সাধারণত কম্পিউটার বলতে ডিজিটাল কম্পিউটারকে বোঝানো হয়ে থাকে। আকার-আকৃতি, মেমোরি, কাজ করার ক্ষমতা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ডিজিটাল কম্পিউটারকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক. মাইক্রো কম্পিউটার (Micro Computer )
খ. মিনি কম্পিউটার (Mini Computer)
গ. মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer )
ঘ. সুপার কম্পিউটার (Super Computer )
ক. মাইক্রোকম্পিউটার (Microcomputer)
যে কম্পিউটার মিনি কম্পিউটারের চেয়ে ছোট এবং যার মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ হিসাবে মাইক্রোপ্রসেসর বিদ্যমান তাকে মাইক্রোকম্পিউটার বলে। মাইক্রো (Micro) শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র। ক্ষুদ্রাকৃতির মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে তৈরি বলেই মাইক্রোকম্পিউটারের এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।
একাধিক বর্তনী একটি চিপে সংযুক্ত করা যায় বলে তাকে মাইক্রোপ্রসেসর বলে। গঠন ও আকৃতিগত দিক হতে মাইক্রোকম্পিউটার খুবই ছোট এবং গতিও অন্যান্য কম্পিউটারের তুলনায় কম। এ ধরনের কম্পিউটার সাধারণত একটি প্রধান প্রসেসর, প্রধান মেমোরি (RAM ও ROM), সহায়ক মেমোরি ( Hard Disk ) এবং ইনপুট আউটপুট ডিভাইস নিয়ে তৈরি করা হয়।
১৯৭৫ সালে তড়িৎ প্রকৌশলী এইচ. এডওয়ার্ড রবার্টস (H. Edward Roberts) কর্তৃক ডিজাইনকৃত Altair-880 কে প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক কম্পিউটার বা মাইক্রোকম্পিউটার হিসাবে গণ্য করা হয়। H. Edward Roberts: কে মাইক্রো কম্পিউটারের জনক বলা হয়। আমেরিকার ইন্টেল কর্পোরেশন সর্বপ্রথম ১৯৭১ সালে ইন্টেল 8008 ( Intel-4004) নামে 4 বিটের মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করে। সেটির গতি ও কর্মক্ষমতা খুবই সীমিত ছিল। বর্তমানে ব্যবহৃত মাইক্রো প্রসেসরগুলো অনেক বেশি গতি ও দক্ষতা সম্পন্ন। আকারে ছোট, দামে সস্তা ও বহনযোগ্য হওয়ায় ব্যক্তিগত কাজে এটি ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এজন্য এটিকে Personal Computer বা সংক্ষেপে PC নামেও অভিহিত করা হয়।
ব্যবহার : এ জাতীয় কম্পিউটার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কল-কারখানায়, অফিস-আদালতে, খেলাধূলায়, গৃহস্থালির কাজে, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে, ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
উদাহরণ : IBM PC TRS 80, APPLE 64 ইত্যাদি।
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে মানুষের কম্পিউটার ব্যবহারের সুবিধাগত দিক চিন্তা করে মাইক্রোকম্পিউটার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যথা-
১. ডেস্কটপ কম্পিউটার (Desktop Computer)
২. ল্যাপটপ কম্পিউটার (Laptop Computer )
৩. নোটবুক কম্পিউটার ( Note Book Computer )
৪. পামটপ কম্পিউটার (Palmtop Computer) বা পিডিএ (PDA)
১. ডেস্কটপ কম্পিউটার (Desktop Computer)
ডেস্কটপ কম্পিউটার একটি বহুল ব্যবহৃত মাইক্রোকম্পিউটার। ডেস্ক বা টেবিল স্থাপন করে ব্যবহার করা হয় বলে এটি ডেস্কটপ কম্পিউটার নামে পরিচিত। অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এটির ব্যবহার ব্যাপক পরিলক্ষিত হয়। বাজারে বিভিন্ন মডেলের ডেস্কটপ কম্পিউটার প্রচলিত আছে। যেমন-টাওয়ার, মিড টাওয়ার, ডেস্কটপ ইত্যাদি।
২. ল্যাপটপ কম্পিউটার (Laptop Computer)
সহজে বহনযোগ্য, ছোট সংস্করণের ব্রিফকেসের (briefcase) আকারের পার্সোনাল কম্পিউটার। ল্যাপ (Lap) অর্থাৎ কোলের উপর রেখে চালানো যায় বলে এর নাম হয়েছে ল্যাপটপ। এটি দেখতে অনেকটা ব্রিফকেসের মতো। ওজনে হালকা ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় দিন দিন এটির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানেও ব্যাটারির সাহায্যে এটি চালানো যায় বলে এটি সকলের কাছে জনপ্রিয়। ফলে অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন সভা সেমিনারে বক্তব্য, বিবৃতি এবং বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজে এটির ব্যবহার অতুলনীয় ।
৩. নোটবুক কম্পিউটার ( NoteBook Computer)
হাতে রেখে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুতকৃত এই কম্পিউটারগুলোর আকার নোটবুকের ন্যায়। এটি দেখতে অনেকটা নোটবুকের মতো হওয়ায় এটির নামকরণ করা হয়েছে নোটবুক কম্পিউটার। তবে হঠাৎ করে দেখলে এটিকে প্রাথমিকভাবে বড় আকারের ক্যালকুলেটর মনে হতে পারে। ওজনে হালকা, দামে কম ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় এটির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪. পামটপ কম্পিউটার (Palmtop Computer) বা পিডিএ (PDA)
PDA-এর পূর্ণরূপ হলো Personal Digital Assistants। ১৯৯৩ সালে ইলেকট্রনিক নির্মাতারা PDA তৈরি করেন। পিডিএ এর প্রাথমিক ভার্সন ছিল অ্যাপলের 'নিউটন'। এ ধরনের কম্পিউটার ক্ষুদ্রাকৃতির এবং দেখতে অনেকটা ক্যালকুলেটরের ন্যায়, যা হাতের তালুর মধ্যে রেখে ব্যবহার করা যায়, এমনকি পকেটে রেখে সহজে বহন করা যায়। এটি হেল্ড বা পকেট কম্পিউটার নামেও পরিচিত। অন্য মাইক্রোকম্পিউটারগুলো তুলনামূলকভাবে এটি সবচেয়ে ছোট এবং কম কর্মক্ষম কম্পিউটার। এ ধরনের কম্পিউটারগুলোতে কোনো প্রকার ডিস্ক ড্রাইভ থাকে না। সাধারণত টাচস্ক্রিন ও ডিজিটাল পেনের সাহায্যে এ জাতীয় কম্পিউটারগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। স্প্রেডশিটের ছোট আকারের কাজ, লেখালেখি, প্রয়োজনীয় টেলিফোন নম্বর, তারিখ, এজেন্ডা তৈরি করে রাখা ইত্যাদি কাজে এ ধরনের কম্পিউটারগুলো মূলত ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
খ. মিনি কম্পিউটার ( Mini Computer)
যে কম্পিউটার মাইক্রোকম্পিউটারের চেয়ে বড় এবং মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে ছোট তাকে মিনি কম্পিউটার বলে। মিনি কম্পিউটারের গতি, মেমোরি ও কাজ করার ক্ষমতা মাইক্রো কম্পিউটারের তুলনায় অনেক বেশি। টার্মিনালের মাধ্যমে এটিতে এক সঙ্গে একাধিক ব্যবহারকারী অনায়াসে কাজ করতে পারে। এ ধরনের কম্পিউটারে প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত সি.পি.ইউ (CPU) তে সাধারণত একক বোর্ড বিশিষ্ট সার্কিট বা বর্তনী ব্যবহার করা হয়। মাইক্রো কম্পিউটারের তুলনায় অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন। একাধিক ব্যবহারকারীর একসঙ্গে ব্যবহারের সুবিধা থাকায় মিনি কম্পিউটার বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত গবেষণা ও বিশ্লেষণে, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণ : আইবিএম (IBM) কোম্পানির IBM S/34, IBM S / 36 NCR S / 9290, PDP11 ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য মিনি কম্পিউটার।
ব্যবহার : মিনি কম্পিউটার দ্বারা ব্যাংকের হিসাব-নিকাশ করা যায়।
গ. মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)
যে কম্পিউটারটি মিনি ও মাইক্রোকম্পিউটারের চেয়ে বড় এবং সুপার কম্পিউটারের চেয়ে ছোট কিন্তু স্বল্প সময়ে অধিক কাজ করতে সক্ষম তাকে মেইনফ্রেম কম্পিউটার বলে। এ জাতীয় কম্পিউটারের অনেকগুলো ইনপুট ও আউটপুট যন্ত্র এবং সহায়ক স্মৃতির সংখ্যা থাকে। মেইনফ্রেম হচ্ছে এমন একটি বড় কম্পিউটার যার সাথে টার্মিনাল যুক্ত করে একসাথে অনেক মানুষ কাজ করতে পারে। বৃহদাকার মেইনফ্রেম কম্পিউটারের সঙ্গে সহস্রাধিক ডাম্ব টার্মিনাল (Dumb Terminal) ব্যবহার করা হয় ।
এ কম্পিউটারে একাধিক তথ্য প্রক্রিয়াকরণ অংশ থাকে। মেইনফ্রেম কম্পিউটারগুলোর শব্দ দৈর্ঘ্য (Word length) ৩২ – ১৩২ বিট পর্যন্ত। বড় বড় প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকে। ব্যাংক, বীমা, অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান এবং বৈজ্ঞানিক কর্মতৎপরতার পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়নের জন্য মেইনফ্রেম কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
আশির দশকের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মেইনফ্রেম কম্পিউটার স্থাপন করে বাংলাদেশে পরমাণু শক্তি কমিশন। এরপর বাংলাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত হয়।
উদাহরণ : UNIVAC 1100, IBM 1620, IBM 4341, NCR 8370 ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য মেইনফ্রেম কম্পিউটার।
ব্যবহার : এই ধরনের কম্পিউটার ব্যাংকে, কারখানায়, শিক্ষাবোর্ডে, পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে ব্যবহৃত হয়।
ঘ. সুপার কম্পিউটার (Super Computer )
যে কম্পিউটার আকার আকৃতির দিক থেকে অন্যান্য কম্পিউটারের চেয়ে অত্যধিক বড় ও শক্তিশালী এবং দ্রুতগতি সম্পন্ন তাকে সুপার কম্পিউটার বলে। আকৃতিগত দিক হতে সর্ববৃহৎ এই কম্পিউটারগুলোর তথ্য সংরক্ষণ ক্ষমতা, তথ্য প্রক্রিয়াকরণের গতি অবিশ্বাস্য রকমের। সুপার কম্পিউটারের সাহায্যে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও জটিল বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের কাজ করা যায়। বর্তমানে ব্যবহৃত সুপার কম্পিউটারগুলোতে একসঙ্গে একাধিক প্রসেসর ব্যবহার করা হয়। সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক গবেষণা, বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ, নভোযান, জঙ্গি বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, মহাকাশ গবেষণা, পরমাণু গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুপার কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ : USA এর তৈরি ETA O2P, জাপানের তৈরি SUPER SXII, CYBER 205, CRAY 1, X-MP ইত্যাদি।
শ্রেণির কাজ : ছকে বিভিন্ন কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য দেওয়া আছে। এগুলোর মধ্য থেকে কোনগুলো বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়, সেই কম্পিউটারের নাম লিখো। |
---|
আরও দেখুন...