাইকল ফ্লোয়েমের অংশ।
কাজঃ খাদ্য সঞ্চয় করা, দেহকে দৃঢ়তা প্রদান করা, পার্শ্বমূল সৃষ্টি করা, কাণ্ডে অস্থানিক মূল সৃষ্টি করা এর কাজ।
২. মেডুলা (Medulla) : কাণ্ড বা মূলে ভাস্কুলার বান্ডল দিয়ে পরিবেষ্টিত ও একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত টিস্যুকে মেডুলা বা মজ্জা বলে। এটি গোল, পাতলা, প্রাচীরবিশিষ্ট ও কোষাবকাশযুক্ত প্যারেনকাইমা বা স্ক্লেরেনকাইমা কোষে গঠিত। গ্রাউন্ড ভাজক টিস্যু থেকে এর উৎপত্তি হয়। একবীজপত্রী কাজে ভাস্কুলার টিস্যু বিক্ষিপ্ত অবস্থান করায় মেডুলা গড়ে উঠে না। অন্যদিকে, দ্বিবীজপত্রী মূলে মেডুলা নেই বললেই চলে, কিন্তু একবীজপত্রীর মূলে মেডুলা রয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো কোনো উদ্ভিদের কাণ্ডে বৃদ্ধির সাথে সাথে মেডুলার কেন্দ্রীয় অংশ নষ্ট হয়ে ফাঁপা কান্ডের সৃষ্টি করে (যেমন- কুমড়া)।
কাজ : খাদ্যবস্তু সঞ্চয় করে রাখা এর প্রধান কাজ এবং স্ক্লেরেনকাইমায় গঠিত হলে দেহকে দৃঢ়তা প্রদান করা মেডুলার কাজ।
৩. মেডুলারি রশ্মি (Medullary rays) : দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদকাণ্ডের দুই ভাস্কুলার বাগুলের মাঝ বরাবর মেডুলা থেকে পেরিসাইকল পর্যন্ত বিস্তৃত, দেখতে রশ্মির মতো টিস্যুকে মেডুলারি রশ্মি বলে। এগুলো সরু ও লম্বা প্যারেনকাইমা কোষে গঠিত ও পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট। এ টিস্যু কেবল দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদকাণ্ডে পাওয়া যায়।
কাজ : মেডুলারি রশ্মি পানি ও খাদ্যবস্তু পরিবহন এবং সঞ্চয় করে। প্রয়োজনে সেকেণ্ডারি টিস্যু সৃষ্টি করে।
পাতার গ্রাউন্ড টিস্যুঃ পাতার গ্রাউন্ড টিস্যুকে মেসোফিল (mesophyll) বলে । এটি অসংখ্য ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত ও পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট প্যারেনকাইমা কোষে গঠিত। বিষমপৃষ্ঠ পাতায় মেসোফিল প্যালিসেড (Palisade) ও স্পঞ্জি (spongy) প্যারেনকাইমা কোষে বিভক্ত)। প্যালিসেড প্যারেনকাইমার কোষগুলো ঘনসন্নিবিষ্ট, লম্বা ও উল্লম্ব বিন্যস্ত এবং স্পঞ্জি প্যারেনকাইমার কোষগুলো প্রধানত ডিম্বাকার, অনিয়ত, কোষাবকাশযুক্ত ও শিথিলভাবে বিন্যস্ত। সমদ্বিপৃষ্ঠ পাতায় মেসোফিল শুধু এক ধরনের প্যারেনকাইমা টিস্যুতে হয় স্পঞ্জী, নয়তো প্যালিসেড গঠিত হয়।
কাজঃ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত করা এ টিস্যুর কাজ।
ভাস্কুলার/ক্যাসিকুলার টিস্যুতন্ত্র (Vascular tissue system)
ভাস্কুলার বান্ডলের (জাইলেম ও ফ্লোয়েম) সমন্বয়ে গঠিত টিস্যুতন্ত্রকে বলা হয় ভাস্কুলার টিস্যুতন্ত্র। ফ্যাসিকুলার (fasicular) টিস্যু নামেও এটি পরিচিত। এ টিস্যুতন্ত্র খাদ্য উপাদান ও তৈরিকৃত খাদ্য পরিবহন করে বলে একে পরিবহন টিস্যুতন্ত্রও বলা হয়। জাইলেম ফ্লোয়েম টিস্যু নিয়ে এ টিস্যুতন্ত্র গঠিত। জাইলেম ও ফ্লোয়েম পৃথক পৃথকভাবে অথবা একসাথে থাকতে পারে। জাইলেম টিস্যু ও ফ্লোয়েম টিস্যুর মধ্যখানে ক্যাম্বিয়াম নামক ভাজক টিস্যু থাকতেও পারে, না-ও থাকতে পারে। দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ কাণ্ডের জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যুর মাঝে অবস্থিত ভাজক টিস্যুই হলো ক্যাম্বিয়াম। প্রতিটি জাইলেম টিস্যু এবং ফ্লোয়েম টিস্যু মিলিতভাবে অথবা পৃথকভাবে একটি ভাস্কুলার বান্ডল গঠন করে এবং এক বা একাধিক ভাস্কুলার বান্ডল নিয়ে একটি ভাস্কুলার টিস্যুতন্ত্র গঠিত হয়।
উদ্ভিদমূলে এবং দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদকাণ্ডে ভাস্কুলার বান্ডলগুলো সাধারণত বৃত্তাকারে সাজানো থাকে, তবে একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডে এরা কর্টেক্সের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে
জাইলেম টিস্যু (Xylem tissue: Gk-Xylon = wood):
ট্রাকিড ভেসেল (ট্রাকিয়া), জাইলেম ফাইবার এবং জাইলেম প্যারেনকাইমা- এই চার প্রকার উপাদান দিয়ে জাইলেম টিস্যু গঠিত। পরিণত জাইলেম টিস্যুর সজীৰ উপাদান জাইলেম প্যারেনকাইমা। ফার্নবর্গীয় উদ্ভিদ এবং নগ্নবীজী উদ্ভিদে জাইলেম টিস্যুতে ভেসেল থাকে না (নগ্নবীজী Gnetum-এ সরল প্রকৃতির ভেসেল থাকে)। ভেসেল আবৃতবীজী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য হলেও Winteraceae, Tetracentraceae, Trochodendraceae গোত্রের উদ্ভিদে ভেসেল থাকে না।
কিছু ভেসেল কোষ সরু গর্তযুক্ত হয়, আবার কিছু ভেসেল কোষ বড় গর্তযুক্ত হয়। (সরু) গর্তযুক্ত ভেসেল কোষকে প্রোটোজাইলেম বলা হয়। আসলে এরা প্রথমে সৃষ্টি হয় বলে এদের নাম হয়েছে আদিজাইলেম বা প্রোটোজাইলেম। অপেক্ষাকৃত পরে সৃষ্টি হয় বলে বড় গর্তযুক্ত ভেসেল কোষকে মেটাজাইলেম বলা হয়। আবৃতবীজী উদ্ভিদের মূলে মেটাজাইলেম স্টিলির কেন্দ্রের দিকে অবস্থিত থাকে এবং প্রোটোজাইলেম স্টিলির পরিধির দিকে থাকে। কাণ্ডে এদের অবস্থান ঠিক উল্টো; অর্থাৎ কাণ্ডের ভাস্কুলার বান্ডলে মেটাজাইলেম পরিধির দিকে এবং প্রোটোজাইলেম কেন্দ্রের দিকে বিন্যস্ত থাকে, একে এন্ডার্ক (endarch) বলে। মূলের ভাস্কুলার টিস্যুতে প্রোটোজাইলেম পরিধির দিকে এবং মেটাজাইলেম কেন্দ্রের দিকে বিন্যস্ত থাকে, একে এক্সার্ক (exarch) বলে। পাতায় প্রোটোজাইলেম ও মেটাজাইলেম উভয়ই কেন্দ্র এবং পরিধি দুই দিকে বিন্যস্ত থাকে, একে মেসার্ক (mesarch) বলে। উদ্ভিদ নমুনার সেকশন কেটে প্রোটোজাইলেম ও মেটাজাইলেমের অবস্থান দেখেই বলা যায় কোনটি মূল আর কোনটি কাণ্ড।
ফ্লোয়েম টিস্যু (Phloem tissue: Gk-Phloos = bark):
সীভনল, সঙ্গীকোষ, ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা এবং ফ্লোয়েম ফাইবার এই চার প্রকার কোষীয় উপাদান নিয়ে ফ্লোয়েম টিস্যু গঠিত। পরিণত সিভনল বা সিভকোষে কোনো নিউক্লিয়াস থাকে না। সঙ্গীকোষের নিউক্লিয়াস বড়, সাইটোপ্লাজম ঘন এবং কোষগহ্বর ছোট থাকে। নগ্নৰীজী উদ্ভিদের ফ্লোয়েম টিস্যুতে সঙ্গীকোষ থাকে না। সেকেন্ডারি ফ্লোয়েমে অবস্থিত ফাইবারকে বাস্ট ফাইবার বলা হয়। পাটের আঁশ বাস্ট ফাইবার।
পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ (Vascular bundle):
উদ্ভিদদেহে যে টিস্যু খাদ্যের কাঁচামাল (পানি, খনিজ লবণ ইত্যাদি) ও তৈরিকৃত খাদ্য পরিবহন করে থাকে তাকে পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ বলে। জাইলেম টিস্যু মূল হতে পাতা ও অন্যান্য সবুজ অংশে পানি ও খনিজ লবণ পরিবহন করে, আবার পাতা ও অন্যান্য সবুজ অংশে প্রস্তুতকৃত খাদ্যদ্রব্য উদ্ভিদদেহের অন্যান্য সজীব অংশে পরিবহন করে ফ্লোয়েম টিস্যু। তাই জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যুর গুচ্ছকেই একত্রে পরিবহন টিস্যু (Vascular bundle) বলে।
(১) সংযুক্ত (Conjoint) : জাইলেম এবং ফ্লোয়েম একই ব্যাসার্ধের উপর একই গুচ্ছে যুক্তভাবে অবস্থান করলে তাকে সংযুক্ত ভাস্কুলার বান্ডল বলে। ফ্লোয়েমের সংখ্যা ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে সংযুক্ত ভাস্কুলার বান্ডলকে আবার দুইভাগে ভাগ করা হয়; যথা : (i) সমপার্শ্বীয় (Collateral) এবং (ii) সমদ্বিপার্শ্বীয় (Bicollateral)।
ক.সমপার্শ্বীয় (Collateral) : এক খণ্ড ফ্লোয়েম টিস্যু এবং এক খণ্ড জাইলেম টিস্যু একই ব্যাসার্ধে পাশাপাশি (ফ্লোয়েম পরিধির তথা বাইরের দিকে এবং জাইলেম কেন্দ্রের তথা ভেতরের দিকে) অবস্থান করলে তাকে সমপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডল বলে। পুষ্পক উদ্ভিদের কাণ্ডে এ ধরনের বান্ডল দেখা যায়। ক্যাম্বিয়ামের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর নির্ভর করে এই ভাস্কুলার বান্ডলকে আবার নিম্নলিখিত দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
• মুক্ত সমপার্শ্বীয় (Open collateral) : একই ব্যাসার্ধে পাশাপাশি অবস্থিত জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মাঝখানে ক্যাম্বিয়াম (জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মাঝখানে কয়েক স্তরবিশিষ্ট আয়তাকার ভাজক কোষ দিয়ে গঠিত টিস্যুকে ক্যাম্বিয়াম বলে) থাকলে তাকে মুক্ত সমপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডল বলে; যেমন— দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ (কুমড়া জাতীয় উদ্ভিদের কান্ড ব্যাতীত) ও নগ্নবীজী উদ্ভিদের কাণ্ডের ভাস্কুলার বান্ডল।
• বদ্ধ সমপার্শ্বীয় (Closed collateral) : সমপার্শ্বীয় বান্ডলের জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মধ্যখানে ক্যাম্বিয়াম না থাকলে তাকে বন্ধ সমপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডল বলে; যেমন- একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডের ভাস্কুলার বান্ডল।
খ. সমদ্বিপার্শ্বীয় (Bicollateral) : যে ভাস্কুলার বান্ডলের মাঝখানে জাইলেম এবং তার উপর ও নিচ উভয় পাশে দুই খন্ড ফ্লোয়েম টিস্যু থাকে তাকে সমদ্বিপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডল বলে। সমদ্বিপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডলে জাইলেমের উভয় পাশেই ক্যাম্বিয়াম থাকে, তাই সমদ্বিপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডল সব সময়ই মুক্ত। জাইলেমের বাইরের দিকের (পরিধির দিকের) ক্লোয়েমকে বাহিঃফ্লোয়েম এবং ভেতরের দিকের (কেন্দ্রের দিকের) ফ্লোয়েমকে অস্তঃফ্লোয়েম বলে। লাউ, কুমড়া, শশা ইত্যাদি উদ্ভিদের কাণ্ডে সমদ্বিপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডল থাকে।
(২) অরীয় (Radial) : যে ভাস্কুলার বান্ডলে জাইলেম এবং ফ্লোয়েম একত্রে একটি বান্ডলের সৃষ্টি না করে পৃথক পৃথকভাবে ভিন্ন ভিন্ন বান্ডলের সৃষ্টি করে এবং পাশাপাশি অবস্থান করে তাকে অরীয় ভাস্কুলার বান্ডল বলে। পুষ্পক উদ্ভিদের মূলে এ ধরনের ভাস্কুলার বান্ডল দেখা যায়। দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের মুলে জাইলেম অথবা ফ্লোয়েম বান্ডল-এর সংখ্যা সাধারণত পাঁচ এর কম থাকে কিন্তু একবীজপত্রী উদ্ভিদের মূলে এদের প্রত্যেকের সংখ্যা সাধারণত ছয়-এর অধিক।
(৩) কেন্দ্রিক (Concentrie) : জাইলেম অথবা ফ্লোয়েম টিস্যুর যে কোনো একটি কেন্দ্রে থাকে এবং অন্যটি তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখলে তাকে কেন্দ্রিক ভাস্কুলার বান্ডল বলে। কেন্দ্রিক ভাঙ্গুলার বান্ডল সব সময়ই বদ্ধ হয় অর্থাৎ জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মধ্যখানে কোনো ক্যাম্বিয়াম থাকে না। সাধারণত টেরিডোফাইটে এ ধরনের বান্ডল অধিক দেখা যায়। জাইলেম ও ফ্লোয়েমের তুলনামূলক অবস্থানের উপর নির্ভর করে কেন্দ্রিক ভাস্কুলার বান্ডলকে নিম্নলিখিত দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে; যথা :
(i) হ্যাড্রোসেন্ট্রিক বা জাইলেম কেন্দ্রিক (Hadrocentric) : এ ক্ষেত্রে জাইলেম কেন্দ্রে থাকে এবং ফ্লোয়েম তাকে সম্পূর্ণরূপে ঘিরে রাখে; যেমন- Pteris, Lycopodium, selaginella ইত্যাদি উদ্ভিদের ভাস্কুলার বান্ডল।
(ii) লেপ্টোসেন্ট্রিক বা ফ্লোয়েম কেন্দ্রিক (Leptocentric) : এ ক্ষেত্রে ফ্লোয়েম কেন্দ্রে থাকে এবং জাইলেম তাকে ঘিরে রাখে; যেমন- Dracaena, Yucca উদ্ভিদের ভাস্কুলার বান্ডল।
ভাস্কুলার বান্ডল-এর কাজ (The function of the vascular bundle):
ভাস্কুলার বান্ডল তথা পরিবহন টিস্যুতন্ত্র নিম্নলিখিত কাজ করে থাকে, যথা :-
(i) জাইলেম টিস্যু উদ্ভিদের মূল হতে কাণ্ড ও পাতায় পানি এবং দ্রবীভূত খনিজ লবণ আয়ন হিসেবে পরিবহন করা
(ii) ফ্লোয়েম টিস্যু পাতায় প্রস্তুতকৃত খাদ্য উদ্ভিদের মূল হতে কচি মুকুল পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করা এবং
(iii) জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যু সম্মিলিতভাবে উদ্ভিদকে দৃঢ়তা এবং যান্ত্রিক ফ্লোয়েম টিস্যু শক্তি প্রদান করা।
একবীজপত্রী উদ্ভিদের মূলের প্রস্থচ্ছেদঃ
একবীজপত্রী উদ্ভিদের মূলের প্রস্থচ্ছেদ করে অণুবীক্ষণযন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করলে বাইরে থেকে ভেতরের দিকে টিস্যুগুলো নিম্নলিখিতভাবে বিন্যস্ত থাকতে দেখা যাবে।
১. মূলত্বক বা এপিব্লেমা (Epiblema) : একস্তর বিশিষ্ট প্যারেনকাইমা কোষ সমন্বয়ে এটি গঠিত। এর কতকগুলো কোষ লম্বা হয়ে এককোষী মূলরোম গঠন করেছে।
২. কর্টেক্স (Cortex) : মূলত্বকের নিচ থেকে শুরু করে অন্তঃত্বক পর্যন্ত বিস্তৃত বহুস্তরযুক্ত গোলাকার বা ডিম্বাকার প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে এটি গঠিত। এতে আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকে।
৩. অন্তঃত্বক (Endodermis) : কর্টেক্সের নিচে V চক্রাকারে অবস্থিত পিপাকৃতির একসারি প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে এ স্তর গঠিত।
৪. পরিচক্র বা পেরিসাইকল (Pericycle) : অন্তঃত্বকের ঠিক নিচে একসারি প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে এটি গঠিত।
৫. ভাস্কুলার বান্ডল ( Vascular bundle) : ভাস্কুলার বান্ডল বা পরিবহন টিস্যুগুচ্ছের সংখ্যা ৬-এর অধিক প্রোটোজাইলেম পরিধির দিকে এবং মেটাজাইলেম ভেতরের দিকে অবস্থান করে। জাইলেমগুচ্ছের সংখ্যা ফ্লোয়েম গুচ্ছের সংখ্যার সমান এবং এরা ব্যাসার্ধের উপর পর্যায়ক্রমে সাজানো থাকে।
৬. মজ্জা রশ্মি (Medullary) : জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যুর মধ্যবর্তী প্যারেনকাইমা কোষের স্তরকে মজ্জা রশ্মি বলে।
৭. মজ্জা (Pith) : কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বৃহৎ মজ্জা প্যারেনকাইমা জাতীয় কোষ সমন্বয়ে গঠিত।
একবীজপত্রী মূলের অন্তর্গঠনগত শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যঃ
১. কিউটিকল-বিহীন মূলত্বকে এককোষী মূলরোম থাকে।
২. কর্টেক্স বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত নয়
৩. পেরিসাইকল একস্তর-বিশিষ্ট।
৪. ভাস্কুলার বান্ডল অরীয়।
৫. প্রোটোজাইলেম পরিধির দিকে এবং মেটাজাইলেম কেন্দ্রের দিকে অবস্থিত।
৬. জাইলেম এবং ফ্লোয়েম গুচ্ছের সংখ্যা ৬-এর অধিক (দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের মূলে এই সংখ্যা সাধারণত ২-৪টি)।
৭. মজ্জা বেশ বড় ।
৮. অধঃত্বক নেই।একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডের অন্তর্গঠন
একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডের প্রস্থচ্ছেদ অণুবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করলে পরিধি থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত যে টিস্যুবিন্যাস দেখা যায় তা নিম্নরূপঃ
১. এপিডার্মিস বা ত্বক : মাত্র একসারি প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে ত্বক গঠিত। ত্বকের কোষগুলোর বাইরের প্রাচীরে কিউটিনের উপস্থিতির কারণেই ত্বকের বাইরে স্কুল কিউটিকল বিদ্যমান। ত্বকে আন্তঃকোষীয় অবকাশ ও কাণ্ডরোম অনুপস্থিত । কচি কান্ডের ত্বকে পত্ররন্ধ্র থাকে। তবে বাণ্ডল বয়স বেশি হলে রন্ধ্র নাও থাকতে পারে।
২. হাইপোডার্মিস (Hypodermis বা অধঃত্বক : ত্বকের নিচে কয়েক সারি স্কুল প্রাচীর বিশিষ্ট স্ক্লেরেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত অঞ্চলটির নাম অধঃত্বক। এ স্তরে কোন আন্তঃকোষীয় অবকাশ থাকে না।
৩. ভিত্তি টিস্যু (Ground tissue) : অধঃত্বকের নিচ থেকে কাণ্ডের কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত পাতলা প্রাচীর বিশিষ্ট প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত অঞ্চলটির নাম গ্রাউন্ড টিস্যু। এ টিস্যুতে আন্তঃকোষীয় অবকাশ বিদ্যমান।
৪. ভাস্কুলার বান্ডল : ভাস্কুলার বান্ডল এর সংখ্যা অনেক এবং এরা ভিত্তিতে টিস্যুতে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছড়ানো। বাইরের দিকের ভাস্কুলার বান্ডলগুলো আকারে ছোট এবং তাদের সংখ্যা বেশি। ভেতরের দিকের ভাস্কুলার বান্ডলগুলো আকারে বড় এবং তাদের সংখ্যা কম। ভাস্কুলার বান্ডল সংযুক্ত, সমপার্শ্বীয় ও বদ্ধ। এখানে কোন ক্যাম্বিয়াম থাকে না। প্রতিটি ভাস্কুলার বান্ডল এর চারপাশে স্কেরেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত একটি আবরণী আছে । এ আবরণীটির নাম বান্ডলআবরণী (bundle sheath)।
ভাস্কুলার বান্ডল এর উপাদানগুলো নিম্নরূপ-
ক. জাইলেম : ট্রাকিড, জাইলেম প্যারেনকাইমা নিয়ে জাইলেম টিস্যু গঠিত। জাইলেম
এন্ডার্ক অর্থাৎ মেটাজাইলেম পরিধির দিকে ও প্রোটোজাইলেম কেন্দ্রের দিকে থাকে। মেটাজাইলেম ও প্রোটোজাইলেম এর অবস্থান অনেকটা Y অথবা V অক্ষরের মত। পরিণত বান্ডল এর সবচেয়ে নিচের প্রোটোজাইলেম নষ্ট হয়ে একটি পত্রীর কাঙ্গেহবরের সৃষ্টি করে। গহ্বরটির নাম লাইসিজেনাস গহ্বর। মেটাজাইলেম এর প্রাচীরের স্থুলীকরণ কৃপাঙ্কিত; কিন্তু প্রোটোজাইলেম এর প্রাচীরের বলয়াকার অথবা স্থূলীকরণ সুর্পিলাকার।
খ. ফ্লোয়েম : সিভনল ও সঙ্গী কোষের সমন্বয়ে ফ্লোয়েম টিস্যু গঠিত। এতে ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা থাকেনা ফ্লোয়েম টিস্যুর অবস্থান মেটাজাইলেম এর দুই বাহুর মাঝখানে।
একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডের অন্তর্গঠনগত শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যঃ
নিম্নবর্ণিত কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থেকে একবীজপত্রী কান্ডের প্রস্থচ্ছেদকে সহজেই শনাক্ত করা যায়।
১.কান্ডরোম সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত।
২. দুএকটি ব্যতিক্রম ছাড়া হাইপোডার্মিস সাধারণত স্ক্লেরেনকাইমা দিয়ে গঠিত।
৩. ভাস্কুলার বান্ডল সংযুক্ত, সমপার্শ্বীয় ও বদ্ধ (জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মাঝে ক্যাম্বিয়াম নেই)।
৪. ভাস্কুলার বান্ডলগুলো ভিত্তি টিস্যুতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো ।
৫. পরিধির দিকের ভাস্কুলার বান্ডলগুলো আকারে ছোট এবং কেন্দ্রের দিকের ভাস্কুলার বান্ডল আকারে বড়।
৬. জাইলেম Y অথবা V আকৃতির।