সপ্তম অধ্যায়
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব
প্রত্যেক ধর্মেই কিছু আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব থাকে। বৌদ্ধধর্মেও আছে। আমরা পূর্ববর্তী শ্রেণিতে বৌদ্ধধর্মীয় কিছু আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব সম্পর্কে জেনেছি। এসব আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে ধর্মীয় বিষয়ের পাশাপাশি সমাজ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কেও অনেক কিছু শেখা যায়। প্রত্যেকটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের স্বতন্ত্র শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এসব জানার জন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানসমূহে অংশগ্রহণ করা উচিত। এছাড়া ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে কঠিন ধর্মীয় তত্ত্ব বুঝতে সহজ হয়। ধর্মীয় কঠোর নিয়ম-নীতি মেনে চলতে উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও সৌভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। তাই এসব আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসবের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এ অধ্যায়ে আমরা কতিপয় বৌদ্ধধর্মীয় আচার- র-অনুষ্ঠান ও উৎসব সম্পর্কে পড়ব।
এ অধ্যায় শেষে আমরা-
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসবের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব।
প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারব।
শ্রামণ্য জীবনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব ।
সুফলসহ সংঘদান ও অষ্ট পরিষ্কার দান বর্ণনা করতে পারব।
পাঠ : ১
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসবের গুরুত্ব
আচার-অনুষ্ঠান ধর্মের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। গৌতমবুদ্ধ তাঁর ধর্ম প্রচারের প্রথম দিকে আচার- অনুষ্ঠানের কোনো বিধি প্রবর্তন করেননি। তিনি বলেছিলেন অন্তরের মধ্যে আলোক উৎপাদনই হলো ধর্মের মূল লক্ষ্য। এই আলোক হলো জ্ঞান বা প্রজ্ঞা। এই আলো প্রজ্জ্বলনের সাধনা অত্যন্ত কঠিন। শান্ত ও স্থির চিত্তে গভীর একাগ্রতার মাধ্যমে এ সাধনা করতে হয়। কিন্তু আমাদের মন বা চিত্ত বড়ই চঞ্চল। এটিকে বশে আনার জন্য কোনো একটি অবলম্বন দরকার। এখানে অবলম্বন হলো চিন্তাশীল কোনো কাজ, যার মাধ্যমে মন বা চিত্তকে স্থির রাখা যায়। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসবসমূহ মনকে স্থির রাখার অবলম্বন হিসেবে ভূমিকা পালন করে। ধর্ম ও নৈতিকতার পথে পরিচালিত করে। এজন্য তথাগত বুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান উদযাপনের উপদেশ প্রদান করেন।
ফর্মা-ই বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা-অষ্টম শ্রেণি
বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য চিত্তের বিকাশ সাধন ও পুণ্য অর্জন। এগুলোর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত গুরুত্বও রয়েছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ করে সকলে এক স্থানে মিলিত
হয়। এতে পরস্পরের ভাব বিনিময় হয়। সামাজিক সম্প্রীতি সুদৃঢ় হয়।
গৌতমবুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ সূত্রে সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণের উপদেশ দিয়েছেন। এতে তিনি সাতটি অনুশীলনীয় নীতির কথা বলেছেন, যা 'সপ্ত অপরিহানীয় ধর্ম" নামে পরিচিত। এ নীতিগুলো পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে ঐক্য, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি আনয়নে সহায়ক। এ প্রসঙ্গে দুটি নীতি উল্লেখ করা হলো : ১। সভা সমিতির মাধ্যমে যারা সব সময় একত্র হয় তাদের শ্রীবৃদ্ধি হয়। ২। যারা একতাবদ্ধভাবে সভা-সমিতিতে সম্মিলিত হয়, সভা শেষ হলে এক সঙ্গে চলে যায় এবং কোনো কিছু করার কারণ ঘটলে সম্মিলিতভাবে করে, তাদের উন্নতি ছাড়া অবনতি হয় না। সুতরাং সমাজের সকলের সাথে মাঝে মাঝে মিলিত হওয়া, মত বিনিময় করা অত্যাবশ্যক। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও উৎসবসমূহ সম্মিলিত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। সদান, অষ্টপরিষ্কার দান, প্রব্রজ্যা, উপসম্পদা প্রভৃতি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও সমাজের নানা শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সাক্ষাত ও ভাব বিনিময় হয়। অনুষ্ঠানগুলো সম্মিলিতভাবে উদ্যাপন করার মধ্যেও আনন্দ আছে।
পূজোপকরণ নিয়ে বিহারে যাচ্ছেন
এছাড়া পুণ্য অর্জনের ক্ষেত্রেও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যেমন: থের গাথার রাষ্ট্রপাল স্থবিরের জীবনীতে দেখা যায় তিনি গৌতম বুদ্ধের পূর্ববর্তী ফুসুস বুদ্ধের সময় একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি রাজকর্মচারীর পদ গ্রহণ করেন। একদিন রাজপুত্ররা বৃদ্ধ ও তাঁর শিষ্যদের দান দিতে দেখে তিনিও শ্রদ্ধা চিত্তে দানকর্মে সহায়তা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব
৬৭
করেন। এ সময় তিনি ভবিষ্যত জীবনে বুদ্ধ শিষ্য হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। দানকার্যে শ্রদ্ধা চিত্তে সহায়তার কারণে তিনি গৌতম বুদ্ধের সময় জন্মগ্রহণ করে বুদ্ধের শিষ্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অসীম পুণ্য অর্জিত হয়েছে এরূপ অসংখ্য কাহিনী বৌদ্ধ সাহিত্যে পাওয়া যায়। সুতরাং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম। ভাই আমাদের সকল প্রকার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা উচিত।
অনুশীলনমূলক কাজ
বৌদ্ধদের কয়েকটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসবের নাম বলো
পাঠ : ২
প্রব্রজ্যা
পারিবারিক জীবন ত্যাগ করে বৌদ্ধ রীতিতে সন্ন্যাস অবলম্বনের নাম প্রব্রজ্যা। প্রব্রজ্যা বৌদ্ধ সন্ন্যাস জীবনের প্রথম পর্যায়। এটিকে শ্রমণ হওয়া বা শ্রামণ্যধর্মে দীক্ষিত হওয়াও বলে। এটি বৌদ্ধদের পুণ্যময় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান; সংসার ত্যাগের মাধ্যমে মুক্তির পথ অনুসন্ধানের প্রথম পদক্ষেপ। বৌদ্ধ মাত্রই জীবনে একবার হলেও প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে থাকে। পরম শান্তিময় নির্বাণে উপনীত হওয়াই প্রব্রজ্যা গ্রহণের অন্যতম উদ্দেশ্য।
প্রব্রজ্যার অর্থ হলো সকল প্রকার পাপকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখার অঙ্গীকার। পালি ভাষায় বলা হয়- পাপকানং মলং পব্বাজেতী তি পৰ্ব্বজিতো। অর্থাৎ নিজের পাপমল বর্জনে সংকল্পবদ্ধ হন বলেই তাঁকে প্রব্রজিত বলা হয়।
প্রব্রজ্যা গ্রহণ গৃহীদের সর্বোৎকৃষ্ট মঙ্গল কাজ। বুদ্ধের মতে, গর্ভে পতিত হলে মানুষের মুক্তি যেমন কষ্টকর, সেরূপ সংসারে আবদ্ধ হলে সেখান থেকে নিষ্কৃতি পাওয়াও দুষ্কর। মানুষ সহজে লোভ-দ্বেষ-মোহ থেকে মুক্ত হতে পারে না। সেজন্য বুদ্ধ সংসারকে কারাগার এবং প্রব্রজ্যাকে উন্মুক্ত আকাশের সাথে তুলনা করেছেন। তাই অনেকে ধন-সম্পদ, পরিবার-পরিজন এবং ভোগ- ঐশ্বর্য পরিত্যাগ করে নির্বাণের সন্ধানে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন। সেজন্য কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য হলেও সন্তানদের প্রব্রজ্যা দেওয়া প্রত্যেক মাতাপিতার কর্তব্য। প্রব্রজ্যা প্রদানের মাধ্যমে মাতাপিতা সন্তানকে ধর্মীয় নীতি-আদর্শ শেখার এবং বিশুদ্ধ জীবনযাপন করার সুযোগ করে দেন।
প্রব্রজ্যা গ্রহণের নিয়ম
প্রব্রজ্যা প্রার্থীকে প্রথমে মাতা-পিতার অনুমতি নিতে হয়। প্রব্রজ্যা গ্রহণের দিন মস্তক মুণ্ডন করতে হয়।
তারপর ভিক্ষু শ্রমণদের ব্যবহার্য অষ্টপরিষ্কার নিয়ে বিহারে উপস্থিত হতে হয়। অষ্টপরিষ্কার বা আটটি বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
প্রয়োজনীয় দ্রব্য হলো ১। সঙ্ঘাটি, যাকে দোয়াজিকও বলা হয়। এ চীবরটি ভাঁজ করে কাঁধে রাখা হয়। ২। উত্তরাসঙ্গ, যাকে একাজিক বা বহিবাস বলা হয়। এ চীবরটি দ্বারা শরীরের ঊর্ধ্বাংশ আবৃত করা হয়, ৩। অন্তর্বাস এ চীবর শরীরের নিম্নাংশ আবৃত করার জন্য পরিধান করা হয়, ৪। ভিক্ষাপাত্র, ৫। ক্ষুর, ৬। সূঁচ- সূতা, ৭। কটিবন্ধনী (কোমরবন্ধনী) এবং ৮। জলছাঁকনি। এগুলোসহ বিহারাধ্যক্ষের কাছে প্রব্রজ্যা প্রার্থনা করতে হয়। অষ্টপরিষ্কারসমূহ সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে হয়। চীবর তিনটি ক্রমান্বয়ে গোলাকার করে মুড়িয়ে মন্দিরের চূড়ার মতো করে সাজাতে হয়। চীবরের চূড়াটি কটিবন্ধনী নিয়ে বাঁধতে হয়। তারপর ভিক্ষাপাত্রে রাখা হয়। অন্যান্য দ্রব্যগুলোও ভিক্ষাপাত্রে রাখা হয়।
চারসহ ভিক্ষাপা
সাত বছরের কম বয়সের ছেলেকে প্রব্রজ্যা দেওয়ার বিধান নেই। কারণ এ বয়সে মানুষের উপলদ্ধিবোধ পরিপক্ক হয় না। আবার যে ভিক্ষু কমপক্ষে দশ বছর তিক্ষুজীবন পূর্ণ করেননি তিনি প্রব্রজ্যা প্রদান করতে পারেন না। সুতরাং প্রব্রজ্যা প্রার্থীকে আগেই আচার্য ঠিক করে নিতে হয়। আচার্যকে গুরুও বলা হয়। প্রব্রজ্যা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভিক্ষুদের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠ তাঁর পরামর্শে অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। তাঁকে বলা হয় উপাধ্যায়। উপাধ্যায় প্রব্রজিতকে নতুন নাম প্রদান করেন। প্রব্রজিত ব্যক্তি প্রব্রজ্যার পর হতে নতুন নামেই পরিচিত হন।
প্রব্রজ্যাপ্রার্থীকে প্রথমে ত্রিশরণসহ পঞ্চশীল গ্রহণ করতে হয়। শুদ্ধভাবে এবং স্পষ্টরূপে ত্রিশরণ উচ্চারণ করতে হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত গৃহীরাও সমবেতভাবে পঞ্চশীল গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, প্রব্রজ্যা নাতা এবং প্রব্রজ্যাপ্রার্থী উভয়ের উচ্চারণ স্পষ্ট ও শুদ্ধ হওয়া বাঞ্চনীয়। পঞ্চশীল গ্রহণ করার পর প্রব্রজ্যাপ্রার্থী ভিক্ষুদের কাছে প্রব্রজ্যা শীল প্রার্থনা করেন। প্রব্রজ্যাশীলকে দশশীলও বলা হয়।
প্রব্রজ্যা প্রার্থনা
প্রব্রজ্যা প্রার্থনার সময় প্রব্রজ্যা প্রার্থীকে বিশেষ নিয়মে বসতে হয়। গোলাকার চীবরের চূড়াটি দুই হাতে ধরে কপালে লাগাতে হয়। তারপর পায়ের আঙুলের ওপর ভর রেখে দুই হাঁটু জোড় করে বসতে হয়। নিম্নোক্ত প্রার্থনাটি গভীরভাবে অর্থ উপলব্ধি করে বলতে হয় :
ওকাস অহং ভয়ে পবং যাচামি।
সুতিযাম্পি অহং ভন্তে পবন্ধং যাচামি। ততিষম্পি অহং ভন্তে পরবজ্জং যাচামি।
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব
বাংলা অনুবাদ : ভন্তে, অবকাশ প্রদান করুন, আমি প্রব্রজ্যা প্রার্থনা করছি।
দ্বিতীয়বারও ভন্তে, আমি প্রব্রজ্যা প্রার্থনা করছি।
তৃতীয়বারও ভঙে, আমি প্রব্রজ্যা প্রার্থনা করছি।
এরপর প্রব্রজ্যা প্রার্থনার উদ্দেশ্য ও কারণ হিসেবে নিচের প্রার্থনাটি করতে হয়।
সব্বদুখ নিসরণ নির্ব্বাণ সচ্ছিকরণথায় ইমং কাসাবা গহেতা পব্বাজের মং ভক্তে, অনুকম্পং উপাদায়। দুতিযাম্পি সব্বদুখ নিসৃসরণ নির্ব্বাণ সচ্ছিকরণথায় ইমং কাসাবং গহেড়া পৰ্ব্বাজের মং ভন্তে, অনুকম্পং উপাদায়।
ততিযম্পি সব্বদুখ নিসৃসরণ নির্ব্বাণ সচ্ছিকরণথায় ইমং কাসাবং গহেতা পব্বাজের মং ভন্তে, অনুকম্পং উপাদায়।
বাংলা অনুবাদ : ভন্তে, সমস্ত দুঃখ থেকে মুক্তিলাভ ও নির্বাণ প্রত্যক্ষ করার জন্য অনুগ্রহ করে এই কাযায় বস্ত্র (চীবরসমূহ) গ্রহণ করে আমাকে প্রব্রজ্যা প্রদান করুন।
দ্বিতীয়বার ভন্তে, সমস্ত দুঃখ থেকে মুক্তিলাভ ও নির্বাণ প্রত্যক্ষ করার জন্য অনুগ্রহ করে এই
কাযায় বস্ত্র (চীবরসমূহ) গ্রহণ করে আমাকে প্রব্রজ্যা প্রদান করুন ।
তৃতীয়বার ভস্তে, সমস্ত দুঃখ থেকে মুক্তিলাভ ও নির্বাণ প্রত্যক্ষ করার জন্য অনুগ্রহ করে এই কাষায় বস্ত্র (চীবরসমূহ) গ্রহণ করে আমাকে প্রব্রজ্যা প্রদান করুন ।
তারপর প্রব্রজ্যা প্রার্থীকে দীক্ষাদানকারী আচার্যের হাতে চীবরসমূহ তুলে দিতে হয়। অতঃপর
হাতজোড় করে নিচের প্রার্থনাটি করতে হয়।
সব্বদুখ নিসরণ নির্ব্বাণং সচ্ছিকরণথায় এবং কাসাব দত্বা পব্বাজের মং ভন্তে, অনুকম্পং উপাদায়। দুতিযাম্পি সব্বদুখ নিসরণ নির্ব্বাণং সচ্ছিকরণখায় এবং কাসাবং দত্ত্বা পৰ্ব্বাজের মং ভন্তে, অনুকম্পং উপাদায ।
অভিযম্পি সাদুখ নিসরণ নির্ব্বাণ সচ্ছিকরণখায় এবং কাসাবং দত্বা পব্বাজেথ মং ভন্তে,
অনুকম্পং উপাদায়।
বাংলা অনুবাদ : ভন্তে, সমস্ত দুঃখ থেকে মুক্তিলাভ ও নির্বাণ প্রত্যক্ষ করার জন্য অনুগ্রহ করে এই কাষায় বস্ত্র (চীবরসমূহ) দিয়ে আমাকে প্রব্রজ্যা প্রদান করুন ।
দ্বিতীয়বার ভন্তে, সমস্ত দুঃখ থেকে মুক্তিলাভ ও নির্বাণ প্রত্যক্ষ করার জন্য অনুগ্রহ করে এই
কাষায় বক্স (চীবরসমূহ) দিয়ে আমাকে প্রব্রজ্যা প্রদান করুন বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
তৃতীয়বার ভন্তে, সমস্ত দুঃখ থেকে মুক্তিলাভ ও নির্বাণ প্রত্যক্ষ করার জন্য অনুগ্রহ করে এই
কাষায় বস্ত্র (চীবরসমূহ) দিয়ে আমাকে প্রব্রজ্যা প্রদান করুন অতঃপর, উপাধ্যায় শরীরের বত্রিশ প্রকার অশুভ বিষয় হতে প্রথম পাঁচটিকে নিয়ে কর্মস্থান ভাবনা দেন। এগুলো হলো কেসা, লোমা, নখা, দস্তা, তচো। এটি অনুলোম প্রতিলোমাকারে উচ্চারণ
-
করতে হয়। তারপর চীবর প্রত্যবেক্ষণ ভাবনার মাধ্যমে চীবর গ্রহণ করতে হয়। ভাবনাটি এরূপ :
পটিসঙ্ঙ্খা যোনিসো চীবরং পটিসেবামি, যাবদের সীতস পাটখাতায় উহস্স পটিঘাতায়, ডংস- মকস- বাতাতপ-সিরিংসপ সক্ষসানং পটিঘাতায়, যাবদেব হিরিকোপীনং পটিচ্ছাদনখং ।
বাংলা অনুবাদ: সজ্ঞানে মনোযোগ সহকারে স্মরণ করতে আমি এ চীবর পরিধান করছি। এ চীবর শুধু শীত ও উষ্ণতা নিবারণ, দংশক-মশক-ধুলাবায়ু-রৌদ্র-সরীসৃপ ও বৃশ্চিকাদির আক্রমণ ও দংশন নিবারণ এবং লজ্জা নিবারণের জন্যে।
এ ভাবনা গ্রহণের পর গৃহী পোশাক পরিত্যাগ করে চীবর পরিধান করা হয়। চীবর পরিধান করে ভিক্ষুসঙ্গের সামনে এসে প্রব্রজ্যা শীল বা দশশীল প্রার্থনা করতে হয়। এ সময় উপাধ্যায় বা আচার্য দশশীল প্রদান করেন। দশশীল গ্রহণের পর প্রব্রজ্যা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। দশশীল হলো প্রব্রজিতদের নিত্য পালনীয় দশটি নিয়ম। এরপর প্রব্রজিত শ্রমণকে নতুন নাম প্রদান করা হয় । প্রব্রজিত ব্যক্তি যতদিন দীক্ষিত অবস্থায় থাকেন ততদিন এ নামে পরিচিত হন। প্রব্রজ্যা দান সম্পন্ন হলে উপস্থিত দায়ক-দায়িকাগণ প্রব্রজিতকে অভিবাদন জানিয়ে নানা দ্রব্য সামগ্রী দান করেন। প্রব্রজ্যা কার্যক্রমের প্রত্যেকটি পর্যায় ক্রমান্বয়ে সম্পন্ন করতে হয়, যাতে প্রব্রজ্যা প্রার্থীর কাছে প্রতিটি ধাপের পরিবর্তন সহজে বোধগম্য হয় । এভাবে প্রব্রজ্যা প্রার্থী তাঁর জীবনের পরিবর্তন যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে সমর্থ হন।
অনুশীলনমূলক কাজ
কত বছরের কম বয়সের ছেলেকে প্রব্রজ্যা প্রদান করা যায় না? প্রত্যবেক্ষণ ভাবনাটির বাংলা অনুবাদ বলো।
দশশীল কাদের নিত্যপালনীয় শীল?
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব
পাঠ :
প্রব্রজ্যার সুফল
প্রব্রজ্যা এক প্রকার বিশুদ্ধ জীবনচর্চা ব্রত। এটিকে মুক্ত জীবনও বলা যায় । এরূপ ব্রত গ্রহণের জন্য প্রথমে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হয়। কারণ এ জীবন সাধারণ জীবনধারা থেকে ব্যতিক্রম। নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে হয় দৈনন্দিন জীবন। প্রব্রজিতদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এগুলো শারীরিক ও মানসিকভাবে পালন করতে হয়। তাঁদের নৈতিক জীবনযাপন ও সর্বদা কুশল কর্ম সম্পাদনে সচেষ্ট থাকতে হয়। সকল প্রকার পাপকর্ম হতে বিরত থাকতে হয়। নির্বাণ লাভের জন্য উদ্যমী হতে হয়। ফলে প্রব্রজিতের জীবন পঙ্কিলতামুক্ত থাকে । তিনি নৈতিক শক্তিতে বলিয়ান থাকে। নির্মল আনন্দের অধিকারী হন। এসব গুণের জন্য সকলের শ্রদ্ধা লাভ করেন। এছাড়াও প্রব্রজ্যার অনেক সুফল রয়েছে।
ধ্যানরত একজন ম
নিচে প্রব্রজ্যার কতিপয় সুফল বর্ণিত হলো :
১। কায়, বাক্য ও মনোদ্বার সংযত হয়।
২। রাগ, দ্বেষ, মোহ প্রশমিত হয়।
৩। অকুশল কর্মচেতনা বিনাশ হয় ।
৪। কুশলকর্ম সম্পাদনে ব্রতী হন ।
৫। অল্প লাভে সন্তুষ্ট থাকেন।
৬। জ্ঞান সাধনায় প্রত্যয়ী হন ।
৭। ভিক্ষুজীবন গ্রহণে আগ্রহী হন।
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব
পাঠ :
প্রব্রজ্যার সুফল
প্রব্রজ্যা এক প্রকার বিশুদ্ধ জীবনচর্চা ব্রত। এটিকে মুক্ত জীবনও বলা যায় । এরূপ ব্রত গ্রহণের জন্য প্রথমে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হয়। কারণ এ জীবন সাধারণ জীবনধারা থেকে ব্যতিক্রম। নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে হয় দৈনন্দিন জীবন। প্রব্রজিতদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এগুলো শারীরিক ও মানসিকভাবে পালন করতে হয়। তাঁদের নৈতিক জীবনযাপন ও সর্বদা কুশল কর্ম সম্পাদনে সচেষ্ট থাকতে হয়। সকল প্রকার পাপকর্ম হতে বিরত থাকতে হয়। নির্বাণ লাভের জন্য উদ্যমী হতে হয়। ফলে প্রব্রজিতের জীবন পঙ্কিলতামুক্ত থাকে । তিনি নৈতিক শক্তিতে বলিয়ান থাকে। নির্মল আনন্দের অধিকারী হন। এসব গুণের জন্য সকলের শ্রদ্ধা লাভ করেন। এছাড়াও প্রব্রজ্যার অনেক সুফল রয়েছে।
ধ্যানরত একজন ম
নিচে প্রব্রজ্যার কতিপয় সুফল বর্ণিত হলো :
১। কায়, বাক্য ও মনোদ্বার সংযত হয়।
২। রাগ, দ্বেষ, মোহ প্রশমিত হয়।
৩। অকুশল কর্মচেতনা বিনাশ হয় ।
৪। কুশলকর্ম সম্পাদনে ব্রতী হন ।
৫। অল্প লাভে সন্তুষ্ট থাকেন।
৬। জ্ঞান সাধনায় প্রত্যয়ী হন ।
৭। ভিক্ষুজীবন গ্রহণে আগ্রহী হন।
পাঠ : ৪
উপসম্পদা
শ্রমণ থেকে ভিক্ষু হওয়ার যে অনুষ্ঠান তার নাম উপসম্পদা। উপসম্পদা হচ্ছে উচ্চতর নিয়ম- নীতি সম্পাদনের ব্রত। প্রয়োজনীয় শিক্ষণীয় বিষয় সমাপ্তির পর উপসম্পদা দিতে হয়। মানসিকভাবে অসুস্থ ঋণগ্রন্থ, রাষ্ট্রীয় দণ্ডপ্রাপ্ত প্রভৃতি ব্যক্তি উপসম্পদার যোগ্য নয় ।
সরাসরি উপসম্পদা প্রদান করা হয় না। আগে প্রব্রজিত হয়ে শ্রামণ্যধর্মে দীক্ষিত হতে হয় । উপসম্পদার জন্য কমপক্ষে বিশ (কুড়ি) বছর বয়স হতে হয়। উপসম্পদা প্রার্থীকে মাতাপিতার অনুমতি নিতে হয়। অতঃপর ভিক্ষুদের ব্যবহার্য অষ্টপরিষ্কার নিয়ে কোনো ভিক্ষুর শরণাপন্ন হতে হয়। সেই ভিক্ষুই সাধারণত তাঁর উপাধ্যায় বা শুরু হন। ভিক্ষুদের উপোসথের স্থান ভিক্ষুসীমায় বসে উপসম্পদা কার্য সম্পন্ন করতে হয়। কোনো বিহারে ভিক্ষুসীমা না থাকলে, যে নদী বা খালে জোয়ার ভাটা হয় সেখানেও উপসম্পদা দেয়া যায়। এখানে নৌকায় বসে করণীয় সম্পন্ন করতে হয়। এর নাম 'উদকসীমা উপসম্পদা'।
98
বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
উপসম্পদার জন্য কমপক্ষে পাঁচজন ভিক্ষুর প্রয়োজন হয়। প্রথমে প্রার্থীকে উপরে বর্ণিত দোষসমূহ আছে কিনা জিজ্ঞেস করা হয়। তারপর অভিভাবকের মতামতের কথা জেনে উপসম্পদার অনুমতি প্রদান করা হয়। উপসম্পদা প্রার্থীকে উপসম্পদা প্রদান স্থানে বসে উপস্থিত ভিক্ষুদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে উপসম্পদা প্রার্থনা করতে হয়। প্রার্থনাটি নিম্নরূপ :
সঙ্ঘং ভন্তে উপসম্পদং যাচামি, উল্লম্পতু মং ভন্তে সংঘো- অনুকম্পং উপাদায়
দুতিযম্পি সঙ্ঘং ভস্তে উপসম্পদং যাচামি, উল্লম্পতু মং ভন্তে সংযো- অনুকম্পং উপাদায় । ততিযম্পি সঙ্ঘং ভন্তে উপসম্পদং যাচামি, উল্লম্পতু মং ভন্তে সংঘো- অনুকম্পং উপাদায়।
বাংলা অনুবাদ :
মাননীয় সঙ্ঘ, আমি উপসম্পদা প্রার্থনা করছি। উচ্চতর মার্গ লাভের জন্য অনুগ্রহ করে আমাকে উপসম্পদা দিন।
দ্বিতীয়বার সঙ্ঘ, আমি উপসম্পদা প্রার্থনা করছি। উচ্চতর মার্গ লাভের জন্য অনুগ্রহ করে আমাকে
উপসম্পদা দিন।
তৃতীয়বার সঙ্ঘ, আমি উপসম্পদা প্রার্থনা করছি। উচ্চতর মার্গ লাভের জন্য অনুগ্রহ করে আমাকে উপসম্পদা দিন।
এরপর উপস্থিত সঙ্ঘ সকলের সম্মতি সাপেক্ষে 'কর্মবাচা' পাঠ করে প্রার্থীকে উপসম্পদা প্রদান করেন। কর্মবাচা হলো ভিক্ষুর কর্মনীতির একটি অংশ। এর মাধ্যমে উপসম্পদা লাভকারী ভিক্ষু হিসেবে পরিচিত হন এবং সঙ্ঘের সদস্য হন। উপসম্পদা লাভের পর হতে নিয়মিতভাবে ভিক্ষুসঙ্ঘের জন্য অনুশীলনীয় সকল নিয়ম-নীতি পালন করতে হয়।
নব উপসম্পন্ন ভিক্ষু আচার্য বা গুরুর কাছে নিয়মিতভাবে ধর্ম বিনয় শিক্ষা করেন। প্রয়োজনে জরুর অনুমতি সাপেক্ষে উপযুক্ত অন্য আচার্যের অধীনেও শিক্ষা লাভ করতে পারেন। একজন ভিক্ষুকে উপাধ্যায় ও আচার্যের কাছে শিক্ষানুরাগী হয়ে কমপক্ষে পাঁচ বছর থাকতে হয়। এ সময় তিনি ভিক্ষুদের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতিসমূহ চর্চা করেন। পাতিমোখ নামক গ্রন্থে ভিক্ষুদের নিত্য প্রতিপাল্য ২২৭টি শীল বা অনুশীলনীয় নীতি বর্ণিত আছে। এগুলো প্রত্যেকটি যথাযথভাবে ভিক্ষুদের জানতে ও পালন করতে হয়।
: ৫
সঙ্ঘদান ও অষ্ট পরিষ্কার দান
বৌদ্ধধর্মে দান হলো একটি অন্যতম আচরণীয় বিষয়। তাই নানাভাবে নানা আঙ্গিকে বৌদ্ধধর্মে দানের অনুশীলন হয়। তন্মধ্যে সঙ্ঘদান এবং অষ্টপরিষ্কার দান অন্যতম। নিচে পৃথকভাবে সঙ্ঘদান ও অষ্টপরিষ্কার দান অনুষ্ঠানের বর্ণনা প্রদান করা হলো।
আরও দেখুন...