পৃষ্ঠটানের ব্যবহার

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ১ম পত্র | NCTB BOOK

১। পানির উপর দিয়ে পোকামাকড় হাঁটা : 

অনেক সময় দেখা যায় যে, পানির উপর দিয়ে মশা, মাছি বা অন্য কোনো পোকামাকড় হাঁটছে। এদের পা পানিতে ডুবে যাচ্ছে না। মনে হয় পানির উপর যেন একটি পাতলা পর্দা রয়েছে এবং এই পর্দার উপর দিয়ে পোকামাকড় চলাফেরা করছে। ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে, যেখানে পোকামাকড়ের পা পড়ছে, সেখানে পানির পৃষ্ঠ একটু অবনমিত হচ্ছে। এটা সম্ভব হয় পানির পৃষ্ঠটানের কারণে। পৃষ্ঠটানের দরুন পানি বা যেকোনো তরলের পৃষ্ঠ বা মুক্ততল টানা স্থিতিস্থাপক পর্দার মতো আচরণ করে এবং ক্ষেত্রফল সঙ্কুচিত হতে চায় ।

২। সাবানের ফেনা :

  সাবান পানির পৃষ্ঠটান কমিয়ে দেয়। সাবানের দ্রবণের পৃষ্ঠটান পানির পৃষ্ঠটানের চেয়ে কম। সুতরাং এক ফোটা সাবানের দ্রবণ পানির ফোঁটার চেয়ে বেশি পৃষ্ঠতল বা ক্ষেত্র দখল করে। সুতরাং এটা কাপড়ের বেশি এলাকা ভিজিয়ে দেয় । সুতরাং সাবানের দ্রবণ কাপড়ের যেসব সূক্ষ্ম ছিদ্র পথে প্রবেশ করে সেখানে পানি প্রবেশ করতে পারে না। ফলে সাবানের দ্রবণে কাপড় থেকে ময়লা বের করে আনতে পারে। সুতরাং সাবানের দ্রবণ পানির চেয়ে উত্তম উপায়ে কাপড় পরিষ্কার করতে পারে। সাবানের দ্রবণকে গরম করলে পানির পৃষ্ঠটান আরো কমে যায় ফলে কাপড় আরো বেশি। পরিষ্কার হয়।

৩। গাছে পানির পরিবহন :

 উদ্ভিদ বা গাছের গোড়ায় পানি দিলে সে পানি গাছের ডালপালা ও পাতায় পৌঁছে যায়। এর কারণ হলো : পানির পৃষ্ঠটানের কারণে গাছের কাণ্ডে অসংখ্য কৈশিক নলের ভিতর দিয়ে পানি উপরের দিকে উঠে এবং গাছের ডালপালা ও পাতায় পৌঁছায়। এ প্রক্রিয়ায় অসমোসীয় (osmotic) চাপেরও আংশিক ভূমিকা থাকে।

৪। তরলের পৃষ্ঠে সুই ভেসে থাকা পৃষ্ঠটান নিয়ে আলোচনার সময় আমরা বলেছি যে, কোনো সুইকে একটি টিস্যু পেপারের উপরে রেখে পানির মুক্ততলে রাখলে টিস্যু পেপার ভিজে ডুবে যায় কিন্তু সুইটি ভাসতে থাকে। এর কারণ হলো- পানিতে যেখানে সুইটি রয়েছে তার নিচে পানির পৃষ্ঠ কিছুটা অবনমিত হচ্ছে। ফলে পৃষ্ঠের ঐ স্থানটা অনুভূমিক থাকে না বরং পৃষ্ঠটানের জন্য এ বল অবনমিত পানি পৃষ্ঠের সাথে তির্যকভাবে স্পর্শক বরাবর ক্রিয়া করে। পৃষ্ঠটানজনিত এ তির্যকভাবে (ক্রিয়াশীল বলের উল্লম্ব উপাংশ সুই-এর ওজনকে প্রশমিত করে, ফলে সুইটি না ডুবে সাম্যাবস্থায় ভেসে থাকে।

৫। ছাতার কাপড় : 

ছাতার কাপড় বা তাবুর কাপড় বা রেইন কোর্টের কাপড়ে খুব সুক্ষ্ম ছিদ্র থাকে যার মধ্য দিয়ে বাতাস প্রবেশ করতে পারে কিন্তু বৃষ্টির পানির ফোঁটা প্রবেশ করতে পারে না— কাপড়ের উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যায়।

৬। পানি কচুপাতাকে ভিজায় না কিন্তু আমপাতাকে ভিজায় :

 কঠিন ও তরলের মধ্যকার স্পর্শ কোণ অর্থাৎ 90° এর চেয়ে কম হলে তরল পদার্থ ঐ কঠিন পদার্থকে ভেজাবে। আর যদি স্পর্শকোণ স্থূলকোণ অর্থাৎ 90° এর চেয়ে বেশি হয়। তাহলে তরল পদার্থ কঠিন পদার্থকে ভেজাবে না। কচুপাতা ও পানির মধ্যকার স্পর্শকোণ 90° এর চেয়ে বেশি হওয়ায় পানি কচু পাতাকে ভেজাতে পারে না। পক্ষান্তরে আম পাতা ও পানির মধ্যকার স্পর্শকোণ সূক্ষ্মকোণ হওয়ায় পানি আম পাতাকে ভেজায়।

৭। কোন পরিষ্কার কাচপৃষ্ঠে পানি ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু পারদ ফোঁটার আকার ধারণ করে : 

আমরা জানি যে, পানির সাথে কাচের স্পর্শ কোণ সূক্ষ্ম কোণ ও পানির সাথে পারদের স্পর্শ কোণ স্থুল কোণ। এ ঘটনা পৃষ্ঠটানের কারণেই ঘটে থাকে। কাচের সাথে স্পর্শ কোণ 6 এর মান স্থল কোণে রাখার জন্য পারদকে ফোঁটার আকার ধারণ করতে হয় এবং কাচের সাথে স্পর্শ কোণ সূক্ষ্ম করার জন্য পানিকে ছড়িয়ে পড়তে হয়।

৮। অশান্ত সমুদ্রকে শান্ত করা : 

তরলের পৃষ্ঠটান ধর্ম ব্যবহার করে অশান্ত সমুদ্রকে অনেকটা শান্ত করা যায়। সমুদ্রে খুব ঢেউ থাকলে অনেক সময় তেল ঢেলে দেয়া হয় শান্ত করার জন্য। বাতাস জোরে প্রবাহিত হওয়ার সময় পানির ওপর ভাসমান তেল ঢেউ-এর সাথে সামনের দিকে অগ্রসর হয় এবং পেছনে পরিষ্কার পানি থেকে যায়। পরিষ্কার পানির পৃষ্ঠটান তেল মিশ্রিত পানির চেয়ে বেশি হওয়ায় সামনের দিকের চেয়ে পেছনের দিকের পৃষ্ঠটান বেশি হয়। এ বর্ধিত পৃষ্ঠটান পেছনের দিকে বড় ঢেউ সৃষ্টিতে হঠাৎ বাধা দেয়, ফলে সমুদ্র শান্ত হয়ে যায়। 

Content added || updated By
Promotion