পদার্থের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ১ম পত্র | | NCTB BOOK
1

৭.১। পদার্থের আন্তঃআণবিক বল

Intermolecular Forces of Matter

পদার্থ অণু ও পরমাণু দিয়ে গড়া। বিভিন্ন পরমাণুর মধ্যে ক্রিয়াশীল বলের জন্য গঠিত হয় অণু আর বিভিন্ন অণুর মধ্যে ক্রিয়াশীল বলের জন্য গঠিত হয় পদার্থ। অণুগুলোর পরস্পরের মধ্যে যে বল ক্রিয়া করে তাকে বলা হয় আন্তঃআণবিক বল। এ আন্তঃআণবিক বল সৃষ্টি হয় দুটি শক্তির দরুন- (ক) পারিপার্শ্বিক অণুগুলোর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট বিভব শক্তি।

(খ) অণুগুলোর তাপীয় শক্তি যা প্রকৃতপক্ষে অণুগুলোর গতিশক্তি। এ শক্তি বস্তুর উষ্ণতার উপর নির্ভরশীল।

চিত্র :৭.১

অণুগুলোর মধ্যকার দূরত্ব r -এর পরিবর্তনের সাথে আন্তঃআণবিক বলের পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তনের প্রকৃতি ৭.১ চিত্রে দেখানো হলো। আন্তঃআণবিক দূরত্ব r যত বেশি হবে অর্থাৎ r যত বৃদ্ধি পাবে আন্তঃআণবিক বল তত আকর্ষণধর্মী হবে। আন্তঃআণবিক দূরত্ব r যত কম হবে আন্তঃআণবিক বল তত বিকর্ষণধর্মী হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল পরস্পরকে নিষ্ক্রিয় করে ফলে নিট বল শূন্য হয়। এ অবস্থায় r = ro এখানে, ro সাম্যাবস্থায় আন্তঃআণবিক দূরত্ব বা সুস্থিতি দূরত্ব (equilibrium distance)।

 

৭.২। পদার্থের তিন অবস্থা : কঠিন, তরল ও বায়বীয়

States of Matter: Solid, Liquid and Gas

আমরা জানি যে, পদার্থ সাধারণত তিন অবস্থায় থাকে— কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থা। আন্তঃআণবিক দূরত্ব ও বল দিয়ে এ অবস্থার বর্ণনা করা যেতে পারে। আমরা জানি যে, যখন আন্তঃআণবিক দূরত্ব r = ro তখন নিট বল শূন্য, তখন অণুগুলো সাম্যাবস্থায় অবস্থান করে। এ সাম্যাবস্থায় অণুগুলো একটি নিয়মিত ত্রিমাত্রিক বিন্যাসে সজ্জিত থাকে যাদের বলা হয় কেলাস। অণু বা আয়নগুলো দ্বারা দখল করা অবস্থানকে বলা হয় ল্যাটিস বিন্দু। সামান্য টেনে অণুগুলোকে যখন এদের পরস্পর থেকে কিছুটা দূরে নেওয়া হয় অর্থাৎ যখন r>ro তখন অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ বল কাজ করে। অণুগুলোকে যদি কিছু ঠেলে আরও কাছাকাছি আনা হয় অর্থাৎ যদি r<ro হয়, একটি বিকর্ষণ বল কাজ করে। এভাবে কোনো অণুকে যদি এর সাম্যাবস্থা থেকে সরানো হয় তাহলে এটা এর গড় অবস্থানকে ঘিরে স্পন্দিত হতে থাকবে। কঠিন পদার্থে এরকম অবস্থা থাকে। কঠিন পদার্থে অণুগুলো থাকে প্রায় সাম্যাবস্থার দূরত্বে। স্পন্দনের বিস্তার খুব কম হয় ফলে অণুগুলো এদের অবস্থানে আবদ্ধ থাকে। কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার কেন থাকে তার ব্যাখ্যা এ থেকে পাওয়া যায়। সুতরাং বলা যায় যে,

১। কঠিন পদার্থে অণুগুলো খুব কাছাকাছি থাকে এবং সুদৃঢ় বিন্যাসে সজ্জিত থাকে। 

২। কঠিন পদার্থে অণুগুলো এদের গড় অবস্থানকে ঘিরে স্পন্দিত হয়।

৩। কঠিন পদার্থে অণুগুলোর মধ্যবর্তী বল প্রবল।

৪। কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার আছে।

তরল পদার্থ : 

তরল পদার্থে অণুগুলোর মধ্যবর্তী গড় দূরত্ব কঠিন পদার্থের চেয়ে কিছুটা বেশি। এদের মধ্যে আকর্ষণ বল দুর্বল এবং অণুগুলো মুক্তভাবে তরল পদার্থের সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে পারে। ফলে তরল পদার্থের আকার পরিবর্তিত হয় এবং যে র পাত্রে রাখা হয় তার আকার ধারণ করে।

বায়বীয় পদার্থ : 

বায়বীয় পদার্থ বা গ্যাসের বেলাতে অণুগুলোর আকৃতির তুলনায় এদের মধ্যবর্তী দূরত্ব খুব বেশি অর্থাৎ r>>ro । ফলে আন্তঃআণবিক বল খুব দুর্বল বা নগণ্য। এ পদার্থের অণুগুলো ইতস্তত বিক্ষিপ্ত গতিতে থাকে। অণুগুলোর কোনো নির্দিষ্ট বিন্যাস থাকে না। অণুগুলো পরস্পরের সাথে এবং ধারক পাত্রের দেয়ালের সাথে স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ ঘটায়। সংঘর্ষের সময় ছাড়া অণুগুলোর মধ্যবর্তী বল নগণ্য ।

 

Content added || updated By
Promotion