বন্দনা অর্থ প্রণাম, স্তুতি, ভক্তি, শ্রদ্ধা ইত্যাদি। বৌদ্ধদের নিকট ত্রিরত্ন পরম আধার বা আশ্রয়। বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘকে ত্রিরত্ন বলা হয়। ত্রিরত্নকে প্রণাম করাই হচ্ছে ত্রিরত্ন বন্দনা। বৌদ্ধরা প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা বন্দনা করে। প্রত্যেকে বৌদ্ধ বিহারে বা বাড়িতে নিয়মিত বন্দনা করতে পারে।
প্রতিদিন যথাসময়ে বন্দনা ও প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়। এগুলো নিত্যকর্ম। আবার যথাসময়ে ঘুম থেকে ওঠা, হাত-মুখ ধোয়া, পড়ার টেবিলে বসা এগুলোও নিত্যকর্ম। এছাড়া ঘর- -বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পিতা-মাতাকে কাজে সাহায্য করাও তোমাদের কর্তব্য।
নিম্নে ত্রিরত্ন বন্দনা পালি ও বাংলায় প্রদত্ত হলো—
যো সন্নিসিন্নো বরবোধিমূলে-
মারং সসেনং মহতিং বিজেত্বা,
সম্বোধিমাগঞ্চি অনন্ত জ্ঞানো—
লোকুত্তমো তং পণমামি বুদ্ধং
যেই লোকোত্তম অনন্ত জ্ঞানী সম্যক সম্বুদ্ধ শ্রেষ্ঠ বোধিমূলে অবস্থান করে মার সেনার সাথে যুদ্ধ করে মহান বিজয়ী হয়ে সম্বোধি লাভ করেছিলেন, আমি সেই বুদ্ধকে প্রণাম করছি।
অট্ঠঙ্গিকো অরিযপথো জনানং—
মোক্খপবেসা যুজুকোব মগ্গো
ধম্মো অযং সন্তি করো পণীতো—
নীয্যানিকো তং পণমামি ধম্মং।
জনগণের অষ্টাঙ্গ বিশিষ্ট আর্যপথ, মোক্ষ প্রবেশের সোজা রাস্তা স্বরূপ, শান্তিকর, শ্রেষ্ঠধর্ম এবং যেই ধর্ম নির্বাণে নিয়ে যায়, সেই ধর্মকে আমি প্রণাম করছি।
সংঘো বিসুদ্ধো বর দক্খিণেয্য—
সন্তি দ্ৰিযো সব্বমলপহীণো,
গুণেহি নেকেহি সমিদ্ধিপ্পত্তো—
অনাসবো তং পণমামি সংঘং ।
যিনি বিশুদ্ধ সংঘ দান গ্রহণের উত্তমপাত্র, শান্তেন্দ্রিয়, সকল প্রকার পাপমলবিহীন, প্রকার গুণভূষিত ও আশ্রব ক্ষয়কারী, আমি সে সংঘকে প্রণাম করছি।
প্রতিদিন যথাসময়ে যেই কাজ সম্পাদন করা হয় তাকে নিত্যকর্ম বলে। প্রতিটি শিশু— কিশোর, বালক-বালিকা তার নিত্যকর্ম সম্পাদন করবে। বয়স্করাও এই নিয়ম মেনে চলবে। পৃথিবীতে মাতা-পিতা হলেন পরম গুরু। মাতা-পিতা হলো পুত্র-কন্যার জন্ম- দাতা। কিন্তু জ্ঞানদাতা হিসেবে শিক্ষাগুরুর আসন অনেক ওপরে। শিক্ষকগণ অকৃপণভাবে শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীর মনের অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলো জ্বেলে দেন। এজন্য মাতা-পিতার মতো শিক্ষাগুরুর স্থানও অতি ওপরে।
সংসারে মাতা-পিতা ও শিক্ষাগুরু ব্যতীত আরও অনেক গুরুজন আছেন। লোক সমাজে বয়োজ্যেষ্ঠগণ মাত্রই গুরুজন। এহেন গুরুদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা একান্ত কর্তব্য। শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবে। এতে মানবিক গুণের বিকাশ হয়। গুরুদের প্রতি বিনম্র ভাব পোষণ করা উচিত। গুরুদের প্রতি ভদ্র ব্যবহার করবে। সুন্দর ব্যবহারে গুরুদের নিকট আশীর্বাদ লাভ করা যায়। শাস্ত্রেও বলা হয়েছে— গুরুজন, বয়োজ্যেষ্ঠ এবং শীলবান ব্যক্তিদের অভিবাদন করবে। অভিবাদন করলে আয়ু-বর্ণ- সুখ-বল ও জ্ঞান বৃদ্ধি পায় ।
গুরুদের গুণ বর্ণনা করা যায় না। এদের শ্রদ্ধা ও সম্মান করলে নিজের জীবনের মঙ্গল হয়। এ ছাড়াও নিজে সম্মান পেতে হলে অন্যকে সম্মান দিতে হবে।
প্রত্যেকেরই দায়িত্ববোধ থাকতে হয়। পরিবার ও সমাজের প্রতিও মানুষের দায়িত্ব রয়েছে। পরিবারের গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রাখতে হয়। তাঁদের সুখে-দুঃখে সহায়তা করার দায়িত্ব রয়েছে। গুরুজনদের আদেশ-উপদেশ মতে সংসারের কাজ সম্পাদন করতে হয়। পরিবারের ছোটদের প্রতি স্নেহ-মমতা পোষণ করা কর্তব্য। তাদের লেখাপড়ার প্রতি যত্ন নেবে। সমাজের যেকোনো কাজে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবে। সমাজে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজকে নিজের মনে করে অংশগ্রহণ করতে হয়। তাদের বিপদে-আপদে রক্ষা করতে হয়। আচার-অনুষ্ঠান, উৎসবে যোগদান করতে হয়।
সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে মৃত ব্যক্তির দাহকার্য, বিবাহকার্য অনুষ্ঠিত হয়। এসব উৎসব ব্যতীতও আরও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক উৎসব রয়েছে। সেসব সামাজিক উৎসবকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য আগ্রহী হবে। সাধ্যমতো এরূপ কাজ সম্পাদনের জন্য অংশগ্রহণ করবে। এর দ্বারা পরিবার ও সমাজের উন্নতি সাধিত হয়।
একতাই বল। সংঘের মিলন সুখকর। একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। এর দ্বারা মানুষ বৃহত্তর কাজকে সহজে সমাধান করতে পারে। পরিবারে ও সমাজে অনেক কাজ থাকে। অনেক সময় সব কাজ একা করা সম্ভব নয়। কিন্তু একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করলে গুরুত্বপূর্ণ কাজও সহজে সমাধান করতে পারা যায়। এজন্য মানুষ আধুনিক যুগে বিভিন্ন লোক সমন্বয়ে সংগঠন গড়ে তোলে। সমবায় সমিতি গঠনের দ্বারা পরিবার ও সমাজে বৃহত্তর কাজ সম্পাদন করা সম্ভব হয়।
সমবায় সমিতির মাধ্যমে সমাজে বিভিন্ন রকম অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে। শুধু সমাজ নয়, পৃথিবীর মানুষও আজ বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে একতাবদ্ধ হয়েছে। তারা পৃথিবীর মানুষের জন্য মঙ্গলজনক কাজ করছে। এ কারণে পৃথিবীর মানুষ সুখ-শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ লাভ করেছে। সে কারণে পারিবারিক ও সমাজের সকল কর্মকাণ্ডে একতাবদ্ধ হওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এর ফলে নিজের ও পরের হিতসাধন করতে সক্ষম হবে।
মানব জাতির মঙ্গলের জন্য যৌথ কর্মকাণ্ডের বিকল্প নেই। যৌথ কর্মকাণ্ডের দ্বারা মানুষ শিল্প-কারখানা গড়ে তুলে উন্নতির শিখরে উঠেছে। গৌতম বুদ্ধ সপ্ত অপরিহানীয় ধর্মে তা দেশনা করেছেন। তাতে যৌথভাবে কাজ করলে সুফল পাওয়া যায়। বৌদ্ধ মাত্রই যৌথভাবে কাজ করার অভ্যাস করা কর্তব্য। সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করলে উন্নতি অবশ্যম্ভাবী। মানুষ যৌথভাবে কাজ করলে একজন অন্যজনের প্রতি বিশ্বাস জন্মে। সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হয়। কঠিন কাজও যৌথভাবে সহজে সমাধান করতে পারা যায়। এ কারণে সব কাজ সহজে সুসম্পন্ন হয়। এতে সুফল লাভ হয় ৷
১. মাতা-পিতা হলেন পুত্র-কন্যার ___।
২. লোক সমাজে ___ মাত্রই গুরুজন।
৩. গুরুদের প্রতি ___ ___ পোষণ করা উচিত।
8. .___ ছোটদের প্রতি স্নেহ মমতা পোষণ করা কর্তব্য।
৫. সংঘের ___ সুখকর।
৬. শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদের প্রতি ___ দেখাবে।
১. বৌদ্ধরা প্রতিদিন ২. শিক্ষকগণ অকৃপণভাবে ৩. এজন্য মাতা-পিতার মতো ৪. অভিবাদন করলে আয়ু, বর্ণ, ৫. সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করলে ৬. সাধ্যমতো এরূপ কাজ সম্পাদনের | ১. শিক্ষাগুরুর স্থানও অতি ওপরে। ২. সুখ, বল ও জ্ঞান বৃদ্ধি পায় ৷ ৩. উন্নতি অবশ্যম্ভাবী। ৪. সকাল-সন্ধ্যা বন্দনা করে। ৫. জন্য অংশগ্রহণ করবে। ৬. শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। ৭. সুফল লাভ হয় । |
১. ত্রিরত্ন বন্দনা কাকে বলে ?
২. নিত্যকর্ম কাকে বলে ?
৩. গুরুজনদের প্রতি কীরূপ ব্যবহার করবে?
৪. পরিবার ও সমাজের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কী ?
৫. একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করলে কী উপকার হয় লেখ।
৬. যৌথভাবে কাজ দ্বারা সমাজের কী কী উপকার হয় ?
১. নিত্যকর্মের বর্ণনা দাও ।
২. মাতা-পিতার গুণ বর্ণনা কর।
৩. শিক্ষাগুরুর গুণ সম্পর্কে লেখ।
৪. পরিবার ও সমাজে বাস করতে হলে আমাদের কী করা কর্তব্য? বর্ণনা দাও।
৫. ধর্মীয় উৎসবে আমাদের কী করা কর্তব্য? এ সম্পর্কে লেখ ।
৬. একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করলে যে সুফল লাভ হয় তার বর্ণনা দাও ৷
আরও দেখুন...