তোমরা জান একটি চুম্বক দিয়ে অন্য চুম্বকের উপর বল প্রয়োগ করা যায়। অন্যভাবে আমরা বলতে পারি একটি চৌম্বক ক্ষেত্র দিয়ে অন্য একটি চৌম্বক ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করা যায়। একটি তারের ভেতর দিয়ে খুব বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা যায় না, তাই সেটি খুব বড় চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে না। কাজেই অন্য একটি চৌম্বক ক্ষেত্র দিয়ে তার ওপর শক্তিশালী বল প্রয়োগ করা যায় না। তোমরা দেখেছ যদি অনেকগুলো পাক দিয়ে একটা তারের কুণ্ডলী তৈরি করা যায় এবং তার ভেতরে একটা লোহার টুকরো বা আর্মেচার রাখা হয় তাহলে তারের ভেতর হালকা বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হলেই সেটি একটি তাড়িতচুম্বক বা ইলেকট্রোম্যাপনেট হয়ে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। এই কয়েলকে আমরা একটা দণ্ড চুম্বক হিসেবে কল্পনা করে অন্য চৌম্বক ক্ষেত্রে তাকে রাখা হলে সেটি কী ধরনের আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মুখোমুখি হবে এবং সে কারণে সেটির কোন দিকে গতি হবে সেটা বিশ্লেষণ করতে পারি। 12.10 চিত্রে এ রকম একটা তাড়িতচুম্বককে অন্য একটি চৌম্বক ক্ষেত্রে বিকর্ষণ বলের কারণে কীভাবে তার অবস্থান পরিবর্তন করবে সেটি দেখানো হয়েছে।তাড়িতচুম্বকটিকে যদি তার কেন্দ্র বরাবর একটা অক্ষে ঘুরতে দেওয়া হয় তাহলে এটি পরের চিত্রের মতো অবস্থানে যাবার চেষ্টা করবে।
চিত্র 12.10 : বৈদ্যুতিক মোটর একটি তাড়িতচুম্বকের ভেতর দিয়ে এমনভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহ করানো হয়, যেন সব সময়েই এটি ঘুরতে থাকে
যদি কোনো বিশেষ অবস্থা তৈরি করে পরের অবস্থানে যাবার সাথে সাথে তাড়িতচুম্বকটির বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক পরিবর্তন করে দেওয়া যায় তাহলে সেখানে পৌঁছানোর সাথে সাথে কয়েল দিয়ে তৈরি দণ্ড চুম্বকটির উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরুতে আর দক্ষিণ মেরু উত্তর মেরুতে পাল্টে যাবে, তাই বিকর্ষণের কারণে আবার সেটি সরে যাবার চেষ্টা করবে অর্থাৎ এটি একটি ঘূর্ণন বল অনুভব করবে। এটি চেষ্টা করবে পরের স্থায়ী অবস্থানে পৌঁছাতে কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর সাথে সাথে আবার এটার বিদ্যুতের দিক পরিবর্তন করে দিলে এটি সেখানে থেমে যাবে না, আবার ঘুরতে শুরু করবে। তাই যখনই এটা একটা স্থায়ী অবস্থানে পৌঁছাবে তখনই যদি এটাতে এমনভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহ করানো হয় যেন বিকর্ষণের কারণে এটি একটি ঘূর্ণন বল অনুভব করে তাহলে এটি ঘুরতেই থাকবে।
বিদ্যুতের দিক পরিবর্তন করার জন্য কম্যুটেটর নামে একটি উপকরণের মাধ্যমে খানিকটা যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করতে হয়। মূল কয়েল যে অক্ষে ঘুরতে থাকে সেই ঘূর্ণায়মান অক্ষটির দুই পাশে তড়িৎ চুম্বকের দুটি তার এমনভাবে বসানো হয় যেন সেটি কম্যুটেটরে মূল বিদ্যুৎ প্রবাহের টার্মিনালকে স্পর্শ করে থাকে। যখনই স্পর্শ করে তখনই এমনভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করবে যেন সব সময়ই সেটি তাড়িতচুম্বক টিঁকে বিকর্ষণ করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। মাঝামাঝি সময়ে যখন এটি মূল বিদ্যুৎ প্রবাহের টার্মিনাল থেকে সরে যাওয়ার কারণে তাড়িতচুম্বকটিতে কোনো বিদ্যুৎ প্রবাহ হয় না তখনো এটি থেমে না গিয়ে গতি জড়তার কারণে ঘুরতে থাকে ।
আরও দেখুন...