ঘটনা-১ : সাকিবের বাবা হঠাৎ সেদিন গভীর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাকিবের মা অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলেন না। এ সময় দেখা যায়, একটি অ্যাম্বুলেন্স তাদের বাড়ির দরজায় হাজির হয়েছে। সন্ধিৎসু মাকে সাকিব জানায় বাবার অসুস্থতা দেখে সে ইন্টারনেট থেকে ওই হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ফোন নম্বর বের করে তাদেরকে ফোন করেছে। সেজন্য তারা এসেছে। সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানোর ফলে সে যাত্রায় সাকিবের বাবার বড় কোনো ক্ষতি হয়নি।
ঘটনা-২ : সুফিয়া এবং তার বাবা-মা এক ছুটিতে সিঙ্গাপুরে বেড়াতে যায়। হঠাৎ করে এক দুর্ঘটনায় সুফিয়ার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এর জন্য অনেক রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়। সুফিয়া বাবার জন্য রক্তের প্রয়োজন এ তথ্যটি তার ফেসবুক প্রোফাইলে সবাইকে জানিয়ে দেয়। সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত অনেক বাঙালি পরিবার খবরটি জেনে সুফিয়াদের পাশে দাঁড়ায় এবং রক্তের ব্যবস্থা করে।
উপরের দুটি ঘটনাতে দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে ইন্টারনেটের সফল ব্যবহার বর্ণনা করা হয়েছে। ঘটনাক্রমে দুটোই স্বাস্থ্যবিষয়ক ঘটনা। তবে, অন্যান্য প্রায় সকল সমস্যা সমাধানে ইন্টারনেট এখন কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে।
ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, পরিবহন, বাণিজ্য থেকে শুরু করে সরকার, সরকারপদ্ধতি এবং রাজনৈতিক হালচালের প্রায় সকল ধরনের তথ্যই সেখানে রয়েছে।
দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যা সমাধানের প্রথম হাতিয়ার হচ্ছে তথ্য। ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেটি ব্যবহার করে অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়। এজন্য ইন্টারনেটে তথ্য খুঁজতে নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে তুলতে হয়। বিশ্বের জনপ্রিয় তথ্য খোঁজার সাইট বা সার্চ ইঞ্জিনের অন্যতম হলো গুগল (www.google.com)। এতে বাংলা বা ইংরেজি ভাষাতে তথ্য খুঁজে বের করা যায় ।
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদগণও একটি বাংলা সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করছেন, যার নাম পিপীলিকা (www.pipilika.com)। এর মাধ্যমে বাংলাতে তথ্য খোঁজা যায়। শিক্ষাসংক্রান্ত প্রায় সকল ধরনের সহায়ক তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের নানান সমস্যা সমাধানের জন্য ইন্টারনেটে অসংখ্য ওয়েবসাইট রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে একটি বিশেষ ওয়েবসাইট ওলফ্রামআলফা (www.wolframalpha.com)। এ সাইটে বিভিন্ন গণনার কাজ করার ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যারও সমাধান এখানে পাওয়া যায়। উল্লেখ্য www.khanacademy.com এমন একটি ওয়েবসাইট যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা প্রায় সকল বিষয়েরই প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে।
ইন্টারনেট কেবল তথ্য প্রাপ্তিতে সহায়তা করে এমন নয় বরং কারো তথ্য প্রকাশেও সমানভাবে সহায়তা করে। ফলে, অনেকেই তাদের সমস্যা সমাধানের অভিজ্ঞতা নিজেদের ওয়েবসাইট, ব্লগ বা সামাজিক যোগাযোগের সাইটে প্রকাশ করেন। পরবর্তী সময়ে অন্যরা সেটি ব্যবহার করতে পারেন।
এ সকল বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলি ছাড়া দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করার জন্য ইন্টারনেটভিত্তিক অনেক সহায়তা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেট সাপোর্ট সেন্টারগুলো এর উদাহরণ। এখানে, গ্রাহকগণ তাদের মোবাইল ফোন সংক্রান্ত সমস্যাবলির সমাধান খুঁজে পায়।
আবার অনেক ইমেইলভিত্তিক সেবা কেন্দ্র বিশ্বজুড়ে পরিচালিত হয়। এ সকল সেবাকেন্দ্র থেকে ইমেইলের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করা যায় এবং সংশ্লিষ্ট সমস্যার সমাধান করা যায়।
শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সহজাত প্রবৃত্তি তৈরি হয়। অনেক ইন্টারনেট গেম এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, সেগুলোতে জিততে হলে ব্যবহারকারীকে অনেক ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করতে হয়। এ সকল গেম খেলার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি হয়। সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম যেমন ব্লগ বা ফেসবুকের মাধ্যমে সমমনা সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা যায়। এর ফলে অনেক স্থানীয় সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, বাংলাদেশের একটি গ্রামের একটি ছেলে অপহৃত হওয়ার পর স্থানীয় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা সঙ্গে সঙ্গে খবরটি তাদের ব্লগে শেয়ার করেন। স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিগণও ওই ব্লগের সদস্য হওয়ায় বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে তাদের গোচরীভূত হয়। ফলে প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে সেই অপহৃত ছেলেটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
এরূপ নানাভাবে ইন্টারনেট তথা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে থাকে।
দলগত কাজ : দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে ইন্টারনেট থেকে কী ধরনের সহায়তা পেতে চাও? দলে আলোচনা করে বর্ণনা কর।
নতুন শিখলাম : ইন্টারনেট গেম, ব্লগে শেয়ার।